স্নায়ু যুদ্ধ কাকে বলে? স্নায়ু যুদ্ধের উদ্ভব, বিকাশ ও বর্তমান অবস্থা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের এই আদর্শিক বিরোধ, পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসই স্নায়ু যুদ্ধ।
স্নায়ু যুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে দুটি বৃহৎ পরাশক্তি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বে আবির্ভূত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র শক্তিভুক্ত ফ্রান্স, ব্রিটেন অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত এবং অক্ষশক্তির ইতালি, জার্মানী, জাপান ও অস্ট্রিয়ার ক্ষমতা খর্ব হয়। এই দুই শক্তির হারিয়ে ফেলা জায়গা পূরণ করতেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলেও তাদের আদর্শ ছিল পরস্পর বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বেশ কিছু প্রেক্ষাপটে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তা প্রকট আকার ধারণ করে। এই দুই পরাশক্তির সামরিক, অর্থনৈতিক ও আদর্শিক মহড়ার অংশ এই স্নায়ু যুদ্ধ। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের এই আদর্শিক বিরোধ, পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসই হলো স্নায়ু যুদ্ধ।

স্নায়ু যুদ্ধ কাকে বলে?

স্নায়ুযুদ্ধের ইংরেজি প্রতিশব্দ Cold War, যার শাব্দিক অর্থ ঠান্ডা লড়াই। Cold war শব্দটি ১৯৪৭ সালে আমেরিকার অর্থনীতিবীদ Walter Lippman সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। স্নায়ুযুদ্ধ এমন এক অবস্থাকে নির্দেশ করে যা যুদ্ধও নয় আবার শান্তিও নয়। মূলত এটি একটি অস্বস্তিকর (Uneasy) শান্তি। স্নায়ুযুদ্ধ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তাদের নিজ নিজ মিত্রদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ঘৃণা থেকে উদ্ভূত একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রচারণামূলক দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি কখনোই প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘর্ষে পরিণত হয়নি, তবে বিশ্বব্যাপী একটি সুদীর্ঘ অস্থিরতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। ১৯৪০ এর দশকের শেষের দিকে শুরু হয়ে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সাথে এই দ্বন্দ্ব শেষ হয়েছিল।

স্নায়ুযুদ্ধের মূল কারণ ছিল দুটি পরাশক্তির মধ্যে আদর্শগত ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদ ও গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সাম্যবাদ ও একদলীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে ছিল। এই মতপার্থক্যগুলির ফলে দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের জন্য এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

স্নায়ু যুদ্ধ, factors behind israel's atrocities in Palestine

অধ্যাপক আ কে গ্রেথপ বলেন, Cold war was the conflict between the communist powers and the rest of the world. অর্থাৎ স্নায়ুযুদ্ধ হলো কমিউনিস্ট শক্তির সাথে বাকি বিশ্বের দ্বন্দ্ব। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামাও প্রায় একই তবে আরো বিশদভাবে স্নায়ুযুদ্ধকে ব্যখ্যা করেন। তার মতে, “The Cold War was a conflict between two different visions of human destiny: one liberal, the other communist. স্নায়ুযুদ্ধ ছিল মানব সভ্যতার দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দ্বন্দ্ব: একটি পুঁজিবাদি, অন্যটি কমিউনিস্ট।

অধ্যাপক ফ্রাঙ্কেলের মতে, স্নায়ুযুদ্ধ বলতে সাম্যবাদী ও গণতান্ত্রিক মতাদর্শ এবং তাদের ধারক রাষ্ট্র সোভিয়েত ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের সাথে জড়িত সকল ঘটনা বোঝায়। ফ্রাঙ্কেলের মতে, স্নায়ুযুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব। এই দুই দেশই বিশ্বের ভবিষ্যত সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করত। যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার পক্ষে ছিল, আর অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার পক্ষে ছিল।

স্নায়ুযুদ্ধ বলতে কি বোঝাবে তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ এটিকে একটি “যুদ্ধ” হিসাবে বিবেচনা করলেও অন্যরা এটিকে একটি “দ্বন্দ্ব” বা “প্রতিযোগিতা” হিসাবেই বিবেচনা করেন। তবে, বেশিরভাগ ঐতিহাসিকরা এটিকে একটি “স্নায়ুযুদ্ধ” হিসাবেই বিবেচনা করেন, কারণ এটি কখনোই প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘর্ষে পরিণত হয়নি। মোট কথা, আঞ্চলিক বিরোধ এবং সাম্রাজ্যবাদ চিন্তা বাদ দিয়ে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রকদের আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধই স্নায়ুযুদ্ধ।

স্নায়ু যুদ্ধের উদ্ভব

১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর রাশিয়ায় সমাজন্ত্রের সূচনা, ১৯২৯ সালে ইতালিতে ফ্যাসিবাদ এবং ১৯৩৩ সালে জার্মানীতে নাৎসিবাদ নামক একনায়কতন্ত্রের উত্থানে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এই অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করে ১৯৩৭ সালে রুশ-জার্মান অনাক্রমন চুক্তি সাক্ষর হলে। তবে সরাসরিভাবে স্নায়ু যুদ্ধের উদ্ভব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মতাদর্শগত এবং সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে। এই দুই দেশই বিশ্বের পরবর্তী ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার পক্ষে ছিল, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি সমাজতান্ত্রিক এবং কমিউনিস্ট বিশ্বব্যবস্থার পক্ষে ছিল। এই মতাদর্শগত পার্থক্যগুলি স্নায়ু যুদ্ধের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। স্নায়ু যুদ্ধের উদ্ভবের জন্য অনেক কারণ দায়ী ছিল। এই কারণগুলিকে সাধারণত দুটি প্রধান বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে:

  • আদর্শগত দ্বন্দ্বঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ই বিশ্বের ভবিষ্যত সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করত। যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার পক্ষে ছিল, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার পক্ষে ছিল। এই আদর্শগত দ্বন্দ্ব স্নায়ু যুদ্ধের উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলেছিল।
  • শক্তির দ্বন্দ্বঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের দুটি প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এই দুটি শক্তির মধ্যে ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্নায়ু যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল।

স্নায়ুযুদ্ধের এই মূল দুটি কারণকে বিশ্লেষন করলে স্নায়ুযুদ্ধের জন্য দায়ী নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা সামনে চলে আসে। এর মধ্যে রয়েছেঃ

আদর্শগত পার্থক্য

স্নায়ুযুদ্ধের মূলে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী দেশ ছিল, যেখানে ব্যক্তি উদ্যোগ এবং মুক্ত বাজারের ভিত্তিতে অর্থনীতি পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল, যেখানে সমস্ত সম্পত্তি রাষ্ট্রের মালিকানাধীন ছিল এবং অর্থনীতি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হতো। এই মতাদর্শগত বৈপরীত্য দুই পরাশক্তির মধ্যে গভীর ফাটল সৃষ্টি করেছিল। এই বৈপরীত্য শুধুমাত্র সামরিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছিল। দুই পরাশক্তির এই আদর্শগত পার্থক্যর ফলে বিশ্ব ইউরোপ বিভাজন, বার্লিন সংকট এবং মার্শাল পরিকল্পনার মত ঘটনার সাক্ষী হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই পরাশক্তির মধ্যে প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের পুনর্গঠনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ই বিশ্বের নেতৃত্ব দাবি করেছিল এবং তারা বিশ্বের অন্যান্য অংশগুলিতে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে সারাবিশ্বে ব্যপক প্রভাব পড়ে।

অস্ত্র প্রতিযোগিতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন দুটি বৃহত্তম পারমাণবিক পরাশক্তি হয়ে ওঠে। এই দুটি দেশই তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য অস্ত্র প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ে। এই প্রতিযোগিতা স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিশ্ব রাজনীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষা চরমে পৌছায়। উভয়ই প্রতিপক্ষের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল। এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা বিশ্বজুড়ে একটি ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি বাড়িয়ে তুলেছিল।

সাম্রাজ্যবাদ এবং প্রক্সি যুদ্ধ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা ছিল তুঙ্গে। উভয়ই বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলগুলিতে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করেছিল। উভয় পরাশক্তি জার্মানি, কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং আফগানিস্তানের মতো অঞ্চলে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করে বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করেছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিলারি ক্লিনটনের নেতৃত্বে তালেবানকে তৈরী করে। এছাড়া বিশ্বের নানা প্রান্তে তারা পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে সমর্থণ দিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে।

অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি


যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন  উভয়ই আদর্শগতভাবে ভিন্ন এবং উভয়ই বিশ্বের অন্যান্য অংশগুলিতে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি গভীর অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। এই অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণগুলির মধ্যে একটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের অভাব। এই দুটি দেশই তাদের নিজস্ব তথ্য এবং প্রচারণা ব্যবহার করে অন্য দেশের উপর তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করত। এই প্রচারণাগুলি প্রায়শই মিথ্যা এবং বিকৃত ছিল।

অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝির আরেকটি কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অভাব। এই দুটি দেশের মধ্যে কোনও স্থায়ী কূটনৈতিক মিশন ছিল না যার ফলে সংলাপ এবং বোঝাপড়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থার অভাব তৈরি হয়েছিল। এই অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলেছিল। এই অবিশ্বাসের কারণে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রায়শই একে অপরের পদক্ষেপগুলিকে হুমকি হিসাবে দেখত।

বার্লিন অবরোধ

১৯৪৮-১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পশ্চিম বার্লিন অবরোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। পশ্চিম বার্লিনে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই অবরোধ জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি আপ্রান চেষ্টা করে পশ্চিম বার্লিনে সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিরোধ করে তাদের প্রভাব অক্ষুন্ন রাখতে। আকাশপথ  ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি অবরুদ্ধ পশ্চিম বার্লিনকে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে।  এই সংকটটি দুই পক্ষের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি তৈরি করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নীতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করার জন্য একটি নীতি গ্রহণ করেছিল। এই নীতিটি “নিয়ন্ত্রণ” নামে পরিচিত ছিল। নিয়ন্ত্রণের নীতি অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন অংশে কমিউনিস্ট প্রভাব বিস্তার রোধ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। নিয়ন্ত্রণের নীতির বেশ কয়েকটি উপাদান ছিল। এর মধ্যে রয়েছে:

  • অন্য দেশগুলিকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করার জন্য গ্রিক, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশগুলিকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছিল। এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে অস্ত্র সরবরাহ, অর্থনৈতিক অনুদান এবং প্রশিক্ষণ।
  • সামরিক জোট গঠন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশগুলির সাথে সামরিক জোট গঠন করেছিল। এই জোটগুলির উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তোলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো, সেভেন থাউজেন্ড দ্বীপপুঞ্জ এবং সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশনের মতো সামরিক জোট গঠন করে। এই জোটগুলির লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণকে প্রতিরোধ করা ও প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা ।
  • বিশ্বব্যাপী প্রচারণা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিজমের বিপদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালিয়েছিল। এই প্রচারণার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে কমিউনিজম সম্পর্কে সচেতন করা এবং এটিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য প্ররোচিত করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির ফলেই কোরিয়া যুদ্ধ, কিউবার মিসাইল সংকটের মত ঘটনা সংঘটিত হয়।

অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। এই দুটি দেশই তাদের অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।

অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণগুলির মধ্যে একটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রসারকে প্রমোট করেছিল, আর অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত অর্থনীতির প্রমোট করেছিল। এই আদর্শগত পার্থক্যগুলি বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করেছিল। তাছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সামরিক প্রতিযোগিতাও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার আরেকটি কারণ ছিল।

পরাশক্তিদ্বয়ের এই প্রতিযোগিতার ফলে অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। এই ব্যয়গুলিকে মেটাতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ই তাদের অর্থনীতিকে উন্নত করার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল। উভয় পরাশক্তির অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ পেয়েছিল যেমন, বাণিজ্য, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসহ প্রভৃতি। এই বহুমুখী কারণগুলিই দায়ী ছিল সুদীর্ঘ পাঁচ দশকব্যপী স্নায়ুযুদ্ধের এবং বিংশ শতাব্দী জুড়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল।

স্নায়ু যুদ্ধের বিকাশ

১৯১৭ সালে রুশ বিপবের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতন্ত্রের ধারক ও বাহকে পরিণত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। মূলত এ সময় হতেই স্নায়ু যুদ্ধের প্রেক্ষাপট রচিত হতে থাকে এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর তা দৃশ্যমান হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তি বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে স্নায়ু যুদ্ধ বিকশিত হতে থাকে। আলোচনার সুবিধার্তে স্নায়ু যুদ্ধের বিকাশকে সাধারণত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়ঃ

উত্তেজনা বৃদ্ধি (১৯৪৭-১৯৫৩)

স্নায়ু যুদ্ধের এই পর্যায়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে। এই দ্বন্দ্বের কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

মার্শাল পরিকল্পনা (১৯৪৭)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের পুনর্গঠনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গঠন করে। এই নীতি দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপে বেনেলাক্স, ব্রাসেলস চুক্তির ন্যায় আরো কিছু চুক্তি করে। এই পরিকল্পনাটি সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্বকে হ্রাস করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার জবাবে সোভিয়েত ইউনিয়নও পূর্ব ইউরোপে পুঁজিবাদের প্রবেশ ঠেকাতে কমিউনিস্ট ইনফরমেশন ব্যুরোগঠন করলে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে।  

ট্রুম্যান নীতি (১৯৪৭)

ট্রুম্যান নীতি অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপে “বিদেশি হস্তক্ষেপ বা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার দ্বারা নিপীড়িত স্বাধীনতাকামী জনগণকে সমর্থন করবে”। গ্রিস এবং তুরস্কের ক্ষেত্রে সোভিয়েত হুমকি ও দারদানেলিস প্রণালীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব সামাল দিতে এই নীতি প্রণয়ন করা হয়। ট্রুম্যান গ্রীস ও তুরস্কে কমিউনিস্টদের দমন ও সোভিয়েত প্রভাব মুক্ত করতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য এবং সামরিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। তার এই নীতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে দীর্ঘ, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা বিরোধী। ট্রুম্যান নীতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে দ্বন্দ্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

বার্লিন সংকট (১৯৪৮-১৯৪৯) 

১৯৪৮-১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পশ্চিম বার্লিন অবরোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। পশ্চিম বার্লিনে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই অবরোধ জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি আপ্রান চেষ্টা করে পশ্চিম বার্লিনে সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিরোধ করে তাদের প্রভাব অক্ষুন্ন রাখতে। আকাশপথ  ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি অবরুদ্ধ পশ্চিম বার্লিনকে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে। এই সংকটটি দুই পক্ষের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি তৈরি করে।

ন্যাটো গঠন (১৯৪৯)

সোভিয়েত অতি দ্রুত বার্লিন অবরোধ করলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা চিন্তিত হয়ে পড়ে। তারা পশ্চিম ইউরোপে সোভিয়েত আগ্রাসন রোধে ১৯৪৮ সালের ২৭ মার্চ ব্রাসেলস চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এই চুক্তির ওপর ভিত্তি করেই ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল ন্যাটো ১২টি সদস্য মিলে গঠন করে। পরবর্তীতে এর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন ঠেকাতে সোভিয়েত ইউনিয়নও নানা রকম কার্যক্রম হাতে নেয়। ফলে পরাশক্তিদ্বয়ের দ্বন্দ্ব চরম মাত্রায় চলে যায়।

ন্যাটো কি? এর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও কার্যাবলি আলোচনা কর। বর্তমানে ন্যাটোর প্রয়োজন আছে কি?

কোরিয়া যুদ্ধ (১৯৫০-১৯৫৩)

১৯১০ সালের পর কোরীয়া জাপানের অধীনে ছিল। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর মিত্রশক্তির যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩৮ ডিগ্রি অক্ষাংশ বরাবর দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ায় প্রাধান্য বিস্তার করে। কিন্তু কেউ নিজেদের সীমানায় সীমাবদ্ধ না থেকে ৩৮ ডিগ্রি রেখা অতিক্রম করলে ১৯৫০ সালে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরো ১৬ সদস্য জাতিসংঘ বাহিনী গঠন করে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন উত্তর কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধে নামে। ১৯৫৩ সালের ৪ জুলাই যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে ৩৮ ডিগ্রি উত্তরে সোভিয়েত এবং দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য বজায় থাকে। যুদ্ধে প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল, যার মধ্যে অনেকেই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।

বাগদাদ চুক্তি (১৯৫৫)

১৯৫৩ সালে স্টালিনের মৃত্যু এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পরিবর্তনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার ১৯৫৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সিয়েটো চুক্তি  সাক্ষর করে। কিন্তু তিনি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ১৯৫৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী বাগদাদ চুক্তির দ্বারা মিডল ইস্ট ডিফেন্স অর্গানাইজেশন গঠন করে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে আনজুস, মিড, ন্যাটোর ন্যায় বিভিন্ন সামরিক ও আঞ্চলিক সহায়তা সংগঠন গড়ে তুললে সোভিয়েত ইউনিয়ন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। ১৯৫৫ সালের ১৪ মে পূর্ব ইউরোপের ৮ টি দেশকে নিয়ে ওয়ার্শ চুক্তি সাক্ষর করে একটি সামরিক জোট গঠন করে।

উত্তেজনার হ্রাস (১৯৫৩-১৯৬২)

স্নায়ু যুদ্ধের এই পর্যায়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব কিছুটা প্রশমিত হয়। এই প্রশমনের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

কোরিয়া যুদ্ধের অবসান (১৯৫৩)

২য় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রশক্তির যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩৮ ডিগ্রি অক্ষাংশ বরাবর দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ায় প্রাধান্য বিস্তার করে। কিন্তু কেউ নিজেদের সীমানায় সীমাবদ্ধ না থেকে ৩৮ ডিগ্রি রেখা অতিক্রম করলে ১৯৫০ সালে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরো ১৬ সদস্য জাতিসংঘ বাহিনী গঠন করে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন উত্তর কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধে নামে। ১৯৫৩ সালের ৪ জুলাই যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে ৩৮ ডিগ্রি উত্তরে সোভিয়েত এবং দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য বজায় থাকে। যুদ্ধে প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল, যার মধ্যে অনেকেই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। যুদ্ধে কোরীয় উপদ্বীপ দুটি অংশে বিভক্ত হয় যা আজও স্থায়ী। কোরীয় যুদ্ধের সমাপ্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সংকটের উত্তেজনা কমিয়ে আনে।

ইসলামি বিপ্লব ইরানে (১৯৫৩)

১৯৫৩ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত অভ্যুত্থানের ফলে শাহ পাহ্লাভি ক্ষমতায় ফিরে আসেন। শাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন এবং তিনি ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে ব্যাপক অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহায়তা প্রদান করে। সাময়িকভাবে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হয়।

ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও ইমাম খোমেনীর ভূমিকা

কিউবান মিসাইল সংকট (১৯৬২)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোলঘেষা সমাজতন্ত্রবাদী রাষ্ট্র কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব নস্যাৎ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই তৎপর ছিল। মার্কিন হুমকি মোকাবেলায় ১৯৬২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করে। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার উপর একটি নৌ অবরোধ আরোপ করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা এই সংকটের ফলে চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে দরকষাকষির পর এবং বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে এমন আশংকায় সোভিয়েত নেতা নিকোলাই ক্রুশ্চেভ ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার সম্মত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার উপর অবরোধ তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফলে বড় ধরণের বিপর্যয়ের আশংকা কমে আসে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বন্দ্বের স্থিতাবস্থা (১৯৬২-১৯৯১)

এই পর্যায়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব স্থিতাবস্থায় পৌঁছায়। এই সময়ের মধ্যে, দুটি পরাশক্তি বিশ্বজুড়ে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, কিন্তু তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি। এই স্থিতাবস্থার কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বৈশ্বিক অগ্রহণযোগ্যতা (১৯৬০-এর দশক)

১৯৬০-এর দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের গঠনমূলক সমালোচনা শুরু করে। এসব সমালোচনায় দেখানো হয়েছিল যে তার আদর্শগুলি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় নয়, বরং এসব আদর্শ বাস্তব অর্থে বৈশ্বিকভাবে প্রয়োগযোগ্য ছিল না। এই চাপ সোভিয়েত ইউনিয়নকে আরও রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করতে প্ররোচিত করে।

শরণার্থী সংকট নিয়ে নোয়াম চমস্কি

ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান (১৯৭৫)

১৯৫৫ সাল থেকে ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিরোধ করতে যেয়ে ১৯৭৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করে নিজের প্রভাব ও ক্ষমতার কার্যকরিতা সম্পর্কে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সাম্যবাদী শক্তিগুলিকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে না। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সূদীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল এই  যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পরাজয় ছিল। এই পরাজয়ের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং স্নায়ু যুদ্ধ স্থিতাবস্থার দিকে ধাবিত হয়েছিল।

détente (১৯৭০-এর দশক)

১৯৭০-এর দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই পদক্ষেপগুলিকে détente নামে অভিহিত করা হয়। détente-এর মধ্যে ছিল পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি এবং বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি। détente মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।

এগুলি ছাড়াও, স্নায়ু যুদ্ধের স্থিতাবস্থার আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে। এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি

দুটি পরাশক্তি পারমাণবিক অস্ত্রের একটি বিশাল ভান্ডার গড়ে তুলেছিল। এই অস্ত্রগুলির ভয়াবয়তা এতটাই ধ্বংসাত্মক ছিল যে এগুলো বিশ্বকে ধূলিসাৎ করতে মূহুর্ত সময় নিতো। এই হুমকি দুটি পরাশক্তিকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রেখেছিল।

সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা

দুটি পরাশক্তি বিশ্বজুড়ে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছিল। তারা প্রতিপক্ষের দেশগুলিতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছিল এবং তাদের সামরিক শক্তিতে বিনিয়োগ করেছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুটি পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছিল, কিন্তু যুদ্ধের বিধ্বংসী পরিণাম তাদেরকে সরাসরি যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে।

অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা

দুটি পরাশক্তি বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। তারা তাদের পণ্য ও পরিষেবাগুলি বিদেশে রপ্তানি করেছিল এবং সেসব দেশে বিনিয়োগ করেছিল। অর্থনৈতিক সক্ষমতার এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুটি পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুললেও সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়নি।

স্নায়ু যুদ্ধের অবসান

১৯৬৯ সালের পর থেকে বিশ্বের দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা কমতে থাকে। ১৯৭১ সালে সল্ট-১ এবং ১৯৭৬ সালে সল্ট ২ নামক চুক্তির মাধ্যমে অস্ত্র হ্রাসকরণে দুই দেশই সম্মত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস পায়। ১৯৮০-এর দশকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্মুখীন হয়েছিল। এরপর থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতি বিপর্যয়ের পর যুক্তরাষ্টের সাথে প্রতিযোগিতায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পিছিয়ে যেতে থাকে। ১৯৮৫ সালে গর্বাচেভ ক্ষমতায় এসে নানা ধরণের সংস্কার শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে মিখাইল গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে উন্নয়নের জন্য গ্লাসনস্ত (স্বচ্ছতা) ও পেরেস্ত্রোইকা(পুনর্গঠন) ঘোষণা করেন। ১৯৮৯ সালে পূর্ব জার্মানির জনগণ বার্লিনের দেয়াল ভেঙে দেয়১৯৯০ সালে পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি একীভূত হয়। এরপর পরই পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট সরকারগুলির পতন ঘটলে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন দ্রুত অবশ্যম্ভাবী হয়ে আসে।

১৯৮৯ সালের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে এক তরফা ভাবে স্নায়ু যুদ্ধের অবসান ঘোষনা করে। একই বছরের ৩ ডিসেম্বর মাল্টায় দুই পরাশক্তির জর্জ বুশ ও গর্বাচেভ স্নায়ু যুদ্ধের অবসান ঘোষণা করে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন

১৯৯১ সালে আগস্টের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি প্রজাতন্ত্রের কয়েকটিতে স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠে। অনেক ছোট ছোট প্রজাতন্ত্রে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।  ১৯৯১ সালের ১ এপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটলে কার্যত স্নায়ু যুদ্ধের অবসান ঘটে। ১৯৯১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাশিয়ার নেতা ইয়েলৎসিন, ইউক্রেনের নেতা ক্রাভচুক এবং বেলারুশের নেতা শুশকেভিচ পূর্ব বেলারুশের ভিসকুলি শহরে একটি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে সবাই সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তি ও প্রজাতন্ত্রগুলির স্বাধীনতা সংক্রান্ত চুক্তিতে একমত হন এবং ১৫টি প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা লাভ করে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন এবং ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়।

স্নায়ু যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একক আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। বিশ্ব জনমতের তোয়াক্কা না করে নানাবিধ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। এর বিরুদ্ধে বৃহৎ রাষ্ট্র গুলো বিভিন্ন রাষ্ট্রের বাজার দখলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য খর্ব করার চেষ্টা করছে। যেমনঃ চীন, জাপান, জার্মানী ইত্যাদি। তবে, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন। মধ্যপ্রাচ্যে আফগানিস্তান, ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়ায় রাশিয়ার পক্ষভুক্ত আঞ্চলিক বাহিনীর কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষভুক্ত ন্যাটো বাহিনীর শোচনীয়  ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন পরাশক্তির। ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এবং প্রায় শত বছর ব্যাপী জায়োনিস্ট ইহুদিবাদ-ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নতুন করে স্নায়ু যুদ্ধের আশংকার জানান দিচ্ছে। অনেকে মনে করেন যে বিশ্ব দুই পক্ষের মধ্যে একটি নতুন স্নায়ু যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঐতিহাসিক জোট ন্যাটোর সাম্রাজ্যবাদে আঘাত হানছে চীন-রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদ।

বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও সংকট নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীনের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের একক আধিপত্য খর্ব করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জোট গঠন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরতা কমানোর সাথে সাথে সতর্ক বার্তাও প্রদান করছে বিভিন্ন দেশ। এমনকি বর্তমান সময়ে সিরিয়া, এবং আইএসএস প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরী রাশিয়ার সাথে ইরান ও চীনের সম্মিলিত জোটের অবস্থান নতুন স্নায়ু যুদ্ধের পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ খালি চোখে না দেখা গেলেও স্নায়ু যুদ্ধের চলমান ধারা অনুভব করা যাচ্ছে। ফলে সহসাই স্নায়ু যুদ্ধের সমাপ্তি উপভোগ করার সুযোগ নেই আপাতত। বরং দীর্ঘমেয়াদি না হলেও আরো বড় ধ্বংসাত্বক ও প্রভাবশালী স্নায়ু যুদ্ধের অপেক্ষা করাই শ্রেয়।

অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এর অবসান ঘটলেও বর্তমান সময়ে পরাশক্তিদ্বয়ের দ্বারা স্বাধীন ও দূর্বল রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টায় স্নায়ু যুদ্ধের আঁচ বর্তমান সময়েও অনুভব করা যায়।

লেখক

  • রাকিবুল ইসলাম, মেরুনপেপার

    রাকিবুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেছেন। রাজনীতি, আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ইতিহাস নিয়ে স্পষ্ট ও তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। ওয়ার্ডপ্রেসসহ ডিজিটাল প্রকাশনার মাধ্যমে তিনি পাঠককে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

    শেয়ার করুনঃ
    আরো আর্টিকেল পড়ুন
    মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আজ যে উত্তেজনায় ভরা, তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ফিলিস্তিনি সংকট এবং আব্রাহাম চুক্তি নামের এক পরিবর্তনশীল কূটনৈতিক প্যাকেজ।
    ফিলিস্তিনি সংকট ও আব্রাহাম চুক্তিঃ সমালোচনা, সুফল ও বাস্তবতা

    মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আজ যে উত্তেজনায় ভরা, তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ফিলিস্তিনি সংকট এবং আব্রাহাম চুক্তি নামের এক পরিবর্তনশীল কূটনৈতিক প্যাকেজ।

    পি আর পদ্ধতি কী — ধরন, সুবিধা-অসুবিধা ও বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রাসঙ্গিকতা (1)
    পি আর পদ্ধতি কী — ধরন, সুবিধা-অসুবিধা ও বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রাসঙ্গিকতা

    পি আর পদ্ধতি হলো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা। পি আর পদ্ধতির ধরন, সুবিধা, অসুবিধা বিবেচনায় বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতি প্রাসঙ্গিক কি না প্রশ্ন উঠেছে।

    বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধানগুলোর অন্যতম মদিনা সনদ ইসলামি রাষ্ট্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য ঐতিহাসিক দলিল। 
    মদিনা সনদ কীঃ মদিনা সনদের প্রধান ধারা ও বিশ্ব ইতিহাসে এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ

    বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধানগুলোর অন্যতম মদিনা সনদ ইসলামি রাষ্ট্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য ঐতিহাসিক দলিল। 

    বিবিসির প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে, শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া অডিওতে হাসিনা স্বয়ং নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
    বিবিসির তদন্তে শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া অডিও: ‘যেখানে পাবে সেখানেই গুলি করো’

    বিবিসির প্রতিবেদনে প্রমান মিলেছে যে, শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া অডিওতে হাসিনা স্বয়ং নিরাপত্তা বাহিনীকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

    কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল? আন্তর্জাতিক বিচারের হাত থেকে বাঁচতে, গাজার নিপীড়ন থেকে দৃষ্টি সরাতে ও ইহুদি আধিপত্য জাহিরের হতাশাজনক প্রচেষ্টা।
    কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল তার প্রকৃত কারণ

    কেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছিল? আন্তর্জাতিক বিচারের হাত থেকে বাঁচতে, গাজার নিপীড়ন থেকে দৃষ্টি সরাতে ও ইহুদি আধিপত্য জাহিরের হতাশাজনক প্রচেষ্টা।

    গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।
    সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রেরঃ নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা

    গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

    গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।
    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশনঃ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ

    গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।

    আজ ১০ মে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটি কোরআনের সূরা আস-সাফের ৪ নম্বর আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"। গত ৬ মে’র ভারতের "অপারেশন সিঁদুর"-এর জবাবে পাকিস্তান এই পাল্টা হামলা চালিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ভারত প্রকাশ করেনি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দাবি, এই অভিযানে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, ও রাজস্থানের একাধিক সামরিক টার্গেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে ব্রাহ্মোস মিসাইল ডিপো এবং এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত।
    অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুসঃ ভারতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা

    পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে “অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস” নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটির অর্থ “গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর”।

    এই আর্টিকেলগুলিও আপনি পড়তে পারেন

    মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আজ যে উত্তেজনায় ভরা, তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ফিলিস্তিনি সংকট এবং আব্রাহাম চুক্তি নামের এক পরিবর্তনশীল কূটনৈতিক প্যাকেজ।

    ফিলিস্তিনি সংকট ও আব্রাহাম চুক্তিঃ সমালোচনা, সুফল ও বাস্তবতা

    মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আজ যে উত্তেজনায় ভরা, তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ফিলিস্তিনি সংকট এবং আব্রাহাম চুক্তি নামের এক পরিবর্তনশীল কূটনৈতিক প্যাকেজ।

    পি আর পদ্ধতি কী — ধরন, সুবিধা-অসুবিধা ও বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রাসঙ্গিকতা (1)

    পি আর পদ্ধতি কী — ধরন, সুবিধা-অসুবিধা ও বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রাসঙ্গিকতা

    পি আর পদ্ধতি হলো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা। পি আর পদ্ধতির ধরন, সুবিধা, অসুবিধা বিবেচনায় বাংলাদেশে পি আর পদ্ধতি প্রাসঙ্গিক কি না প্রশ্ন উঠেছে।

    বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধানগুলোর অন্যতম মদিনা সনদ ইসলামি রাষ্ট্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য ঐতিহাসিক দলিল। 

    মদিনা সনদ কীঃ মদিনা সনদের প্রধান ধারা ও বিশ্ব ইতিহাসে এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ

    বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধানগুলোর অন্যতম মদিনা সনদ ইসলামি রাষ্ট্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য ঐতিহাসিক দলিল। 

    জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস

    জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস

    ইতিহাসের পাতায় যেসব মুহূর্ত স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তার মধ্যে বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্যতম।

    নিয়মিত আর্টিকেল পেতে

    সাবস্ক্রাইব করুন

    Scroll to Top
    ×