ইতিহাসের পাতায় যেসব মুহূর্ত স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তার মধ্যে বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্যতম। স্বৈরশাসনের দীর্ঘ ছায়া ভেদ করে দেশের ছাত্রসমাজ, সাধারণ নাগরিক, শ্রমিক, কৃষক—সমস্ত জনগোষ্ঠী যখন একতাবদ্ধ হয়ে উঠে, তখন ইতিহাস নতুন কাব্য লিখতে শুরু করে। এই অভ্যুত্থান শুধু একটি রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, এই অভ্যুত্থান ছিল এক জাতির নিপীড়ন, বিভক্তি, এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে উন্মেষ ও নিজের অধিকারের জন্য সর্বোচ্চ আত্মবিসর্জনের অনন্য উপাখ্যান।
জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাসের পটভূমি
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধারণ করলেও, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনার শাসনে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্রমেই সীমিত হয়ে বাংলাদেশকে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বাক-স্বাধীনতা হরণ, বিরোধী রাজনীতিক ও নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, এবং আদালত থেকে প্রশাসন—সবখানেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা হয়।
গণতন্ত্র ধ্বংসের প্রথম লক্ষ্যবস্তু হয় নির্বাচন ব্যবস্থা। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের বিরোধীবর্জিত নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের “মিডনাইট ভোট ডাকাতি” – প্রতিটি পদক্ষেপই গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকে দেয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একে স্পষ্টভাবে “ভোটারবিহীন নির্বাচন” হিসেবে আখ্যায়িত করে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর মিথ্যা মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম—এসব হয়ে ওঠে দখলদার সরকারের নিয়মিত অস্ত্র। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া স্পষ্টত দেখায়, বাংলাদেশে “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড” এবং “গুম” এর ঘটনায় মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছিল। মিডিয়া ও সাংবাদিকতার ওপর কঠোর সেন্সরশিপ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ, এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বিশ্ব সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১৬৩তম অবস্থান তারও নিদর্শন।
ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থ লোপাট, রাজনৈতিক মহলে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার প্রতারণা—সকল ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন বিস্তার লাভ করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ ক্রমাগত দুর্নীতি সূচকে পিছিয়ে পড়তে থাকে। হাসিনা ক্ষমতাকে দুর্নীতিবাজদের দুর্গে পরিণত করেন, যারা তার চারপাশে এক প্রহরীবলয় গড়ে তোলে। হাসিনা নিজেই একটি দুর্নীতিবাজদের দল তৈরি করেন, যারা তার আশেপাশে ঘিরে থাকত এবং কেউ দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেই তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসত। হালিশহরের ক্যাসিনো কাণ্ড, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট আর শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ছিল এর প্রতীকী উদাহরণ।
শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয় রাজনীতির রক্তচক্ষে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম আর “অটোপাস”-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা হয়। ২০২৩ সালে এইচএসসিতে ৯০%-এরও বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়া – যা শিক্ষাবিদদের মতে এক কাল্পনিক পরিসংখ্যা। এর ফলে দেশে বেকারত্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারত্বের হার ২০২৩ সালে ৫.৫% থেকে বেড়ে ১০% এর কাছাকাছি পৌঁছেছিল, যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি।
সবচেয়ে ভয়ানক ছিল জাতীয় স্বার্থের বিক্রি। হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতের এক ক্লায়েন্ট স্টেটে পরিণত করেন। তিস্তা চুক্তি, এনআরসি-সিএএ ইস্যুতে নীরবতা, ভারতের সাথে সীমান্ত চুক্তি, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের পণ্য পরিবহন – প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে। জাতিসংঘে ভারতের পক্ষে ভোট দেওয়া জনগণের ক্ষোভের চূড়ায় পৌঁছে দেয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাসঃ কোটা সংস্কার থেকে জাতীয় অভ্যুত্থান
২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস-এর প্রথম অধ্যায়। রকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে ছাত্র-জনতা রাজপথে নামে। শিক্ষার্থীদের অদম্য আন্দোলনের মুখে সরকার ৪৬ বছরের পুরনো কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায় সেই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করলে আবার আগুন জ্বলে ওঠে। জুলাই মাসে “বাংলা ব্লকেড” কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দেয়।
১৪ জুলাই হাসিনার এক মন্তব্য আন্দোলনকে আরও উত্তপ্ত করেঃ
“যদি মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা কোটা না পায়, তাহলে কি তা রাজাকারদের নাতি-নাতনিদের দেওয়া হবে?”
এই মন্তব্যের প্রতিবাদে ১৫ জুলাই ভোর থেকে সারা দেশে শোনা যায়:
তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার! কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার!
সরকারের নির্দেশে ১৬ জুলাই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়লে রামপুরা, কুরিল, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র সংঘর্ষ বাধে। ২১ জুলাই আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে ৯৩% মেধাভিত্তিক নিয়োগের নির্দেশ দিলেও ততক্ষণে আন্দোলন কোটা সংস্কারের সীমা পেরিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
সেদিন রামপুরা এলাকায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একই সময়ে, এআইইউবি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ইউআইইউ-এর শিক্ষার্থীরা কুরিল বিশ্ব সড়ক এবং প্রগতি সরণিতে বিক্ষোভ করে। একই সাথে, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাখালী এলাকায় সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরায় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ শুরু করে।
দমন-পীড়ন ও সহিংসতা
জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে সরকারের দমননীতি চরম আকার ধারণ করে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আওয়ামী লীগের ছাত্র-যুব সংগঠনের সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গুলি, লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস আর রাবার বুলেটের বৃষ্টিতে রক্তে ভেসে যায় রাজপথ।
প্রাথমিক সরকারি হিসাবে ২১৫ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও, জাতিসংঘের তদন্তে প্রমাণিত হয় অন্তত ৬৫০ জনের মৃত্যু। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম জানান, মৃতের সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়েছে, ৪০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী চিরতরে অন্ধ হয়েছে, আহত ২০,০০০+ এবং গ্রেফতার ১১,০০০+। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ৩২ জন শিশু।
সরকার তথ্য গোপনে তৎপর হয়: হাসপাতালগুলোকে তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা, সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ, এমনকি অনেককে পরিচয়হীন কবর দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বর নাগাদ মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই “ভারী হাতে দমননীতি”র তীব্র নিন্দা করে।
কিন্তু এই নির্যাতন ছাত্র-জনতা’র মনোবল ভাঙতে পারেনি। বরং এটি তাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ করে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চাকুরিজীবী, কৃষক, শ্রমিক – সব শ্রেণীর মানুষ একত্রিত হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে।
সরকার পতনের মহেন্দ্রক্ষণ
৪ আগস্ট শাহবাগে হাজার হাজার মানুষের জমায়েতের মধ্য দিয়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। সারা দেশে সংঘর্ষে ৯৭ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ১৪ জন পুলিশ। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলায় যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ পুলিশের একটি সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, ২৭টি পুলিশ স্থাপনা আক্রমণ ও ভাঙচুর করা হয়েছে, এবং এই ঘটনায় একশত পুলিশ আহত হয়েছে।
বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে, একাদশ শ্রেণীর ছাত্র গোলাম নাফিজ ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন, যার রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়ার ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যায়, নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। দুপুর ১২টার মধ্যে সরকার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সব সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আপামর জনসাধারণ এবার পিছু হটেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৫ আগস্ট গণভবন অভিমুখে লং মার্চের ডাক দেয়। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়াসহ সামরিক নেতারা সৈন্যদের বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করার আহ্বান জানান।
সরকার ৫ আগস্ট থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, যার মধ্যে ব্যাংকও বন্ধ থাকবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ৬ আগস্ট ঢাকায় মিছিল করার তাদের অভিপ্রায় নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটি কাঠামো প্রস্তাব করে, পরামর্শ দেয় যে এটি শিক্ষক, বিচারক, আইনজীবী এবং বেসামরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন বেসামরিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মতামত প্রতিফলিত করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ঘোষণা করেন যে তাদের ঢাকায় মিছিল ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগস্টে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি সারা দেশের বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের রাজধানীর দিকে মিছিল করতে এবং নাগরিক অবাধ্যতায় অংশ নিতে আহ্বান জানান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা, যার মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়াও রয়েছেন, একটি সংবাদ সম্মেলন করেন সৈনিকদের ক্যাম্পে ফিরে যেতে এবং রাজনৈতিক সংকটে জড়িত হতে বা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে বিরত থাকতে আহ্বান জানান। ঢাকায় মিছিলের ডাকের প্রতিক্রিয়ায়, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান জিরো টলারেন্সের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে কারফিউ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারফিউ প্রত্যাখ্যান করে এবং সবাইকে গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে মিছিল করতে উৎসাহিত করে। চারদিকে জাতীয় ঐক্য, শ্রমিক-জনতার প্রতিরোধ ও ব্যাপক হতাহতের মুখে শেখ হাসিনা সরকার টিকে থাকতে পারে না। ৫ আগস্ট, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী ঢাকায় সমবেত হলে, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশের গুলিতে একদিনেই বহু নিহতের খবর আসতে থাকে। চাঁনখারপুলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল মো. সুজন হোসেনের মতো কিছু লোক বিক্ষোধীদের উপর নির্বিচারে সরাসরি গুলি চালায়, যার ফলে একই দিনে, বিক্ষোভের সময় ১৩৫ জন নিহত হয়।
বিকেলে হাজার হাজার মানুষ গণভবন অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকে। এরই মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে: শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। হাসিনা কোনো পদত্যাগ ভাষণ ছাড়াই গাড়ি, হেলিকপ্টার আর বিমানযোগে ভারতের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে পালিয়ে যান। লন্ডন বা যুক্তরাষ্ট্র তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করায় তিনি ভারতে আটকা পড়েন।
নতুন বাংলাদেশ, নতুন প্রত্যাশা
অভ্যুত্থানের পরপরই প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা, সংহতি, গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করে। রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সভা-সমিতি, মুক্ত আলোচনার পরিবেশ তৈরির পথ খুলে যায়। কিন্তু চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান: আওয়ামিলীগ আর শেখ হাসিনা’র অনুসারীরা গোপনে সক্রিয় রয়েছে। তবে ছাত্র-জনতা এখন সজাগ – তারা বুঝেছে, গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে সবসময় সচেতন থাকতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থান ছিল এক অসম সাহস ও ঐক্যের ঐতিহাসিক নজির, যেখানে একটি পুরো দেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে, চরম নির্যাতন, মৃত্যুভয়—কিছুই জনগণকে দমন করতে পারে না। একইসাথে আন্দোলনের মহানায়ক ছিল সাধারণ মানুষ—শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, নিয়মিত নাগরিক, প্রত্যেকেই। স্বৈরাচারীদের পতনে তারা প্রত্যয়ী আস্থা গড়ে তুলেছে জনগণের ক্ষমতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্বপক্ষে। আগামী দিনের বাংলাদেশকে নতুন স্বপ্ন ও প্রত্যাশায় জাগ্রত করেছে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস—জনগণই এই ইতিহাসের চালিকাশক্তি।