ভৌগলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের জন্য অনেক আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্য সবসময় পরাশক্তিদের নজরে ছিল। ভৌগলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও  অটোম্যান সাম্রাজ্যের দুর্বলতার কারণে ইউরোপীয় পরাশক্তিগুলো মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে সচেষ্ট ছিল। পরাশক্তিগুলো তাদের দখলদারিত্ব পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বজায় রাখতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।  সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় পরাশক্তিগুলোর দখলদারিত্ব ভাগবাটোয়ারা ও দ্বন্দ্ব নিরসনে ১৮৭৮ সালের ১৬ জুন বার্লিন কংগ্রেস আয়োজিত হয়। এই বার্লিন কংগ্রেসের ফলস্বরূপ জার্মানিও ইউরোপের অন্যান্য পরাশক্তিগুলোর অনুসরণে জার্মান সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করে সম্রাট দ্বিতীয় উইলিয়ামের অধীনে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানির প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদি নীতি গ্রহন করেন। জার্মানির এই নীতি গ্রহণে অন্যান্য ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণে নতুন ভাগীদার আবির্ভাবে অন্যান্য ইউরোপীয়দের সাথে জার্মানির দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। যাইহোক, এই আলোচনায় আমরা মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানির সাম্রাজ্যবাদের প্রতিষ্ঠা,প্রকৃতি এবং জার্মানির সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অন্যান্য ইউরোপীয় গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব।

সাম্রাজ্যবাদ কি?

সাধারনত, অন্য রাজ্য গ্রাস বা অন্য রাজ্যে প্রভাব বিস্তারের নীতিকেই সাম্রাজ্যবাদ বোঝায়। আমেরিকার Webster ডিকশনারি অনুযায়ী, সাম্রাজ্যবাদ বা Imperialism হচ্ছে “the policy, practice, or advocacy of extending the power and dominion of a nation especially by direct territorial acquisitions or by gaining indirect control over the political or economic life of other areas.”

Charles Hodges তার Imperialism and Motherhood গ্রন্থে বলেছেন, “Imperialism is the rule of one people over another people, without the consent of the governed. It is a system of exploitation and oppression, which benefits the ruling people at the expense of the ruled people.” একই গ্রন্থে তিনি সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃতি বোঝাতে বলেছেন, “Imperialism is a system of robbery and murder, carried out in the name of civilization.” তিনি তার Background of International Relation গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বলেন যে, it invokes the imposition of control open or covert indirect of people by another.

আবার Perker T. Moon সাম্রাজ্যবাদের ধারণা দিতে গিয়ে আরো স্পষ্ট করে বলেন যে, অ-ইউরোপীয় দেশের উপর ইউরোপীয় রাষ্ট্রের প্রাধান্য বিস্তারকে সাম্রাজ্যবাদ বা Imperialism বলে।

অর্থাৎ, সাম্রাজ্যবাদ হচ্ছে নিজের স্বার্থে, নিজের প্রয়োজন, অভাব মেটাতে অন্য দেশকে কুক্ষিগত করা, বা স্যাটেলাইট স্টেট বানানো, বা অন্য রাষ্ট্রকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা বা, সেখানে উপনিবেশ স্থাপণ করা। অথবা এভাবেও বলা যায় যে, নিজেদের স্বার্থে একটি দেশ যখন অন্য রাষ্ট্রের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও বজায়ের মাধ্যমে সেই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণ বা সংকোচন করার সমস্ত পদ্ধতি বা নীতি গ্রহণ করে সেটাকেই সাম্রাজ্যবাদ বা Imperialism বলে।

জার্মানির সাম্রাজ্যবাদ নীতি ও তার কারণ

অটোভন বিসমার্ক ছিলেন জার্মান সাম্রাজ্যের স্থপতি। একত্রিকরণের মাধ্যমে জার্মানীকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন। মূলত তিনি স্বনির্ভরতার দিকে নজর দিয়েছিলেন এবং অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষপাতী ছিলেন। ১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেসের মাধ্যমে সংঘাত নিরসনে প্রচেষ্ট হলেও শান্তি প্রিয় অটোভন বিসমার্কের  বিদেশনীতি সাম্রাজ্যবাদি ছিল না। তবে, ১৮৯০ সালে দ্বিতীয় উইলিয়াম ক্ষমতা গ্রহণ করে জার্মানির বিদেশনীতি সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তিতে প্রণয়নে  কাজ শুরু করেন এবং জার্মানির প্রাধান্য বৃদ্ধি করতে বেশ কিছু নীতি গ্রহন করেন যথাঃ

ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও ইমাম খোমেনীর ভূমিকা

বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ

অটোভন বিসমার্ক কর্তৃক জার্মানী একত্রিকরণের সময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইতালি প্রভৃতি পরাশক্তিগুলো বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। অটোমান সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে পরাশক্তিদের এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। যা ১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেসের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিসমার্ক পরাশক্তিদের এই দ্বন্দ্ব মিমাংসা করেন। কিন্তু পরবর্তিতে বিসমার্কের পতন হলে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিতে দ্বিতীয় উইলিয়াম মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদ নীতি গ্রহণ করেন।

জার্মান সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার

জার্মান সাম্রাজ্যবাদ উত্থানের পূর্বেই ইউরোপের অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদিরা বিশ্বের নানা প্রান্তে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। যেমনঃ ভারত, ও মিশরে ব্রিটেন, উত্তর আফ্রিকায় ফরাসি, বলকানে রাশিয়া তাদের সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার করে। এসব দেশের বৈশ্বিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ভাগ বসানোর তাড়নায় এবং ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের কাঁচামাল আহরণের তাগিদে জার্মানির দ্বিতীয় উইলিয়াম আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রয়োজন অনুভব করেন। সমরবাদে বিশ্বাসী ও উচ্চাভিলাষী দ্বিতীয় উইলিয়াম ক্ষমতা গ্রহণ করে জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে প্রথমে উত্তরে আফ্রিকায় এবং পরবর্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্য বিস্তার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

সমুদ্রে প্রভাব বিস্তার

একটি দেশের সামগ্রিক শক্তি-সক্ষমতায় সবল থাকার জন্য সমুদ্র বা নৌ বাহিনীতে শক্তিশালী হওয়া অতীব জরুরী। সমুদ্র বা নৌ বাহিনীতে যে দেশ যত বেশি শক্তিশালী, সে রাষ্ট্র ততই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। জার্মানি যখন তার সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্য হাতে নেয় তখন তাদেরও নৌ পথের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা যায়। সমুদ্রে সক্ষমতা অর্জনের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় উইলিয়াম ১৯০০ সালের দিকে একটি শক্তিশালী নৌ বাহিনী গঠন করেন যা সমুদ্রে তাদের প্রভাব বাড়াতে থাকে। কাইজার এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্য বিস্তারের সচেষ্ট হোন। এই জন্যই বলা হয় “World politics, expansions and navy were the three dominant notes of Kaiser Wilhelm II’s foreign policy.” এই তিন নীতির যৌথ প্রয়োগ জার্মানির সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কোন্দল আরো বাড়িয়ে তোলে, বিশেষ করে ব্রিটেনের সাথে। এখান থেকেই বৈশ্বিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হওয়া শুরু হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রসমূহ এবং ইরানের তেল শিল্প জাতীয়করণে ডঃ মোসাদ্দেকের ভূমিকা

মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান সাম্রাজ্যবাদের প্রতিষ্ঠা ও প্রকৃতি

বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে জার্মানি উৎসাহী হয়। তবে জার্মানি যখন মধ্যপ্রাচ্যে আসে তখন ইতোপূর্বেই সেখানে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে রেখেছিল। তাদেরকে মোকাবিলা করে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানির প্রভাব বৃদ্ধির জন্য Weltpolitik নীতি অনুসরণ করেন। এই নীতির ভিত্তিতে জার্মানি মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

জার্মানি তার পণ্যের বাজার ও শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ঢোকে। এর পাশাপাশি এই অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ যেমন, রেলপথ, সড়কপথ, এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে প্রভাব বাড়াতে আগ্রহী ছিল। তবে অটোমান সাম্রাজ্যেই জার্মানদের সরব পদচারণা ছিল।অটোমানদের সাথে যৌথভাবে তারা নানা ধরণের প্রকল্পের অংশীদার ছিল। তারা অবকাঠামোগত প্রকল্পের পাশাপাশি ভূগর্ভস্ত সম্পদ আহরণ, কৃষি ও অন্যান্য খাতেও অটোমানদের সাথে কাজ করে। যাইহোক, এসব কিছুর একটাই উদ্দেশ্য ছিল সেটা হলো, মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তার ও রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বিস্তার করা। বেশকিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে জার্মানদের সাম্রাজ্যবাদ নীতি প্রকাশ পায়। যথাঃ

মধ্যপ্রাচ্যে মিশনারি স্থাপন

মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য দ্বিতীয় উইলিয়াম সর্ব প্রথম মিশনারি স্থাপনের চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি মধ্যপ্রাচ্যের প্যালেস্টাইন, সিরিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে খ্রিষ্টান মিশনারি প্রেরণ করেন। তারা বিভিন্ন স্কুল, হাসপাতাল, ও এতিমখানা নির্মাণ করেছিল এসব অঞ্চলে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নানা ধরণের সামাজিক কাজকর্ম পরিচালিত হতো।  এসব কর্মকান্ডে যাতে অটোমানরা ভীত না হয় সেজন্য দ্বিতীয় উইলিয়াম ১৮৮৯ সালে কনস্টান্টিনোপল এবং ১৮৯৮ সালে জেরুজালেম ও দামেস্ক সফর করে ইসলামের রক্ষক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন।

আমাদের কাছে আফগানিস্তানের কী পাওনা?

অটোমানদের সহায়তা নীতি

১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেসে সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো ও রোমানিয়ার স্বাধীনতা স্বীকার করলেও অন্যান্য অঞ্চলের অটোমানদের প্রাধান্য বজায় থাকে। কিন্তু এ অঞ্চলে অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তি প্ররোচনার দ্বারা বলকান যুদ্ধের সূত্রপাত করলে জার্মানী অটোমানদের সাহায্য গ্রহণ করে। ফলে তাদের সাথে মিত্রতা স্থাপিত হয়।

অটোমান সেনাবাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ

১৮২৬ সালে দ্বিতীয় মাহমুদ জেনিসারি বাহিনী বিলুপ্ত করায় উনিবিংশ শতকের শেষ দিকে সংঘটিত বিভিন্ন বিদ্রোহ দমনে ক্ষমতা হারায়। এজন্য নিজেদের প্রতিরক্ষার স্বার্থে তুর্কিরা ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেও ব্যর্থ হয়ে জার্মানীর দিকে ঝুকে পড়ে। ১৮৮৩ সালে জেনারেল ফনডার গোলেজ অটোমান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করেন। ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৫ পর্যন্ত তিনি অটোমান সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া ১৯০৯ সালে ইস্তাম্বুলে সামরিক কলেজ প্রতিষ্ঠা করে জার্মানি। ১৯১৩ সালে জার্মানি অটোমান নৌবাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্য একটি নৌ মিশন প্রেরণ করে। এসব সহায়তার ফলশ্রুতিতে মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানীর প্রভাব খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পায় এবং অটোমান সাম্রাজ্য অনেকটাই জার্মানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

বার্লিন-বাগদাদ রেল প্রকল্প

অটোমান সেনা প্রশিক্ষণের পর ১৮৮৮ সালে জার্মানরা ওরিন্স রেলপথটি কনস্টান্টিনোপল এবং ১৮৯৩ সালে আনাতোলিয়া পর্যন্ত নির্মাণ করে তাদের অবস্থান সুদৃঢ করে। ১৯০৩ সালে বার্লিন-বাগদাদ রেলপথ প্রকল্প পরিকল্পনা করা হয়। তবে, ১৯১৪ সালে প্রকল্পটি শেষ হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে এটি সম্পুর্ণভাবে কখনোই চালু হয়নি।

১৯৫৮ সালে ইরাকের সামরিক বিপ্লবের পটভূমি

মধ্যপ্রাচ্যে নৌ ঘাটি স্থাপন

মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানদের প্রাধান্য বৃদ্ধির জন্য দ্বিতীয় উইলিয়াম ১৯০০ সালে পারস্য উপসাগরে নৌঘাটি নির্মাণ করেন। জার্মানরা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য তুর্কি নৌবাহিনীর সংস্কারেও সহায়তা করেছিল। এসময় তুর্কি নৌবাহিনীর সংস্কারে কাউন্ট রুবিল্যান্ডকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি তুর্কি নৌবাহিনীকে আধুনিক যুদ্ধ কৌশল এবং প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। পরে এ অঞ্চলে জার্মানির আধিপত্য স্বীকৃত হয়।

মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ

অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানি বেশ জোড়েশোরেই বিনিয়োগ করে। জার্মানির কোম্পানিগুলো খনি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, কৃষি ও অবকাঠামোগত কাজের সাথে জড়িত ছিল। অর্থনীতিতে জার্মানির এই বিনিয়োগ নীতির ফলে জার্মানি এই অঞ্চলে ভালভাবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

কুয়েতে কারিগরি মিশন

মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলগুলোতে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য জার্মানি ১৯০০ সালে কুয়েতে কারিগরি মিশন প্রেরণ করে। কিন্তু তা ১৮৯৯ সালের ইঙ্গ-কুয়েত চুক্তির পরিপন্থি হওয়ায় ব্রিটেন তার বিরোধীতা করে।

১৯৫৮ সালে ইরাকের সামরিক বিপ্লবের পটভূমি

মরক্কোয় হস্তক্ষেপ

ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরে মরক্কোয় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছিল। ১৯০৫ সালে ফ্রান্স মরক্কোর উপর একটি সামরিক অভিযান চালায়। এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল মরক্কোর উপর ফরাসি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। ফ্রান্সের এই উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টায় জার্মানি বাঁধা প্রদান করে। ১৯০৬ সালের ৭ই এপ্রিল  মরক্কো, স্পেন ও ফ্রান্সের মধ্যে আল-জিসিরাজ চুক্তির মাধ্যমে মরক্কোর স্বাধীনতা স্বীকৃতি দেয়া হলেও সেখানে ফ্রান্স প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করলে জার্মানি এতেও হস্তক্ষেপ করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয়। পরে একই বছরের ৩১ মে, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, এবং যুক্তরাজ্য অ্যান্টেনের প্রটোকল নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মাধ্যমে মরক্কোর উপর ফরাসি নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, কিন্তু জার্মানি এবং অন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলির কিছু স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়।

নব্য-তুর্কিদের সহায়তা

১৯০৮ সালে আধুনিকায়নবাদী নব্য তুর্কিরা অটোমান সাম্রাজ্যের দুর্নীতি এবং অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদকে পরাজিত করে পঞ্চম মুহাম্মদকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এ সরকার একটি সংবিধান প্রতিষ্ঠা করে এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। তারা অর্থনীতি, শিক্ষা এবং সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নেও কাজ করে। জার্মানি নব্য তুর্কিদের সংস্কারগুলিকে সমর্থন করে। জার্মানি অটোমান সাম্রাজ্যের আধুনিকায়নে অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে।

ইউরোপের অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতিক্রিয়া

মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে অন্যান্য ইউরোপীয় সাম্রাজ্যাবাদীদের প্রতিক্রিয়া মূলত নেতিবাচক ছিল। ব্রিটেন, ফ্রান্স, এবং রাশিয়া জার্মানিকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টাকে একটি হুমকি হিসেবে দেখেছিল। জার্মানির এই সাম্রাজ্যবাদ নীতির বিরোধীতায় অন্যান্য ইউরোপীয়রা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। যথাঃ

ব্রিটেনের প্রতিক্রিয়া

ব্রিটেন মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ছিল। এটি মিশর, সুদান, এবং জর্ডানের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল। ব্রিটেন জার্মানিকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়ার সম্ভাবনাকে একটি হুমকি হিসেবে দেখেছিল। জার্মানির সেনা প্রশিক্ষণ, নৌ ঘাটি স্থাপন, কারিগরি মিশন প্রেরণের ফলে ব্রটেনের মনোক্ষুন্ন হইয়েছিল। ১৯০৩ সালে বার্লিন-বাগদাদ রেল প্রকল্প গ্রহণ করায় ব্রিটেন প্রকাশ্যেই জার্মান বিরোধী নীতি গ্রহণ করে। ফলে ব্রিটেন জার্মান শত্রুতা বৃদ্ধি পায়।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডঃ ব্রিটিশ সভ্যতার নৃশংস উপহার

ফরাসি প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্সও মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান ছিল। এটি আলজেরিয়া, মরক্কো, এবং লেবাননের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল। ফ্রান্স সর্বদাই মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান বিরোধী ছিল। এজন্য ১৮৯৪ সালে তারা রাশিয়ার সাথে জোট গঠন করে। এরা মূলত সোডেনের যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ ও মরক্কোতে ফরাসি উপনিবেশ স্থাপনে বাঁধা প্রদান করায় ফরাসীরা মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নীতি গ্রহণ করে। ফলে ফরাসি-জার্মান দ্বন্দ্বের সূচনা ঘটে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল মূলত নেতিবাচক। রাশিয়া জার্মানিকে তাদের স্বার্থের জন্য একটি হুমকি হিসেবে দেখেছিল, এবং তারা জার্মানিকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে বাধা দেওয়ার জন্য একসাথে কাজ করার জন্য ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছিল। ১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেসের মাধ্যমে অটোমানদের বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তিতে অটোমানরা আর্মেনিয়ায় খ্রিষ্টান হত্যাসহ বলকান অঞ্চলের নীতি গ্রহণ করে। জার্মানি এই নীতিকে সমর্থন করলে রাশিয়াও মধ্যপ্রাচ্যে জার্মানির বিরোধীতা করে। এছাড়াও অটোমানদের দূর্বলতার সুযোগে রাশিয়া দার্দানেলিস ও বসফরাস প্রণালীতে প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করলেও জার্মান নৌবাহিনী তাদের প্রতিরোধ করে। ফলশ্রুতিতে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া-জার্মান সাম্রাজ্যবাদের দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে।

ভারত থেকে ব্রিটেনের ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার চুরি এবং মিথ্যাচার

ইঙ্গ-ফরাসি আঁতাত

১৮০৪ সালের পর ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পূর্ব সংকট থাকলেও ঘটে তা মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের উদ্বেগ ও নৌবাহিনী শক্তিশালীকরণের প্রয়োজনে ব্রিটেন ও ফ্রান্স মিত্রতা তৈরীতে আগ্রহী হয়। জার্মানির সাম্রাজ্যবাদ যৌথভাবে রুখে দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯০৪ সালের ৮ এপ্রিল ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি  ইঙ্গ-ফরাসি আঁতাত নামে স্বীকৃত। এই চুক্তির অধীনে ব্রিটেন ও ফ্রান্স পরস্পর পরস্পরের উপনিবেশের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটেনের মিশর দখল(১৮৮২) ও ফ্রান্স কর্তৃক স্বীকৃতি এবং মধ্য আফ্রিকাসহ উত্তর আফ্রিকায় ফরাসি দখলকে ব্রিটেন স্বীকৃতি প্রদান করে। এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান সাম্রাজ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।

ট্রিপল আঁতাত


ট্রিপল আঁতাত (Triple Entente) ছিল একটি ত্রিপক্ষীয় জোট যা ১৯০৭ সালে গঠিত হয়েছিল। ট্রিপল আঁতাত গঠনের প্রধান কারণ ছিল জার্মানির ক্রমবর্ধমান সাম্রাজ্যবাদ এবং ইউরোপে তার প্রভাব বৃদ্ধি। জার্মানি-অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির ত্রিদেশীয় জোটকে সামাল দিতে ১৯০৭ সালে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া জোটভুক্ত হয়। ট্রিপল আঁতাত কোন প্রকাশ্য জোট নাহলেও এই জোটটি জার্মান বলয় রোধে তখন আবশ্যিক হয়ে পড়েছিল। পারস্যে আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নে ব্রিটেন ও ফরাসিদের মাঝে দ্বন্দ্বের সূচনা ঘটলেও ব্রিটিশ মিত্র ফ্রান্সের সাথে ১৮৯৪ সালে ফরাসি-রুশ চুক্তির ফলে তা কিছুটা কমে আসে। ট্রিপল আঁতাতের শর্তের মধ্যে ছিলঃ মিশরের ওপর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করা, মরক্কোর পর ফ্রান্সের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করা, ইরানে রাশিয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে জার্মান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি।

উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতি কি? প্যারিস শান্তি সম্মেলনে তার ইচ্ছা কতখানি পূরণ হয়েছিল?

উপসংহার

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া অনেক আগে থেকেই সক্রিয় ছিল। সে হিসেবে জার্মানি মধ্যপ্রাচ্যে অনেক দেরিতে প্রবেশ করেছে। আর এর অন্যতম কারণ, ১৮৭১ সালে জার্মানিকে একত্রকারী বিসমার্ক বিসমার্কের বিদেশনীতি সাম্রাজ্যবাদী ছিল না। কিন্তু বিসমার্কের পতনের পর দ্বিতীয় উইলিয়ামের সাম্রাজ্যবাদী বিদেশ নীতি ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপের পরাশক্তিগুলোর সাথে জার্মানির নব্য সাম্রাজ্যবাদ নীতির সংঘাত বাঁধে। ইউরোপের পরাশক্তিদের মোকাবেলার জন্য জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইতালিকে সাথে নিয়ে ট্রিপল এলায়েন্স গঠন করে। আর এই জোটকে সামলতে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও রাশিয়া ট্রিপল আঁতাত নামে নতুন একটি ত্রিদেশীয় জোট গঠন করে। ফলে উভয় জোটের মাঝে নিত্য নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা হয় ও চুড়ান্ত ভাবে বৃহৎ দ্বন্দের সুচনা ঘটে। এই দ্বন্দ্বের চুড়ান্ত রূপই হলো উনবিংশ শতকের রক্তক্ষয়ী, অমানবিক ও সর্বাত্মক ধ্বংসলীলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক রাজনীতি রাকিবুল ইসলামের বিশেষ আগ্রহের বিষয়। তাঁর লেখালেখির মূল বিষয়বস্তু হলো রাজনীতি, সরকার, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।

Leave A Comment

সম্পর্কিত আর্টিকেল

কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন

এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…

লেখক হিসেবে আমাদের সাথে যোগ দিন

সাম্প্রতিক আর্টিকেল

  • গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রেরঃ নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা

গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

  • গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশনঃ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ

গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।

  • পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?

পিকেকে-র বিলুপ্তি: তুরস্কের জন্য সুযোগ নাকি কুর্দিদের জন্য নতুন সংকট?

পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?

  • আজ ১০ মে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটি কোরআনের সূরা আস-সাফের ৪ নম্বর আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"। গত ৬ মে’র ভারতের "অপারেশন সিঁদুর"-এর জবাবে পাকিস্তান এই পাল্টা হামলা চালিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ভারত প্রকাশ করেনি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দাবি, এই অভিযানে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, ও রাজস্থানের একাধিক সামরিক টার্গেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে ব্রাহ্মোস মিসাইল ডিপো এবং এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত।

অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুসঃ ভারতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা

পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটির অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"।

  • বিচারিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আদালতের এখতিয়ার। আদালতের এখতিয়ার তিন প্রকারঃ আদি এখতিয়ার, আপীল এখতিয়ার, এবং পরিদর্শন এখতিয়ার।

আদালতের এখতিয়ারঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও বাংলাদেশে প্রয়োগ

বিচারিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আদালতের এখতিয়ার। আদালতের এখতিয়ার তিন প্রকারঃ আদি এখতিয়ার, আপীল এখতিয়ার, এবং পরিদর্শন এখতিয়ার।