১৯৯৪ সালের ৬ এপ্রিল, একটি ফরাসি ফ্যালকন-৫০ বিমান রুয়ান্ডার হুটু গোষ্ঠি সমর্থিত মধ্যপন্থি আদর্শের প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানা ও বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সাইপ্রিন এনটারিমিরাকে নিয়ে উড়ছিল কিগিলের আকাশে। কিগিল আন্তর্জতিক বিমানবন্দের আকাশেই মুহুর্তের মধ্যে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। আকাশেই বিমান বিধ্বস্ত হয়, বিমানের প্রত্যেকেই নিহত হন। হুটু সরকার, সেনাবাহিনী ও হুটু চরমপন্থি গোষ্ঠী ইনটেরাহামোই এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠী টুটসি একজন আরেকজনকে দায়ী করে পালটাপালটি দোষারোপ করে। তবে হামলা যেই করুক না কেন, হুটু জোট পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এই হামলার কয়েকঘন্টার মধ্যে রেডিও, চ্যানেলে ঘোষণা দিয়ে ভয়াবহতম হত্যাকান্ড শুরু করে টুটসি বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরপিএফ (Rwandan Patriotic Front), ত্বায়া গোষ্ঠি ও মধ্যপন্থী হুটুদের ওপর।
এপ্রিলের শুরু থেকে মুহুর্তের মধ্যে এই হত্যাকান্ড ছড়িয়ে পড়ে শহর থেকে গ্রামে, মাঠে-ঘাটে, অলিতে-গলিতে, ঘরে-ঘরে জুলাই পর্যন্ত। প্রায় ১০০ দিন ব্যাপি এই হত্যাযজ্ঞে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু নির্মম ভাবে হত্যার শিকার হয়। সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী বন্দুক ও বিস্ফোরক ব্যবহার করলেও এই হত্যাকান্ডের মূল অস্ত্র ছিল রামদা, লাঠি। স্কুল, গির্জা কোথাও যেয়ে কেউ আশ্রয় পায়নি। এতদিন যেসব জায়গা আশ্রয় হিসেবে ছিল বিপদে-আপদে, সেগুলোই যেন হয়ে উঠেছিল একেকটা কসাইখানা। নারীদের গণধর্ষণ, রামদা দিয়ে হত্যা, হাত-পা বেধে নদীদে ভাসিয়ে দেয়া এমন কোন হীন কাজ ছিল না যা রুয়ান্ডা গণহত্যায় সংঘটিত হয়নি।
হুটু ও টুটসি কারা?
ঐতিহাসিকভাবে রুয়ান্ডার অন্যতম প্রাচীন জাতি হলো হুটু। টুটসিদের অনেক আগে থেকেই রুয়ান্ডায় তাদের জাতিগত গোড়াপত্তন হয়েছে। বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে হুটু জাতি প্রথমে মধ্য আফ্রিকার গ্রেট লেকস অঞ্চলে আসেন। আর অন্যদিকে টুটসিরা ইথিওপিয়ার যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। তারা প্রায় ৪০০ বছর আগে হুটু অধ্যুষিত গ্রেট লেকস অঞ্চলেই এসেছিলেন। তারা ওয়াটুটসিস(Watutsis) নামেও পরিচিত। হুটু জনপদে এসে টুটসিরা শেষ পর্যন্ত হুটুদের সংস্কৃতিতে আত্মীভূত হয়, তাদের ভাষা, বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য গ্রহণ করে।
Is the USA a Leading Terrorist State?
জাতিগতভাবে হুটু জাতি মূলত কৃষক শ্রেণির, তারা যৌথ পরিবারে বাস করতেন । আর অন্যদিকে টুটসিরা গবাদি পশু লালন-পালন করতেন। গবাদি পশুপালক হিসাবে টুটসিরা সচরাচর কৃষক-প্রধান হুটুদের তুলনায় অর্থনৈতিক আধিপত্যকারীর অবস্থানে ছিল। কিন্তু তার মানে এই না যে, টুটসিরা সবাই সম্পদশালী আর হুটুরা দরিদ্র ছিলেন তবে, রুয়ান্ডা ও তার আশেপাশে সংখ্যালঘু টুটসিদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক মর্যাদা হুটুদের থেকে অনেক ভাল ছিল।
কঙ্গোর ইতিহাসবিদ অধ্যাপক জর্জ ইজাঙ্গোলার মতে, এই দুই দলের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য ছিল অর্থনৈতিক, জাতিগত নয়। তিনি বলেন, “রুয়ান্ডায় টুটসি এবং হুটু মূলত একই লোক। তারা সবাই কতগুলো বৃহৎ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে ক্যামেরুনের সাতটি অঞ্চল থেকে উগান্ডা পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একেবারে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত বসবাস করা একই সংস্কৃতির মানুষ। রাজার নৈকট্যের উপর নির্ভর করেই এই লোকজন টুটসি বা হুটু ছিল। আপনি যদি রাজার কাছের লোক হতেন, আপনি সম্পদের মালিক হতেন, আপনার প্রচুর গবাদি পশু থাকতো এবং তার মানে আপনি একজন টুটসি। আর আপনি যদি রাজার থেকে অনেক দূরের লোক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি একজন চাষী, আপনি খুব বেশি গবাদি পশুর মালিক নন, এবং তার মানে আপনি একজন হুটু।”
রুয়ান্ডা গণহত্যার প্রেক্ষাপট
আপাতদৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে মনে হলেও, হুটুস ও টুটসিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত আরো অনেক পুরোনো। রুয়ান্ডায় হুটু ও টুটসিদের মধ্যে বিরোধ অনেক গভীরে গ্রোথিত, ঐতিহাসিকভাবেই এই দুই জাতির বিরোধ। তবে এই দুই জাতির বিরোধে প্রথম সংক্ষুব্ধ কে ও তার জন্য দায়ী কে সে প্রশ্ন উঠলে প্রাথমিকভাবে বলা যায় যে, হুটুরাই সংক্ষুব্ধ আর এর পেছনে দায়ী টুটসি জাতি।
রুয়ান্ডায় ঔপনিবেশিক শাসন
কৃষি প্রধান অর্থনীতির দেশ রুয়ান্ডা ৯০ দশকের শুরুতে আফ্রিকার মধ্যে সর্বোচ্চ ঘনত্ববিশিষ্ট্য জনসংখ্যার দেশ ছিল। রুয়ান্ডার মোট জনসংখ্যার মধ্যে হুটু সম্প্রদায়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ, ১৪ শতাংস টুটসি এবং অল্প সংখ্যক ত্বওয়া ও পিগমি অধিবাসী ছিল। ১৮৯৭ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে লিগ অফ নেশনস ম্যান্ডেটের অধীনে বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিকভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত রুয়ান্ডা প্রতিবেশী বুরুন্ডির সাথে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত জার্মান ঔপনিবেশিক পূর্ব আফ্রিকার অংশ ছিল।
হুটুদের অঞ্চলে, এসে হুটুদের আর্থ-সামাজিক বিষয়ে আধিপত্য বিস্তার করে টুটসিরা যে আঘাত হুটু সমাজে দিয়েছে সেটা কখনোই হুটুরা মেনে নিতে পারেনি। হুটুরা সংখ্যাগুরু হয়েও সংখ্যালঘু-যাযাবর টুটসিদের আধিপত্য-রোষে চলতে হয়েছে যা তারা কখনোই মেনে নিতে পারে নি। তাদের অন্তঃকোন্দল দিনে দিনে বেড়েছে বৈ কমে নি। আর এই আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের দাবানলে ঘি ঢেলেছে তৎকালীন রুয়ান্ডা-বুরুন্ডিতে উপনিবেশ স্থাপনকারী বেলজিয়ান ঔপনিবেশিকগণ।
Let’s call Israel’s violence what it is: terrorism, not clashes
১৯ শতকের শেষের দিকে ঔপনিবেশিক শাসনামলে রুয়ান্ডার এই জাতিগত বিভেদ আরো প্রকট হয়ে ওঠে। রুয়ান্ডা শাসনে ঔপনিবেশিকগণ সংখ্যাগুরু হুটুদেরকে প্রশাসনিক বা শিক্ষা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু টুটসিদেরকেই অধিক গুরুত্ব দিতেন। তাদের ওপরই হুটুদের শাসনভার অর্পিত ছিল। জনসংখ্যায় হুটুদের আধিপত্য থাকলেও, এই জনসংখ্যার শাসনের দায়ভার ছিল টুটসিদের ওপর। এরফলে হুটু ও টুটসিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ চরম আকার ধারণ করে।
বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক সময়কালে রুয়ান্ডাতে ক্ষমতাসীন বেলজিয়ানরা সংখ্যালঘু টুটসিদের পক্ষেই ছিল। টুটসিসকে স্থানীয় প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা তুলনামূলকভাবে ভাল শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ উপভোগ করে, যার ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হুতুসের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।এর সাথে সাথে হুতুদের ওপর টুটসি ও বেলজিয়ামিদের অত্যাচার-নির্যাতন করার প্রবণতা বেড়ে যায়। গুটিকয়েকের শাসন আর অধিকসংখ্যকের শাসিত হওয়ার নীতিই ঐতিহাসিকভাবেই টুটসি ও হুতুদের মধ্যে একটা কোন্দল তৈরী করে যা জিইয়ে থাকে বছরের পর বছর। এই কোন্দলের উত্তেজনা রুয়ান্ডার স্বাধীনতার আগেই ভয়াবহ রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে হুটু ও টুটসি সম্প্রদায়ের মধ্যে।
রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধ ও স্বাধীনতা
১৯৫৯ সালের গৃহযুদ্ধে হুটু ও টুটসিদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সংখ্যালঘু টুটসিরা পরাজিত হয় এবং প্রায় ৩৩০০০০ টুটসি পার্শবর্তী দেশে পালিয়ে যায়। এর ফলে টুটসি সম্প্রদায় আরোও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। ১৯৬০ সালের বেলজিয়াম আয়োজিত নির্বাচনে হুটু সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। হুটু নেতা গ্রেগোইর কাইবান্দা ১৯৬১ সালে রুয়ান্ডাকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তিনি রুয়ান্ডার প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হন।
স্বাধীনতার পরের বছর গুলোতে জাতিগত সংঘাত অব্যাহত ছিল। এর মধ্যেই ১৯৭৩ সালে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে মধ্যপন্থী হুটু সম্প্রদায়ের মেজর জেনারেল জুভেনাল হাবিয়ারিমানাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসানো হয়। প্রায় দুই যুগ ধরে একাই ক্ষমতায় থাকা হাবিয়ারিমানা ‘ন্যাশনাল রেভুলেশনারি মুভমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে নতুন দল গঠন করেন। নতুন সংবিধানের অধীনে ১৯৭৮ সালে তিনি নির্বাচিত হন। এই ধারা ১৯৮৩ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনেও বজায় ছিল। এই পুরোটা সময় জুড়ে সংখ্যালঘু টুটসি, ত্বয়া সম্প্রদায় প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের শিকার হয় এবং অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে কয়েক লক্ষ টুটসি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া টুটসিরা বিদ্রোহী সামরিক সংগঠন করলেও হুটসিদের উৎখাত না করা পর্যন্ত ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত হুটুরা রুয়ান্ডা শাসন করে।
আরপিএফের রুয়ান্ডা আক্রমণ
নতুন করে সংকট শুরু হয় ১৯৯০ সালে, যখন বর্তমান প্রেসিডেন্ট পল কাগামির নেতৃত্বে টুটসিদের সংগঠন রুয়ান্ডান প্যাট্রোয়িটিক ফ্রন্ট (আরপিএফ) তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানাকে চ্যালেঞ্জ করেন। এই বছরের পহেলা অক্টোবর রুয়ান্ডা সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে পশ্চিম উগান্ডার একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে রুয়ান্ডায় অভিযানের উদ্দেশ্যে হাজার হাজার আরপিএফ বিদ্রোহী একত্রিত হয় । তাদের নেতৃত্বে ছিলেন উগান্ডার উগান্ডার সেনা কমান্ডার এবং আরপিএফের নেতা ফ্রেড রুগিমা। সেখানে সম্ভাব্য হতাহতের কথা ভেবে দুটি অস্থায়ী হাসপাতালও স্থাপন করা হয় এবং বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক জড়ো হয়। যদিও তারা সেখানে উগান্ডার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের কথা বলে একত্রিত হয় কিন্তু, অতি উৎসাহী কিছু বিদ্রোহীর অসাবধানতায় অভিযানের গোপন কথা ফাঁস হয়ে যায়।
What is the rule of law and why is it important in a democratic society?
সেদিন বিকেলেই আরপিএফ রুয়ান্ডায় আক্রমন করে। কিন্তু ফরাসি এবং জাইরিয়ান কমান্ডোদের সহায়তায় রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের আক্রমণ থামিয়ে দেয় এবং আরপিএফ উগান্ডায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আরপিএফ অল্প সময় পরেই আবার রুয়ান্ডা আক্রমণ করে, উত্তর রুয়ান্ডার ভিরুঙ্গা পর্বতমালায় অবস্থান নেয়। এই সময় তৎকালীন উগান্ডার সেনা অফিসার ও আরপিএফের নেতা পল কাগামে (রুয়ান্ডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট) আমেরিকান সেনাবাহিনীর Command and General Staff College-এ অধ্যায়নরত ছিলেন। রুয়ান্ডায় অভিযানে যখন পরপর ৪ জন কমান্ডো অফিসার নিহত হন, কাগামে আমেরিকা থেকে উগান্ডায় ফিরে আসেন এবং আরপিএফের নেতৃত্ব নিয়ে অভিযানে যোগ দেন।
এরপরের সাড়ে তিন বছর উগান্ডার সেনাবাহিনী পল কাগামের সৈন্যদের অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ সরবরাহ করেছে এবং উগান্ডা-রুয়ান্ডার ভেতরে বাহিরে তাদের অবাধ চলাফেরা নিশ্চিত করেছে। রুয়ান্ডার সীমান্ত থেকে ৮০ কিলোমিটার উগান্ডার ভেতরে এমবারারা শহর থেকেই মূলত আরপিএফকে সব ধরণের রসদ যোগান দিত উগান্ডা। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও ব্যার্থ হয় এসব তদারকি করতে। রুয়ান্ডা-উগান্ডার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যই আরপিএফকে সুবিধা দিয়েছে শান্তিরক্ষী বাহিনীকে টেক্কা দিতে।
আরুশা চুক্তি ও বিশ্বাসঘাতকতা
আরপিএফের প্রতিরোধে ১৯৯২ সালে সরকার এবং আরপিএফের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানা জানতেন উগান্ডার সমর্থনপুষ্ট আরপিএফ তার নিজের সেনাবাহিনীর চেয়ে উন্নতভাবে সশস্ত্র, প্রশিক্ষিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ। তিনি ১৯৯৩ সালে টুটসিদের সংগঠন আরপিএফের সাথে আরুশা চুক্তি (Arusha Accords) করতে বাধ্য হন। চুক্তি অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আরপিএফ প্রায় সমান সংখ্যক আসনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এমনকি রুয়ান্ডার অভ্যন্তরের টুটসিরাও আরপিএফকে এত ক্ষমতা দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিল কারণ তারা জানত যে, হুটুদের এটি ক্রুদ্ধ, ভয়ংকর ও আরও বেশি উসকে দিতে পারে। আরপিএফের সাথে হাবিয়ারিমানা এই চুক্তি যেন হুটুদের কাছে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল হয়ে দাঁড়ায়। হাবিয়ারিমানাও যেন হুটুদের অনিবার্য শত্রুতে পরিণত হয়ে গেছে। এই চুক্তিতে চরমপন্থি হুতু সংগঠনগুলো বিক্ষুব্ধ হয়। তারা যেকোন মূল্যে এই চুক্তি কার্যকর হওয়া থামাতে উঠেপরে লাগে।
বিদ্রোহী হুটু সংগঠনগুলো এই চুক্তির কার্যকর হওয়া থামাতে সহিংস উপায় বেছে নেয়। তারা আরপিএফের সাথে আতাতের জন্য স্থানীয় টুটসি জনগোষ্ঠীকে দায়ী করে। ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে হুতু সরকার Radio Télévision Libre des Mille Collines নামে একটি রেডিও সেন্টার চালু করে যেখান থেকে তারা সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও টেন কমান্ডমেন্ট প্রচারসহ টুটসিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ায়। টুটসিদের প্রতি ঘৃণা উস্কে দেয়া ছিল তাদের এই প্রচারমাধ্যমের কাজ। আরপিফের দাবির প্রেক্ষিতে হাবিয়ারিমনার সরকারের অনিচ্ছাকৃতভাবে রাজি হওয়ায় গণহত্যা শুরু হওয়ার মাসখানেক আগে থেকেই হুটু বিদ্রোহীরা সম্ভাব্য টুটসি নেতাদের তালিকা করে। তারা কিভাবে কোথায় আক্রমণ করবে, কি অস্ত্র ব্যবহার করবে সেটারও পরিকল্পনা করে। স্থানীয় হুটু মেয়র এবং অন্যান্য স্থানীয় কর্মকর্তারা টুটসি বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর হন্তারকের কাছে রামদা এবং কেরোসিন বিতরণ শুরু করে। সে অনুযায়ী তারা বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র মজুদ করে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে সরকারী কর্মকর্তারা টুটসির শত শত লোককে হত্যা করে।
Dictatorship and Human Rights: The Ongoing Struggle for Freedom
১০০ দিন ব্যাপি রুয়ান্ডা গণহত্যা
এমন অবস্থায় ৬ই এপ্রিল ১৯৯৪ সালে একটি বিমানে হামলা করে ভূপাতিত করা হয়। বিমানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানা ও বুরুন্ডীর প্রেসিডেন্ট সাইপ্রিন এনটারিমিরা সহ আরো অনেকে ছিলেন। ফ্রান্সের ফ্যালকন-৫০ বিমানটি ভূমি থেকে আকাশে উতক্ষেপণযোগ্য মিসাইল দিয়ে ভূপাতিত করা হয়। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দুই প্রেসিডেন্টই নিহত হন। বিমান ভূপাতিত কে করেছে সেটা তাৎক্ষণিক ভাবে জানা যায়নি। টুটসির আরপিএফ এর ওপর হুতু জোট ওই হামলার দায় দিলে আরপিএফ অস্বীকার করে। উলটো আরপিএফ দাবী করে ক্ষমতা দখল অজুহাত ও গণহত্যা চালাবার ছুতো খুঁজতেই বিদ্রোহী হুটু সংগঠন ওই হামলা চালিয়েছে। যদিও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি কে হামলা করেছে তবু হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, তুতসি ও মধ্যপন্থী হুতুদের ওপর চরম্পন্থি হুতুদের মনোভাব বলে যে, হামলা হুতু চরমপন্থিরাই করেছে। যাইহোক, বিমান বিধ্বস্তের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হুটু সরকারের মদদে সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, হুটু বিদ্রোহী সংগঠন ইনটেরাহামোই ও ইম্পিউজামুগাম্বি জোট বেঁধে স্থানীয় টুটসি ও মধ্যপন্থী হুতুদের ওপর হামলা করে। চরমপন্থী হুটু সংগঠন রেডিও চ্যানেল প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ঘোষণা দেয়, এবং হুটুদেরকে “কাজে” যাওয়ার জন্য অর্থাৎ, টুটসি জনগোষ্ঠীকে আক্রমণ করার আহ্বান জানায়। গণহত্যা শুরু হয়।
এই হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত ধ্বংস অভিযানের অংশ ছিল। ৭ ই এপ্রিল, হুতু চরমপন্থীরা সরকারী সহায়তায় পুরো টুটসি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকারী অভিযান শুরু করে। কিগালিতে শুরু হওয়া ভয়াবহ গণহত্যা রুয়ান্ডা জুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যারা গণহত্যা থামাতে সক্ষম হতে পারে তাদের শুরুতেই হত্যা করা হয়েছিল। হুতু চরমপন্থী ইনটেরাহামোই সারা দেশের শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এবং হুতুসের সাহায্য নিয়ে টুটসিদের হত্যা করে। গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলা হুটুস সম্প্রদায়ের লোকজনকেও হত্যা করা হয়েছিল। এই গণহত্যার প্রথম কয়েকজন শিকারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মধ্যপন্থী হুতু প্রেসিডেন্ট আগাথে উইলিংগিমানা এবং বেলজিয়ামের দশজন শান্তিরক্ষী। এই হত্যাকান্ড রুয়ান্ডার প্রশাসনিক শূণ্যতা সৃষ্টি করে এবং চরমপন্থী হুতু নেতারা সেই জায়গায় আসীন হন। এরপর পরই বেলজিয়াম তাদের শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেয়।
মধ্য ও দক্ষিণ রুয়ান্ডার স্থানীয় প্রশাসন, যেখানে টুটসির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বাস করত, প্রথম দুই সপ্তাহ ধরে গণহত্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে। তারা হুটুদের প্রতিরোধের ব্যর্থ চেষ্টা করে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায়। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরে হিসেব বদলে যায়। এপ্রিলের ১৮ তারিখে হুটু জোট রুয়ান্ডার সকল স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সম্মিলিতভাবে টুটসি হত্যায় একমত হয়। স্তানীয় প্রশাসনের বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অন্যান্য বিরোধীরা হয় নীরব ছিল অথবা সক্রিয়ভাবে এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। হুটু জোট অনেক হত্যাকারীদের খাবার, অ্যালকোহল, মাদক দ্রব্য এবং নগদ টাকা ঘুষ দেয়। যে প্রশাসন এতদিন তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল তারাই শেষ পর্যন্ত ১৮ই এপ্রিলের পর থেকে টুটসি হত্যায় মেতে ওঠে।
সহিংসতা আরও তীব্র হওয়ার সাথে সাথে টুটসি সম্প্রদায়ের লোকজন গির্জা, স্কুল এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়, যা অতীতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। কিন্তু স্কুল, গির্জাতে পালিয়েও কেউ রেহাই পায়নি। গির্জায় হাজার হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল যেখানে তারা নিরাপত্তা চেয়েছিল। স্কুলের কর্মকর্তা, গির্জার পাদ্রি সবাই যেন টুটসি হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। এই নিরাপদ আশ্রয়গুলোর অনেকগুলিই গণকবরে পরিণত হয়েছিল। রুয়ান্ডার সামরিক বাহিনী এবং হুটু আধাসামরিক বাহিনী এই নৃশংসতা চালানোর জন্য অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিল।ক্ষমতাসীন হুটু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আর্চবিশপ ভিনসেন্ট নসেঙ্গিয়ুমভা ক্ষমতাসীন হুটু গোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন। এই হত্যাকান্ডের সাথে বহু সংখ্যক যাজক জড়িত ছিলেন। ২০১৭ সালে রুয়ান্ডা সফরে পোপ ফ্রান্সিস হত্যাকাণ্ডে চার্চের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।
Is the RSS a Threat to India’s Secularism?
হাজার হাজার টুটসি এবং টুটসি বলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তাদের বাড়িঘর, মাঠে এবং রাস্তায় জবাই করা হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে তার জন্য, হুটু চরমপন্থিরা সারা দেশে চেকপোস্ট স্থাপন করে। সরকারি রেডিও চ্যানেল স্থানীয় জনসাধারণকে টুটসি হত্যায় আহবান জানায়, উৎসাহ দেয়। স্থানীয় নেতারা শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় টুটসি প্রতিবেশীদের হত্যার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। একসাথে পুরো পরিবারকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ভয়ানক ভাবে মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছিল। ধর্ষণ থেকে হুটু মহিলারাও ছাড় পাননি। অনেকে আবার প্রতিবেশি হুটু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতেও আশ্রয় নেয়। প্রতিবেশিরা আগলে রাখলেও যারা আশ্রয় দিয়েছে তাদেরকেও হুটু চরমপন্থিরা হত্যা করে।
পরবর্তিতে আরপিএফের প্রতিরোধ শুরু হয় এবং মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আরপিএফ বিদ্রোহীরা রুয়ান্ডার বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়া শুরু করে এবং হত্যাকান্ড ধীরে ধীরে কমে আসে। জুলাই মাসের শুরুর দিকে রাজধানী কিগালিসহ বেশিরভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। জুলাইয়ের মধ্যে, আরপিএফ বিদ্রোহীরা হুটুদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয় এবং অবশেষে গণহত্যার সমাপ্তি ঘটে।
যদিও মনে করা হয় রুয়ান্ডার গণহত্যা ৭ এপ্রিল থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ঘটেছে, তবে প্রথম ছয় সপ্তাহেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ লক্ষ হুটু গণহত্যায় অংশ নেয়। মে’র মাঝামাঝি সময়ে আনুমানিক ৮,০০,০০০ লোক নিহত হয় এবং এই হত্যাকান্ড হলোকস্টকে ছাড়িয়ে যায়। ১০০ দিনের মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ লোককে হত্যা করা হয় যার মধ্যে বেশিরভাগই টুটসি সম্প্রদায়ের লোকজন। কমপক্ষে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। টুটসি জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ এই নির্মম গণহত্যার শিকার হন।
আরপিএফের হাতে প্রায় ২৫০০০০ হুটু নিহতের গুঞ্জন শোনা গেলেও রবার্ট জের্সনের Gersony Report মতে প্রতিমাসে প্রায় ৫-১০ হাজার হুটু নিহত হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে কমপক্ষে ২৫-৪০হাজার হুটু আরপিএফের হাতে হত্যার শিকার হন।
গণহত্যা পরবর্তি অবস্থা
রুয়ান্ডা গণহত্যাযজ্ঞের নেতৃত্বে ছিল হুটু চরমপন্থী সংগঠন ইনটেরাহামোই ও ইম্পিউজামুগাম্বি। তাদের হাতেই বেশীরভাগ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। তাদের সহযোগী হিসেবে হুটু সম্প্রদায়ের অন্যান্য ছোট ছোট সংগঠন গুলো ছিল। হুটু সরকারের পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ মদদে রুয়ান্ডা সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, হুতু চরমপন্থী সংগঠন ইনটেরাহামোই ও ইম্পিউজামুগাম্বি জোট বেঁধে স্থানীয় টুটসি ও মধ্যপন্থী হুটুদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। বহু টুটসি ও মধ্যপন্থি হুটু সম্প্রদায়ের লোকদেরকে তাদের প্রতিবেশীর হাতে হত্যা করার জন্য তুলে দেয়া হত। রুয়ান্ডার গণহত্যা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা এবং আদিম অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের উপর বেশি নির্ভর করেছিল। এর অর্থ প্রায়শই বোঝায় যে ভুক্তভোগীরা তাদের আততায়ীদের ঘনিষ্ঠভাবে জানত।
পল কাগামের নেতৃত্বে আরপিএফ দেশের নিয়ন্ত্রণে আসলে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ রুয়ান্ডা থেকে পালিয়ে যায় কঙ্গোতে এবং শরণার্থী শিবিরে বসতি স্থাপন করে।
বিজয়ের পর আরুশা চুক্তি অনুযায়ী একটি জোট সরকার গঠন করে যেখানে হুটু সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাস্তুর বিজিমুঙ্গু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসাবে টুটসি সম্প্রদায়ের পল কাগামে দায়িত্ব পালন করবেন। গণহত্যা সংঘটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল জন্যে হাবিয়ারিমানার ‘ন্যাশনাল রেভুলেশনারি মুভমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ (এনআরএমডি) পার্টিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং ২০০৩ সালে দেশটির সংবিধান থেকে জাতিসত্তা অপসারণ করা হয়। নতুন সংবিধান গ্রহণের পর পল কাগামে রুয়ান্ডার রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১০ বছরের মেয়াদে পুনরায় নির্বাচিত হন। তিনি এখনো রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরো পড়ুনঃ গণবিধ্বংসী অস্ত্র বা Weapons of Mass Destruction কাকে বলে?
বিচার
রুয়ান্ডায় গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত কঠিন ছিল। রুয়ান্ডার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি বিচারক হয় পালিয়েছিলেন অথবা নিহত হয়েছিলেন। মোট বিচারকদের মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ এখন বিচারকার্য পরিচালনা করছেন। গণহত্যায় অভিযুক্তদের মত অপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনার করতে সক্ষম ছিল না রুয়ান্ডার আদালত। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রুয়ান্ডা্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য এবং গণহত্যার বিচার করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা শুরুর প্রায় ৭ মাস পর অক্টোবরে দুটি প্রধান বিচার ব্যবস্থা তৈরি করা হয়; জাতিসংঘের অধীনে রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICTR) এবং রুয়ান্ডার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত গাছাছা আদালত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICTR)
১৯৯৫ সালে তানজানিয়ার আরুশায় আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালে রুয়ান্ডার গণহত্যায় অপরাধীদের বিচার শুরু হয়। জানা-অজানা অনেক অপরাধীর এই বিচারকার্জ খুবই জটিল ছিল। প্রায় দেড় দশক ধরে এই গণহত্যার বিচারকার্য চলে। ১৯৯৮ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণহত্যার জন্য প্রথম রায় ঘোষণা করে। এতে শহরের মেয়র থাকাকালীন টুটসির বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে সহিংসতাউস্কে দেওয়ার এবং নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জঁ-পল আকায়েসুকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রথমবারের মত ধর্ষণকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গণহত্যার একটি রূপ হিসাবে চিহ্নিত করে অপরাধ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে।
আরেকটি ঐতিহাসিক মামলায়, রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একজন সংবাদপত্র প্রকাশক এবং একজন রেডিও স্টেশন মালিককে গণহত্যা উস্কে দেয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে। নুরেমবার্গ বিচারের পর প্রথমবারের মতো গণঅপরাধে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক আদালত।
১৯৯৫ থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল ৯৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে এবং তাদের মধ্যে ৮০ জন ব্যক্তির বিচার কার্যক্রম শেষ করেছে, যার মধ্যে ৬২ জনকে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ এবং “ঘৃণামূলক প্রচার মাধ্যম” গঠনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রুয়ান্ডার একজন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং সংবাদ মাধ্যম ও রেডিও স্টেশন Radio Télévision Libre des Mille Collines পরিচালনাকারী দুজন ব্যক্তিও আছেন।
Secular India and the Nature of its so-called Secularism
গাছাছা আদালত (Gacaca Court)
অন্যদিকে গাছাছা আদালত নিম্ন স্তরের অপরাধীদের বিচার করেছে। গাছাছা আদালতে বিচারের সময় সাক্ষ্য দেবার জন্য রুয়ান্ডার সকল জনগণকে উপস্থিত থাকতে হয়েছিল, কারণ সম্প্রদায়গুলি অপরাধের হিসাব দেখার জন্য একত্রিত হয়েছিল। গাছাছা আদালত কমপক্ষে ২০ লক্ষ মামলার শুনানি করেছে, অনেক ব্যক্তিকে আর্থিক জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদন্ড পর্যন্ত দিয়েছে। তবে শুনানীতে অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তির জন্য অনেক কম সময় দেওয়া হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও গাছাছা আদালতের পাশাপাশি রুয়ান্ডার সাধারণ আদালতও কিছু মামলা পরিচালনা করে। রুয়ান্ডার সাধারণ আদালত প্রায় দশ হাজারের মত মত মামলা পরিচালনা করে।
অন্যান্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও দায়
শতাব্দির ভয়াবহতম এই হত্যাকান্ডের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করলে শুধু হুটু ও টুটসিদের ওপর এই গণহত্যার দায় চাপানো আরেকটা বড় অপরাধের শামিল। এই হত্যাকান্ডের বহু আগে থেকেই যেন এর বীজ রোপন করা হয়েছিল। হত্যাকান্ডের এই বীজ রোপনের দোষে দূষিত, জার্মানি, আমেরিকা, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, উগান্ডা, সবাই। কেউ এর দায় অস্বীকার করতে পারবে না। সাম্প্রদয়িক বিভেদ তৈরী করা থেকে শুরু করে, উস্কানি দেয়া, অস্ত্রের যোগান দেয়া, প্রশিক্ষণ দেয়া, জেনে-শুনে-বুঝে গণহত্যাকান্ড চলতে দেয়া, দেখেও না দেখার ভান করা এবং নিজের দায় অস্বীকার করা পর্যন্ত, কোনটাই এসব দেশ অস্বীকার করতে পারবেনা।
জার্মানি
জার্মানি ১৮৮৪ সালে বার্লিন সম্মেলনে রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডিকে পায়। জার্মান লক্ষ্য ছিল রুয়ান্ডার রাজতন্ত্রের মাধ্যমে রুয়ান্ডা পরিচালনা করা যাতে করে তুলনামূলকভাবে কম ইউরোপীয় সৈন্য দিয়েই উপনিবেশ স্থাপন করার অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছিল। যখন প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণের কথা আসে, জার্মানরা হুটুর চেয়ে ইথিওপিয়া থেকে আসা টুটসিকে জাতিগত মর্যাদার ভিত্তিতে পছন্দ করে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলা টুটসিদের আর্থসামাজিক আধিপত্য আরো পাকাপোক্ত হয়।
বেলজিয়াম
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলজিয়াম বাহিনী রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডির নিয়ন্ত্রণ দখল করে এবং ১৯২৬ সালে আরও সরাসরি ঔপনিবেশিক শাসনের কৌশল শুরু করে। বেলজিয়ানরা রুয়ান্ডার অর্থনীতির আধুনিকীকরণ করে, কিন্তু টুটসির আধিপত্য বজায় থাকে, হুতুকে বঞ্চিত করে। বেলজিয়াম ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে রুয়ান্ডাবাসীদের তিনটি জাতিগত ভাগে বিভক্ত করে জনসংখ্যার একটি স্থায়ী বিভাজন স্থাপন করে, যেখানে হুটুরা জনসংখ্যার প্রায় ৮৪ শতাংশ, টুটসিস প্রায় ১৫%, এবং প্রায় ১% এর জন্য তাওয়া। প্রতিটি ব্যক্তিকে টুটসি, হুতু, ত্বায়া হিসাবে সনাক্ত করে বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছিল। এর আগে, বিশেষ করে সম্পদশালী হুটুদের পক্ষে ‘সম্মানসূচক টুটসি’ হওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র প্রদানের পরে গোত্রগুলোর মধ্যে এই সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং আর্থসামাজিক গোষ্ঠীগুলিকে সাম্প্রদায়িক জাতিগোষ্ঠীতে পরিণত করে।
একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে, দূরে সরিয়ে রেখে একঘরে করে রেখে সংখ্যালঘুদের দ্বারা শাসন-শোসন করিয়েছে বেলজিয়াম। তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও সেগুলোকে দিনকে দিন বাড়িয়ে তুলেছে। বেলজিয়ানরা এসে হুটু ও টুটসিদের আর্থসামাজিক বিভেদকে জাতিগত সাম্প্রদায়িকচ বিভেদে পরিণত করেছে। শুধু প্রশাসনিকই নয়, শিক্ষা ও অর্থসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রেই বৈষম্য তৈরী ও বাড়িয়েছে বেলজিয়াম। ঔপনিবেশীক শাসকগোষ্ঠীর এমন বৈষম্যমূলক আচরণ গোত্রগুলোকে আত্মঘাতি সাম্প্রদায়িক জাতিতে পরিণত করেছে। যার ফলে তাদের শাসনামলেই ১৯৫৯ সালে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ হয় হুটু ও টুটসিদের মধ্যে।
Uncovering the Agartala Conspiracy Case: A Political Conspiracy against Bangladesh!
ফ্রান্স
২০২১ সালের এপ্রিলমাসে রুয়ান্ডা সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি প্রতিবেদনে “পূর্বানুমিত গণহত্যার অনুমতি” দেওয়ার জন্য ফরাসি সরকারকে “উল্লেখযোগ্য”ভাবে দায়ী করা হয়। টুটসিদের পরিকল্পিত হত্যার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ফ্রান্স স্বেচ্ছায় রুয়ান্ডা সরকারকে সমর্থন করে এবং ফ্রান্স জেনেশুনেই গণহত্যাটি সংঘটিত হতে দেয়। আরো বিস্মকরভাবে গণহত্যার পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স নিজের ও অন্যান্য অপরাধীদের ভূমিকা গোপন করার চেষ্টা করে।
এই রিপোর্টটি অনুযায়ী, প্রাক্তন ফরাসি রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কোইস মিত্তারন্ড এবং তার প্রশাসন গণহত্যার প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তৎকালীন রুয়ান্ডার রাষ্ট্রপতি জুভেনাল হাবিয়ারিমানার সরকারকে সব ধরণের দিয়েছিলেন। “ফরাসি সরকার আসন্ন বধ সম্পর্কে অন্ধ বা অজ্ঞান ছিল না।” রুয়ান্ডার টুটসি এবং মধ্যপন্থী হুটুদের রক্ষা করার চেষ্টা না করে গণহত্যার ঠেলে দেয়াটা ব্যর্থ ফ্রান্সের “অসামান্য এবং অনস্বীকার্য দায়বদ্ধতা” যা তারা সজ্ঞানে করেছে।
আমেরিকা
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, গণহত্যার আগে থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং তার মন্ত্রিসভা জানতেন যে, সমস্ত টুটসিসকে হত্যার জন্য একটি উদ্দেশ্যমূলক এবং পরিকল্পিত গণহত্যার ছক আঁকা হয়েছিল। সিআইএ জানত যে উগান্ডা সীমান্ত দিয়ে রুয়ান্ডায় অস্ত্র ঢুকছে। তারা জানত উগান্ডা আরপিএফকে প্রশিক্ষণ দিয়ে রুয়ান্ডায় অভিযানে পাঠাচ্ছে এবং রুয়ান্ডাতে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হতে যাচ্ছে যেখানে লাখো লোক মৃত্যুবরণ করবে। আমেরিকা এই গণহত্যার আশংকাকে শুধু অবহেলাই করেনি, উগান্ডার প্রেসিডেন্ট মুসেভেনিকে অস্ত্রসহ বৈদেশিক সাহায্য অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছিল। যা দিয়ে উগান্ডার পূর্বের ৪০ বছরের হিসেবে ১০ গুণ বেশী অস্ত্র কিনেছিল।
ক্যাথলিক চার্চ
যে জাতিগত কাঠামোয় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তার ভিত্তি স্থাপনে ক্যাথলিক চার্চের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ । রুয়ান্ডার শাসকরা জাতিগতকরণের ভিত্তিতে গণহত্যা চেয়েছিল। আর এর ভিত্তিটা তৈরী করে দিয়েছিল সাদা চামড়ার ইউরোপিয়ান যাজকদের রুয়ান্ডান সমাজ সম্পর্কে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। ব্যক্তির পারস্পরিক দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে ক্ষমতার শীর্ষে পদে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি আনুগত্য এবং শ্রদ্ধা সম্পর্কে শিক্ষাদানের উপর ক্যাথলিক গির্জার ফাদার-ও ধর্ম প্রচারকরা মনোনিবেশ করেছিলেন। আরও দেখা যায় যে, প্রতিবেশীকে ভালবাসার চেয়ে জনগণের ধর্মান্তরণই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উচু-নীচ, জাত-পাতের সৃষ্টি করে তারই ভিত্তিতে রুয়ান্ডান সমাজ ও তার জনগণকে বিভক্ত করে জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করেছে ক্যাথলিক চার্চগুলো।
রুয়ান্ডায় ঔপনিবেশিক বেলজিয়ামের দেশ দখলের পর থেকে ক্যাথলিক চার্চ এবং রুয়ান্ডার সরকারের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। ক্ষমতাসীন হুটু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আর্চবিশপ ভিনসেন্ট নসেঙ্গিয়ুমভা ক্ষমতাসীন হুটু গোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন। এসব চার্চ হুটু সরকারের কর্মকাণ্ডকে নৈতিকভাবে বৈধ করে তুলতে এবং গণহত্যায় জনগণের বাকি অংশগ্রহণকে নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে এবং জাতিগত বৈষম্যকে বৈধতা দিয়ে গণহত্যার রাস্তা পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই হত্যাকান্ডের সাথে বহু সংখ্যক যাজক জড়িত ছিলেন। অনেক ক্যাথলিক যাজক এবং নার্সরা নির্বিকার চিত্তে দাড়িয়েছিলেন যখন মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ১০ লক্ষ রুয়ান্ডাবাসী মারা যায়। অনেক ক্যাথলিক যাজক এবং নার্স গণহত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। রুয়ান্ডার গণহত্যায় নিহতদের অধিকাংশই গির্জায় বা তার কাছাকাছি নিহত হয়েছিল। ২০১৭ সালে রুয়ান্ডা সফরে পোপ ফ্রান্সিস হত্যাকাণ্ডে চার্চের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।
উপসংহার
বর্বরতার ভিত্তিতে, রুয়ান্ডার গণহত্যাকে নাৎসি হলোকাস্টের সাথে তুলনা করা হয়। তবে, এই দুটি গণহত্যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। জার্মানি কোনো ইহুদি বাহিনীর দ্বারা হুমকি্র সম্মুখিন ছিল না। হিটলার ইহুদি এবং অন্যান্য দুর্বল গোষ্ঠীকে আক্রমণ করেছিলেন এককভাবে সম্পূর্ণরূপে তার নিজের অযৌক্তিক ধারণা এবং সেই সময়ে ব্যাপক কুসংস্কারের ভিত্তিতে। রুয়ান্ডার হুতু গণহত্যাকারীরা একইভাবে অযৌক্তিক ধারণা এবং পক্ষপাত দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল তবে এখানে আরেকটি উপাদান ছিল; সন্ত্রাস। রুয়ান্ডার প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট, বা RPF নামে পরিচিত রুয়ান্ডান টুটসি নির্বাসিতদের একটি বিদ্রোহী সেনাবাহিনীকে উগান্ডা অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, যা জাতিসংঘের সনদ, আফ্রিকান ঐক্য সংগঠন আইন, রুয়ান্ডার বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি চুক্তি এবং উগান্ডার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়োভেরি মুসেভেনির বারংবার প্রদান করা আশ্বাস অমান্য করে।
গণহত্যার সময় এবং পরে অনেক শরণার্থী রুয়ান্ডা থেকে পালিয়ে যায় এবং তাদের ফেরত পাঠানো হয়। শরণার্থীদের অধিকাংশকে বেলজিয়াম, বুরুন্ডি, কেনিয়া এবং উগান্ডায় নিয়ে যাওয়া হয়। মাত্র ৭,০০০ লোককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। যদিও রুয়ান্ডার সঠিক সংখ্যা অজানা, যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্য ২০১৩ সাল থেকে ৭ এপ্রিলকে রুয়ান্ডার গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, পাশাপাশি এপ্রিল কে গণহত্যা সচেতনতা এবং প্রতিরোধ মাস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন
এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…
সাম্প্রতিক আর্টিকেল
সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রেরঃ নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা
গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশনঃ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ
গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।
পিকেকে-র বিলুপ্তি: তুরস্কের জন্য সুযোগ নাকি কুর্দিদের জন্য নতুন সংকট?
পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?
অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুসঃ ভারতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা
পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটির অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"।
আদালতের এখতিয়ারঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও বাংলাদেশে প্রয়োগ
বিচারিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আদালতের এখতিয়ার। আদালতের এখতিয়ার তিন প্রকারঃ আদি এখতিয়ার, আপীল এখতিয়ার, এবং পরিদর্শন এখতিয়ার।