একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন? পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে এমন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখায় যে, মনে হয় তাদের মানবাধিকার পকেটে রাখা টিস্যু পেপার—যেখানে দরকার সেখানে বের করে, আর না দরকার হলে পকেটেই থাকে!
গত বছর ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরাইলি বাহিনী গাজায় যে নরকযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাতে এই “সভ্য” পশ্চিমাদের মুখোশ খসে পড়েছে মুহুর্তের মধ্যেই! ৫০,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। আর এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ইসরায়েলের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ—যেন কসাইকে ছুরি কিনে দেওয়া! অথচ রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করল, ওই একই দেশগুলো রাশিয়াকে “সভ্যতার শত্রু” বানিয়ে স্যাংশনের পর স্যাংশন চাপায়! এটা কী কপালের জোর, নাকি পশ্চিমাদের “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” এর নতুন সংজ্ঞা?
ইউক্রেন বনাম ফিলিস্তিনঃ পশ্চিমা মানবিকতার নাটক
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতেই পশ্চিমা মিডিয়ার হৈচৈ দেখে মনে হয়েছিল, যেন সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে! টিভি চ্যানেলগুলো ২৪ ঘণ্টা লাইভ কভারেজ দিতে লাগল, সব সেলিব্রিটি ইউক্রেনের পতাকার রঙে প্রোফাইল পিকচার বদলে ফেলল। স্যাংশন, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, জেলেনস্কির জন্য স্ট্যান্ডিং ওভেশন—সবই ছিল! ইউক্রেনকে “হিরো” বানিয়ে দেওয়া হলো, আর পুতিন হয়ে গেলেন “হিটলারের আত্মা”।
কিন্তু গাজায় যখন ইসরাইলি ড্রোন স্কুল-হাসপাতালে বোমা মারছে, তখন পশ্চিমা নেতাদের জিভ কেমন করে যেন উল্টে গেল! গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় ৫০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি (যার ৫৫% শিশু আর নারী) নিহত হলে এই একই “হিউম্যান রাইটস চ্যাম্পিয়ন”দের রিয়্যাকশন কী? “আমরা চিন্তিত” আর “সব পক্ষকে সংযম দেখাতে অনুরোধ করছি”! মাশাল্লাহ, চিন্তার তো শেষ নেই! বাইডেন তো ইসরাইলকে ১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিলেন—যেন কসাইকে ছুরি দিয়ে বলা, “আরে ভাই, একটু আস্তে কাটো!”
একবার ভেবে দেখুন, ইউক্রেনে এক শিশু মারা গেলে পশ্চিমা টিভি চ্যানেলগুলো ২৪ ঘণ্টা ক্রাইম শো চালায়, কিন্তু গাজার ১০০ শিশুর লাশ পেলেও হেডলাইন হয়—”হামাসের প্ররোচনায় ইসরাইলি আত্মরক্ষা!” অথবা, ইউক্রেনে রাশিয়ার ট্যাংক “বর্বর আগ্রাসন” আর গাজায় ইসরাইলি ট্যাংক “হলো আত্মরক্ষার প্রযুক্তি!” ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো “নো ফ্লাই জোন” চায়, কিন্তু গাজার আকাশে ইসরাইলি F-16 উড়লে তারা বলে, “এটি আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রোগ্রাম!” কিংবা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ICJ-তে মামলা ঠুকে দিনে দিনে রেজ্যুলেশন পাস। আর ইসরাইলের গণহত্যার প্রমাণ জমা দিলে আমেরিকা ভেটো দিয়ে বলে, “আইসিজে পক্ষপাতদুষ্ট!”
পশ্চিমা মিডিয়ার “বাছাই করা সত্যতা”ঃ হামাসের অস্ত্র নাকি শিশুদের লাশ?
পশ্চিমা মিডিয়ার রিপোর্টিং দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু “হামাস মেম্বার” আর “কোল্যাটেরাল ড্যামেজ”! তারা ফিলিস্তিনি শিশুদের মৃত্যুকে “কোল্যাটেরাল ড্যামেজ” বলে আখ্যায়িত করে, আর ইউক্রেনের একটি গমের ক্ষেত ধ্বংসকে “হিউম্যানিটি ক্রাইম” বানায়।
ইউক্রেনের রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের বেলায় তাদের শিরোনাম “Putin’s Brutal Invasion!” আর গাজার বেলায় তাদের খবরের শিরোনাম, “Israel-Hamas Conflict!” কনফ্লিক্ট শব্দটা যেন একটা ক্রিকেট ম্যাচের স্কোরকার্ড! অথচ গাজায় যা হচ্ছে, তা কোনো “কনফ্লিক্ট” নয়—একপেশে গণহত্যা।
আবার দেখুন, ইউক্রেনে একটি বিল্ডিং-এ রাশিয়ান হামলায় বিবিসি, সিনএনএনের সংবাদ শিরোনাম, “Putin’s Bloody War: Children Killed in Russian Bombing!” অন্যদিকে গাজার একটি স্কুলে ইসরাইলি হামলায় তাদের শিরোনাম, “Tensions Rise as IDF Targets Hamas Infrastructure Near School” কিংবা, Clashes Between Israel and Hamas: 50 Militants Neutralized!”
“নিউট্রালাইজড” শব্দটা শুনে মনে হয়, ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদেরকে স্পা সেন্টারে রিল্যাক্স করাতে গিয়েছিল! আর “Hamas Infrastructure” মানে যেন স্কুলে বোমা পড়েছে না, হামাসের কোন কারখানাতে ঘা দিয়েছে! সিএনএন-এর এক সাংবাদিক ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “ইসরাইল হামাসের টানেল ধ্বংস করতে বাধ্য হয়েছে”—সামনে পড়ে আছে ডাক্তার-নার্সের লাশ! এটাই “অবজেকটিভ জার্নালিজম”—লাশের ওপর দাঁড়িয়ে বলা, “এটা আসলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ!”
আর পশ্চিমাদের ভোকাবুলারি কী অসাধারণ! তারা ইউক্রেনে রাশিয়ানদের জন্য বলে “মারা” (kill), আর ইসরাইলের জন্য বলে “নিউট্রালাইজ” (neutralize)! এটা যেন আমাদের দেশের কোন নেতা বলছেন, “আমি ঘুষ নিই না, শুধু ‘স্পিড মানি’ গ্রহণ করি!”
মনে আছে ২০১৫ সাল? সৌদি আরব ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ শুরু করল—পশ্চিমা দেশগুলো সৌদিকে অস্ত্র বিক্রি করে আর বলল, “এটি ইরানের প্রভাব ঠেকানোর যুদ্ধ!” ৩ লক্ষাধিক ইয়েমেনি মারা গেছে, কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া কভারেজ? প্রায় জিরো! অথচ ইসরাইলের প্রতি তাদের সমর্থন দেখে মনে হয়, গাজার আকাশে বোমার গান যেন পশ্চিমাদের জন্য “ফায়ারওয়ার্ক শো”!
যুদ্ধবিরতি? নাহ, ইসরাইলের জন্য “গেম অফ থ্রোনস”!
এই কয়েক মাসে ইসরাইল কতবার সিজফায়ার ঘোষণা করেছে আর কতবার ভেঙেছে তার হিসাব আছে আপনার কাছে? গাজায় যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েই ইসরায়েল সেটা ভঙ্গ করেছে বারবার।
নভেম্বর ২০২৩-এ প্রথম সিজফায়ার, ডিসেম্বরে দ্বিতীয়টি। আর এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত আরও কয়েকবার। প্রতিবারই ইসরাইল “হামাসের অস্ত্র গুদাম” বা “হামাস নেতা” খুঁজে পাওয়ার অজুহাতে আবার বোমাবর্ষণ শুরু করে। আশ্চর্য ব্যাপার হল, এই “অস্ত্র গুদাম”গুলো সবসময় হাসপাতাল, শরণার্থী ক্যাম্প, আর স্কুলের ভেতরে থাকে! সেই বদমাশ ছেলের মতো, যে বাবার সামনে কাউকে মেরে বলে, “উনি আমাকে প্রথমে খারাপ চোখে তাকিয়েছেন!”
অথচ জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৯০% ইসরাইলি হামলায় নিহত হচ্ছেন বেসামরিক নাগরিক। কিন্তু পশ্চিমা নেতারা কী বলে? তারা বলছেন, “ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে”। মানে, ফিলিস্তিনিরা যদি পাথর ছোঁড়ে, ইসরায়েল সেখানে নিউক্লিয়ার বোমা মারলেও সেটা “আত্মরক্ষা”?
ইউরোপের “হিউম্যানিটি প্যারাডক্স”ঃ কথা বলার স্বাধীনতা কি শুধু পশ্চিমাদের?
যে ইউরোপ “ফ্রিডম অফ স্পিচ” এর জন্য এত সোরগোল করে, ইউক্রেনের পতাকা ওড়ায় বাড়ির বারান্দায়, গাড়ির ব্যানারে, সেই ইউরোপে ফিলিস্তিনি সমর্থনকারীদের অবস্থা দেখুন! জার্মানিতে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ নিষিদ্ধ কিংবা ফ্রান্সে ফিলিস্তিন সমর্থনে আন্দোলন “বিপজ্জনক” ঘোষিত, ফিলিস্তিনি সমর্থনে স্লোগান দিলেই গ্রেফতারির ভয়! লন্ডনে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়ালেই “টেরোরিস্ট সিম্পাথাইজার”! আসলে, “ফ্রি স্পিচ” শুধু পশ্চিমা এজেন্ডা সাপোর্ট করার জন্য!
একটা মজার ঘটনা বলি, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এক বাংলাদেশি ছাত্র বার্লিনে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিল। জার্মান পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করল: “আপনি কি হামাসের সদস্য?” ছাত্রটি উত্তর দিল: “না, আমি শুধু মানবতার পক্ষে।” পুলিশ বলল: “এটাই তো সমস্যা!” (সূত্র: ডয়েচে ভেলে রিপোর্ট)
ভেনিজুয়েলা বা বলিভিয়ার নেতারা যখন ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেন, পশ্চিমা মিডিয়া তাদের বলেন “অটোক্র্যাট”! অথচ সৌদি যুবরাজ বিন সালমান, যিনি জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি পশ্চিমের “মডার্ন রিফর্মার”!
আন্তর্জাতিক আইন? পশ্চিমের হাতের পুতুল!
জাতিসংঘ সিকিউরিটি কাউন্সিল, আইসিজে, আইসিসি—এগুলো শুনলে হাসি না পেয়ে উপায় নেই! জাতিসংঘে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এলে আমেরিকা ভেটো মারে— ২০২৩ সালেই এখন পর্যন্ত তিনবার! অথচ রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে একই কাউন্সিল ঘন্টায় ঘন্টায় রেজোলিউশন পাস করে!
মার্চ ২০২৪-এ আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। আমেরিকার রিয়্যাকশন? “আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করি, ICC-এর এখানে কোন অধিকার নেই!” অথচ একই আইসিসি যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে অনুরূপ পরোয়ানা জারি করে, তখন আমেরিকা বলে: “আন্তর্জাতিক আইন অবশ্যই মানতে হবে!”
আইসিজে যখন সিদ্ধান্ত দেয়, “ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে, এটা বন্ধ করা উচিত,” আমেরিকা বলে আমরা আইসিজে মানিনা, ইসরাইল বলে, “আইসিজের কোন অধিকার নেই!” অথচ রাশিয়ার বিরুদ্ধে একই আইসিজে-এর রায় এলে, আমেরিকা-ইউরোপ বলে, “আইন সবার ওপরে!”
পশ্চিমা মানবাধিকার সংগঠন বনাম পশ্চিমা “হাইব্রিড ওয়ার”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জেনেভা কনভেনশন—এসব সংস্থা ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের বিপক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছে। এরা তো বারবার ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ দিচ্ছে। গাজার শিশুদের উদ্ধার করতে গিয়ে যেসব ফিলিস্তিনি রেসকিউয়ার মারা গেছেন, তাদের ফুটেজ দেখে পাথরও কেঁদে উঠবে। কিন্তু পশ্চিমা নেতাদের আপত্তি: “এই রিপোর্টগুলো একতরফা!” হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন—গণহত্যার রিপোর্টেও “ব্যালেন্স” চায় তারা! যেন খুনি আর নিহতের মধ্যে “সমান সমান” থাকতে হবে! মানে, আপনি যদি বলেন, “আগুনে পুড়ে মানুষ মরেছে”, তাহলে পশ্চিমা মিডিয়া বলবে, “আপনি আগুনের পক্ষ থেকে কথা বলেননি—রিপোর্টটি আনফেয়ার!”
নিউইয়র্ক টাইমসের এক সাংবাদিক গাজার স্কুলে বোমা হামলার ফুটেজ দেখিয়েছিলেন, যেখানে ৩০+ শিশু মারা গিয়েছিল। তার পরের দিন সে “ফেয়ার কভারেজ” না দেওয়ার অভিযোগে ছুটিতে পাঠানো হল। অর্থাৎ, শিশুদের মৃত্যুর সত্য ছবি দেখালে আপনি “বায়াসড”! আর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রেস রিলিজ পড়লে আপনি “অবজেকটিভ”!
Why has the US backed Israel consistently?
আরে ভাই, “ফেয়ার কভারেজ” মানে কী? যদি কেউ আপনার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়, তাহলে সংবাদপত্রে লিখতে হবে—”একদিকে বাড়িওয়ালার ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে আগুন লাগানো ব্যক্তির হাতে ব্লিস্টার হয়েছে”?
পশ্চিমা “ডিজিটাল সেন্সরশিপ”ঃ সত্য কথা বলাও অপরাধ
ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম—এগুলো “কমিউনিটি গাইডলাইন” এর নামে ফিলিস্তিনি কণ্ঠকে বন্ধ করে দিচ্ছে! গাজার একজন ছোট মেয়ে যখন তার ধ্বংসপ্রাপ্ত স্কুলের ভিডিও পোস্ট করে, ফেসবুক তা “হেট স্পিচ” বলে ডিলিট করে দেয়। অথচ ইউক্রেনে একই ধরনের ভিডিও হয়ে যায় “ডকুমেন্টিং ওয়ার ক্রাইম”!
মার্ক জুকারবার্গ নিজে স্বীকার করেছেন যে, গাজার অবস্থা সম্পর্কে কন্টেন্ট ফিল্টার করার জন্য স্পেশাল অ্যালগরিদম চালু করা হয়েছে! সত্যি কথা বলতে আপনাকে আসলে “কমিউনিটি গাইডলাইন” অর্থাৎ পশ্চিমা নীতির পকেটে থাকতে হবে!
নিজেই ভাবুন, আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, আমরা কি পারি না ফিলিস্তিনের কথা বলতে? টিকটকে একজন ফিলিস্তিনি বাচ্চা “আমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে” বলে কাঁদলে, সেটা “পলিটিক্যাল কনটেন্ট” বলে ডিলিট হয়। কিন্তু ইউক্রেনের ৫ বছরের বাচ্চা “পুটিন ইজ বাড” বলে ড্যান্স করলে, সেটা হয়ে যায় “ব্রেভারি”!
পশ্চিমা “সেলেব্রিটি অ্যাক্টিভিজম”: “লুক অ্যাট মি, আই কেয়ার!”
হলিউড তারকা, পপ গায়ক, খেলোয়াড়—এরা ইউক্রেনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল পিকচার বদলায়, ফান্ড রেইজ করে, কন্সার্ট দেয়। অথচ ফিলিস্তিনের জন্য একটা টুইট করলেই তাদের “ক্যারিয়ার সুইসাইড”!
কানাডিয়ান গায়ক জাস্টিন বিবার যখন “প্রে ফর পালেস্টাইন” লিখেছিলেন, তার বিজ্ঞাপন চুক্তি বাতিল করা হল! বেলা হাদিদ, দুয়া লিপা, রোজা সলাজার—যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছেন, তাদের ওপর হয়েছে “ক্যান্সেল কালচার” এর হামলা। পশ্চিমা “সহিষ্ণুতা” এর আসল চেহারা এটাই—”আমার মতো চিন্তা কর, নাহলে চুপ থাক!”
পশ্চিমা “সেলফি হিউম্যানিটি” এর মুখোশ খুলছে
পশ্চিমাদের এই “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” দেখে মনে পড়ে গেল সেই স্প্যানিশ প্রবাদ—”El que parte y reparte, se queda con la mejor parte!” (যে ভাগ করে, সে সেরা টুকু নিজের জন্য রাখে!) ইসরাইল আর পশ্চিমা মিত্ররা ফিলিস্তিনের জমি ভাগ করে নিচ্ছে, আর ফিলিস্তিনিরা পাচ্ছে শুধু বোমার ভাগ! ভাই, এমন ন্যায়বিচার পৃথিবীতে আর কোথায় আছে?
যাইহোক, পশ্চিমা দেশগুলো যতই “Rules-Based International Order” এর কথা বলুক, তাদের কাজে প্রকাশ পায়—শক্তিশালীরাই আইন তৈরি করে, দুর্বলেরা শুধু মৃত্যুবরণ করে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক আক্রমণ, আফগানিস্তানের ধ্বংস—পশ্চিমারা নিজেরাই তো মানবাধিকার লঙ্ঘনের চ্যাম্পিয়ন! ২০০৩ সালে ইরাকে ১০ লক্ষ মানুষ মারার পরও কোনো স্যাংশন নয়, বরং জর্জ বুশকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হলো! মানবাধিকারের নোবেলজয়ী ওবামাই তো ইয়েমেনে ড্রোন হামলা চালিয়েছেন—সেখানে শিশুরা মরেছে, কিন্তু মিডিয়া বলেছে, “টেরোরিস্ট এলিমিনেটেড!”
আজ পশ্চিমের মানবাধিকারের মুখোশ খুলে গেছে। তাদের “সেলফি হিউম্যানিটি” মানে হল—যেখানে আমার স্বার্থ আছে, সেখানে মানবাধিকার আছে; যেখানে আমার স্বার্থ নেই, সেখানে মানবাধিকার একটা বিলাসিতা!
ইউক্রেনে রাশিয়ার অপরাধের জন্য তারা রাশিয়াকে শয়তান বানালো, কিন্তু ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের অপরাধে তারা চুপ। কারণ? ইসরায়েল পশ্চিমের “স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার”—তেলের পাইপলাইন, মধ্য প্রাচ্যের প্রভাব বিস্তার, অস্ত্র ব্যবসার বিশাল বাজার। ফিলিস্তিনিরা মরুক—তাতে পশ্চিমের শেয়ার মার্কেট তো ওঠানামা করে না! বরং ইসরাইলের সাথে অস্ত্র চুক্তি, গ্যাস ফিল্ডের মালিকানা—এগুলোতেই টাকার গন্ধ!
ফিলিস্তিনিদের রক্তে আজও লিখিত হচ্ছে এই সত্য। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, অন্যায় কখনও চিরস্থায়ী হয় না। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ—সবই পশ্চিমের দ্বৈত নীতিকে উল্টে দিয়েছে। হয়তো একদিন ফিলিস্তিনের মুক্তির সূর্যোদয়ও আসবে। তবে তার জন্য আমাদেরকেই হয়তো লড়তে হবে—সোশ্যাল মিডিয়ায়, রাজপথে, বিবেকের আদালতে। কারণ, পশ্চিমা নেতারা তো তাদের ফ্যাশন শো আর গালা ডিনারেই ব্যস্ত!
সম্পর্কিত আর্টিকেল
কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন
এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…
সাম্প্রতিক আর্টিকেল
সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রেরঃ নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা
গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশনঃ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ
গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।
পিকেকে-র বিলুপ্তি: তুরস্কের জন্য সুযোগ নাকি কুর্দিদের জন্য নতুন সংকট?
পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?
অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুসঃ ভারতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা
পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটির অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"।
আদালতের এখতিয়ারঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও বাংলাদেশে প্রয়োগ
বিচারিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আদালতের এখতিয়ার। আদালতের এখতিয়ার তিন প্রকারঃ আদি এখতিয়ার, আপীল এখতিয়ার, এবং পরিদর্শন এখতিয়ার।