আমরা বাঙালিরা তো এমন এক জাতি, যারা হাসিনা আর ভারত ছাড়া এক মুহূর্তও টিকতে পারি না। মানবতার মা-জননী, জগতের শিরোমনি, অল্পের জন্য নোবেল হাতছাড়া হওয়া হাসিনা আমাদের জীবনধারা, আর ভারত আমাদের আত্মা। তাদের ছাড়া আমরা শুধু শূন্য, মরু হাহাকার। তাই আসুন দেখি, কেন হাসিনা ও ভারত আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য।
১. হাসিনা মানেই বাংলাদেশ, ভারত মানেই জননী!
হাসিনা না থাকলে আমাদের দেশের কী হবে? দেশ তো চলবেই না! আর ভারত? তারা তো আমাদের জননী। আমাদের নদীর পানি নেবে, আমাদের জমি ব্যবহার করবে, আমাদের বন্দর দখল করবে—এই তো আমাদের বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। জননী বলে কথা, আমরা না দিলে কে দেবে? এ যেন এক মহান দাতা ও গ্রহীতার সম্পর্ক।
২. ভোটাধিকার কেন লাগবে, হাসিনা তো আছেই!
গণতন্ত্রের দরকার কী? গণতন্ত্র মানেই তো বিরাট হট্টগোল, যার মাধ্যমে জনগণ তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু হাসিনা থাকতে কেন এই ‘হট্টগোল’ আমাদের দেশে থাকবে? তিনি তো জানেন, আমরা কী চাই। তিনি তো আমাদের সব ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করেন—তিনি জানেন কোন দলের হয়ে কত ভোট দিতে হবে, আর কার কত আসন পাওয়া উচিত। তিনি নিজেই ভোট দেন, গণনা করেন, আর সরকার গঠন করেন।
তাছাড়া, নির্বাচন করাটা সময় ও অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। ইভিএম দিয়ে তো সব সহজে ম্যানেজ করা যায়। এমন নেত্রী থাকলে ভোটার হওয়ার প্রয়োজনও নেই। কল্পনা করুন, এ ধরনের সেবা আর কোথাও পাবেন?
৩. ভারত আমাদের চাকরির সেক্টর বাঁচায়!
বাংলাদেশে আমাদের মেধাবীদের তো কেউ চায় না। তারা শুধুই বিদেশে যেতে চায় বা চাকরি না পেয়ে বেকার বসে থাকে। এদিকে ভারত আমাদের জন্য তাদের মেধাবীদের পাঠিয়ে দিচ্ছে। তারা আমাদের ব্যাংক, টেলিকম, এমনকি ফ্যাশন শপেও কাজ করছে।
স্বৈরশাসকের উত্থান, জনগণের প্রতিরোধ ও স্বৈরশাসকের পতনের উপায়
ভাবুন তো, যদি ভারতীয়রা না আসত, তবে আমাদের কী হতো? সব সেক্টর বন্ধ হয়ে যেত। আমাদের দেশে ভাবুন, তাদের ছাড়া আমরা কীভাবে বাঁচতাম? আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে, ভারত আমাদের জন্য কাজ করছে, যেন আমরা আর্থিকভাবে একেবারে দুর্বল না হয়ে যাই।
৪. ভারতের বিদ্যুৎ ছাড়া আলোকিত বাংলাদেশ অন্ধকারে ডুবে যেত
বিদ্যুৎ আসুক বা না আসুক, ভারতীয় বিদ্যুৎ আমাদের গর্ব। প্রতি মাসে বিল বাড়ুক বা লোডশেডিং হোক, আমরা খুশি। কারণ, আমরা ভারতের দেয়া বিদ্যুৎ খেয়ে থাকি। ভারত যদি বিদ্যুৎ না দিত, তাহলে তো আমাদের মোবাইল চার্জ করাও অসম্ভব হয়ে যেত। বিনিময়ে আমাদের কিছু ঋণ তো মেনেই নিতে হয়। এমন দানশীল প্রতিবেশী আর কোথায় পাবেন?
৫. নদী দিয়ে পানি যাবে, সেটাই তো নিয়ম!
তিস্তা চুক্তি আজও হয়নি। কেন হয়নি? কারণ, আমরা এতটাই উদার যে, ভারত আমাদের পানি না দিলেও আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। উল্টো আমরা তাদের জন্য ফেনী নদীর পানি ছেড়ে দিয়েছি।
পানি নিয়ে তো আর ছাগলামি করার কিছু নেই। আমরা দাতব্য জাতি, ভারত যা চাইবে, আমরা তা দেব। কারণ, প্রতিবেশীর বিপদে পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। তাদের ফসল ফললে, আমাদেরও তো আত্মার শান্তি হয়।আমরা যদি পানি না দিই, তাহলে তাদের কী হবে? তাদের চাষাবাদ তো বন্ধ হয়ে যাবে! আমাদের গর্ব হওয়া উচিত যে, আমরা প্রতিবেশীকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের পানি উৎসর্গ করছি।
৬. গণতন্ত্র মানেই হাসিনা ও ভারতীয় স্টাইল
হাসিনা আর ভারত মিলে গণতন্ত্রের এক অসাধারণ সংজ্ঞা নতুনভাবে শিখিয়েছে। এখানে জনগণের ভোটাধিকার নয়, বরং নেত্রীর ইচ্ছাই শেষ কথা। বিরোধী দল? তাদের স্থান কারাগারে। আন্দোলনকারী? তাদের ‘গুম করে দেওয়া’ই সেরা সমাধান। আর ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচনে ‘সত্যিকারের’ বিজয় অর্জন করার ‘হাসিনা মডেল’ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
ভারতীয় পদ্ধতিতে গণতন্ত্র মানে এমন এক সরকার ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিবাদ নেই, মতপ্রকাশ নেই, শুধু উন্নয়নের গল্প। আর এই উন্নয়ন কী? সেটা হয়তো শুধু ফ্লাইওভার আর পদ্মাসেতু, কিন্তু মানবাধিকারের ক্ষেত্রে শূন্য।
প্রটেক্টোরেট রাষ্ট্র কাকে বলে? আধুনিক প্রেক্ষাপটে প্রটেক্টোরেট রাষ্ট্রের প্রাসঙ্গিকতা
৭. চুক্তি মানেই ‘কিছু দিন, কিছু নেবেন না’ নীতি
বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি মানেই একতরফা ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ দান।। ভারত আমাদের রেললাইন ব্যবহার করে, বন্দর ব্যবহার করে, কর ফাঁকি দেয়। কিন্তু আমরা তাদের কিছু বলি না, কারণ আমরা উদার।
মজার বিষয় হলো, এই চুক্তিগুলো কখনোই জনগণের জানার দরকার পড়ে না। হাসিনা নিজেই ঠিক করেন কীভাবে আমাদের জাতীয় সম্পদ ‘বন্ধুপ্রতিম’ ভারতের হাতে তুলে দেওয়া যায়।
৮. ভারতের দূতাবাসই আমাদের ‘মিনিস্ট্রি অব ডিসিশন’
আপনার যদি কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে ভাববেন না। ভারতের দূতাবাসে যান। সেখানেই সবকিছু ঠিক করা হয়। ভারতের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমাদের রাজনীতি, কূটনীতি—সবই তো তাদের জন্য। কোথাও নতুন প্রকল্প হবে? সেটার অনুমোদনও তাদের কাছ থেকে আসতে হবে। তারা শুধু পরামর্শ দেন না, বরং পুরো দিকনির্দেশনাও দেন।
ভাবুন তো, আমরা এতটাই সৌভাগ্যবান যে, আমাদের নিজস্ব মন্ত্রণালয়ের চেয়েও ভারতের দূতাবাস বেশি কার্যকর।
৯. ভারতের টেলিভিশন আমাদের ‘জাতীয় শিক্ষা’ দেয়
কেউ যদি জানতে চান, বাংলাদেশি কৃষ্টি ও সংস্কৃতি কোথায়? তার জন্য টেলিভিশন চালু করুন, আর ভারতীয় সিরিয়াল দেখুন। তারা আমাদের শিখিয়েছে, কীভাবে এক গ্লাস পানির মধ্যেও বিশ ঘণ্টার গল্প বানানো যায়।
আর এসব সিরিয়াল আমাদের এমন এক নতুন সংস্কৃতি শিখিয়েছে, যেখানে পারিবারিক কলহ, ষড়যন্ত্র, আর অশ্রুতে ভরা গল্প ছাড়া কিছু হয় না। ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হলে, আমাদের পরিবারগুলো টিকে থাকবে কীভাবে? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলো অমূল্য।
Bangladesh wants to renegotiate Adani power deal unless court cancels
১০. ভারতীয় সেনাবাহিনী: আমাদের ‘মা-বাবা’
যখনই আমরা বিপদে পড়ি, হাসিনা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ডেকে নেন। কারণ, আমাদের নিজেদের সেনাবাহিনী তো কোনো কাজ করে না। এমনকি, যদি আন্দোলন হয়, তখনও ভারতের কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারি। ভারতীয় সেনাবাহিনী যদি এসে আমাদের বাঁচিয়ে দেয়, সেটাই হবে পরম সৌভাগ্য।
হাসিনা ও ভারত ছাড়া আমরা কেউ কিচ্ছু নই!
সবশেষে এটি পরিষ্কার—হাসিনা ও ভারত ছাড়া বাংলাদেশ কিছুই না। হাসিনা ও ভারত আমাদের জন্য যা করছেন, তাতে আমাদের শুধু ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আমরা তাদের জন্য বাঁচি, তাদের জন্য কাজ করি, তাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করি। এভাবে চলতে থাকুক আমাদের এই অনন্য ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক।
তবে, যদি কখনো ভাবেন যে, আমাদের নিজেদের স্বাধীনভাবে বাঁচার প্রয়োজন আছে—তাহলে ভুল ভাবছেন। স্বাধীনতা তো হাসিনা আর ভারতের হাতেই সবচেয়ে ভালো থাকে। সুতরাং, দোয়া করুন যেন এই সম্পর্ক চিরস্থায়ী হয়।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন
এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…
- ১. হাসিনা মানেই বাংলাদেশ, ভারত মানেই জননী!
- ২. ভোটাধিকার কেন লাগবে, হাসিনা তো আছেই!
- ৩. ভারত আমাদের চাকরির সেক্টর বাঁচায়!
- ৪. ভারতের বিদ্যুৎ ছাড়া আলোকিত বাংলাদেশ অন্ধকারে ডুবে যেত
- ৫. নদী দিয়ে পানি যাবে, সেটাই তো নিয়ম!
- ৬. গণতন্ত্র মানেই হাসিনা ও ভারতীয় স্টাইল
- ৭. চুক্তি মানেই ‘কিছু দিন, কিছু নেবেন না’ নীতি
- ৮. ভারতের দূতাবাসই আমাদের ‘মিনিস্ট্রি অব ডিসিশন’
- ৯. ভারতের টেলিভিশন আমাদের ‘জাতীয় শিক্ষা’ দেয়
- ১০. ভারতীয় সেনাবাহিনী: আমাদের ‘মা-বাবা’
- হাসিনা ও ভারত ছাড়া আমরা কেউ কিচ্ছু নই!
সাম্প্রতিক আর্টিকেল
শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?
পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ও সীমান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।
আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?
আদালত হলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সেই বৈধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি, অপরাধের বিচার ও আইনি অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) কী? ইক্যুইটির ম্যাক্সিম সমূহ কী কী?
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) হল সাধারণ আইন (Common Law) এর শর্তের বাইরে গিয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা
আব্রাহাম চুক্তিঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, এবং ফিলিস্তিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডঃ ফিলিস্তিনের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের বুলি!
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয় ।