সাইপ্রাস সমস্যার আদ্যোপান্ত

সাইপ্রাস, ভূমধ্যসাগরের একটি দ্বীপ যা তুরস্কের উপকূল হতে মাত্র ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত। এ দ্বীপটির উত্তরাংশে তুর্কি বংশোদ্ভুত মুসলিম এবং দক্ষিণাংশে গ্রীক বংশোদ্ভূত খৃষ্টান জাতি বসতি গড়ে তুলেছিল। বিভিন্ন বিষয়ে মত পার্থক্যের কারণে উভয়ের মাঝে সৃষ্টি হয় বিদ্বেষ ও হিংসাত্মক সম্পর্কের যা গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার পথে বাঁধা হয়ে উঠেছে।
সাইপ্রাস সমস্যার

সাইপ্রাস, ভূমধ্যসাগরের একটি দ্বীপ যা তুরস্কের উপকূল হতে মাত্র ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত। এ দ্বীপটির উত্তরাংশে তুর্কি বংশোদ্ভুত মুসলিম এবং দক্ষিণাংশে গ্রীক বংশোদ্ভূত খৃষ্টান জাতি বসতি গড়ে তুলেছিল। বিভিন্ন বিষয়ে মত পার্থক্যের কারণে উভয়ের মাঝে সৃষ্টি হয় বিদ্বেষ ও হিংসাত্মক সম্পর্কের যা গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার পথে বাঁধা হয়ে উঠেছে। সাইপ্রাস সমস্যার শুরুটা এখান থেকেই।

এই দ্বীপটির সাইপ্রাস নামকরণে রয়েছে মতভেদ তারমধ্যে একটি হলো এখানে প্রাচীনকাল হতে প্রচুর তামা পাওয়া যেত যা গ্রিক ভাষায় ‘কাইপ্রোস’ নামে অভিহিত আর এ থেকেই উৎপত্তি হয়েছে সাইপ্রাস নামের।

১৯৫৮ সালে ইরাকের সামরিক বিপ্লবের পটভূমি

১৮৭৮ সাল হতে ব্রিটিশ শাসিত সাইপ্রাস দ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রীক বংশদ্ভূত জনগণ স্বাধীনতা ও গ্রীসের সাথে একত্রীকরণের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কর্ণেল জর্জ গ্রীভাসের নেতৃত্বে এ আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠে। এ সময় তুরস্ক অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে। জর্জ গ্রীভাসের নেতৃত্বে গ্রীক সাইপ্রিয়টরা তুর্কি সাইপ্রিয়টদের উপর আক্রমণ চালায়। এতে করে তুর্কি সাইপ্রিয়টদের ক্ষয়ক্ষতির সংবাদে উত্তেজিত ইস্তাম্বুলের জনসাধারণ ১৯৫৫ সালের সেপ্টেম্বরে এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। পরে এ প্রতিবাদ মারাত্মক গ্রীক বিরোধী দাঙ্গায় রুপান্তরিত হয়। এ অবস্থা নিরসনকল্পে ব্রিটেন, গ্রীস, তুরস্ক, গ্রীক সাইপ্রিয়ট এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের প্রতিনিধিবর্গের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনে। ১৯৫৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী দীর্ঘ আলোচনার পর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ধারাসমূহ হলো:

  • ১৯৬০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী হতে সাইপ্রাস স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করবে।
  • সরকার গঠন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গ্রীক সাইপ্রিয়টদের ৭০% এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের জন্য ৩০% রাখা হয়।
  • সাইপ্রাস শাসনকারী ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে বৃটেন কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী রাখতে পারবে।
  • গ্রীক সাইপ্রিয়ট এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য অর্থাৎ গ্রিস ৯৫০ জন ও তুরস্ক ৬৫০ জন সৈন্য সাইপ্রাস প্রেরণ করবে।
  • গ্রীস এবং তুরস্কের পক্ষ হতে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী কনস্টান্টিন কারামানলিস ও আদনান মেন্দারেস এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। নতুন চুক্তি অনুযায়ী ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারের গ্রীক সাইপ্রিয়ট নেতা আর্চবিশপ ম্যাকারিয়াস প্রেসিডেন্ট ও তুর্কি সাইপ্রিয়ট নেতা ড. ফাজিল কুচুক ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।

সাইপ্রাস সমস্যা কি?

সাইপ্রাস সমস্যার একটি অন্যতম কারণ হলো মৌলিক আদর্শগত দ্বন্দ্ব। সাইপ্রাসের ভবিষ্যত সম্বন্ধে গ্রীক সাইপ্রিয়ট এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকায় চুক্তির যে মূলকথা সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মনোভাব তা বিনষ্ট হয়, ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে অবিশ্বাস, সন্দেহ ও শত্রুতা। তুর্কি সাইপ্রিয়টদের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য প্রেসিডেন্ট ম্যাকারিয়াস সংবিধান পরিবর্তনের যে প্রয়াস পান, তার ফলে পারস্পারিক অবিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পায়। এর ধারাবাহিকতায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। বেশ কয়েকটি তুর্কি অধ্যুষিত এলাকা গ্রীক সাইপ্রিয়টদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় তুরস্ক সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ইনুনূর উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। গ্রীক হতে বেআইনিভাবে বহু সংখ্যক সামরিক ও আধাসামরিক লোক সাইপ্রাসে আগমন করায় পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। তুরস্ক হতেও কিছু আধা সামরিক লোক তুর্কি সাইপ্রিয়টদের সাহায্যার্থে গমন করে। তবে এদের সংখ্যা গ্রীক অনুপ্রবেশকারীদের তুলনায় অনেক কম ছিল।

মরক্কোর জাতীয়তাবাদি আন্দোলন ও সুলতান মুহাম্মাদ

প্রেসিডেন্ট ম্যাকারিয়াস দাবি করেন যে, সাইপ্রাস সমস্যা একান্তভাবেই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং দু’সম্প্রদায়ের লোকেরাই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। ১৯৫৯ সালে যে চুক্তি হয়েছিল তারই প্রেক্ষিতে সাইপ্রাসে গ্রীস ও তুরস্কের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে অবসানের দাবী করেন। কিন্তু তুরস্ক উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার কাঠামোর ভিতরে বা তুরস্ক ও গ্রীসের মধ্যে প্রত্যক্ষ আলোটনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানের দাবী জানায়। এ দ্বীপটিকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে দুটি অংশে ভাগ করে একটি ফেডারেশন গঠনের দাবিও তুরস্ক কর্তৃক উত্থাপিত হয়। ১৯৬৪ সালের মার্চে সাইপ্রাসে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েনে সম্মতি জ্ঞাপন করে সকল পক্ষই। প্রথমত তিন মাসের জন্য মোতায়েন করা হলেও পরবর্তীতে দফায় দফায় বাড়ানো হয় এর মেয়াদ। জাতিসংঘের এক প্রস্তাবে সাইপ্রাসের ভৌগলিক অখন্ডতা স্বীকার করে নেওয়া হয়। ১৯৬৪ সালে গ্রীস ও তুরস্কের সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ হয়। সাইপ্রাসের কোন কোন তুর্কি সাইপ্রিয়ট এলাকা গ্রীক সাইপ্রিয়ট ও গ্রীস হতে বেআইনিভাবে আগত আধাসামরিক বাহিনী দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে তুর্কি বিমান বাহিনী অবরোধকারীদের উপর হামলা চালায়। উভয় দেশের মধ্যে দেখা দেয় যুদ্ধের আশংকা। এ সময় জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধ হয়। ১৯৬৫ সালে গালো প্লাজা (Galo plaza) জাতিসংঘের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সাইপ্রাসের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব দেয় কিন্তু তুরস্ক কর্তৃক তা প্রত্যাখাত হয়।

১৯৬৭ সালে গ্রীক সাইপ্রিয়টগণ তুর্কি সাইপ্রিয়টদের উপর আক্রমণ চালায় এর ফলে তুরস্ক সাইপ্রাসে অভিযান পরিচালনার হুমকি দেয়। মার্কিন সরকার ও জাতিসংঘ আবার মধ্যস্থতা করে গ্রীক আধা সামরিক লোকদের দ্বীপ ত্যাগ করার প্রতিশ্রুতিতে সংঘর্ষ এড়াতে সক্ষম হয়। তবুও উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে চলতে থাকে খন্ড সংঘর্ষ। ১৯৭১ সালে দু’সম্প্রদায়ের আলোচনায় ব্রিটেন, গ্রীস, তুরস্কের অংশগ্রহণর কথা উল্লেখ করেন তৎকালীন জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উথান্ট কিন্তু তা বাস্তবে রুপ লাভ করেনি।

প্রেসিডেন্ট ম্যাকারিয়াসের নীতিতে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায় ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে। অপরদিকে, “ইনোসিস এর সন্ত্রাসবাদী নেতা জর্জ গ্রীভাসকে দমন করার জন্য ম্যাকারিয়াস সরকার চেকোস্লোভাকিয়া হতে অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করেছে “- ৯ ফেব্রুয়ারী গ্রীক সরকার এই অভিযোগ করে বসে। এর তিনদিন পর গ্রীস সরকারীভাবে ম্যাকারিয়াসের নিকট কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করে। এগুলোর মধ্যে চেকোস্লোভাকিয়া হতে ক্রয়কৃত অস্ত্রশস্ত্র জাতিসংঘ বাহিনীর নিকট অর্পণ, ম্যাকারিয়াস কর্তৃক কমিউনিস্ট বিরোধী জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। সমস্ত প্রস্তাব সম্পূর্ণভাবে গ্রহণের অযোগ্য এবং “অবমাননাকর চরমপত্র” আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখান করেন। এথেন্স ও নিকোসিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটায় নিকোসিয়া থেকে গ্রীক রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করা হয়।

How Sikkim became a part of India?

১৯৭২ সালের ২ এপ্রিল তুর্কি প্রধানমন্ত্রী সাইপ্রাসে সকল দল কর্তৃক অস্ত্র বর্জনের আহ্বান জানান। পক্ষান্তরে ১৬ এপ্রিল তুর্কি সাইপ্রিয়টদের নেতা রউফ দেংতাশ সাইপ্রাসে নিরাপত্তা রক্ষার ভার অর্পনের প্রস্তাব করেন গ্রীস ও তুরস্কের উপর। ইতোমধ্যে ব্রিটেনের মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরু হয়ে যায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। গ্রীক ও তুর্কি সাইপ্রিয়টদের প্রতিনিধিত্ব করেন যথাক্রমে গ্লাফকস ক্লেরাইডস ও রউফ দেঙ্কটাস। কিন্তু আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। সাইপ্রাসের অভ্যন্তরীণ অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। ২৮ অক্টোবর নিকোসিয়া ও ফামাগুস্তায় ম্যাকারিয়াস সমর্থক ও গ্রীভাস সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

হরমুজ প্রণালী ও সমকালীন বিশ্ব অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব

এছাড়াও, গ্রীসের সাথে সংযুক্তির দাবীতে বিক্ষোভরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারী। লিমাসোলেও ম্যাকারিয়াস সমর্থক ও ইনোসিসি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।১৯৭৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ম্যাকারিয়াস সমর্থকগণ জয় লাভ করে। ম্যাকারিয়াস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুন:নির্বাচিত হন এবং রউফ দেঙ্কটাস নির্বাচিত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। গ্রীভাস সমর্থকদের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বেশ কয়েকজন গ্রীভাস সমর্থক ম্যাকারিয়াস সমর্থকদের হাতে নিহত হন। ১৯৭৪ সালের ২৭ জানুয়ারী গ্রীভাসের মৃত্যু হলেও সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা অব্যাহত থাকে। ৭ অক্টোবর একজন গ্রীভাস সমর্থক প্রেসিডেন্ট ম্যাকারিয়াসের জীবন নাশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

১৯৭৪ সালের ১৫ জুলাই মাসে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং এ সময় গ্রীক সেনাবাহিনীর একটি অংশ সাইপ্রাস দ্বীপের শাসনভার গ্রহণ করে। এ সময় প্রেসিডেন্ট ম্যাকারিয়াস ক্ষমতাচ্যুত হন। ২০ জুলাই তুরস্ক এ দ্বীপে সামরিক হস্তক্ষেপ করে উত্তরাংশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দখল করে।

জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ

জাতিসংঘের মহাসচিবের নেতৃত্বে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট সাইপ্রাসের এলাকা বন্টন ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করে। কিন্তু জাতিসংঘের এ প্রস্তাব ব্যর্থ হয়। এরপর ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ১১ মে পুনরায় সমস্যার সমাধানকল্পে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়। কিন্তু এ অভিযানও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

Is the USA a Leading Terrorist State?

তুর্কি সাইপ্রিয়টদের স্বাধীনতা ঘোষণা

১৯৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর তুর্কি সাইপ্রিয়টরা নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এ সময় উত্তর সাইপ্রাসে “উত্তর সাইপ্রাসের প্রজাতন্ত্র” নামে একটি প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। রউফ দেঙ্কটাস তুর্কি সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তুরস্ক এটাকে স্বীকৃতি প্রদন করে কিন্তু জাতিসংঘ স্বীকৃতি প্রদান করেনি। বরং জাতিসংঘ একতরফাভাবে স্বাধীনতা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও তুরস্ক তার অবস্থায় অনড়। একারণে আজও এ সমস্যার সমাধান অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

১৯৮৩ সালে উত্তর সাইপ্রাস স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করলে তুরস্ক যে রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় পশ্চিমা দেশগুলোর ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স ও গ্রীস) মধ্যে। ১৯৯০ সালে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সংস্থা সাইপ্রাস সমস্যাকে সমগ্র ইউরোপের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা হিসেবে উল্লেখ করে এ সমস্যা সমাধানের বিষয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয় কিন্তু এ সংস্থার অধিকাংশ সদস্য দেশেরই রাজনৈতিক সমর্থন গ্রীস নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ সাইপ্রাসের প্রতি বেশি মাত্রায় প্রসারিত হওয়াতে তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সাইপ্রাস তা মেনে নিতে অসম্মতি জানায়।
১৯৯১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ গ্রীস সফর করেন। তিনি এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় একটি রাজনৈতিক রূপরেখা প্রদান করেন। সমস্যা নিরসনে তিনি জাতিসংঘের আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চার জাতি- গ্রীস ও তুরস্ক এবং সাইপ্রাসের গ্রীস ও তুর্কি নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রতিনিধিবর্গের মাঝে আলোচনা বৈঠকের আহবান জানান।

কিন্তু ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্যারিস সম্মেলনে গ্রীস ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের মাঝে অনুষ্ঠিত আলোচনা বৈঠক ব্যর্থ হয়। ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে তুরস্ক ও গ্রীসের যৌথ উদ্যোগে গ্রীসের রাডধানী এথেন্সে সর্বশেষ আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বৈঠকে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী বিতর্কিত এলাকায় যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত হলেও সামগ্রিক রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন যা উভয় দেশকে আলোচনার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে।

Dictatorship and Human Rights: The Ongoing Struggle for Freedom

১৯৯৩ সালে সাইপ্রাস সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক সর্ববৃহৎ পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এ বছর জুনে এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের আহবানে এক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল তুর্কি ও গ্রীক নিয়ন্ত্রিত সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপ্রধানদ্বয়ের মাঝে সরাসরি আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করে এ সমস্যার নিষ্পত্তি করা। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপ্রধান রউফ দেঙ্কটাস এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকায় জাতিসংঘ কর্তৃক সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

সাইপ্রাস সমস্যা বর্তমান ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল তথা সমগ্র ইউরোপের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার পথে বৃহৎ সমস্যারূপে পরিগণিত হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে একদিকে যেমন বিবাদমান পক্ষগুলিকে জাতিসংঘ শান্তি প্রস্তাবকে স্বীকার করতে হবে অন্যদিকে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গকেও নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই হয়তো দীর্ঘ দশকের এ জাতিগত সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে এ দ্বীপ অঞ্চলে নতুন করে শান্তি ও সহযোগিতার বন্ধন প্রতিষ্ঠিত হবে।

    শেয়ার করুনঃ
    আরো আর্টিকেল পড়ুন
    জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস
    জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস

    ইতিহাসের পাতায় যেসব মুহূর্ত স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তার মধ্যে বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্যতম।

    বিবিসির প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে, শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া অডিওতে হাসিনা স্বয়ং নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
    বিবিসির তদন্তে শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া অডিও: ‘যেখানে পাবে সেখানেই গুলি করো’

    বিবিসির প্রতিবেদনে প্রমান মিলেছে যে, শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া অডিওতে হাসিনা স্বয়ং নিরাপত্তা বাহিনীকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

    কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল? আন্তর্জাতিক বিচারের হাত থেকে বাঁচতে, গাজার নিপীড়ন থেকে দৃষ্টি সরাতে ও ইহুদি আধিপত্য জাহিরের হতাশাজনক প্রচেষ্টা।
    কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল তার প্রকৃত কারণ

    কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল? আন্তর্জাতিক বিচারের হাত থেকে বাঁচতে, গাজার নিপীড়ন থেকে দৃষ্টি সরাতে ও ইহুদি আধিপত্য জাহিরের হতাশাজনক প্রচেষ্টা।

    গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।
    সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রেরঃ নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা

    গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

    গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।
    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশনঃ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ

    গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।

    আজ ১০ মে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটি কোরআনের সূরা আস-সাফের ৪ নম্বর আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"। গত ৬ মে’র ভারতের "অপারেশন সিঁদুর"-এর জবাবে পাকিস্তান এই পাল্টা হামলা চালিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ভারত প্রকাশ করেনি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দাবি, এই অভিযানে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, ও রাজস্থানের একাধিক সামরিক টার্গেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে ব্রাহ্মোস মিসাইল ডিপো এবং এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত।
    অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুসঃ ভারতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা

    পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে “অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস” নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটির অর্থ “গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর”।

    শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?
    শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?

    পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ও সীমান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।

    আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?
    আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?

    আদালত হলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সেই বৈধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি, অপরাধের বিচার ও আইনি অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

    নিয়মিত আর্টিকেল পেতে

    সাবস্ক্রাইব করুন

    Scroll to Top
    ×