[fusion_builder_container type=”flex” hundred_percent=”no” equal_height_columns=”no” hide_on_mobile=”small-visibility,medium-visibility,large-visibility” background_position=”center center” background_repeat=”no-repeat” fade=”no” background_parallax=”none” parallax_speed=”0.3″ video_aspect_ratio=”16:9″ video_loop=”yes” video_mute=”yes” border_style=”solid”][fusion_builder_row][fusion_builder_column type=”1_1″ layout=”1_1″ background_position=”left top” border_style=”solid” border_position=”all” spacing=”yes” background_repeat=”no-repeat” margin_top=”0px” margin_bottom=”0px” animation_speed=”0.3″ animation_direction=”left” hide_on_mobile=”small-visibility,medium-visibility,large-visibility” center_content=”no” last=”true” hover_type=”none” background_blend_mode=”overlay” first=”true”][fusion_text]

ইংরেজি সাহিত্যের অমর রচনা জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম (Animal Farm) প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে, এবং এটি তখন থেকেই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। উপন্যাসটি একটি প্রাণীদের খামারের গল্পের আড়ালে একটি গভীর রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, যেখানে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এটি এমন একটি কাহিনী যা স্বৈরাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং শাসকদের লোভ ও দুর্নীতি নিয়ে লেখা হয়েছে। অ্যানিম্যাল ফার্মের মূল প্রতিপাদ্য হলো—বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা কিভাবে ধীরে ধীরে স্বৈরাচারে পরিণত হয়।
যদিও অরওয়েল তার লেখনীর মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্তালিনবাদী শাসনকে রূপকধর্মী উপায়ে উপস্থাপন করেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মের কাহিনী ও চরিত্র বিশ্লেষণ করলে স্বৈরাচার হাসিনার শাসনের গুরুত্বপূর্ণ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আমরা জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম কে সমসাময়িক বাস্তবতায় আলোচনা করব।
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মের সংক্ষিপ্ত বয়ান
অ্যানিম্যাল ফার্মের গল্পটি মিস্টার জোন্সের খামার থেকে শুরু হয়। এই খামারটি ‘ম্যানর ফার্ম’ নামে পরিচিত। মিস্টার জোন্স তার খামারের প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুর ও অবহেলার মনোভাব পোষণ করতেন। একদিন, খামারের প্রাণীরা পুরোনো মেজর নামে এক শূকর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিদ্রোহ করে এবং খামারের দখল নেয়। বিদ্রোহ সফল হওয়ার পর তারা খামারের নাম পরিবর্তন করে “জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম ” রাখে এবং নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তারা ঘোষণা করে, “সব প্রাণী সমান,” এবং একটি নতুন নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করে, যার মাধ্যমে সকল প্রাণীর মুক্তি ও সমতা নিশ্চিত করা হবে।
প্রথম দিকে, শূকর নেপোলিয়ন ও স্নোবল তাদের নেতৃত্বে প্রাণীদের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ শুরু করে। কিন্তু শীঘ্রই, নেপোলিয়নের লোভ ও ক্ষমতালিপ্সা তার নীতি পরিবর্তন করে। সে স্নোবলকে খামার থেকে বিতাড়িত করে এবং নিজেকে একনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ধীরে ধীরে, খামারের শূকররা অন্যান্য প্রাণীদের শোষণ করা শুরু করে, এবং তাদের শাসন প্রায় মানুষের শাসনের মতো নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত নেপোলিয়নের নেতৃত্বে খামারের শাসন একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়।
অ্যানিম্যাল ফার্মের মূল প্রতিপাদ্য ও বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থা
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে শক্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এর কারণে সমাজে কিভাবে শোষণ ও অবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উপন্যাসের মাধ্যমে অরওয়েল সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন এবং স্তালিনের একনায়কতন্ত্রকে সমালোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে কিভাবে একটি বিপ্লব, যা মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়, সময়ের সাথে সাথে অত্যাচারী শাসনে পরিণত হতে পারে। তবে প্রায় শতবছর পরে জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম আজ বাংলাদেশেও প্রাসঙ্গিক।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দীর্ঘমেয়াদ ধরে ক্ষমতায় ছিল। ২০০৯ সাল থেকে টানা প্রায় ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করে এসেছে। যদিও প্রথমদিকে তারা গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং জনকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে হাসিনার শাসনব্যবস্থা স্বৈরাচারী রূপ নিয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, বিরোধীদের দমন, বাকস্বাধীনতা হরণ, এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন—এসব অভিযোগের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থাকে অ্যানিম্যাল ফার্মের নেপোলিয়নের সাথে তুলনা করা যায়।
পাওলো কোয়েলহোর দ্য অ্যালকেমিস্ট
প্রধান চরিত্রসমূহের বিশ্লেষণ
নেপোলিয়ন (শেখ হাসিনার প্রতীক)
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মে নেপোলিয়ন শুরুতে একটি বিপ্লবী শূকর হিসেবে উপস্থিত হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে সে তার সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করে ফেলে। স্নোবলকে বিতাড়িত করার পর নেপোলিয়ন পুরো খামারের একচ্ছত্র শাসক হয়ে ওঠে, এবং সকল নিয়মকানুন নিজের স্বার্থে পরিবর্তন করতে শুরু করে। তার শাসনব্যবস্থায় অন্যান্য প্রাণীরা দাসত্বে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। একইভাবে, হাসিনার প্রথম আমলগুলোতে জনগণের জন্য গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তার সরকার ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা হ্রাস পায়। সরকারবিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়, এবং তাদেরকে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা হয়।
হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যা নেপোলিয়নের শাসন ব্যবস্থার মতোই প্রতীয়মান হয়। বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিরোধীদলের অংশগ্রহণ না করা নিয়ে বিতর্ক ছিল এবং নির্বাচনে কারচুপি ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা অ্যানিম্যাল ফার্মের শাসন ব্যবস্থার মতোই স্বৈরাচারী।
অ্যানিম্যাল ফার্মে যেমন প্রাণীরা প্রথমে নেপোলিয়নের নেতৃত্বকে সমর্থন করেছিল, কিন্তু পরে তারা বুঝতে পারে যে তারা আগের চেয়ে আরও বেশি শোষিত হচ্ছে—তেমনই অনেক বাংলাদেশি নাগরিক প্রথমে হাসিনার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখেছিল, কিন্তু পরে দেখেছে যে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং গণতন্ত্রের অবনমন দেশকে একটি একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচার হাসিনা ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে ৫ই আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়।
স্নোবল (বিরোধী দল)
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মে নেপোলিয়নের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্নোবল প্রাণীদের মুক্তির জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন। তার পরিকল্পনাগুলো খামারের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ছিল, কিন্তু নেপোলিয়ন ষড়যন্ত্র করে তাকে বিতাড়িত করে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনে বিরোধী দলগুলো, বিশেষত বিএনপি এবং এর নেত্রী খালেদা জিয়া, একপ্রকার স্নোবলের মতই ভূমিকা পালন করেছে। শেখ হাসিনার শাসনে বিরোধী দলকে দমন করা হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এবং তাদের নেতাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে, যা স্নোবলের বিতাড়নের সাথে তুলনীয়।
বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহার এবং রাজনৈতিক মাঠে তাদের কোণঠাসা করা শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের উদাহরণ হতে পারে। এটি স্নোবলকে বিতাড়ন করে নেপোলিয়নের একক শাসনের প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন।
বক্সার (জনগণ)
বক্সার অ্যানিম্যাল ফার্মের সবচেয়ে কর্মঠ এবং নিবেদিত প্রাণী। সে সর্বদা কঠোর পরিশ্রম করে এবং শাসকদের ওপর অন্ধ বিশ্বাস রাখে। তার প্রধান নীতি হলো “আমি আরও কঠোর পরিশ্রম করব” এবং “নেপোলিয়ন সবসময় সঠিক”। বক্সার বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রতীক হতে পারে, যারা প্রথমদিকে শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করেছিল এবং দেশের উন্নয়নে তাদের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে অবদান রেখেছিল। কিন্তু বক্সারের মতোই, জনগণও ধীরে ধীরে শোষিত হতে থাকে। যেমন নেপোলিয়ন বক্সারকে শেষ পর্যন্ত কসাইখানায় বিক্রি করে, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার জনগণের স্বার্থে কাজ না করে ভারতের স্বার্থকে, নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বক্সারের করুণ পরিণতি দেখায় যে স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে শ্রমজীবী মানুষ কিভাবে নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কোনো সঠিক মূল্যায়ন হয় না, স্বৈরাচারী শাসকেরা তাদের অনুগতদেরও মূল্যায়ন করে না।
মিডিয়া ও বিচার বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ
অ্যানিম্যাল ফার্মে, নেপোলিয়ন প্রচারক সিকুয়েলারকে ব্যবহার করে নিজের শাসনব্যবস্থাকে বৈধতা দিতে এবং মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ প্রাণীদের বিভ্রান্ত করতে। সে শাসনের দুর্বলতাগুলোকে ঢেকে রাখে এবং শাসনকে মহান করে তোলে। সিকুয়েলার নিরন্তরভাবে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে প্রাণীদের বোঝায় যে নেপোলিয়ন যা করছে তা সবার মঙ্গলের জন্য। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিভিন্ন সমালোচনামূলক সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা, হয়রানি এবং গ্রেফতারের ঘটনা বেড়েছে। এছাড়া, বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে, যা জনগণের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়াকে কঠিন করে তুলেছে।
ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বনাম স্বৈরাচার
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে দ্বন্দ্ব অত্যন্ত স্পষ্ট। অরওয়েল দেখিয়েছেন যে শাসকেরা কিভাবে প্রচারণা, মিথ্যা, এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের স্বাধীনতাকে হরণ করে। নেপোলিয়ন তার শাসন প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিনিয়ত শোষণ এবং ভীতিপ্রদর্শনের আশ্রয় নেয়।
অ্যানিম্যাল ফার্মে নেপোলিয়নের শাসনের বিরুদ্ধে কেউ যদি কোনো প্রশ্ন তোলে বা প্রতিবাদ করে, তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। এমনকি প্রাণীদের হত্যা করা হয়, যা তার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের এক ভয়াবহ উদাহরণ। বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার শাসনে বিরোধী দল ও সমালোচকদের ওপর দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুবার অভিযোগ করেছে যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নিখোঁজ হওয়া, জোরপূর্বক গুম, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সাথে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সরকারের প্রভাবও অ্যানিম্যাল ফার্মের নেপোলিয়নের দমনমূলক শাসনের সাথে তুলনীয়।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক বৈষম্য
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্মে, শূকররা খামারের অন্যান্য প্রাণীদের প্রচুর পরিশ্রম করিয়ে নিজেদের জীবনযাত্রার মান বাড়ায়। খামারে খাদ্যের অভাব থাকলেও শূকররা বিলাসবহুল খাবার খায় এবং মানুষের মতো বাস করতে শুরু করে। বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার শাসনে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হয়েছে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়। তবে সমালোচকেরা মনে করেন, এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ধনী ও ক্ষমতাবানদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে, আর সাধারণ জনগণ এখনো আর্থিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। শেখ হাসিনার শাসনে সরকারপ্রধান ও শাসকশ্রেণীর বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং সম্পদের বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বেড়ে চলেছে এবং নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ এই উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না।
উপন্যাসের ভাষাশৈলী ও শিল্পমান
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম তার সরল ও প্রাঞ্জল ভাষাশৈলী এবং গভীর রাজনৈতিক বার্তার জন্য একটি চিরন্তন ক্লাসিক। উপন্যাসটি সরল ভাষায় লেখা হলেও এর প্রতিটি চরিত্র ও ঘটনা একটি রূপক, যা বাস্তব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ঘটনাকে প্রতিফলিত করে। অরওয়েল দক্ষতার সঙ্গে সাধারণ ভাষায় জটিল রাজনৈতিক ধারণা তুলে ধরেছেন, যা সব শ্রেণির পাঠকের জন্য বোধগম্য।
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম -এ রূপক ও ব্যঙ্গাত্মক ভাষার ব্যবহারে তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে রাজনৈতিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং শাসকদের লোভের সমালোচনা করেছেন। প্রতিটি চরিত্র যেমন—নেপোলিয়ন, স্নোবল, বক্সার—সেখানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক শ্রেণি বা ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব করে, যা উপন্যাসটিকে গভীরতা দিয়েছে।
অরওয়েলের ভাষাশৈলী সহজ হলেও এতে চিত্রকল্পের দক্ষ ব্যবহার রয়েছে, যা পাঠকদের কাহিনীর ভেতরে নিয়ে যায়। উপন্যাসটির শক্তিশালী বার্তা হলো—কিভাবে বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি, সমতা ও স্বাধীনতার দাবি ধীরে ধীরে স্বৈরাচারে পরিণত হতে পারে। তার ভাষা, প্রতীক এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গমিশ্রিত কাহিনীর মাধ্যমে জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম শুধুমাত্র একটি রূপক উপন্যাস নয়, এটি একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক সতর্কবাণী।
জর্জ অরওয়েলের অ্যানিম্যাল ফার্ম শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক রূপক কাহিনী নয়, বরং এটি একটি সতর্কবাণীও বটে যে কিভাবে ক্ষমতা দুর্নীতি ও অত্যাচারের হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে। উপন্যাসটি সোভিয়েত স্তালিনবাদী শাসনের সমালোচনা হিসেবে পরিচিত হলেও, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শাসনব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে অ্যানিম্যাল ফার্মের শাসন ব্যবস্থার সাথে অনেক মিল পাওয়া যায়। ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ, গণতন্ত্রের অবক্ষয়, প্রচারমাধ্যমের ওপর প্রভাব বিস্তার, মানবাধিকারের লঙ্ঘন, এবং সামাজিক অসাম্যের মতো বিষয়গুলো দুটো শাসনব্যবস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য তুলে ধরে।
অ্যানিম্যাল ফার্মের সতর্কবার্তা বাংলাদেশসহ যে কোনো রাষ্ট্রে প্রাসঙ্গিক, যেখানে ক্ষমতা ও শাসনব্যবস্থা জনগণের সেবা করার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত হয়। এই ধরনের শাসনব্যবস্থা শুধু জনগণের স্বাধীনতাকেই হরণ করে না, বরং সমগ্র সমাজের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
[/fusion_text][/fusion_builder_column][/fusion_builder_row][/fusion_builder_container]