হাজার হাজার বছর ধরে সমৃদ্ধ প্রাচীন ইরাকের ইতিহাস। ইরাকের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হাজার বছর ধরে অগণিত উপায়ে গোটা বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছে, প্রভাবিত করেছে। মেসোপটেমিয় সভ্যতার সূচনা থেকে শুরু করে মধ্যযুগের ইসলামী সাম্রাজ্য পর্যন্ত ইরাক মানব ইতিহাসের গতিপথ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর এই সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সাথে দেশটির শত বছরের সংঘাত, অস্থিতিশীলতা এবং নিপীড়নের ইতিহাসও আছে।
ইরাকের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল ১৯৫৮ সালের ১৪ জুলাই বিপ্লব। এইদিন একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা এবং বামপন্থী রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে। পতন ঘটে পাশ্চাত্য তথা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থনপুষ্ট দামেস্কের ফয়সাল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাশেমীয় রাজতন্ত্রের।
এই জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল ভাবধারার সাধারণ জনগণের সমর্থন এবং সশস্ত্র বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় ব্রিগেডিয়ার আব্দুল করিম কাসিম এবং কর্ণেল আব্দুস সালাম আরিফের নেতৃত্বে ১৯৫৮ সালের ১৪ জুলাই একটা সামরিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। ব্রিগেডিয়ার আব্দুল করিম কাসিম ছিলেন এই প্রজাতন্ত্রের প্রধান। এই বিপ্লবে বাদশাহ দ্বিতীয় ফয়সাল, যুবরাজ আবদুল্লাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নূরী আস-সাঈদকে হত্যা করার মাধ্যমে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটানো হয় এবং গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের নীতির উপর ভিত্তি করে একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করে।
এই বিপ্লব দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক সৃষ্টি করে। শুধু ইরাক কিংবা আরব বিশ্বের ইতিহাসে নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ১৪ জুলাই বিপ্লব। এই বিপ্লব ইরাকের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং গোটা অঞ্চলজুড়ে মানুষের আশা এবং মুক্তির একটি শক্তিশালী প্রতীক দাড়িয়ছিল।
এই নিবন্ধে ঐতিহাসিক ১৪ই জুলাইয়ের সামরিক বিপ্লবের পটভূমি, জড়িত মূল পক্ষ এবং আধুনিক ইরাকের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি আলোচনা করা হবে। যদি ঐতিহাসিক ইরাকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, ১৯৫৮ সালের ১৪ই জুলাই সংঘটিত ‘ইরাকে সামরিক বিপ্লবের পটভূমি’ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন, তাহলে চলুন শুরু করিঃ
১৪ ই জুলাই বিপ্লবের পটভূমি
ইরাকের ১৪ ই জুলাই বিপ্লব দেশটির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঐতিহাসিক এই ঘটনা ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিপথের একটি নাটকীয় মোড় সৃষ্টি করে। বিপ্লবটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক দুর্নীতি, রাজতন্ত্র এবং শাসক অভিজাতদের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা সহ জটিল কারণগুলির ফলস্বরূপ ছিল।
বিপ্লবের পূর্ববর্তী বছরগুলিতে শাসন ক্ষমতায় ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অকার্যকর নূরী সরকার। এই সরকারের পরিচালিত নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে ইরাকের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতিতে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এছাড়া, বিপ্লবের পূর্ববর্তী বছরগুলিতে ইরাক তেল রফতানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল, আর এসবের নিয়ন্ত্রণ ছিল বিদেশী সংস্থাগুলির হাতে।
আরো পড়ুনঃ মরক্কোর জাতীয়তাবাদি আন্দোলন ও সুলতান মুহাম্মাদ
শাসকদের অযোগ্যতা, দুর্নীতি , অবিচার, অনাচার, উৎপীড়ন, শোষণ ও লুন্ঠনের ফলে জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ছিল। তারা বৃহত্তর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চেয়েছিল। দেশে যখন এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছিলো ঠিক সেই সময় দেশের সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ইরাকের সেনাবাহিনীর ভেতরেও জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল ভাবধারার জাগরণ সৃষ্টি হয়। এই অসন্তোষে ঘি ঢেলে দিয়েছে ইরাকের ছাত্র, শ্রমিক এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কমিউনিস্ট পার্টির মতো বিরোধী দলগুলি। এই সব পরিস্থিতিই সামরিক বিপ্লবের পটভূমি রচনা করে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
অভ্যন্তরীণ সমস্যাসমূহ
অভ্যন্তরীণভাবে, বিপ্লবটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং রাজতন্ত্র এবং শাসক অভিজাতদের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মতো বেশ কয়েকটি কারণের প্রেক্ষিতে সংঘটিত হয়েছিল। এর পাশাপাশি আরো কিছু কারণ ১৪ই জুলাইয়ের বিপ্লবের পেছনে কাজ করেছে, যেমনঃ
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
১৯৫০ এর দশকে, ইরাক তেল রফতানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল, যা বিদেশী সংস্থাগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই ধরণের ব্যবস্থা দেশটিকে বৈশ্বিক তেল বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেলে এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উপরন্তু, দারিদ্র্য, উচ্চ বেকারত্বের হার এবং মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপক ছিল, যার ফলে জনসংখ্যার মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ১৯৫৬ সালে, ইরাকের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৪০০ ডলার, যা কুয়েত (৫৫০০ ডলার) এবং সৌদি আরব (১২০০ ডলার) এর মতো অন্যান্য তেল উত্পাদনকারী দেশগুলির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল।
রাজনৈতিক অবক্ষয়
সরকারকে ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। স্বজনপ্রীতি এবং বিশেষ গোষ্ঠির প্রভাব ব্যাপকভাবে ছিল এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব ছিল। ক্ষমতাসীন অভিজাতদের ক্ষমতা এবং সম্পদের উপর একচেটিয়া আধিপত্য ছিল, যা মূলত জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়ে তোলে। রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং সরকারের নীতির প্রতি আস্থার অভাব ক্রমবর্ধমান বিরোধী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল।
বিরোধী দমননীতি গ্রহণ
নূরী আস সাঈদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের পর। এরপর তিনি নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালের পর হতেই ইরাকী রাজনীতি বিশেষ সুবিধাভোগী একটি ক্ষুদ্র দলের স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়। ভূ-স্বামী এবং তাদের স্বার্থের প্রতিভূ নূরী আস সাঈদ সর্ব প্রকার সংস্কার আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট আন্দোলনের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে অভিহিত করেন এবং যে কোনো প্রকার আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করার নীতি গ্রহণ করেন।
সাঈদ সরকার আলজেরিয়ায় ফরাসী নীতি ও বাগদাদ চুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদেরও কম্যুনিস্ট আখ্যা দিয়েছে এবং হয়রানী করেছে নানাভাবে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের বিক্ষোভকারীদের এই সরকার “রাষ্ট্রের শত্রু” আখ্যা দেয়। ছাত্র-শিক্ষকরাও নানাভাবে এই সরকারের শিকার হয়েছে, যাদেরকেই বামপন্থী বলে মনে করেছে তাদের বিরুদ্ধেই নূরী আস সাঈদ নিপীড়ন করেছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ বাহিনীকেও তিনি মার্কিন আধুনিক অস্ত্র- শস্ত্রে সুসজ্জিত করেছেন কম্যুনিস্ট দমনের জন্য।
সংবাদপত্রের উপর হস্তক্ষেপ
নূরী সরকার দেশের সংবাদপত্রের উপরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ বলবৎ রাখেন। সরকারের অনুমতি ব্যতীত কিংবা সরকারী বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা না করিয়ে কোনো সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রচার করলে সম্পাদক এবং প্রকাশকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। সরকারের এই ধরনের কার্যকলাপ জনগণের মনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান জাগরণ ও ক্ষমতাসীনদের কমিউনিস্ট ভীতি
১৯৪৫ সালের পর মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে আমেরিকা সমর্থিত পুঁজিবাদী ও সোভিয়েত সমর্থিত সাম্যবাদের মাঝে স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা হয়। ইরাকের কমিউনিস্ট পার্টির মতো বিরোধী দলগুলি ছাত্র, শ্রমিক এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে ইরাকে সাম্যবাদী কমিউনিস্টদের আগমনের ভীতি নূরী সরকারকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।
আরো পড়ুনঃ মারাকেশ ঘোষণাপত্রঃ মুসলিম দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় আধুনিক দলিল
ছাত্র-শিক্ষকরাও নানাভাবে এই সরকারের শিকার হয়েছে, যাদেরকেই বামপন্থী বলে মনে করেছে তাদের বিরুদ্ধেই নূরী আস সাঈদ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ বাহিনীকেও তিনি মার্কিন আধুনিক অস্ত্র- শস্ত্রে সুসজ্জিত করেছেন কম্যুনিস্ট দমনের জন্য। রাজতন্ত্র যেন নিপীড়নের প্রতীক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল। ক্ষমতাসীন অভিজাতদের সাথে সাধারণ জনগণের চাহিদার সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না। এবং একই সাথে জনসাধারণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং প্রতিনিধিত্বের ইচ্ছা-আকাঙ্খা জেগে উঠেছিল।
অনুগত রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা
নূরী সরকার সমস্ত রাজনৈতিক দল বাতিল ঘোষণা করেন এবং লোক দেখানো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে তারই অনুগত একটি বিরোধী রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা চালান। তিনি ভেবেছিলেন, সালিহ জাবেরের মতো অনুগত রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করবেন। কিন্তু তার সেই ভাবনা ধূলিসাৎ হয় যখন কিছু সংখ্যক প্রগতিপন্থী নাগরিক “মুক্তিদল” নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে সরকারী অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। অবশ্য সরকার এতে অসম্মতি প্রকাশ করেন এবং সেই সাথে উক্ত দলের বেশ ক’জন সদস্যকে গ্রফতার করা হয়। পরে নূরী সরকার একটি সুনিয়ন্ত্রিত বিরোধী রাজনৈতিক দল গঠন করলে প্রগতিশীলরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।
জনস্বার্থ বিরোধী খাতে অর্থ ব্যয়
নূরী আস-সাঈদ তেলের অর্জিত রাজস্ব ব্যয় করতে “উন্নয়ন পরিষদ” গঠন করেন। যার প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ লর্ড স্যালটার (Lord Salter) কে। কিন্তু এই পরিষদ জনকল্যাণধর্মী পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় । অবশ্য শেষের দিকে নূরী সরকার কিছু কিছু জনকল্যাণধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু ততদিনে জনগণের মাঝে রাজতন্ত্রে বিরুদ্ধে ক্রোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিলো। জনমত ও জনস্বার্থের প্রতি উপেক্ষা, জনস্বার্থ পরিপন্থি মনোভাবই নূরী সরকারের পতনকে তরান্বিত করেছিল।
তিনটি বিশেষ শ্রেণীর উপর নির্ভরশীলতা
জনগণের তীব্র ক্রোধের পরেও নূরী সরকার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উপর নির্ভর না করে রাজতন্ত্রকে দীর্ঘস্থায়ী করতে অতিরিক্ত সেনাবাহিনীর উপর নির্ভর শুরু করে। একারণেই পরবর্তীতে সেনাবাহিনী যে কোনো সময় নূরী সরকারকে অপসারণের ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়। সেনাবাহিনী ছাড়াও নূরী সরকার জমিদার শ্রেণী এবং গোত্র প্রধানের উপর নির্ভরশীল ছিল। এই শ্রেণীগুলো যে কোনো প্রকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের বিরুদ্ধে ছিল। ফলে তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে নূরী সরকার কোনো সংস্কার প্রবর্তন করতে রাজী ছিলনা।
এরূপ পরিস্থিতিতে ১৯৫৫ সালের ২ নভেম্বর উম্মাদলের নেতা সালিহ জাবর এক স্মারকলিপিতে এই সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। তার মতে, এই সরকার অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে এতে মন্তব্য করা হয়।
নূরী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি
ইরাকে সংঘটিত ১৯৫৮ সালের সামরিক বিপ্লবের পশ্চাতে অন্যতম কারণ ছিল নূরী সরকারের পররাষ্ট্রনীতিসমূহ। এর প্রধান দিকগুলো আলোচনা করা হলো
পাশ্চাত্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা
জাতীয়তাবাদীদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফলে ১৯৩০ সালে ইঙ্গ-ইরাকী চুক্তির মাধ্যমে ইরাক স্বাধীনতা লাভ করে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন অধিক পাশ্চাত্য তথা ব্রিটিশ মদদপূষ্ট নূরী আস-সাঈদ। ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোট গঠন করায় ইরাকে তাদের প্রভাব আরো বেড়ে যায়। ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ইরাকে ” মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা” গঠনের চেষ্টা করে।
তাদের প্রাথমিক নীতি ছিল দেশে সমাজতন্ত্রের বিস্তার রোধ করা এবং এই অঞ্চলে তাদের কৌশলগত স্বার্থ বজায় রাখা। কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব মোকাবেলায় এবং বিরোধী দলগুলোকে দমন করতে ব্রিটেন ইরাক সরকারকে সমর্থন প্রদান করে। ব্রিটিশ উপদেষ্টাদের ইরাকি সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল এবং ব্রিটেনও দেশটিকে অর্থনৈতিক সহায়তা সরবরাহ করেছিল। তারা ইরাকে সমাজতন্ত্রের বিস্তার রোধ করতে সামরিক ও পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। উপরন্তু, ব্রিটেন জাতিসংঘে তার প্রভাব ব্যবহার করে ইরাকের তেল শিল্পকে জাতীয়করণের সকল প্রচেষ্টাকে বাধা দেয়। কারণ, ইরাকের তেলশিল্পে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলির একক আধিপত্য ব্রিটেন কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চায়নি।
বাগদাদ চুক্তি ও আইজেন হাওয়ার নীতিতে সম্মতি
বাগদাদ চুক্তি বা সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সেন্টো) মূলত ছিল ১৯৫৫ সালে তুরস্ক, ইরান, ইরাক, পাকিস্তান এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে গঠিত একটি সামরিক জোট। যুক্তরাষ্ট্র পরে পর্যবেক্ষক হিসেবে এই জোটে যোগ দেয়। চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কমিউনিজমের অনুভূত হুমকির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরক্ষা সরবরাহ করা।
প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-সাইদের অধীনে ইরাকি সরকার বাগদাদ চুক্তির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল। যাইহোক, চুক্তিটি ইরাকে অত্যন্ত বিতর্কিত ছিল, কারণ অনেকে এটিকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার এবং ইরাকের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসাবে দেখেছিল। চুক্তিটি ইরাকি জাতীয়তাবাদী, আরব জাতীয়তাবাদী এবং কমিউনিস্ট পার্টির বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার বাগদাদ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রশাসনের স্নায়ুযুদ্ধের কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে দেখেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির সদস্যদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করেছিল এবং জোটের প্রচারের জন্য তার প্রভাব ব্যবহার করেছিল। যাইহোক, চুক্তির প্রতি আইজেনহাওয়ারের সমর্থন এবং ইরাকি রাজনীতিতে তার অনুভূত হস্তক্ষেপ ইরাকে আমেরিকাবিরোধী মনোভাবকে উত্সাহিত করেছিল।
আরো পড়ুনঃ হরমুজ প্রণালী ও সমকালীন বিশ্ব অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব
১৪ ই জুলাই বিপ্লবের প্রাক্কালে বাগদাদ চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল। ইরাকের এই চুক্তিকে বিদেশী আধিপত্যের হাতিয়ার এবং ইরাকের সার্বভৌমত্বের অপমান হিসাবে সমালোচকরা দেখেছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি এবং অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি এই চুক্তি এবং এর সমর্থকদের জোরালোভাবে বিরোধিতা করেছিল। এ সময় ইরাকের অভ্যন্তরে ‘বা’স দল’ বা ‘গণদল’ আরব ঐক্য ও সমাজতন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাব পোষণ করে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যাইহোক চুক্তির প্রতি নুরীর সমর্থন ও বিরোধী দল দমন শেষ পর্যন্ত সরকারের সমর্থণ হ্রাস করে এবং বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে।
মিশরের সাথে দ্বন্দ্ব
ইরাক পাশ্চাত্য নিয়ন্ত্রিত সামরিক জোটে যোগদান করায় মিশর ও সিরিয়া সহ অন্যান্য আরব দেশগুলোর সাথে নূরী সরকারের সম্পর্ক দ্রুত শিথীল হয়ে পড়ে। ইরাকের এ ধরনের কর্মকান্ড রোধে নানা প্রচেষ্টা চালালেও তা ব্যর্থ হয় এতে করে অবনতি ঘটে কায়রো-বাগদাদ সম্পর্কের। মিশরে ‘স্বাধীন ইরাক বেতার কেন্দ্র’ স্থাপন করে নূরী সরকার ও রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।
এছাড়াও ১৯৫৬ সালে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরাইল একত্রে মিশরের উপর হামলা করলে সমস্ত আরব দেশ একত্রিত হয়ে তা প্রতিহত করলেও নূরী সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। আরব দেশগুলো আক্রমণকারী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক ছেদ করে এতে করে নূরী সরকার ফ্রান্সের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলেও ব্রিটেনের সাথে অটুট থাকে। শুধু তাই নয়, নূরী সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও আর্থিক সহায়তায় কমিউনিস্ট আন্দোলন দমনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।
সংযুক্ত আরব ফেডারেশন গঠন
নূরী সরকার ও তার পররাষ্ট্র নীতি ইরাককে ক্রমশই প্রগতিশীল আরব জাতীয়তাবাদ হতে দূরে সরিয়ে রাখে। আরব ঐক্যের জন্য মিশরের সুলতান নাসের ১৯৫৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারী মিশর ও সিরিয়াকে একত্রিত করে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র বা U.A.R.(United Arab Republic) গঠন করেন এবং অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোকে একত্রিতকরণের চেষ্টা করেন। এর প্রতিদন্দ্বিতায় নূরী আস-সাঈদ নিজের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য ১২ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৮ সালে ইরাক ও জর্ডান একত্রিত করে সংযুক্ত আরব ফেডারেশন বা U.A.F.( United Arab Federation) গঠন করেন। অনেকেই এটাকে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রকে বানচাল করার পাশ্চাত্য প্রয়াস বলেই মনে করেন। এতে করে জনমনে নূরী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এবং সেনাবাহিনী প্রকাশ্যেই সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে।
১৪ই জুলাইয়ের সামরিক বিপ্লব
ইরাকের ১৪ ই জুলাই বিপ্লব দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, যার ফলে ইরাকে রাজতন্ত্রের অবসান এবং স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। ১৪ই জুলাই বিপ্লবটি অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং সুপরিকল্পিত ঘটনা ছিল। এর সফলতার পেছনের কারণগুলি জটিল এবং বহুমুখী ছিল। অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় কারণই অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত সাফল্যে অবদান রেখেছিল। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং রাজতন্ত্র এবং শাসক অভিজাতদের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিল, যখন স্নায়ুযুদ্ধ এবং বাগদাদ চুক্তি ছিল বাহ্যিক কারণ যা বিপ্লবে ভূমিকা রেখেছিল।
এধরণের নানা গণবিরোধী ও বিতর্কিত-সমালোচিত কর্মকান্ডের কারণে নূরী সরকার পতনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। জনসমর্থন হারানোর পরও তিনি আরোও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকতে পারতেন কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে অস্ত্র-শস্ত্র ক্রয় করে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করে যা তার পতনের পথকে তরান্বিত করে। এ সময় সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রগতিশীল ও আরব জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে কর্ণেল আব্দুস সালাম আরিফ ও ব্রিগেডিয়ার করিম কাসিম ১৯৫৮ সালের ১৪ জুলাই একটি সফল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নূরী সরকারের পতন নিশ্চিত করে।
প্রত্যক্ষ বিপ্লবের শুরু ১৯৫৮ সালের ১৩ জুলাই সন্ধ্যায়। ওইদিন আবদুল করিম কাসিমের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র বিদ্রোহী বাগদাদের রাজপ্রাসাদে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। ১৪ ই জুলাইয়ের প্রথম প্রহর পর্যন্ত এই আক্রমণ অব্যাহত ছিল, বিপ্লবী বাহিনী প্রাসাদে হামলা চালায় এবং সকালের মধ্যেই সেনাবাহিনী ক্ষিপ্র গতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বেতার ভবন, নূরী সরকারের বাসভবন, প্রধান পোস্ট অফিস, রশিদ সেনাছাউনি, রিহাব প্রাসাদ, ওয়াশ্বাস সেনাছাউনি এবং বিমানবন্দর দখল করে নেয়। তারা রাজপরিবার এবং রাজপরিবারের অনেক সদস্যকে বন্দী করে নিয়ে যায়।
ক্যাপ্টেন আব্দুল জাওয়াদ হামিদের নেতৃত্বে প্রাসাদ অবরোধকারীর গুলিতে বাদশাহ দ্বিতীয় ফয়সাল এবং তার পিতৃব্য আব্দুল ইলাহ নিহত হন। ছদ্মবেশে পলায়ন করার সময় নূরী আস-সাঈদ ধৃত ও নিহত হন। এ সময় নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে আইন-শৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিগেডিয়ার আহমদ সালিহ আল-আবদীর নেতৃত্বে সামরিক আইন জারী করা হয়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে, তারা আবদুল করিম কাসিমকে নেতা করে একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল।
ইরাকে নতুন সরকার গঠন
১৯৫৮ সালের ১৪ জুলাই সকালে সফল বিপ্লবের খবর দাবানলের মতো পুরো ইরাকে ছড়িয়ে পড়ে। জনগণ রাস্তায় নেমে আসে, পতাকা উড়িয়ে নতুন স্বাধীনতাকে উদযাপন করে। রাজতন্ত্রের প্রতীকগুলি খুব দ্রুত সরিয়ে নতুন প্রতীকগুলির প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল।
বিপ্লবের চূড়ান্ত সাফল্য ছিল আবদুল করিম কাসিমের নেতৃত্বে একটি নতুন সরকার গঠন। ইরাকের জনগণের মধ্যে কাসিম অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন তার শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী বিশ্বাস এবং সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রার উন্নতিতে তার প্রতিশ্রুতির জন্য।
সরকার গঠনের জন্য, কাসিম বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পটভূমি থেকে বেশ কয়েকটি মন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। কাসিমের সরকার প্রাথমিকভাবে একটি অস্থায়ী সরকার ছিল, তবে পরবর্তিতিতে তিনি স্থায়ী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হন।
ইরাকি জনগণের বিভিন্ন স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবে এমন একটি বৃহত্তর জোট তৈরি করতে তিনি চেয়েছিলেন। সরকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, কাসিম দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি দ্রুত মূল শিল্পগুলির জাতীয়করণ এবং সাধারণ ইরাকিদের জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে দরিদ্র কৃষকদের জমি পুনর্বণ্টন ও মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছিলেন।
কাসিমের সরকার মিশর এবং সিরিয়া সহ অন্যান্য আরব দেশগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিল এবং বিদেশী শক্তির উপর ইরাকের নির্ভরতা হ্রাস করতে কাজ করেছিল। দেশের তেল সম্পদ, যা দীর্ঘকাল ধরে বিদেশী সংস্থাগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল, রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল, যার ফলে ইরাকি জনগণের জন্য আরও বেশি সম্পদ এবং সমৃদ্ধি হয়েছিল।
যাইহোক, কাসিমের সরকার বিপ্লবের পরের মাস এবং বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। ইরাক জাতিগত, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নানাভাগে বিভক্ত ছিল এবং তাদের মধ্যে ঘন ঘন ক্ষমতার লড়াই ছিল। কাসেম রক্ষণশীল ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং প্রতিবেশী দেশগুলির বিরোধিতার মুখোমুখি হন যারা ইরাকের সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের দিকে অগ্রসর হওয়াকে তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য হুমকি হিসাবে দেখেছিল।
বিদেশী শক্তির দ্বারা তার সরকারকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা সহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, কাসিম বিপ্লবের নীতিগুলির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তার উত্তরাধিকার আজও ইরাকিদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে, কারণ তারা তাদের দেশের জন্য আরও গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ে তোলার দিকে কাজ করে।
এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কাসিম ইরাকে আরও ন্যায়সঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। তিনি সাধারণ ইরাকিদের জীবনযাত্রার উন্নতির লক্ষ্যে প্রগতিশীল নীতি বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছিলেন এবং ১৯৬৩ সালে তার উৎখাত এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তিনি জনসংখ্যার অনেক অংশের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
উপসংহার
অটোমানদের পতনের পর ইরাকে ১৯২১ সালে ব্রিটিশ সহায়তায়, ফয়সালের নেতৃত্বে গঠিত হাশেমীয় রাজবংশের শাসকরা দুর্নীতিগ্রস্থ, অযোগ্য এবং স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠেছিল। নূরী সরকারের নানা ধরনের অন্যায়মূলক কর্মকান্ডের ফলশ্রুতিতে সংঘটিত হয় ১৯৫৮ সালের ১৪ই এপ্রিলের ঐতিহাসিক বিপ্লব।
এই বিপ্লবের সাফল্যের একটি বড় অংশ ছিল ইরাকের জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত সমর্থন। এই সমর্থনের কারণ, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজতন্ত্র এবং বিদেশী শক্তির সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে হতাশ ছিল। বিদেশী আধিপত্য থেকে ইরাককে মুক্ত করতে বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়া জাতীয়তাবাদী নেতাদের নায়ক হিসাবে দেখা হত। এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন
এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…
সাম্প্রতিক আর্টিকেল
শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?
পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ও সীমান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।
আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?
আদালত হলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সেই বৈধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি, অপরাধের বিচার ও আইনি অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) কী? ইক্যুইটির ম্যাক্সিম সমূহ কী কী?
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) হল সাধারণ আইন (Common Law) এর শর্তের বাইরে গিয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা
আব্রাহাম চুক্তিঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, এবং ফিলিস্তিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডঃ ফিলিস্তিনের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের বুলি!
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয় ।