By |Published On: September 17, 2024|0.2 min read|

আজকের দ্রুতগতির পৃথিবীতে উদ্ভাবনই অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি। পেটেন্ট (Patent) কি তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যদি আপনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বা উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ রাখেন। পেটেন্ট শুধুমাত্র আপনার উদ্ভাবনকেই সুরক্ষিত করে না, আপনার উদ্ভাবনকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতেও সহায়তা করে।

পেটেন্ট (Patent) কি?

পেটেন্ট (Patent) হলো কোনো নতুন আবিষ্কার বা উদ্ভাবনের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত এক ধরনের একচেটিয়া আইনি স্বীকৃতি। এটি তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, সাধারণত ২০ বছর, অন্য কেউ তাদের অনুমতি ছাড়া তাদের উদ্ভাবন তৈরি করা, ব্যবহার করা, বিক্রি করা বা বিতরণ করতে পারে না। পেটেন্ট উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে কারণ এটি উদ্ভাবকদের তাদের উদ্ভাবনের থেকে লাভের সুযোগ দেয়।

পেটেন্ট, man holding incandescent bulb

সহজ কথায় বলতে গেলে, পেটেন্ট হলো আপনার একটা আবিষ্কারের উপর এক ধরনের মালিকানা। যদি আপনি কোনো নতুন জিনিস আবিষ্কার করেন যা আগে কখনো কারো করা হয়নি এবং তা ব্যবহারযোগ্য, তাহলে আপনি সেই আবিষ্কারের জন্য সরকার থেকে একটি সনদ পেতে পারেন। এই সনদকেই পেটেন্ট বলা হয়।যেমন, আপনি যদি কোনো নতুন ধরনের মোবাইল ফোন চার্জার আবিষ্কার করেন এবং সেটির জন্য পেটেন্ট পান, তাহলে অন্য কেউ আপনার অনুমতি ছাড়া সেই চার্জার বানিয়ে বিক্রি করতে পারবে না।

বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২৩ এই পেটেন্ট সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনটি নির্দিষ্ট করে যে কোন ধরনের আবিষ্কার পেটেন্টযোগ্য হবে এবং পেটেন্ট পাওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে।

পেটেন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সঙ্গে পেটেন্টের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেটেন্ট বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির (Intellectual Property) সুরক্ষা প্রদান করে। বিশেষভাবে যারা ভবিষ্যতের উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী বা উদ্যোক্তা হতে পারেন।

  • আবিষ্কারকে সুরক্ষিত করে: পেটেন্ট আপনার আবিষ্কারকে অন্যদের নকল করার হাত থেকে রক্ষা করে।
  • বিনিয়োগ আকর্ষণ করে: পেটেন্ট সুরক্ষা বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সাহায্য করে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে এবং স্থানীয় উদ্ভাবনকে উত্সাহিত করে।
  • বাণিজ্যিক মূল্য বাড়ায়: পেটেন্ট আপনার আবিষ্কারের বাণিজ্যিক মূল্য বাড়ায়।

ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি (Intellectual Property) কি এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?

পেটেন্টের প্রকারভেদ

World Intellectual Property Organization – (WIPO) এর মতে, পেটেন্টের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যদিও প্রতিটি দেশের পেটেন্ট আইনে পেটেন্টের শ্রেণিবিন্যাসের নিজস্ব পদ্ধতি থাকতে পারে, তবে সাধারণভাবে পেটেন্টকে নিম্নলিখিত কয়েকটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:

  • উদ্ভাবন পেটেন্ট (Utility Patent): এটি সবচেয়ে প্রচলিত ধরনের পেটেন্ট। এটি কোনো নতুন এবং ব্যবহারিক উদ্ভাবনের জন্য দেওয়া হয়। যেমন: একটি নতুন ধরনের স্মার্টফোন, একটি নতুন ওষুধ ইত্যাদি।
  • ডিজাইন পেটেন্ট (Design Patent): এটি কোনো পণ্যের আকার, রং বা সাজসজ্জা সংক্রান্ত নতুন এবং সৃজনশীল ডিজাইনের জন্য দেওয়া হয়। যেমন: একটি ফোনের আকৃতি, একটি গাড়ির ডিজাইন ইত্যাদি।
  • প্ল্যান্ট পেটেন্ট (Plant Patent): এটি একটি নতুন ধরনের উদ্ভিদের জন্য দেওয়া হয়। যেমন: একটি নতুন ধরনের ফুল বা ফলের গাছ।

কি কি পেটেন্ট করা যায়?

সব উদ্ভাবন পেটেন্ট করা যায় না। পেটেন্ট পাওয়ার জন্য একটি উদ্ভাবনকে নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২৩  অনুযায়ী, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পেটেন্ট করা যায় । এর মধ্যে রয়েছে:

  • নতুনত্ব: উদ্ভাবনটি অবশ্যই নতুন হতে হবে। অর্থাৎ, এটি পেটেন্ট আবেদন করার আগে জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়া উচিত নয়।
  • উদ্ভাবনী পদক্ষেপ বা অকল্পনীয়তা: উদ্ভাবনটি অবশ্যই উদ্ভাবনী পদক্ষেপ প্রদর্শন করতে হবে, অর্থাৎ এটি সেই ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যক্তিদের জন্যও অকল্পনীয় হওয়া উচিত।
  • শিল্প ব্যবহারিকতা: উদ্ভাবনটি অবশ্যই শিল্প, কৃষি বা বাণিজ্যে কোনো ব্যবহারিক প্রয়োগ থাকতে হবে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের করণীয়

উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক আবিষ্কার, গণিতের সূত্র বা শিল্পকর্ম পেটেন্ট করা যায় না। তবে, যদি আপনি নতুন ওষুধ তৈরি করার একটি পদ্ধতি বা একটি সফটওয়্যার অ্যালগরিদম উদ্ভাবন করেন, তবে এটি পেটেন্ট সুরক্ষার জন্য যোগ্য হতে পারে। যেমন, গুগলের সার্চ অ্যালগরিদম, বাংলাদেশের ব্র্যাক-সিড প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন কৃষি উন্নয়নও পেটেন্টকৃত।

কী কী পেটেন্ট করা যায় না?

সব উদ্ভাবন পেটেন্টের আওতায় আসে না। কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো আইনগতভাবে পেটেন্টযোগ্য নয়ঃ

  • তত্ত্ব বা প্রাকৃতিক নিয়মঃ কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা প্রাকৃতিক নিয়ম পেটেন্ট করা যায় না, যেমন E=mc² সূত্র।
  • শৈল্পিক সৃষ্টিঃ কবিতা, গল্প বা চিত্রকর্ম পেটেন্টের আওতায় নয়, বরং এগুলো কপিরাইটের অধীনে আসে।
  • নগ্ন বা অনৈতিক উদ্ভাবনঃ এমন কিছু যা সমাজে অগ্রহণযোগ্য বা অনৈতিক, তা পেটেন্টযোগ্য নয়।

বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পেটেন্টের আওতায় আসবে নাঃ

  • প্রাকৃতিক উপাদান যেসব জিনিস প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, যেমন পানি, বাতাস, সূর্যের আলো ইত্যাদি। এমনকি যদি এগুলোকে পরিশোধিত করা হয় বা অন্য কোনো রূপ দেওয়া হয়, তবুও সেগুলো পেটেন্টযোগ্য নয়।
  • স্বাভাবিক ঘটনাঃ যেমন, গুরুত্বাকর্ষণ, বৃষ্টি ইত্যাদি।
  • গাণিতিক সূত্রঃ যেমন, পাই (π) বা কোনো জ্যামিতিক সূত্র।
  • ব্যবসায় পদ্ধতি কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয় করার নতুন পদ্ধতি।
  • সম্পূর্ণ মানসিক কার্যঃ যেমন, একটি গেম খেলার পদ্ধতি।
  • সার্জারি বা চিকিৎসা পদ্ধতি মানুষ বা প্রাণীর উপর করা কোনো শারীরিক চিকিৎসা। তবে, এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা ওষুধ পেটেন্টযোগ্য হতে পারে।
  • সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা ইত্যাদি কোনো কলাকর্মকে পেটেন্ট করা যায় না, তবে কপিরাইট আইনের আওতায় আনা যায়।
  • ঐতিহ্যগত জ্ঞান যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
  • জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উদ্ভাবন যেমন, কোনো মারাত্মক রোগ ছড়ানোর পদ্ধতি।

সাক্ষ্য কাকে বলে? সাক্ষ্য কত প্রকার ও কি কি?

সহজ কথায়, যা প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, মানুষের মন থেকে উদ্ভূত হয়, বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলোকে পেটেন্ট করা যাবে না। পেটেন্ট শুধুমাত্র নতুন আবিষ্কৃত কোনো যন্ত্র, পদ্ধতি বা পদার্থের জন্য দেওয়া হয়, যা শিল্পে ব্যবহার করা যায় এবং অন্যদের দ্বারা সহজে অনুমান করা যায় না।

বাংলাদেশের DPDT পেটেন্ট নজরদারি ও প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি কেউ পেটেন্ট লঙ্ঘন করে, আপনি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। প্রথম পদক্ষেপ হলো একটি “cease and desist” চিঠি পাঠানো, যেখানে আপনি তাদেরকে আপনার উদ্ভাবন ব্যবহার বন্ধ করতে বলবেন। যদি তারা এটি না মানে, আপনি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।

পেটেন্ট উদ্ভাবনের স্বীকৃতি ও সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। বাংলাদেশ সরকার পেটেন্ট আইন নিয়ে কাজ করছে এবং এটি উদ্ভাবকদের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে, পেটেন্ট পাওয়া সহজ নয় এবং এর জন্য বিস্তারিত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।

বাংলাদেশে পেটেন্ট ও মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। সরকারকে উদ্ভাবকদের আরও বেশি সহযোগিতা করতে হবে, যাতে তারা তাদের উদ্ভাবনের জন্য পেটেন্ট পেতে পারে। এছাড়া, পেটেন্ট প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করার প্রয়োজন রয়েছে।

উপসংহারে, পেটেন্ট একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা উদ্ভাবকদের তাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হতে সাহায্য করে এবং দেশের অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাই, বাংলাদেশে পেটেন্ট ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা জরুরি।

আমাদের করা উচিত,

  • পেটেন্ট সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা;
  • পেটেন্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করা;
  • সরকারকে উদ্ভাবকদের আরও বেশি সহযোগিতা করা;
  • অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা করে পেটেন্ট ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা।

আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

gif;base64,R0lGODlhAQABAAAAACH5BAEKAAEALAAAAAABAAEAAAICTAEAOw==
Written by : Rakibul Islam

One Comment

  1. […] পেটেন্ট (Patent) কি? কি কি পেটেন্ট করা যায়? […]

Leave A Comment

কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন

লেখক হিসেবে আমাদের সাথে যোগ দিন

সাম্প্রতিক আর্টিকেল

  • ভারতের হতাশা,

ভারতের হতাশা প্রকাশ পাচ্ছে

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসন পতনের পর থেকে ভারতীয় প্রশাসন ও তাদের গণমাধ্যম গুজব ও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে "হিন্দু নিপীড়নের" একটি গল্প তৈরিতে ব্যস্ত।

  • কেন হাসিনা ও ভারত ছাড়া বাংলাদেশ এক মুহূর্তও চলতে পারে না?

কেন হাসিনা ও ভারত ছাড়া বাংলাদেশ এক মুহূর্তও চলতে পারে না?

মানবতার মা-জননী, জগতের শিরোমনি, অল্পের জন্য নোবেল হাতছাড়া হওয়া হাসিনা আমাদের জীবনধারা, আর ভারত আমাদের আত্মা। তাদের ছাড়া আমরা শুধু শূন্য, মরু হাহাকার।

  • জেনেভা কনভেনশন কী? ইতিহাস, মূল নীতি এবং আধুনিক সময়ে এর প্রাসঙ্গিকতা

জেনেভা কনভেনশন কী? ইতিহাস, মূল নীতি এবং আধুনিক সময়ে এর প্রাসঙ্গিকতা

যুদ্ধের ভয়াবহতাকে সীমাবদ্ধ করা, অসহায়দের রক্ষা করা, এবং সংঘাতের মধ্যেও মানবতার আলো জ্বালিয়ে রাখা—এমন একটি উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছিল জেনেভা কনভেনশন।

  • এইপ্যাক,

এইপ্যাক (AIPAC) কি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইসরায়েলের প্রভাব

এইপ্যাক (AIPAC) যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্যতম প্রভাবশালী লবিং সংগঠন, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে শক্তিশালী এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা।

  • শিল্প নকশা কী? শিল্প নকশা নিবন্ধনের শর্ত এবং লঙ্ঘন ও প্রতিকার

শিল্প নকশা কী? শিল্প নকশা নিবন্ধনের শর্ত এবং লঙ্ঘন ও প্রতিকার

শিল্প নকশা (Industrial Designs) এমন এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি যা পণ্যের বাহ্যিক নকশাকে সুরক্ষিত করে। এটি একটি পণ্যের আকার, প্যাটার্ন, রং বা অন্য কোনও সৌন্দর্যগত বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।