২০২৬ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতি নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিএনপি একবাক্যে এই নির্বাচন পদ্ধতির বিরোধীতা করলেও জামাতসহ আরো কয়েকটি ছোট ছোট দল পি আর পদ্ধতি দাবি করছে। তারা “প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়ন নিশ্চিতের” দাবিতে ২০২৬ সালের নির্বাচনে পি আর পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবি করছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতি কি আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য? আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। পাশাপাশি এই নিবন্ধে আমরা পি আর পদ্ধতি কি, এর কার্যপ্রণালী, প্রকারভেদ, সুবিধা-অসুবিধাসহ বাংলাদেশের নির্বাচনে পি আর পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা আলোচনা করব।
পি আর পদ্ধতি কী
পি আর পদ্ধতি হলো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব ভোটের অনুপাতে নির্ধারিত হয়। এই পদ্ধতির লক্ষ্য হলো সকল ভোটকে মূল্যবান করা, যাতে কোনো ভোট নষ্ট না হয়। অর্থাৎ ভোটের অনুপাত যেন সংসদে প্রতিফলিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি নির্বাচনী এলাকায় ১০টি আসন থাকে এবং একটি দল ৪০% ভোট পায়, তাহলে তারা ৪টি আসন পাবে। এর মাধ্যমে ছোট ছোট দল বা ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। প্রত্যেক ভোটের মূল্যায়ন হওয়ার ফলে ভোটারদের উৎসাহ বাড়ে, ভোট কারচুপির সুযোগ কমে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কি আদৌ পি আর পদ্ধতি বাস্তবায়নযোগ্য? যেমন পি আর পদ্ধতির একটি বড় অসুবিধা হলো গঠিত সংসদে বা সরকারে চরম মাত্রায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। সরকার কোনভাবেই স্থিতিশীলভাবে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারবনা। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমাধান প্রক্রিয়া কি হতে পারে সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পি আর পদ্ধতির কার্যপ্রণালী
ভোটাররা সাধারণত দল বা প্রার্থীদের তালিকা নির্বাচন করে। ভোট গণনার পর, আসন বণ্টনের জন্য বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করা হয়, যেমন ডি’হন্ডট মেথড (D’Hondt Method) বা সেন্ট-লাগু মেথড (Sainte-Laguë Method)। ডি’হন্ডটে, প্রতিটি দলের ভোটকে ১, ২, ৩ ইত্যাদি দিয়ে ভাগ করে সর্বোচ্চ গড় অনুসারে আসন দেওয়া হয়। এটি বড় দলগুলোকে সামান্য সুবিধা দেয়। অন্যদিকে, সেন্ট-লাগুতে বিজোড় সংখ্যা (১, ৩, ৫) দিয়ে ভাগ করা হয়, যা ছোট দলগুলোর জন্য ন্যায্য।
তবে পি আর পদ্ধতিতে নূন্যতম ভোট পাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেমন ৫% ভোট না পেলে কোনো দল আসন পাবে না, যাতে ছোট দলগুলো অতিরিক্ত না হয়। এটি FPTP (First-Past-The-Post) থেকে আলাদা, যেখানে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী সবকিছু জিতে নেয়।
বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতি চালু হলে, নির্বাচন আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, কিন্তু স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব কমতে পারে। এছাড়াও, সরকারে কোন রকম স্থিতিশীলতা থাকবেনা।
পি আর পদ্ধতির প্রকারভেদ
পি আর পদ্ধতি মূলত তিন প্রকারের- ক. তালিকাভিত্তিক পি আর; খ. মিশ্র সদস্যভিত্তিক পি আর; গ. একক হস্তান্তরিত ভোটের পি আর। নিচে বিভিন্ন প্রকারের পি আর পদ্ধতি আলোচনা করা হলোঃ
তালিকাভিত্তিক পি আর (Party-list PR)
এই পদ্ধতিতে প্রতিটি দল একটি তালিকা (লিস্ট) করে। ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা সাধারণত দলকে ভোট দেন, ও পদের তালিকা অনুযায়ী দলগুলো তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন পায়।
তালিকাভিত্তিক পি আর দু ধরণের হতে পারে—ক্লোজড লিস্ট (closed list), যেখানে পার্টিই প্রার্থী তালিকা নির্ধারণ করে, অথবা ওপেন লিস্ট (open list), যেখানে ভোটাররা প্রার্থীর কাছে ভোট দিতে পারে এবং তালিকায় শীর্ষস্থান পরিবর্তন করতে পারে। তালিকাভিত্তিক পি আর তুলনামূলক সহজ এবং ন্যায্য, কিন্তু প্রার্থীদের সাথে ভোটারের যোগাযোগ কম।
একক স্থানান্তরযোগ্য ভোট (Single Transferable Vote — STV)
এটি প্রতি-প্রার্থী ভিত্তিক পদ্ধতি যেখানে ভোটাররা প্রার্থীদের ক্রম অনুসারে তালিকা করে। একটি নির্দিষ্ট কোটা পূরণ হলে প্রার্থী নির্বাচিত হন; অপ্রয়োজনীয় ভোট বা অতিরিক্ত ভোট স্থানান্তর করা হয় দ্বিতীয় পছন্দে।
আয়ারল্যান্ড ও মাল্টা-তে একক স্থানান্তরযোগ্য ভোট পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। একক স্থানান্তরযোগ্য ভোট পদ্ধতিতে প্রত্যেক প্রার্থীর উপর আলাদা আলাদা জোর দেয়া হয় এবং ছোট দলগুলো সাহায্য পায়।
মিশ্র সদস্যভিত্তিক পি আর (MMP)
মিশ্র সদস্যভিত্তিক পি আর পদ্ধতিতে ভোট দুই প্রকার; একটি স্থানীয় প্রার্থীর জন্য, অন্যটি দলের জন্য। এই পদ্ধতিতে কিছু আসন হয় স্থানীয় FPTP (First-Past-The-Post) দ্বারা এবং বাকিগুলো অনুপাতিক তালিকা থেকে পূরণ করা হয় যাতে মোট আসন অনুপাতিক হয়।
জার্মানির মত দেশে মিশ্র সদস্যভিত্তিক পি আর পদ্ধতি সফলভাবে কার্যকর করা হয়েছে। এই পদ্ধতি স্থানীয় এবং জাতীয় প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্য রক্ষা করে।
পি আর পদ্ধতির সুবিধা — কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

- ছোট দলের সুযোগঃ ভোটের অনুপাতে আসন ভাগ হওয়ায় ছোট দলও সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়।
- ন্যায্য প্রতিনিধিত্বঃ বর্তমান ব্যবস্থায় একজন প্রার্থী ২৫% ভোট পেলেও জিতে যান, বাকি ৭৫% ভোট নষ্ট হয়। পি আর পদ্ধতি এ বৈষম্য কমায়।
- জাতীয় ইস্যুতে গুরুত্বঃ আঞ্চলিক আবেগ বা অর্থবলে প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ কমে যায়। ভোটাররা দলের নীতি ও জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়।
- আইন প্রণয়নে মনোযোগঃ নির্বাচিত এমপি-রা এলাকার কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের বদলে আইন প্রণয়নে বেশি সময় দিতে পারবেন।
- কম ভোট নষ্টঃ অল্প ভোট পেলেও দল সংসদে আসন পায়, ফলে ভোটারদের ভোটের মূল্য থাকে।
- নির্বাচনে স্বচ্ছতাঃ প্রার্থীর ব্যক্তিগত প্রভাব কম থাকায় কালো টাকা, ভয়-ভীতি বা সন্ত্রাসের ব্যবহার হ্রাস পায়।
- জাতীয় ঐক্যঃ পিআর পদ্ধতিতে কোয়ালিশন গড়ে ওঠে, যা বৃহত্তর ঐক্য গঠনে সহায়ক।
পি আর পদ্ধতির অসুবিধা ও সমালোচনা

- রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতাঃ অনেক ছোট দল সংসদে আসলে রাজনৈতিক বিভাজন ও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে; ক্ষমতা ভাগাভাগি জটিল হতে পারে।
- নেতৃত্ব ও জবাবদিহিতার দুর্বলতাঃ তালিকা ভিত্তিক (বিশেষত ক্লোজড লিস্ট) হলে প্রার্থী-ভোটারের সরাসরি সম্পর্ক কমে যায়—নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বেশি প্রভাবশালী হতে পারে।
- অস্থিতিশীল সরকারঃ কোয়ালিশনের কারণে স্থায়িত্ব কম হতে পারে। স্থিতিশীল একদলীয় সরকার পাওয়া কঠিন।
- কঠিন ও জটিল গণনা পদ্ধতিঃ কিছু পদ্ধতিতে ভোট গণনা ও আসন বণ্টন জটিল; সাধারণ মানুষের বোঝা কঠিন হতে পারে।
- উগ্রবাদী ঝুঁকিঃ উগ্রবাদী বা ছোট দল সরকার গঠনে অপরিহার্য হয়ে উঠে জাতীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
- নূন্যতম সীমারেখা ইস্যুঃ ছোট দলগুলোকে সংসদে ঢুকতে সীমারেখা দেওয়ার জন্য প্রায়ই থ্রেশোল্ড নির্ধারণ করা হয়। যাতে যে কেউ যে কোন পরিমান ভোট পেয়েই সংসদে না ঢুকতে পারে। কেননা কোন সীমারেখা না থাকলে সংসদ কোনভাবেই স্থিতিশীল থাকবেনা। গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিতে এরূপ বিধান নিশ্চিত করা হয়। তবে। কখনো কখনো ন্যায্য প্রতিনিধিত্বকেও সীমিত করে।
পি আর পদ্ধতি কোন কোন দেশে আছে?
জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইসরায়েল, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের ৮৫টিরও বেশি দেশে পি আর ভিত্তিক ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান। এসব দেশে সংসদে বহুদলীয় রাজনীতি ও বৈচিত্র্যময় মতাদর্শের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
- জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডঃ মিশ্র সদস্যভিত্তিক (MMP) ব্যবহৃত হয়—স্থানীয় ও তালিকাভিত্তিক সম্মিলিত ব্যবস্থায় মোট অনুপাত ঠিক থাকে।
- নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, ডেনমার্কঃ তালিকাভিত্তিক পদ্ধতি।
- আয়ারল্যান্ড, মাল্টাঃ একক স্থানান্তরযোগ্য ভোট পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা — বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে বর্তমানে FPTP (First-Past-The-Post) পদ্ধতিতে সংসদীয় প্রতিনিধি নির্বাচন ব্যাবস্থা প্রচলিত। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০২৬-এ বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করার দাবি জানিয়েছে জামাত সহ আরো কয়েকটি ছোট দল। বিএনপি এই পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে ঘোর আপত্তি করেছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যপক আলোচনা চললেও আদতে কোন সিদ্ধান্তে পৌছায়নি নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে। যেমনঃ বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতি চালু হলে কি ভোটের সঙ্গে আসন বিন্যাস আরও ন্যায়সঙ্গত হবে? বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে কি পি আর পদ্ধতি সামঞ্জস্যপূর্ণ অথবা বাংলাদেশে কি স্থিতিশীলতা কি আদৌ থাকবে? প্রশাসনিক ও আইনগত প্রস্তুতি অর্থাৎ, নির্বাচন কমিশন, ভোটার তালিকা, মনোনয়ন ও তালিকা পদ্ধতি কি পি আর পদ্ধতির জন্য যুক্তিসঙ্গত? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করা আবশ্যক।
বাংলাদেশে বর্তমান FPTP পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী জিতে। এই পদ্ধতিতে পরাজিত প্রার্থী যত ভোটই পান না কেন, সে ভোটগুলি নষ্ট হয় যার ফলে, একদলীয় শাসন তরান্বিত হতে পারে।
২০২৫ সালে নির্বাচন সংস্কার কমিশন বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতি চালু করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, কিন্তু পুরোপুরিভাবে চালুর সুপারিশ করেনি; পরিবর্তে দ্বিকক্ষীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বা ১০০ আসন দলীয় অনুপাতে বণ্টন করে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে। সুজন জরিপে (আগস্ট ২০২৫) দেখা গেছে, জনগণ সংস্কারের পক্ষে, যাতে পি আর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত; ৮৩% কেয়ারটেকার সরকার চান, ৮৯% প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদ সীমা সমর্থন করেন।
তবে, বিএনপি পি আর পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করে বলছে, এটি অস্থিরতা সৃষ্টি করবে, এবং হাসিনার মতো ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তির পুনরুত্থান ঘটাবে। তারা FPTP-এর অধীনে ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচন চায়। কিন্তু জামায়াত-ই-ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি এবং অন্যান্য ছোট দলগুলো পি আর পদ্ধতির পক্ষে জোরালো দাবি তুলেছে। তাদের দাবী, পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন স্বৈরাচার রোধ করবে এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে। দলগুলি পি আর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডঃ মুহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আগে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাসহ আরো অনেক বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আইনি-রাজনৈতিক পরিবর্তন ছাড়া পি আর পদ্ধতি চালু করলে বিভাজন বাড়বে। অর্থাৎ, নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরবর্তিতে পি আর পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে কি না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যদি ভোটের ন্যায্যতা ও বহুমত নীতির বাস্তবায়ন করা লক্ষ্য হয়, তাহলে পি আর বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে পি আর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে ধাপে ধাপে সমীক্ষা, গণমত সংগ্রহ ও ছোট ট্রায়াল করার মাধ্যমে। কিভাবে?
- আইন সংশোধনঃ বাংলাদেশের সংবিধান সহ অন্যান্য আইন সংশোধন করতে হবে। বর্তমান সংবিধান ও নির্বাচন সংক্রান্ত আইনে পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন করার সুযোগ নেই।
- ধাপে ধাপে পরীক্ষামূলক পাইলট প্রকল্পঃ নির্বাচন কমিশন, ভোটার তালিকা, মনোনয়ন ও তালিকা পদ্ধতি — এগুলো যাচাই না করে কেবল পদ্ধতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কোন নির্বাচনী এলাকায় মিক্সড সিস্টেম বা পার্টি লিস্ট পাইলট করা যেতে পারে।
- রাজনৈতিক বাস্তবতা ও স্থিতিশীলতাঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট ও পারফর্মিং রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিবেচনায় রাখতে হবে—বহুশক্তি ও বিচ্ছিন্নতা সরকারী কার্যক্রমকে জটিল করতে পারে। তাই, জনগণ ও রাজনৈতিক দলকে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে।
- নূন্যতম ভোটপ্রাপ্তির সীমারেখা নির্ধারণঃ ছোটছোট দলগুলো যাতে জাতীয় রাজনীতিতে বিভাজন সৃষ্টি না করতে পারে তার জন্য ন্যায্যতার সাথে নূন্যতম ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করার সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে। যেমনঃ যেমন ৫% ভোট না পেলে কোনো দল আসন পাবে না, যাতে ছোট দলগুলো অতিরিক্ত না হয়।
- স্বচ্ছ মনোনয়ন প্রক্রিয়াঃ যাতে ক্লোজড লিস্টে নেতারা একতরফা সিদ্ধান্ত না নিতে পারে—ওপেন লিস্ট বা মিশ্র পদ্ধতি বিবেচনা করা উচিত।
- সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতাঃ জনগণ ও রাজনীতি দুই ক্ষেত্রেই পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ যদি পরিবর্তনকে বিশ্বাস না করে, তা কার্যকর হবে না।
জনপ্রতিনিধিত্বের ন্যায্যতা বাড়াতে সক্ষম পি আর পদ্ধতি। কিন্তু এর কার্যকর প্রয়োগ নির্ভর করে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, প্রশাসনিক কাঠামো ও জনগণের গ্রহণযোগ্যতার ওপর। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে পি আর পদ্ধতি বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিস্তৃত জনমতের জরিপ, ছোট পরিসরের পাইলট প্রয়োগ এবং আইনগত পর্যালোচনা অপরিহার্য।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্নঃ পি আর পদ্ধতি কী?
উত্তরঃ পি আর পদ্ধতি হলো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা যেখানে ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব ভোটের অনুপাতে নির্ধারিত হয়।
প্রশ্নঃ পি আর পদ্ধতি কত প্রকার?
উত্তরঃ প্রধানত তিন প্রকার।
প্রশ্নঃ পি আর পদ্ধতির প্রকার কী কী?
উত্তরঃ পি আর পদ্ধতি – ক. তালিকাভিত্তিক পি আর; খ. মিশ্র সদস্যভিত্তিক পি আর, এবং গ. একক হস্তান্তরিত ভোটের পি আর।
প্রশ্নঃ পি আর পদ্ধতিতে কোন কোন দেশে নির্বাচন হয়?
উত্তরঃ জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইসরায়েল, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের ৮৫টিরও বেশি দেশে পি আর ভিত্তিক ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্নঃ পি আর চালু হলে কি ছোট দলগুলোই সব জায়গায় জিতবে?
উত্তরঃ সব ক্ষেত্রে নয়; পি আর মূলত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী আসন দিয়ে থাকে—তাই শক্তিশালী জনপ্রিয়তা পেলে বড় দলও সর্বোচ্চ আসন পাবে। ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও সব জায়গায় জিতবে না।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কিভাবে পি আর পদ্ধতি চালু করা যায়?
উত্তরঃ আইন-পরিবর্তন, নির্বাচন কমিশন প্রণোদনা, পাইলট প্রকল্প ও জনগন ও রাজনীতিবিদদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে চালু করা সম্ভব।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কী পি আর পদ্ধতি চালু হবে?
উত্তরঃ আলোচনা চলছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়নি।