ম্যালকম এক্স, একজন আফ্রো-আমেরিকান অধিকার কর্মী, সংগঠক। খুব অল্প বয়সেই জেল খেটেছেন তার অপরাধ জীবনের জন্য। প্রায় ৬ বছরের জেল হয়েছিল তার। আর এই সময়েই তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে, বলা যায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। একজন অপরাধী থেকে পরিবর্তিত হয়ে ওঠেন বিখ্যাত ইসলামি স্কলার। ম্যালকম লিটল থেকে হয়ে ওঠেন আলহাজ্ব মালিক আল শাবাজ। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা ম্যালকম নিজের সাবেক সংগঠনের সদস্যের আহতে নিহত হন। একজন স্পষ্টবাদি বক্তা, অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অধ্যবসায়ী সংগঠক হিসেবে ম্যালকম এক্স আফ্রো-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের রোষ, হতাশা ও মনোবেদনা বুঝেছিলেন। তাদের হয়ে লড়েছিলেন আমরণ। তার অসামান্য, ঘটনাবহুল জীবনের সংক্ষিপ্ত স্বরূপ এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

এক নজরে
নামঃ আলহাজ্ব মালিক আল শাবাজ / ম্যালকম এক্স
পিতাঃ জেমস আর্ল লিটল
মাতাঃ লুইস হেলেন নর্টন লিটল
জন্মঃ ১৯ মে ১৯২৫, ওহামা নেব্রাস্কা
মৃত্যুঃ ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫, নিউইয়র্ক
স্ত্রীঃ বেটি শাবাজ
সন্তানঃ আত্তাল্লাহ শাবাজ, কুবিলাহ শাবাজ, ইলিয়াসাহ শাবাজ, গামিলাহ শাবাজ, মালিকাহ শাবাজ, মালাক শাবাজ
শিক্ষাজীবনঃ ওয়েস্ট জুনিয়র হাই স্কুল, ম্যাসন হাই স্কুল
প্রতিষ্ঠানঃ নেশন অব ইসলাম, মুসলিম মস্ক ইনকর্পোরেশন, অর্গানাইজেশঅন অব আফ্রো-আমেরিকান ইউনিটি
ম্যালকম এক্সের জন্ম
ম্যালকম লিটলের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৯ শে মে যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা রাজ্যের ওহামা শহরে। বাবা জেমস আর্ল লিটল ও মা লুইস লিটলের ঘরে জন্ম নেন ম্যালকম। তিনি ছিলেন চতুর্থ সন্তান। বাবা আর্ল ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ও অধিকার কর্মী। ম্যালকম ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছেই কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের দীক্ষা পান। বাবার কর্মকান্ড ও আদর্শের কারণে বিভিন্ন সময়ে তার পরিবারের ওপর হামলা হয়। ম্যালকমের জন্মের আগ থেকেই বিভিন্ন শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে ওঠে তার পরিবার। ম্যালকমের যখন মাত্র চার বছর তখুনি কুখ্যাত কু ক্ল্যাক্স ক্লানের নানা ধরনের হুমকি ও হামলার চোটে ম্যালকমের পরিবার মিশিগান রাজ্যে পাড়ি দেয়। এখানে এসে আরো বড় ধরণের সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয় তার পরিবার। শেতাঙ্গ সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়, কেউই সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।শেতাঙ্গ পুলিশ ও দমকল কর্মীরা এসে বাড়ির চারপাশে দাঁড়িয়ে নিরব দর্শকের মত শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া দেখলো।
এরপরে তার বাবা ল্যান্সিং শহরের আরেক অংশে নতুন করে বাড়ি করেন। পরের দুবছরের মাথায় ম্যালকমের মাত্র ১৩ বছর বয়সেই শহরের ট্রামলাইনে ওপর তার বাবার মৃতদেহ পাওয়া যায়। যদিও সেখানকার আরেক শেতাঙ্গ চরমপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠন হাতে বাবা জেমস আর্ল নিহত হবার কথা দাবী করা হয় , পুলিশের ভাষ্যমতে তিনি ট্রামের সাথে দুর্ঘটনায় মারা যান। বাবার মৃত্যুশোকে মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং তিনি আর কখনো সুস্থ হননি। এখানেই তিনি পরবর্তি ২৬ বছর ছিলেন। বাবা মাকে এভাবে হারানোর পর ম্যালকমকে পালক পরিবারে দত্তক নেয়া হয়।
ম্যালকম এক্সের শিক্ষাজীবন
পালক পরিবারে থেকে তিনি হাইস্কুল অব্দিও পড়াশোনা করতে পারেন নি। তিনি তার জীবনীতে লিখেছেন তার সাথে মানুষের মত আচরণ করতো না তার পালক পরিবার। ১৯৩৮ সালে হাইস্কুলে পড়া অবস্থাতেই তিনি পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েন। তিনি গুটিকয়েক কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর একজন ছিলেন এবং পড়াশোনায় বেশ পারদর্শি ছিলেন। তার সহপাঠিরা তাকে প্রতিনিধি নির্বাচন করেছিলেন।
একবার তার ইংরেজি শিক্ষক তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন বড় হয়ে তিনি কি হতে চান? ম্যালকম আইনজীবি হতে চাইলে শিক্ষক প্রতিউত্তরে তাকে বলেন, “আমাদের জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটা হলো জীবনে বাস্তববাদি হওয়া, যদি তুমি হতে পারবে এমন কিছু হতে চাও তাহলে কেন তুমি ছুতোরগিরি করার চিন্তা করো না?” শিক্ষকের এই কথাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। একজন কৃষ্ণাঙ্গ শিশু হিসেবে তিনি আর পড়াশোনার প্রতি আর কোন আগ্রহ কিংবা ভবিষ্যৎ কিছুই খুঁজে পাননি। ১৯৩৯ সালে ১৫ বছর বয়সেই স্কুল থেকে ঝরে পড়েন, চলে যান বোস্টনে। গিয়ে ওঠেন বড়বোন এলা’র ঘরে। ম্যালকম লেখেন যে, তার জীবনে তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা যিনি তার গায়ের রঙয়ের জন্য গর্ববোধ করতেন । বোন এলা তাকে জুতা পালিশের দোকানে চাকরী পাইয়ে দেন। সেখানে থাকতেই ধীরে ধীরে জড়িয়ে পরেন নানা অপরাধকর্মে। ছিনতাই, চুরি, প্রতারণার মতো অপরাধ গুলোর সর্দার হয়ে ওঠেন নিউইয়র্ক শহরে।
পরে তিনি আরেকটি চাকরী পান, নিউইয়র্ক-বোস্টন ট্রেনে রান্নার কাজে সহায়তাকারি হিসেবে। আর এখানে তিনি মাদক ও অপরাধের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েন। তার অনিয়ন্ত্রিত ও ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার খরচ যোগাতে তিনি অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
কারাগারের জীবন
১৯৪৬ সালে ২১ বছর বয়সে পুলিশ তাকে আটক করে ।অপহরণ ও ছিনতাইয়ের জন্য তাকে ১০ বছরের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। দীর্ঘ সময় কাটানোর জন্য তিনি কারাগারের পাঠাগারে বই পড়তেন। হাইস্কুল থেকে ঝরে পড়ার ক্ষতিটা তিনি এই বই পড়া দিয়ে কাটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন এভাবে।
তার যে সহোদররা নেশন অব ইসলাম নামের একটা কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম সংগঠনের সদস্য ছিলেন তারা মাঝেমধ্যে তাকে দেখতে আসতেন। শেতাঙ্গদের থেকে পৃথক হয়ে তারা “মুক্তি, ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে আলাদা জাতিরাষ্ট্র” গঠনের আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। নেশন অব ইসলাম মূলত একটি শিয়া মতাবলম্বি সংগঠন। এখানেই তিনি এই সংগঠনের আদর্শে উদ্ভুত হয়ে তিনি তার জীবনযাপনের ধরণ বদলে ফেলেন। কারাগারেই বিভিন্ন আলোচনা বিতর্কে অংশগ্রহণ করা শুরু করেন। তার এই বদলে যাওয়ায় বড় অবদান ছিল ভাই রেজিনাডের (Reginald)। তার শিয়া ইসলামে দীক্ষিত হন এবং পূর্বসূরীদের নাম বাদ দিয়ে ‘এক্স’ ব্যবহার করেন। অর্থ্যাত, ম্যালকম লিটল থেকে ম্যালকম এক্স। এক্স গ্রহণ করার ব্যাখ্যা হলো যে, এক্স হলো অজ্ঞাত রাশির পরিচায়ক। তিনি তার আফ্রিকান ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের খোঁজ করছেন এই এক্স-এর মাধ্যমে । ছয় বছর কারাগারে আটক থেকে ১৯৫২ সালে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
নেশন অব ইসলাম ও ম্যালকম এক্স
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি নেশন অব ইসলামের প্রধান নেতা এলাইজাহ মুহাম্মাদের সান্নিধ্যে আসেন। একসাথে তারা ফিলাডেলফিয়ায়, বোস্টনে এবং অন্যান্য শহর গুলোতে নেশন অব ইসলামের কর্মকান্ড পরিচালনা শুরু করেন। তিনি “মুহাম্মাদ স্পিকস” (Muhammad Speaks) নামে নেশন অব ইসলামের মুখপাত্রমূলক একটি পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। তার বাড়িতেই এই পত্রিকা মুদ্রিত হত। সংগঠনের সদস্য ও তহবিল সংগ্রহ করা হতো এই পত্রিকার মাধ্যমে। তার বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে তিনি এই সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন স্পষ্টভাবে। তার চিন্তা এমন ছিল যে, “যেকোন মূল্যে সাম্প্রদায়িকতার শেকল ভাঙতে হবে, জবরদস্তি করে হলেও। শান্তিপূর্ণভাবে কখনো বিপ্লব করা যায়না। হিংস্রতা, জবরদস্তি ছাড়া কোন বিপ্লব হতে পারে না।”
তার এই অকপটতা, সাহসিকতা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর নজরকাড়ে। তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে একটি সক্রিয় জবরদস্তিমূলক বিপ্লবের সূচনা ঘটায়। তার প্রতি এলাজেহ মুহাম্মাদের বিশেষ অনুরাগ থেকে মিনিস্টার থেকে নেশন অব ইসলামের জাতীয় প্রতিনিধি পর্যন্ত নির্বাচিত হন। তার অবদানে নেশন অব ইসলাম ৪০০ জনের সংগঠন থেকে ৪০০০০ জনের সংগঠনে পরিণত হয় ১৯৬০ সালের মধ্যেই। একজন স্পষ্টবাদি বক্তা, অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অধ্যবসায়ী সংগঠক হিসেবে ম্যলকম এক্স আফ্রো-এমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের রোষ, হতাশা ও মনোবেদনা বুঝেছিলেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত তিনি এসব নিয়েই তাদের সাথে কাজ করেছেন, তাদের কথা বলেছেন। তিনি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেন। তিনি মূলধারার নাগরিক অধিকার আন্দোলন ও মার্টিন লুথার কিং এর অহিংস মতবাদের সমালোচনা করেন। বলা চলে মার্টিন লুথারের অহিংস মতবাদের ঠিক উল্টোটা ছিল ম্যালকমের। মার্টিন লুথার কিং ম্যালকমের ধ্বংসাত্মক বাগ্মীতার বড় সমালোচক ছিলেন। তবে, নেশন অব ইসলামের প্রভাবে ম্যালকম “নিগ্রো” ও “কালারড” আখ্যাগুলোকে “ব্লাক” ও “আফ্রো আমেরিকান”-এ পরিবর্তন করেন।
আমার মনে হয় ম্যালকম নিজের ও আমাদের মানুষের জন্য খুব বড় অহিতসাধন করেছেন।
মার্টিন লুথার কিং
১৯৬৩ সালে ম্যালকমের সাথে এলাইজেহ মুহাম্মাদের মতবিরোধ দেখা যায় যখন ম্যালকম জানতে পারেন তার গুরু এলাইজেহ নিজেই নেশন অব ইসলামের নীতি বিরুদ্ধ অনেক কাজই করেন। এই বিরোধ আরো প্রকট হয় যখন তিনি জানতে পারেন এলাইজেহ তার দাম্পত্য জীবনের বাইরেও সন্তানের জন্ম দেন তার ৬ জন ব্যক্তিগত সহকারীর সাথে বিবাহ বহির্ভুতভাবে অবৈধ ও অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান যার মধ্যে দুজন এলাইজেহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এইসব ব্যাপার ম্যালকমকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। নেশন অব ইসলাম নিয়ে আরো খারাপ পরিস্থিতি তৈরী হয় যখন তিনি জন এফ কেনেডির হত্যা নিয়ে মন্তব্য করেন যে, “হিংস্র সমাজ তার হিংসাত্মক কর্মকান্ডের ফল ভোগ করছে।” তার এই মন্তব্য নেশন অব ইসলামের সাথে চুড়ান্ত বিরোধ সৃষ্টি করে। কেনেডি হত্যাকান্ড নিয়ে মন্তব্যের জেরে এলাইজেহ মুহাম্মাদ ম্যালকমকে ৯০ দিন সময়ের জন্য মুখবন্ধ রাখার আদেশ দেন আর এভাবেই এই দুই নেতার সম্পর্ক চুড়ান্তভাবে বিচ্ছেদ হয়।
আরো পড়ুনঃ রক্তঝরা আগস্ট ও বঙ্গবন্ধু
সুন্নি ইসলামে ম্যালকম এক্স
এলাইজেহ মুহাম্মাদের নীতিবিরুদ্ধ কর্মকান্ড, ম্যালকমের প্রতি তার রাগ ও জন এফ কেনেডির হত্যাকান্ড নিয়ে ম্যালকমের বিস্ফোরক মন্তব্য ম্যালকমকে বাধ্য করে নেশন অব ইসলাম ছেড়ে যেতে। ১৯৬৪ সালের মার্চে ম্যালকম এক্স নেশন অব ইসলাম ছাড়েন। পরের মাসে তিনি ‘মুসলিম মস্ক, ইনকর্পোরেশন’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছরে তিনি উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণে বের হন। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উভয় দিক থেকেই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এই ভ্রমণ। তিনি সমাজতন্ত্র ও আফ্রিকানবাদকে মানিয়ে নিয়ে বৈশ্বিক ঔপনিবেশিক বিরোধী সংগ্রামের আলোকে আমেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনকে নতুন করে বুঝতে শুরু করেন।
তিনি সৌদিআরব ভ্রমন করেন ও মক্কায় হজ্ব পালন করেন। এখানেই তিনি সুন্নি ইসলামে ধর্মান্তরিত হন এবং নতুন নাম গ্রহণ করেন আলহাজ্ব মালিক আল শাবাজ। মক্কায় হজ্ব পালন শেষে তিনি আমেরিকায় ফিরে আসেন একজন আশাবাদি ও শান্তশিষ্ট মানুষ হিসেবে যিনি মনে করেন আমেরিকার জাতিগত সমস্যার সমাধান হলো শান্তিপূর্ণ কর্মকান্ড। তিনি নেশন অব ইসলামের বিচ্ছিন্নতাবাদি মতবাদ পরিত্যাগ করেন ও প্রচার করা শুরু করেন মূল ইসলাম তথা সুন্নি ইসলামই আমেরিকার জাতি বৈষম্য দূর করতে পারে।
এরপরে তিনি আরো দুবার আফ্রিকা সফরে যান। ১৯৬৪ সালে তিনি অর্গানাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটি বর্তমানে আফ্রিকান ইউনিয়নে বক্তৃতা রাখেন। ১৯৬৫ সালে অর্গানাইজেশন অব আফ্রো-আমেরিকান ইউনিটি নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের অবস্থা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থার আন্তর্জাতিককীকরন ও মেলবন্ধন তৈরী করা এবং নাগরিক অধিকারকে মানবাধিকারে রুপান্তর করা।
প্রকৃত ভ্রাতৃত্ববোধ দেখে আমি বুঝেছি যে, ক্রোধ মানুষের দৃষ্টিশক্তিকে অন্ধ করে দেয়।
আলহাজ্ব মালিক আর শাবাজ/ম্যালকম এক্স
ম্যালকমের জীবনাবসান
ম্যালকমের সাথে নেশন অব ইসলামের ক্রমবর্ধমান বৈরী সম্পর্ক ও ম্যালকমের সুবিন্যস্ত ও জনপ্রিয় আদর্শের কারণে ম্যালকমের জীবন বিপন্ন হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে তাকে হত্যাচেষ্টা শুরু হয়। যে মুহুর্তে তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ধারণা পাল্টে সহিংস থেকে অহিংস আন্দোলনে রুপান্তর করেছেন, তখনি তিনি গুপ্তহত্যার শিকার হন।
১৯৬৫ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী ম্যানহাটনের অডুবন বলরুমে বক্তৃতা দেয়ার জন্য মঞ্চে উঠেছেন মাত্র। কথা বলা শুরু করা মাত্র কয়েকজন অস্ত্র নিয়ে মঞ্চে উঠে তাকে গুলি করেন। খুব কাছে থেকেই কয়েক রাউন্ড গুলি তার গায়ে লাগে। নিকটস্থ হাসপাতালে নিলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নেশন অব ইসলামের ৩ জন সদস্য এই হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন এবং তাদেরকে আজীবনের জন্য কারাবাসের দন্ড প্রদান করে আদালত।
ম্যালকম এক্সকে নিয়ে বই ও সিনেমা
তার ঘটনা বহুল জীবন নিয়ে কম বই-সিনেমা তৈরী হয়নি। তাকে নিয়ে বেশ কিছু সিনেমা ও ডকুমেন্টরি ফিল্ম তৈরী হয়। যেমনঃ
- Malcolm X directed by Spike Lee
- The Autobiography of Malcolm X by Princeton, N.J.: Films for the Humanities & Sciences, 2001
- Brother Minister: The Assassination of El-Hajj Malik Shabazz (Malcolm X) by Greenvale, NY: 3rd Millennium Entertainment Group, 1995
- El Hajj Malik el Shabazz by Xenon Home Video, 1991
- The Life and Death of Malcolm X by Plymouth, MN: Simitar, 1992
- Malcolm X: Make It Plain (Part I) by Alexandria, VA: PBS Video, 1994
- Malcolm X: Make It Plain (Part II) by Alexandria, VA: PBS Video, 1994
- Malcolm X: Make It Plain (Part III) by Alexandria, VA: PBS Video, 1994
- The Speeches of Malcolm X by Orland Park, IL: MPI Home Video, 1997
সিনেমার পাশাপাশি ম্যালকমের নিজের লেখা সহ আরো কিছু বিখ্যাত বই যেমনঃ
- By Any Means Necessary: Malcolm X
- Malcolm X: A Life of Reinvention by Manning Marable
- Malcolm X, Black Liberation, and the Road to Workers Power by Jack Barnes
- Martin Luther King, Jr., Malcolm X and the Civil Rights Struggle of the 1950s and ’60s by David Howard-Pitney
- Malcolm X: The FBI File by Clayborne Carson
- Martin and Malcolm and America by James H. Cone
- The Assassination of Malcolm X by Allison Stark Draper
সম্পর্কিত আর্টিকেল
কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন
এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…
সাম্প্রতিক আর্টিকেল
শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?
পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ও সীমান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।
আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?
আদালত হলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সেই বৈধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি, অপরাধের বিচার ও আইনি অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) কী? ইক্যুইটির ম্যাক্সিম সমূহ কী কী?
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) হল সাধারণ আইন (Common Law) এর শর্তের বাইরে গিয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা
আব্রাহাম চুক্তিঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, এবং ফিলিস্তিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডঃ ফিলিস্তিনের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের বুলি!
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয় ।