ভার্সাই চুক্তি আধুনিক সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কমূলক বিষয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অবিচারমূলকভাবে জার্মানির ওপর একটি ‘ডিক্টেটেড পিস’ বা চাপিয়ে দেয়া শান্তি হিসেবে ভার্সাই চুক্তি চাপিয়ে দেয়া হয়। এই ভার্সাই চুক্তির যাতাকলে পিষ্ট হয়ে জার্মানি অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। ফলে শুরু থেকে জবরদস্তিমূলক ভার্সাই চুক্তির অন্যায্য, অবাস্তব, এবং অপ্রয়োগযোগ্য শর্তাবলির দায়বদ্ধতা এড়ানোর জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, জার্মানির অবাধ্যতামূলক পদক্ষেপগুলি উগ্র জার্মান জাতীয়তাবাদে উদবুদ্ধ হয়ে শেষপর্যন্ত ভার্সাই চুক্তিকে পুরোপুরি কার্যকর হয়ে উঠতে দেয়নি। এই নিবন্ধে আমরা জানব ভার্সাই চুক্তি কি, সংক্ষিপ্তভাবে ভার্সাই চুক্তির ধারাগুলো আলোচনা করব এবং খুঁজে দেখার চেষ্টা করব ভার্সাই চুক্তিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল কিনা।
ভার্সাই চুক্তি কি?
ভার্সাই চুক্তি হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর অনুষ্ঠিত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে মিত্রশক্তি এবং জার্মানির মধ্যে সম্পাদিত একটি শান্তি চুক্তি। ১৯১৯ সালের ২৮ জুন ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানির ওপর সমস্ত দায়ভার চাপিয়ে দিয়ে চরম অবমাননাকর এই চুক্তিতে জার্মানিকে বাধ্য করা হয়। এমনকি চুক্তির পক্ষ জার্মানিকেই প্যারিস শান্তি সম্মেলনে সম্মেলনে অনুপস্থিত রাখা হয়। জার্মানির সার্বভৌমত্ব, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামরিক খাত সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই এই চুক্তি জার্মানিদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়।
ভার্সাই চুক্তির প্রেক্ষাপট
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তিদের মধ্যে প্রধান শক্তিগুলি ছিল ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইতালি। এই যুদ্ধে তারা জার্মানির নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তিকে পরাজিত করে ভার্সাই শান্তি চুক্তিতে সম্মত হতে বাধ্য করে। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর যুদ্ধের সমাপ্তির পর মিত্রশক্তিগুলি জার্মানির সাথে শান্তি আলোচনার জন্য প্যারিসে একটি শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে। প্যারিস শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে ছিলঃ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, চিলি, কলম্বিয়া, ডেনমার্ক, গ্রীস, হাইতি, হিন্দুস্তান, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, সার্বিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়া। তবে জার্মানি, অটোমান সাম্রাজ্যসহ অন্যান্য দেশগুলোকে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে উপস্থিত হতে দেয়া হয়নি।
প্যারিস শান্তি সম্মেলনের প্রথম দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তার চৌদ্দ দফা দাবিগুলির উপর জোর দেন। এই দাবিগুলির মধ্যে ছিল জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা, সাম্রাজ্যবাদের অবসান এবং জাতিপুঞ্জের সদস্য দেশগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। তবে, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জর্জেস ক্ল্যামেনকু জার্মানির বিরুদ্ধে কঠোর শর্ত চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বিশ্বযুদ্ধের সমস্ত দায়ভার জার্মানির এবং ভবিষ্যতে জার্মানির আক্রমণের আশংকায় তিনি জার্মানিকে সামরিক দিক থেকে পঙ্গু করে দেয়ার পক্ষপাতি ছিলেন। ভার্সাই চুক্তিতে জার্মানির বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী বিলুপ্ত করা, জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি মিত্রশক্তির কাছে ছেড়ে দেওয়া, জার্মানিকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য বাধ্য করা সহ নানা রকম অবমাননাকর, কঠোর, অন্যায্য শর্ত জার্মানির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল দিক থেকে জার্মানির ক্ষমতা সীমিত করতে যা যা প্রয়োজন সব শর্তই এখানে আরোপ করা হয় এবং নিঃশর্তভাবে শর্তে রাজি হওয়া ছাড়া জার্মানির আর কোন উপায় ছিলনা। জার্মানির পক্ষে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন জার্মান চ্যান্সেলর জোসেফ ভির্ট। মিত্রশক্তির পক্ষে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট লান্সিং।
উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা নীতি কি? প্যারিস শান্তি সম্মেলনে তার ইচ্ছা কতখানি পূরণ হয়েছিল?
ভার্সাই চুক্তির কঠোর শর্তগুলি জার্মানির জনগণের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষের জন্ম দেয়। চুক্তির অযৌক্তিকতা এবং অন্যায্যতা জার্মানির পুনরুদ্ধারকে রুদ্ধ করে দিয়েছিল। আর এই অসন্তোষই একটি শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থান ঘটায় এবং জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম পক্ষ বানিয়ে দেয়।
ভার্সাই চুক্তির ধারাসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
১৯১৯ সালের ২৮ জুন ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদে এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়া ভার্সাই চুক্তিতে জার্মানিকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সব শর্তই গ্রহণ করা হয়। জার্মানির প্রতি মারাত্মক বিদ্বেষমূলক ভার্সাই চুক্তির শর্তাবলী বা ধারাসমূহকে কয়েকটি ভাগে আলোচনা করা যায়-
- ভূমি সীমানা সংক্রান্ত ধারা;
- অর্থনৈতিক ধারা;
- সামরিক ধারা;
- রাজনৈতিক ধারা ও
- আইন সংক্রান্ত ধারা।
ভৌগলিক সীমানা সংক্রান্ত শর্তাবলি
ভার্সাই চুক্তির ভূমি সীমানা সংক্রান্ত ধারাসমূহ জার্মানির জন্য একটি বড় আঘাত ছিল। চুক্তির ফলে জার্মানি তার পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি, যেমন অ্যালসাস-লোরেন, পোল্যান্ড এবং চেকোস্লোভাকিয়াকে মিত্রশক্তিদের কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এই অঞ্চলগুলি জার্মানির জন্য অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভৌগোলিক সীমানা সংক্রান্ত ধারাগুলি নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- জার্মানি ফ্রান্সকে আলসাস-লোরেন প্রদেশ ফিরিয়ে দেয়। এই ধারার ফলে জার্মানি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঞ্চল হারায়। আলসাস-লোরেন জার্মানির একটি প্রধান কয়লা উৎপাদনকারী অঞ্চল ছিল, এবং এটি জার্মানির ফরাসি ভাষাভাষী জনসংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল।
- জার্মানি বেলজিয়ামকে ইউপেন মরিচ নেট মেলমেডি নামক জেলাগুলো ছেড়ে দেয়। এই ধারার ফলে জার্মানি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি হারায়। ইউপেন মরিচ নেট মেলমেডি জেলাগুলো জার্মানির পশ্চিম সীমান্তের কাছে অবস্থিত ছিল, এবং এগুলি জার্মানির বিরুদ্ধে একটি সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত।
- জার্মানি ডেনমার্ককে পেজভিগ প্রদেশ ফিরিয়ে দেয়: এই ধারার ফলে জার্মানি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ জনসংখ্যা কেন্দ্র হারায়। পেজভিগ প্রদেশের বেশিরভাগ বাসিন্দা জার্মান ভাষাভাষী ছিল। পরবর্তিতে দেখা যায় যে, গণভোটের দ্বারা দক্ষিণ পেজভিক জার্মানির সঙ্গে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে;
- জার্মানি লিথুয়ানিয়াকে মেসেল অঞ্চল ছেড়ে দেয়। এর ফলে জার্মানি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি হারায়। মেসেল অঞ্চল জার্মানির বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত ছিল, এবং এটি জার্মানির নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত।
- জার্মানি পোল্যান্ডকে প্রোজেন ও পশ্চিম রাশিয়া অঞ্চল ছেড়ে দেয়। এই ধারার ফলে জার্মানি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড হারায়। প্রোজেন ও পশ্চিম রাশিয়া অঞ্চল জার্মানির পূর্ব সীমান্তের কাছে অবস্থিত ছিল, এবং এগুলি জার্মানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সুবিধা ছিল।
- জার্মানি স্বাধীন পোল্যান্ডের প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি দিয়ে এক ঐতিহাসিক ন্যায়বিচারের পদক্ষেপ নেয় যার ফলে দীর্ঘকালীন জার্মানি-পোলিশ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটায়।
- স্বাধীন পোলান্ড যাতে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত হয় এজন্য জার্মানের মধ্য দিয়ে একটা যোগাযোগকারী রাস্তা রাস্তা পোল্যান্ডকে জার্মানি ছেড়ে দেয়। এছাড়া জার্মানি ডান জিগ বন্দরটি জাতিপুঞ্জের অধীনে পোল্যান্ডকে ব্যবহার করতে দেয়। এই ধারার ফলে পোল্যান্ডকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়।
- জার্মানের পূর্ব সীমান্তে সাইলেসিয়া গণভোটের দ্বারা তিন ভাগ করা হয়। একাংশ জার্মানির সাথে যুক্ত থাকে অপুরাংশ অপরাংশ চেক স্লোভাকিয়া এবং তৃতীয় অংশ পোল্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়। এই ধারার ফলে জার্মানি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প অঞ্চল হারায়। সাইলেসিয়া জার্মানির একটি প্রধান শিল্প কেন্দ্র ছিল, এবং এটি জার্মান অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
- পশ্চিম সীমানা দিয়ে যাতে ভবিষ্যতে জার্মানি ফ্রান্সকে আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। চুক্তিতে বলা হয় রাইন নদীর পূর্ব তীরে জার্মান সামরিক ঘাঁটি রাখা যাবে না এবং রাইন ল্যান্ডে ১৫ বছরের জন্য মিত্রশক্তির দখলদার বাহিনী অবস্থান করে ফ্রান্সকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে। এই ধারার ফলে জার্মানি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সুবিধা হারায়।
- যুদ্ধের সময় ফ্রান্সের কয়লা খনি গুলো জার্মানির ধ্বংস করায় ১৫ বছরের জন্য জার্মানির কয়লা খনি সমৃদ্ধ সার জেলা ফ্রান্স দখল করবে এবং ১৫ পরে গণভোট দ্বারা স্থির হবে এ জেলা কোন দেশ পাবে। এই ধারার ফলে জার্মানি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুবিধা হারায়। সার প্রদেশ ছিল জার্মানির একটি প্রধান কয়লা উৎপাদনকারী অঞ্চল, এবং এটি জার্মানি শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
- চুক্তি অনুসারে আফ্রিকা ও দূরপ্রাচ্যের উপনিবেশ গুলো ওপর জার্মানির অধিকার লোপ করা হয়। জার্মানের দূরপ্রাচ্যের উপনিবেশ গুলো জাপানকে দেওয়া হয়। জার্মানের অন্যান্য উপনিবেশ গুলো জাতিপুঞ্জ অধিগ্রহণ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে ম্যানডেট হিসেবে শাসন করতে দেয়া হয় এবং জার্মানি যাতে বৈদেশিক বাণিজ্য করতে পারে না তা নিশ্চিত করে।
ভার্সাই চুক্তির ভূমি সীমানা সংক্রান্ত ধারাসমূহ জার্মানির জন্য একটি বড় আঘাত ছিল, এবং তারা জার্মানির পরবর্তী ইতিহাসকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। চুক্তির এই ধারাসমূহের ফলে, জার্মানি একটি শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থান দেখেছিল।
অর্থনৈতিক শর্তাবলি
ভার্সাই চুক্তির অর্থনৈতিক ধারাসমূহ জার্মানির জন্য একটি বড় আঘাত ছিল।চুক্তির অর্থনৈতিক ধারাগুলোতে জার্মানিকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য চপিয়ে দেয়া হয়েছিল। ধারার শর্তগুলো ছিল নিম্নরূপঃ
- ভার্সাই চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ধারাই ছিল ক্ষতিপূরণ ধারার। ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য জার্মানির উপর একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এই কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম গুডি। কমিশন ১৯২১ সালে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে, যা ছিল ২২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে জার্মানি এটি পরিশোধ করতে সক্ষম ছিল না। জার্মানির আপত্তিতে পরবর্তীতে এর পরিমান কমিয়ে ১৩২ বিলিয়ন ডলার করা হয়। তবে এই পরিমানও কোনভাবে জার্মানির পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব ছিলনা। ক্ষতিপূরণ পরিশোধের জন্য জার্মানির অর্থনীতিকে একটি ভারসাম্যহীন অবস্থায় তৈরি হয়েছিল। জার্মানিকে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদান করতে হয়েছিল, এবং এই অর্থ প্রদানের জন্য জার্মানির অর্থনীতিকে কৃত্রিমভাবে প্রসারিত করতে হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ পরিশোধের ফলে জার্মানি অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ে।
- ভার্সাই চুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ধার ছিল রাইন নদীর আন্তর্জাতিককরণ। চুক্তির এই ধারার ফলে রাইন নদীকে একটি আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি রাইন নদীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এই নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে জার্মানির অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যায়।
- ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানিকে মিত্রশক্তিকে কয়লা ও কাঠের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এই সরবরাহের ফলে জার্মানি তার অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হারিয়ে ফেলে।
- ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানির বাজারে মিত্রশক্তির অগ্রাধিকার অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য হয় এই ধারার ফলে জার্মানিকে মিত্রশক্তির দ্বারা উৎপাদিত পণ্যকে তার বাজারে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে জার্মানির নিজস্ব শিল্প ও অর্থনীতির ক্ষতি হয়। এই ধারার ফলে জার্মান শিল্পের উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ভার্সাই চুক্তির অর্থনৈতিক ধারাসমূহ জার্মানির জন্য একটি বড় আঘাত ছিল। এই ধারাসমূহের ফলে জার্মানি একটি অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হয়েছিল, যা জার্মানির জনগণের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল। এই অসন্তোষের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে পরিচালিত একটি শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থান ঘটে।
সামরিক শর্তাবলি
ভার্সাই চুক্তির পঞ্চম অনুচ্ছেদে সামরিক শর্তগুলো উল্লেখ করা হয় সামরিক শর্তগুলোর উদ্দেশ্য ছিল জার্মানি যাতে ভবিষ্যতে আক্রমণাত্মক কিংবা প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতার লাভ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। এসব ধারার শর্তগুলো ছিল নিম্নরূপঃ
- চুক্তির এই ধারার ফলে জার্মানিকে তার স্থল, জল ও বিমান বাহিনী সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি আক্রমণাত্মক বা প্রতিরক্ষামূলক কোনও সামরিক অভিযান চালানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।
- জার্মানিকে তার সেনাপতি মন্ডলী বরখাস্ত করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি তার সামরিক অভিজ্ঞতা এবং সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।
- এই চুক্তির অধীনে জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা ও সেনাদলে যোগদান ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি তার জনগণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।
- ভার্সাই চুক্তির এই ধারার ফলে জার্মানিকে হেলি গো ল্যান্ডের নৌ ঘাঁটি বিলুপ্ত করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি তার উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।
- চুক্তির এই ধারার ফলে জার্মানিকে ভবিষ্যতে সমরাস্ত্র নির্মাণ করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি তার সামরিক প্রস্তুতির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।
- এই চুক্তির অধীনে জার্মানিকে তার সমস্ত যুদ্ধ জাহাজ ইংল্যান্ডের হাতে তুলে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি তার সমুদ্রশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল।
- চুক্তির এই ধারার ফলে জার্মানিকে কেবল ছয়টি ছোট যুদ্ধজাহাজ, তিনটি ছোট ক্রুজার, চারটি ডেসট্রোয়ার ও বারোটি সাবমেরিন রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। এই সীমিত সামরিক শক্তির কারণে জার্মানি আক্রমণাত্মক বা প্রতিরক্ষামূলক কোনও সামরিক অভিযান চালানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।
- চুক্তির এই ধারার ফলে জার্মানিকে রাইন নদীর পশ্চিম তীরের সকল সামরিক ঘাঁটি ভেঙ্গে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে জার্মানি তার পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা হারিয়ে ফেলেছিল।
- চুক্তির এই ধারার ফলে জার্মানিতে মিত্র পক্ষের সেনাদল মোতায়েন করা হয়েছিল। এই সেনাদলগুলির দায়িত্ব ছিল চুক্তির সামরিক ধারাসমূহ কার্যকর করা।
ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানি তার সামরিক শক্তিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। এই ধ্বংসাত্মক শর্তগুলি জার্মানির জনগণের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল।
আইন ও বিচার সংক্রান্ত শর্তাবলি
ভার্সাই চুক্তির আইন ও বিচার সংক্রান্ত ধারাসমূহের অধীনে জার্মানির সম্রাট কাইজার উইলহেম দ্বিতীয়, তার সেনাপতিরা এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। এই ট্রাইব্যুনালের অধিবেশন ১৯২০ সালের মে মাসে শুরু হয়েছিল। চুক্তির এই ধারার ফলে জার্মানির সম্রাট কাইজার উইলহেম দ্বিতীয়, তার সেনাপতিরা এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে রয়েছেন:
- জার্মান সেনাবাহিনীর প্রধান লুডভিগ ফন ফ্র্যাঙ্ক,
- জার্মান সেনাবাহিনীর প্রধান স্টাফ হিল্ডারফোর্ড ফন লুডেনডর্ফ,
- জার্মান নৌবাহিনীর প্রধান এরিক ফন ফালকেনেহাউসেন ও
- জার্মান বিমানবাহিনীর প্রধান আউগুস্ট উইন্ডট।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে জার্মানির অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, এবং তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ভার্সাই চুক্তির এই ধারাসমূহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। এই ধারাগুলোর ফলে যুদ্ধাপরাধের ধারণাটি আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতি লাভ করে এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
জাতীয়তাবাদ: আধুনিক বিশ্বের রাজনৈতিক চালিকা শক্তি
রাজনৈতিক শর্তাবলি
ভার্সাই চুক্তির রাজনৈতিক ধারাসমূহের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপে একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। এই ধারার শর্তগুলো নিম্নরূপঃ
- ভার্সাই চুক্তির রাজনৈতিক ধারাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল লিগ অব নেশনস এর শর্তাবলী অন্তর্ভুক্ত করা। লিগ অব নেশনস ছিল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভার্সাই চুক্তির ফলে লিগ অব নেশনস একটি আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরিণত হয়।
- ভার্সাই চুক্তির রাজনৈতিক ধারাসমূহের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ব্রেস্ট-লিটভস্ক সন্ধি বাতিল করা। জার্মানি এবং রাশিয়ার মধ্যে ১৯১৮ সালের মার্চে ব্রেস্ট-লিটভস্ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির ফলে রাশিয়াকে তার অনেক অঞ্চল জার্মানির কাছে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ভার্সাই চুক্তির ফলে এই চুক্তি বাতিল করা হয় এবং রাশিয়ার হারানো অঞ্চলগুলি তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
- ভার্সাই চুক্তির রাজনৈতিক ধারাসমূহের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, যুগোস্লাভিয়া এবং চেকোস্লোভাকিয়ার স্বাধীনতা স্বীকৃতি দেওয়া। এই রাষ্ট্রগুলি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে অস্ট্রো-হাঙ্গেরি, রাশিয়া এবং তুর্কি সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ভার্সাই চুক্তির ফলে এই রাষ্ট্রগুলিকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
ভার্সাই চুক্তির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল কি?
ভার্সাই চুক্তির শর্তাবলী জার্মানির উপর খুব কঠোর ছিল। এই শর্তাবলী জার্মানির অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয় এবং জার্মানির জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দেয়। ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানদের এই ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিশ্বকে দ্বিতীয় বারের মত বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিলঃ
চুক্তিপত্র প্রণয়ণে অদূরদর্শিতা ও উইলসনের আদর্শের পরাজয়
চুক্তিপত্র প্রণয়ণে অদুরদর্শিতা ও উইলসনের আদর্শবাদের পরাজয়ঃ উইলসনের আদর্শবাদের ভিত্তিতে জার্মানি মিত্র পক্ষের নিকট আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ভার্সাই চুক্তির প্রণয়নের সময় এই আদর্শ বিসর্জন দেয়া হয়। যদিও মিত্রপক্ষ দাবি করে উইলসনের আদর্শের ভিত্তিতেই ভার্সাই ও অন্যান্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল তবে এটা ছিল ডাহা মিথ্যা। চুক্তির খসড়া প্রস্তুতির সময় জার্মান প্রতিনিধিদের কোনরূপ মতামত দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। চুক্তির খসড়ার ওপর জার্মান প্রতিনিধিগণকে তাদের লিখিত মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল মাত্র। কিন্তু জার্মান প্রতিনিধিদের মতামতের কোন মূল্য দেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চুক্তি মেনে নিতে জার্মানি প্রতিনিধিগণকে বাধ্য করা হয়েছিল।উইলসনীয় আদর্শের প্রতি লক্ষ্য রেখে লিগ অফ নেশনস এর সৃষ্টি এবং সমবেত নিরাপত্তার আদর্শ গৃহীত হলেও অনেক ক্ষেত্রেই উইলসনের আদর্শকে আবরণ রূপে ব্যবহার করে মিত্রশক্তিবর্গ বিশেষতঃ ফ্রান্স তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল। উইলসনের নীতি অনুসরণের বদলে তারা শাস্তিমূলক দুটি প্রধান নীতি অনুসরণ করে ভার্সাই চুক্তি সম্পন্ন করেঃ
- বিশ্বযুদ্ধ সৃষ্টির অপরাধে জার্মানিকে সমুচিত শাস্তি দেওয়া ও
- জার্মানির ভবিষ্যতে আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ হতে ইউরোপের নিরাপত্তা বিধান করা।
জার্মানির প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ
ভার্সাই চুক্তিতে জার্মানির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় শক্তিবর্গের তীব্র ঘৃণার সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। প্যারিস শান্তি সম্মেলনের নেতৃবর্গ পূর্ব হতেই পরাজিত শত্রুর প্রতি অনুকম্পা, উপযুক্ত মর্যাদা ন্যায় বা সততা প্রদর্শন করার প্রয়োজন তারা অনুভব করেননি। শত্রুর প্রতি এর বিরূপ মনোভাব নিয়ে চুক্তিপত্র রচনা করতে গিয়ে ইউরোপীয় প্রতিনিধিগণ ন্যায়ের পরিচয় দিতে পারেননি। জার্মান জাতির প্রতি প্রতি শ্রদ্ধা ও অযথা অপমানজনক ব্যবহার জার্মান জাতির মনে এক দারুন ঘৃণা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ জার্মান জাতির মনোভাবের মধ্যেই নিহিত ছিল।
জার্মানির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন
ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে প্রতিপক্ষ জার্মানির সার্বভৌমত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়ছিল। জার্মানির সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত করে, রাইন নদীকে আন্তর্জাতিকীকরণ করে, জার্মানির অভ্যন্তরে মিত্রশক্তির পণ্যবাজারজাতকরণ করে জার্মানিকে হাতের পুতুল করতে চেয়েছিল মিত্রশক্তি। জার্মানি তার নিজস্ব সামরিক বাহিনী গঠন করতে পারত না, তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে পারত না এবং তার নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ করতে পারত না। তাছাড়া বেলজিয়াম, ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানির অনেক ভূখণ্ড ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল।ডেনমার্ক, ফ্রান্সের কাছে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে দিতে হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত জার্মান উপনিবেশগুলিও ছেড়ে দিতে হয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপানের মত দেশগুলোর কাছে। অর্থাৎ, পুরোপুরিভাবে জার্মানির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে, অস্বীকার করে জার্মানিকে ভার্সাই চুক্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল।
আফগানিস্তানের রাজতন্ত্রের পতনের কারণ ও দাউদ খানের ভূমিকা
অর্থনৈতিক শোষণমূলক চুক্তি
ভার্সাই চুক্তির অর্থনৈতিক শর্তাবলী জার্মানির উপর খুবই কঠোর ছিল। জার্মানিকে অর্থনৈতিকভাবে শোষণমূলক ভার্সাই চুক্তির শর্তাগুলি জার্মানির অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয় এবং জার্মানির জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দেয়। উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক শর্তাগুলির মধ্যে ছিলঃ
- জার্মানির উপর ১৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ আরোপ করা;
- জার্মানির উপনিবেশগুলি মিত্রশক্তির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া;
- জার্মানির শিল্প ও খনিজ সম্পদগুলি মিত্রশক্তির দখলে রাখা, প্রভৃতি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানি একটি উল্লেখযোগ্য ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল। দখলে ছিল আফ্রিকা, এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কিছু অঞ্চল। ভার্সাই চুক্তির ফলে এই অঞ্চলগুলি মিত্রশক্তির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। উপনিবেশগুলি থেকে জার্মানি প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল ও পণ্য আমদানি করত। উপনিবেশগুলি হারানোর ফলে জার্মানি এই কাঁচামাল ও পণ্যগুলি আমদানি করতে না পারায় জার্মানির অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানিকে ১৩২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করার বিধানটি সম্পুর্ন প্রতিশোধমূলক, অন্যায় এবং ঘৃণার ফসল। এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ জার্মানি পরিশোধ করতে পারবেনা এটা সহজেই বোধগম্য। ক্ষতিপূরণের অর্থ সংগ্রহের জন্য জার্মানির অর্থনীতিকে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল শুধু অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য।
তাছাড়া, জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ প্রধান অঞ্চলগুলি ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, পোল্যান্ডের হাতে চলে যাওয়ায় জার্মানি অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে যায়। এর ফলে জার্মানি প্রায় ২৫ হাজার বর্গমাইল স্থান প্রায় ৭০ লক্ষ জনশক্তি ও শতকরা ১৫ ভাগের উপর কর্ষণযোগ্য ভূমি এবং শতকরা ১২ ভাগ শিল্প প্রধান কেন্দ্র হারিয়েছিল। এছাড়া রাইন নদীর আন্তর্জাতিকীকরণ, ডান জিগ সমুদ্রবন্দর হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ফলে জার্মানির আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে এভাবে জার্মানিকে অর্থনৈতিকভাবে শোষন করা হয়।
স্নায়ু যুদ্ধ কাকে বলে? স্নায়ু যুদ্ধের উদ্ভব, বিকাশ ও বর্তমান অবস্থা
অসামঞ্জস্যপূর্ণ সামরিক শর্তারোপ
লীগ অফ নেশন্স এর একটি মূলনীতি হিসেবে যুদ্ধের সাজ সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র হ্রাস করার নীতি মুখে সকলেই স্বীকার করেছিল। কিন্তু একমাত্র জার্মানির ওপরেই নীতি প্রয়োগ করা হয়। এটা জার্মানির সাথে কপটতা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক স্থাপনা ধ্বংস কিংবা দখল করে মিত্রশক্তি জার্মানির সামরিক শক্তি খর্ব করার চেষ্টা করেছে। তাছাড়া এ চুক্তির মাধ্যমে বেলজিয়ামের মত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো অপেক্ষা সামরিক শক্তির দিক দিয়ে জার্মানিকে দুর্বল করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সুতরাং জার্মানি যে আবার যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য অস্ত্রশস্ত্র যুদ্ধের সুযোগের প্রতীক্ষা করবে এটাই স্বাভাবিক।
ত্রুটিপূর্ণ বন্টন ব্যবস্থা
জাতীয়তাবাদ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ আধিকারের নীতির উপর ভিত্তি করে ইউরোপের পুণর্বন্টন করা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয়তাবাদ নীতি সর্বত্র সমানভাবে অনুসরণ করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে বহেমিয়াতে বাধদের অধীনে অনেক জার্মানি এবং ডালমেশিয়াতে বহুস স্লাভ ইতালির অধীনে থেকে যায়। দেখা যায় পরবর্তীতে জার্মান সংখ্যা লঘুরা পিতৃভূমিতে ফিরে আসার জন্য দারুণ গোলযোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া জার্মানি হতে আলসাস ও থোরেন ফ্রান্সকে দান করা, পোল্যান্ডকে পশ্চিম প্রুশিয়া,দুজনের অধিকাংশ ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যে মিত্রপক্ষ জাতীয়তাবাদের প্রাধান্য দিয়েছিল। কিন্তু অস্ট্রিয়ার জার্মান অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে এ নীতি অনুসরণ করা হয়নি। সমুদ্রের উপর সকল দেশের জাহাজগুলোর অভাব চলাচলের নীতিও সর্বত্র সমভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। এভাবে জার্মান জনসাধারণের জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করা হয়েছিল। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ ভার্সাই চুক্তিতে অঙ্কুরিত হয়।
জার্মানির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ভূলুণ্ঠিত
জার্মানির উপর নানা ধরণের বৈষম্যমূলক অবিচার করার পর জার্মান জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারও অবহেলিত করা হয়। ভার্সাই চুক্তির যেসব শর্ত জার্মানির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল সেগুলো কোনভাবেই জার্মানিকে মাথা তুলে দাড়াতে দেয়ার মত ছিল না। জার্মানির সার্বভৌমত্ব লুন্ঠন করে অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করে রাখতেই এসব শর্তারোপ করা হয়। ভার্সাই চুক্তির এসব অবিচারমূলক শর্তে ক্ষুব্ধ হয়ে জার্মান জাতি আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিতে জার্মান জাতীয়তাবাদভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হয়। আর এই উগ্র জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির পেছনে নিঃসন্দেহে ভার্সাই চুক্তি দায়ী। ভার্সাই চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জার্মানির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়ার ও পুনরায় মিত্রশক্তিবর্গের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়ার ইচ্ছা খুবই স্বাভাবিক।
চাপিয়ে দেয়া শান্তি
ভার্সাই চুক্তিকে ‘ডিক্টেটেড পিস’ বা বিজেতার আদেশ বলা হয়। ডিক্টেটেড পিস বা বিজয়ী পক্ষের চাপিয়ে দেয়া শান্তির নীতি অনুযায়ী পরাজিত জার্মানিসহ আরো বহু দেশের উপর জবরদস্তি মুলকভাবে ‘চাপিয়ে দেয়া শান্তি চুক্তি’ বলে ভার্সাই চুক্তি বিবেচিত হয়েছিল। এই চুক্তির ফলে জার্মানিকে তার অনেক অঞ্চল ছেড়ে দিতে, সামরিক শক্তি সীমিত করতে এবং প্রচুর পরিমাণে অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করেছিল। ফলে স্বভাবতই ভার্সাই চুক্তি জার্মানিতে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দেয়। এই ক্ষোভ ও অসন্তোষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে।
ন্যাটো কি? এর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও কার্যাবলি আলোচনা কর। বর্তমানে ন্যাটোর প্রয়োজন আছে কি?
জার্মানি ন্যায় বিচার লাভের আশা উপেক্ষিত
ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানি ন্যায় বিচারের আশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে মিত্রশক্তি ন্যায় পরায়তার ধারে কাছে যায়নি। এ চুক্তিতে যুদ্ধ সৃষ্টির অপরাধে জার্মানিকে কঠোর শাস্তি দেয়া ও জার্মানির আক্রমণ হতে ইউরোপের নিরাপত্তা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। এ কার্য সফল করতে গিয়ে মিত্রশক্তির প্রতিনিধিবর্গ ন্যায় বিচারের দাবি উপেক্ষা করে অবিবেচকা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন জার্মানির ওপর বিশ্বযুদ্ধের সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়ে।
ভার্সাই চুক্তির সমালোচনায় দুটি প্রধান যুক্তি আলোচনায় আসেঃ
প্রথমত, ‘ভুল জায়গায় কঠোরতা’ -এ যুক্তিতে বলা হয়, ভার্সাই চুক্তিতে জার্মানিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য এককভাবে দায়ী করার ফলে জার্মানিদের মধ্যে বিক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং তারা এই চুক্তিকে অন্যায় চুক্তি বলে মনে করে। এই ধারণাটা অমূলক নয় অবশ্যই। যুদ্ধে ক্ষতিপূরণের জন্য ১৯২১ সালে জার্মানের নিকট হতে ১৩২ বিলিয়ন ডলার দাবি করাটা বিজয়ী মিত্রশক্তির অন্যায্য ও দুরভিসন্ধিমূলক প্রয়াসের বহিঃপ্রকাশ। তাদের এই অন্যায্য ‘ডিকটেটেড পিস’ বা চাপিয়ে দেয়া শান্তি চুক্তির শর্তাবলের প্রতি জার্মানির বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করেছিল। এর ফলে জার্মানিতে নতুন করে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন অ্যাডলফ হিটলার। হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিতে নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসে। নাৎসি পার্টি জার্মানির ক্ষতিপূরণ পরিশোধে অস্বীকার করে এবং জার্মানির হারানো অঞ্চলগুলি পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেয়।
দ্বিতীয়ত, ‘ভুল জায়গায় উদারতা প্রদর্শন’ -এ যুক্তিতে বলা হয় যে, জার্মানির ভবিষ্যৎ সামরিক শক্তি পুনরুত্থান রুদ্ধ করার জন্য বিশেষ কোনো কঠোরতা অবলম্বন করা হয়নি। বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গ ১৫ বছরের জন্য রাইন অঞ্চল দখল বা ১৫ বছরের জন্য সার এলাকার দখলদারিত্ব জার্মানের সামরিক শক্তির উত্থানের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করেনি। এসব অঞ্চল নির্দিষ্ট মেয়াদের পর জার্মানিকে প্রত্যর্পণ করার ফলে জার্মানি তার সগৌরবে ফিরে যায়।
তাছাড়া, ব্রিটেন ও ফ্রান্স কর্তৃক জার্মানিকে তোষণ নীতির ফলে ভার্সাই চুক্তির শর্তাবলীর অবাধ্য হতে জার্মানি সাহস করেছিল। ১৯৩২ সালে জার্মানি ক্ষতিপূরণ প্রদান বন্ধ করে দেয়। ১৯৩৬ সালে রাইন অঞ্চল বেসামরিকরণ সংক্রান্ত শর্ত বাতিল করে জার্মানি ওই অঞ্চল সুরক্ষিত করে। ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার ঐক্য নিষিদ্ধ করার যে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল তা অগ্রাহ্য করে ১৯৩৮ সালে হিটলার অস্ট্রিয়া দখল করে এবং জার্মানির সাথে একিভূত করে নেয়। এভাবে বিভিন্ন স্তরে ভার্সাই চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন করে জার্মানি জাপান ও ইতালি জোট ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর আরেকটি অবশ্যম্ভাবী বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে।
অনেকের মতে, প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সমগ্র ইউরোপের মানচিত্রকে সম্পূর্ণ নতুন করে পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে ইউরোপ পূণর্গঠনে পরিকল্পনার অপরিকল্পিত বাস্তবায়নের ফলে ইউরোপের সমস্যা বরং বৃদ্ধি পেয়েছিল। ইউরোপ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অযোগ্য নেতৃত্বের দরুন প্রেসিডেন্ট উইলসনের নীতি ইউরোপ সমস্যার সমাধান করতে যেয়ে আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি করেছিলেন যার ফলে অদূর ভবিষ্যৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ উপ্ত হয়েছিল।
আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে বলা যায় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে উইলসনের চোদ্দ দফার আলোকে জার্মানি আত্মসমর্পণ এবং যুদ্ধের পর ১৯১৯ সালের প্যারিস শান্তি সম্মেলনে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির দ্বারা মিত্রপক্ষ জার্মানিকে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার নীতি গ্রহণ করে। ভার্সাই চুক্তির অন্যায্য ও একপাক্ষিক শর্তাবলিগুলি অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক দিক দিয়ে জার্মানিকে দুর্বল করে রাখে এবং রাজনৈতিক প্রভাব চিরতরে খর্ব করে দেয়। ফলে স্বভাবতই জনসাধারণের প্রতিরোধী এবং পরবর্তিতে আগ্রাসী জাতীয়তাবাদে জড়িয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্রশক্তির অন্যায্য দাবি, লোভ, আর অদূরদর্শী পরিকল্পনার ফসল হলো ভার্সাই চুক্তি এবং যার চুড়ান্ত পরিণাম হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন
এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…
- ভার্সাই চুক্তি কি?
- ভার্সাই চুক্তির প্রেক্ষাপট
- ভার্সাই চুক্তির ধারাসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- ভার্সাই চুক্তির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল কি?
- চুক্তিপত্র প্রণয়ণে অদূরদর্শিতা ও উইলসনের আদর্শের পরাজয়
- জার্মানির প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ
- জার্মানির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন
- অর্থনৈতিক শোষণমূলক চুক্তি
- অসামঞ্জস্যপূর্ণ সামরিক শর্তারোপ
- ত্রুটিপূর্ণ বন্টন ব্যবস্থা
- জার্মানির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ভূলুণ্ঠিত
- চাপিয়ে দেয়া শান্তি
- জার্মানি ন্যায় বিচার লাভের আশা উপেক্ষিত
সাম্প্রতিক আর্টিকেল
সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রেরঃ নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা
গত ১৩ মে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের রিয়াদে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশনঃ রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ
গত ১২ই মে, ২০২৫ সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর এবার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল নির্বাচন কমিশন।
পিকেকে-র বিলুপ্তি: তুরস্কের জন্য সুযোগ নাকি কুর্দিদের জন্য নতুন সংকট?
পিকেকে-র বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্কের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, নাকি কুর্দিদের জন্য অধিকার হারানোর নতুন ঝুঁকি?
অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুসঃ ভারতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা
পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে "অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস" নামে ব্যাপক পাল্টা হামলা শুরু করে। এই অভিযানের নামটির অর্থ "গলিত সীসায় নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর"।
আদালতের এখতিয়ারঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও বাংলাদেশে প্রয়োগ
বিচারিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আদালতের এখতিয়ার। আদালতের এখতিয়ার তিন প্রকারঃ আদি এখতিয়ার, আপীল এখতিয়ার, এবং পরিদর্শন এখতিয়ার।