গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্ত সিরিয়ার দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার পর দেশটিকে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও কূটনৈতিক পুনর্মিলনের নতুন সুযোগ করে দিচ্ছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে দীর্ঘদিনের শাসক বাসার আল-আসাদের পতনের পর ইসলামি নেতা আহমেদ আল-শারা সিরিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ করে বর্তমান প্রশাসনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ট্রাম্প বলেন, “সিরিয়ায় এখন একটি নতুন প্রশাসন রয়েছে, যারা দেশকে স্থিতিশীল করতে এবং শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশা করি।” তিনি আরও বলেন, “আমি সিরিয়ার ওপর থেকে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেব, যাতে তারা উন্নতির সুযোগ পায়”।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৯ সাল থেকে সিরিয়াকে “সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারী রাষ্ট্র” হিসেবে ঘোষণা করে এবং এর ফলে সিরিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, আর্থিক লেনদেন সীমাবদ্ধতা ও বিদেশি সাহায্য বন্ধের মতো কঠোর ব্যবস্থা আরোপিত হয়। ২০০৪ সালে এসব নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো সিরিয়াকে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে ঠেলে দিয়েছিল এবং দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে সিরিয়ার অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশটিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও সাহায্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনে সহায়ক হবে। সিরিয়ার অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ বার্নিয়ে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সিরিয়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, জনগণের জন্য মৌলিক সেবা প্রদান এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে বড় সুযোগ তৈরি করবে”।

সিরিয়ার সাধারণ মানুষও এই সিদ্ধান্তকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। দামেস্কের উমায়াদ স্কয়ারে হাজার হাজার মানুষ উৎসব করেছে, গান বাজিয়েছে এবং সিরিয়ার পতাকা উড়িয়েছে। ইংরেজি শিক্ষক হুদা কাসার বলেন, “এই সিদ্ধান্ত পুরো দেশকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। পুনর্গঠন শুরু হবে, বাস্তুচ্যুতরা ফিরে আসবে, এবং মূল্যস্ফীতি কমবে”।

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এখনও বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তুরস্কে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের সূচনা হতে পারে43

সৌদি আরব ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এটি ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব কমানোর একটি কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, “সিরিয়ার জনগণ বহু বছর ধরে যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ড ও দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। এখন তাদের উন্নতির সময়”।

সার্বিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সিরিয়ার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি কেবল অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নয়, বরং রাজনৈতিক পুনর্মিলনেরও পথ প্রশস্ত করবে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক রাজনীতি রাকিবুল ইসলামের বিশেষ আগ্রহের বিষয়। তাঁর লেখালেখির মূল বিষয়বস্তু হলো রাজনীতি, সরকার, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।

Leave A Comment

সম্পর্কিত আর্টিকেল

কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন

এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…

লেখক হিসেবে আমাদের সাথে যোগ দিন

সাম্প্রতিক আর্টিকেল

  • কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল? আন্তর্জাতিক বিচারের হাত থেকে বাঁচতে, গাজার নিপীড়ন থেকে দৃষ্টি সরাতে ও ইহুদি আধিপত্য জাহিরের হতাশাজনক প্রচেষ্টা।

কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল তার প্রকৃত কারণ

কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল? আন্তর্জাতিক বিচারের হাত থেকে বাঁচতে, গাজার নিপীড়ন থেকে দৃষ্টি সরাতে ও ইহুদি আধিপত্য জাহিরের হতাশাজনক প্রচেষ্টা।

  • গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রেরঃ নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা

গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

  • গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশনঃ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ

গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।

  • পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?

পিকেকে-র বিলুপ্তি: তুরস্কের জন্য সুযোগ নাকি কুর্দিদের জন্য নতুন সংকট?

পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?

  • আজ ১০ মে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটি কোরআনের সূরা আস-সাফের ৪ নম্বর আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"। গত ৬ মে’র ভারতের "অপারেশন সিঁদুর"-এর জবাবে পাকিস্তান এই পাল্টা হামলা চালিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ভারত প্রকাশ করেনি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দাবি, এই অভিযানে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, ও রাজস্থানের একাধিক সামরিক টার্গেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে ব্রাহ্মোস মিসাইল ডিপো এবং এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত।

অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুসঃ ভারতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা

পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটির অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"।