পাওলো কোয়েলহোর দ্য অ্যালকেমিস্ট


ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহোর “দ্য অ্যালকেমিস্ট” বইটি ভাগ্য অনুসন্ধানের এক যুগান্তকারী বই। বইটি এখন পর্যন্ত ৮০ টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং ১৫০ মিলিয়ন এর অধিক কপি বিক্রি হয়েছে।  সফলতা অর্জন করার জন্য আমরা অনেক সময় শর্টকাট পদ্ধতি অবলম্বন করি। কিন্তু পাওলো কোয়েলহো দেখিয়েছেন সাফল্যের কোনো শর্টকাট পদ্ধতি নেই। সফলতা অর্জনের পথে অনেক বাধা বিপত্তি আসতে পারে। প্রগতিশীল জীবনযাত্রার দরুণ আমরা আমাদের মধ্যের আধ্যাত্মিকতাকে ভুলতে বসেছি। কিন্তু আমরা চাইলেই আমাদের আত্মা থেকে দূরে সরে যেতে পারি না। লেখক এই বইতে আধ্যাত্মিকতাকে বস্তুজীবনের অপরিহার্য সহচর করে নিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন। 


উপন্যাসের মূল চরিত্র স্পেনের রাখাল বালক সান্টিয়াগো। তার বাবা চেয়েছিলেন তাকে ধর্ম যাজক বানাবেন। কিন্তু সান্টিয়াগো চাইতো সে পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখবে। তাই সে রাখল বালক হয় এবং মেষ নিয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন দেশে দেশে গিয়ে সে ভেড়ার পশম বিক্রি করতো। ঘুরে বেড়ানোর সময় সে অনেক বই কিনে পড়তো। 

A Good Girl’s Guide to Murder by Holly Jackson


একদিন সে স্বপ্ন দেখে মিশরের পিরামিডের কাছে বাচ্চারা খেলা করছে এবং সে স্বপ্ন গুলো বারবার দেখতে থাকে। সে এক জিপসির কাছে নিজের স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে , জিপসি তাকে গুপ্তধনের কথা বলে। তার এ স্বপ্ন গুপ্তধনের ইঙ্গিত। জিপসিকে তার ঠকবাজ মনে হলেও এরপরে তার দেখা হয় সালেমের বৃদ্ধ রাজার সঙ্গে। সে সান্টিয়াগোর সম্পর্কে অনেক কথা বলে যা তার জানার কথা ছিল না। ছেলেটি এসব দেখে অবাক হয়। বৃদ্ধ লোকটিও তাকে গুপ্তধনের কথা বলে ।সে তাকে গুপ্তধন সন্ধানের জন্য বের হতে বলে এবং তাকে অনেক উপদেশ দেয় যাতে সে সঠিকভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে । তবে তার বিনিময়ে সান্টিয়াগোর কাছ থেকে সে দশ ভাগের একভাগ ভেড়া নিয়ে নেয়।


সান্টিয়াগো নিজের বাকি ভেড়াগুলো বিক্রি করে দিয়ে সেই অর্থ নিয়ে রওনা দেয় পিরামিডের পথে । জিব্রাল্টার প্রণালী পাড়ি দিয়ে সে পৌঁছায় মরক্কোর তানজানিয়ায়। কিন্তু আরবি ভাষা না জানায় এক ঠকবাজের খপ্পরে পড়ে নিজের সমস্ত অর্থ হারিয়ে ফেলে। তার মিশর যাওয়া রহিত হয়, কারণ সেখানে যেতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।


এরপর সে তানজানিয়ায় একটি স্ফটিকের দোকানে চাকরি নেয়। তার নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধারণার কারণে স্ফটিকের দোকানে বিক্রি বেড়ে যায়। স্ফটিক ব্যবসায়ী তার উপরে খুশি হয়ে তার বেতন বাড়িয়ে দেন।প্রায় এক বছর চাকরি করার পরে মিশরে যাবার জন্য তার পর্যাপ্ত টাকা সঞ্চিত হয়। 
নতুন করে সে শুরু করে মিশর যাত্রা। তাকে এবার বিস্তৃত সাহারা মরুভূমি পাড়ি দিতে হবে। সে একটি কাফেলার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং কাফেলায় তার একজন ইংলিশ ম্যানের সাথে পরিচয় হয়। ইংলিশ লোকটির রসায়ন নিয়ে প্রচুর আগ্রহ এবং সে একজন অ্যালকেমিস্টকে খুঁজছে। তার ভাষ্যমতে অ্যালকেমিস্ট লোহাকে সোনায় পরিণত করতে পারেন । অ্যালকেমিস্ট পৃথিবীর ভাষা বোঝেন। এছাড়াও তিনি এমন এক অমৃত সুধা পান করেন যার কারণে তার বয়স ২০০ বছর হলেও সে এখনো বেঁচে আছে। 

The Social Contract of Jean-Jacques Rousseau


মরুদ্যানে তারা দুইজন অ্যালকেমিস্ট এর সন্ধান পায়। ইংলিশ লোকটি অ্যালকেমিস্ট এর কাছে সোনা বানানোর পদ্ধতি জানতে চাইলে অ্যালকেমিস্ট তাকে আরো সাধনা করতে বলে। ইংলিশ ভদ্রলোকটি আশাহত না হয়ে মরুভূমিতেই তার সাধনা চালিয়ে যেতে থাকে। 


অ্যালকেমিস্ট সান্টিয়াগোর মধ্যে উদ্যম দেখতে পান। সে সান্টিয়াগোকে গুপ্তধন পাবার জন্য সাহায্য করতে চায়। অ্যালকেমিস্ট সান্টিয়াগোকে অতীত কিংবা ভবিষ্যতের কথা বাদ দিয়ে বর্তমনের উপর গুরুত্ব দিতে বলেন। সে তাকে পৃথিবীর ভাষা শেখায়। কারণ পৃথিবীর ভাষা বুঝতে পারলে সে বাতাসকে বুঝতে পারবে, মরুভূমিকে বুঝতে পারবে এবং তাকে তার হৃদয়ের ভাষা বোঝার জন্য গুরুত্বারোপ করেন। অ্যালকেমিস্ট তাকে বলে, তুমি যখন কোন কিছু পাওয়ার কামনা করো, গোটা পৃথিবীর সেটা তোমাকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে।”

তুমি যখন কোন কিছু পাওয়ার কামনা করো, গোটা পৃথিবীর সেটা তোমাকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে।

অ্যালকেমিস্ট


অ্যালকেমিস্ট তাকে পিরামিডের কাছে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে। পথিমধ্যে তাদের অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয় , সান্টিয়াগো এর মধ্যে অনেক কিছু শিখে যায়। সে এখন পৃথিবীর ভাষা বুঝতে পারে, সে তার হৃদয়ের কথাও বুঝতে পারে। 


অ্যালকেমিস্ট এবার তাকে বলে সে আর তার সঙ্গে যাবে না। তাকে নিজেরই এগোতে হবে। সান্টিয়াগো তার কাছে অ্যালকেমি সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে, তুমি ইতোমধ্যে অ্যালকেমি সম্পর্কে জেনে গেছো। অ্যালকেমিস্ট তাকে সামনের বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দেন । অ্যালকেমিস্ট তাকে বলে, “যা কিছু একবার ঘটেছে তা পুনরায় নাও ঘটতে পারে, কিন্তু যা দুইবার ঘটেছে তা তৃতীয়বার ঘটবেই”

Noam Chomsky’s Who Rules the World?


সান্টিয়াগো পিরামিডের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আর মাত্র দুই থেকে তিন দিনের পথ বাকি। কিন্তু তার সামনে রয়েছে আরো অনেক কঠিন বিপদ !!  তাহলে শেষ পর্যন্ত সে কি পিরামিডে পৌঁছাতে পারবে?  সে কি তার কাঙ্খিত গুপ্তধন পায় ? নাকি সবকিছুই স্বপ্নের মতো মিথ্যা ছিল ? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে বইটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। আশা করি পাঠক বইটি পড়লে তার নিজের জীবনবোধ সম্পর্কে অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পারবেন।

আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Leave A Comment

সম্পর্কিত আর্টিকেল

কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন

এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…

লেখক হিসেবে আমাদের সাথে যোগ দিন

সাম্প্রতিক আর্টিকেল

  • কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল? আন্তর্জাতিক বিচারের হাত থেকে বাঁচতে, গাজার নিপীড়ন থেকে দৃষ্টি সরাতে ও ইহুদি আধিপত্য জাহিরের হতাশাজনক প্রচেষ্টা।

কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল তার প্রকৃত কারণ

কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল? আন্তর্জাতিক বিচারের হাত থেকে বাঁচতে, গাজার নিপীড়ন থেকে দৃষ্টি সরাতে ও ইহুদি আধিপত্য জাহিরের হতাশাজনক প্রচেষ্টা।

  • গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রেরঃ নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা

গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

  • গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশনঃ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ

গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।

  • পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?

পিকেকে-র বিলুপ্তি: তুরস্কের জন্য সুযোগ নাকি কুর্দিদের জন্য নতুন সংকট?

পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?

  • আজ ১০ মে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটি কোরআনের সূরা আস-সাফের ৪ নম্বর আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"। গত ৬ মে’র ভারতের "অপারেশন সিঁদুর"-এর জবাবে পাকিস্তান এই পাল্টা হামলা চালিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ভারত প্রকাশ করেনি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দাবি, এই অভিযানে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, ও রাজস্থানের একাধিক সামরিক টার্গেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে ব্রাহ্মোস মিসাইল ডিপো এবং এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত।

অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুসঃ ভারতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা

পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটির অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"।