শুরুতেই যদি কোনরকম রাখ-ঢাক না রেখে ‘আইন’ কি বলতে যাই তাহলে বলতে হয়, কতগুলো যৌক্তিক-অযৌক্তিক কিংবা ন্যায্য-অন্যায্য নিয়মের সংঘবদ্ধ মেকানিজমই আইন। আমাদের চারপাশে সাজানো গোছানো রক্ষিত বা অরক্ষিত বাধ্যবাধকতা জারির নিয়মনীতিগুলোই আইন। কখনো আইন তৈরী হয় আইনসভায় বসে, কখনোওবা যুদ্ধক্ষেত্রে বসে। কখনো স্বাধীনতা ঘোষণা করতে আইন তৈরী হয় আবার কখনো স্বাধীনতা হরণ করতে আইন তৈরী হয়। কখনো রাষ্ট্র বা জনগণ আইন তৈরী করে কখনো সরকার আইন তৈরী করে। এই আইন কে তৈরী করছে, কারজন্য তৈরি করছে এসবের ওপরই আইনের ন্যায়পরায়নতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে আইনের হাল-হকিকত এই দশা হয়েছে।
আইনের গোড়াপত্তন
যদি প্রশ্ন করি ‘আইনের গোড়াপত্তন কবে’ তাহলে এর একটা উত্তর হবে আদম (আঃ) ওপর জারি করা বিধি-নিষেধ প্রথম আইন পুরো মানব জাতির জন্য। সেটা যে আইনই হোক না কেন। আরেকটা উত্তর হতে পারে লিখিত কোন আইন প্রথম যেদিন লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। কি হতে পারে সেটা?যদিও বলা হয়ে থাকে ‘কোড অব হাম্বুরাবি‘ই সবচেয়ে পুরোনো লিখিত আইন তবে, এরও পুর্বে ‘কোড অব আর-নাম্মু’ বা Ur-Nammu লিখিত হয়েছিল, সম্ভবত খ্রীষ্টপূর্ব ২১১২ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে। তখনকার দিনে তো আর আজকের দিনের মত এমন বিশাল বিশাল আইন তৈরী হতো না, খুবই সাধারণ কিছু আইন তৈরী হতো। কেউ একজন মজা করে বলেছিল ” আমার রাজত্ব থেকে বেরিয়ে যাও” কিংবা “আমার স্ত্রীর ধারে কাছে ঘেষো না” , এই কথাগুলোকেই সবচেয়ে পুরোনো আইন হিসেবে মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে। হতে পারে, কারণ তখনকার দিনে আইনের প্রয়োজন এর বাইরে ছাড়া কোথাও ছিল না বলা যেতে পারে।

বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষের জীবন যাপন, রাষ্ট্র কিংবা সরকার সবকিছু প্রয়োজনের তাগিদে পুণর্গঠিত হতে হতে আইনও তার সাথে রূপ বদলেছে, আইনের উপযোগভোগি বদলেছে। কোথাও হয়েছে ন্যায়ভাবে কোথাও অন্যায় ভাবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনের উদ্দেশ্য বলতে শাসন করা বা শোষণ করা ছাড়া আর কিছু নয়। নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ন্যায় কিংবা অন্যায় ভাবে একদল ব্যক্তি কর্তৃক অন্যব্যক্তিদলকে শাসন কিংবা শোষন করা যায় যেসব নীতির ক্ষমতাবলে সেটাকেই আইন বলা চলে। সেসব আইনের চেহারা কেমন হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ বা ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন, সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করে কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসনের ক্ষমতা খর্ব করা প্রভৃতির উদাহরণ টানা যায়।
আইনের সংজ্ঞা জানতে পড়ুনঃ আইনের কার্যকরী সংজ্ঞা
এই আইন সব সময় গুটিকয়েক মানুষের দ্বারা সঙ্গায়িত হয়, বিশ্লেষিত হয়। এই গুটিকয়েকই সবসময় নিজেদের মর্জি জনগণের নামে চালিয়ে দেয়। বিরাট সংখ্যক, সংখ্যাগরিষ্ঠদের সেখানে কোনই ভূমিকা নেই এই আইনের সঙ্গায় সংগায়িত হওয়া ছাড়া। সুশাসন, ন্যায়বিচারের কথা বলা এই আইনগুলো কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে হয়না।
তাই বলে কি আইন থাকবে না কিংবা আইনকি শুধুই একপেশে। আইন থাকবে, আর হ্যা, আইন একপেশে। যদি আইন একপেশে হয় তাহলে নিশ্চই আরো পক্ষ আছে। সেটা কি? আইন একটাই কিন্তু এর অবস্থাটা তর্কের বিষয়। এগুলো আইনের প্রকার নয়, এগুলো একেকটা আইনের অবস্থা। আমার কাছে মনে হয় বর্তমান বিশ্বে আইন দুই অবস্থায় আছে,
- তত্বীয় অবস্থায়;
- কার্যকরী বা ব্যবহারিক অবস্থায়।
অথবা আরেকভাবে আইনের চেহারা দেখা যেতে পারে। যেমন-
- আইনের খোলস বা বাইরের আবরণ;
- আইনের শিরা-উপশিরা বা ভেতরের গঠন
তত্বীয় অবস্থার আইন বা আইনের খোলস
তত্বীয় অবস্থা কিংবা আইনের বাইরের আবরণটাই মূলত বহুলাংশে মানবতাবাদি, ন্যায্য, মোটা দাগে বলতে গেলে আইন প্রণয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ধারণ করে সৃষ্টির শুরু থেকে। কিন্তু সেসব এখন বইয়ের পাতাতেই লিপিবদ্ধ থাকার পাশাপাশি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বৈশ্বিকভাবে এর গ্রহনযোগ্যতা থাকলেও বিশ্বের কোথাও আইনগুলোকে আইনপ্রণয়ের উদ্দেশ্যনুযায়ি কার্যকরভাবে অনুসরণ করা হয় না। আন্তর্জাতিক আদালত যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়ার কাছে মাথা পেতে চলার নীতি মেনে নিয়েছে ঠিক তেমনি এই তত্বীয় আইনও একই অবস্থায় আছে।
কার্যকরী বা ব্যবহারিক অবস্থার আইন বা আইনের শিরা-উপশিরা
অপর দিকে কার্যকরী বা ব্যবহারিক অবস্থা কিংবা আইনের ভেতরের গঠন যেটা সহজে দেখা যায়না, বোঝা যায়না, ফাঁক-ফোকর বলে যাকে সেটাই এখন রাজ করছে। আইনের এই ভেতরের লুক্কায়িত গঠনটাই মূলত আইনের মূল উদ্দেশ্য ধারণ করে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ‘প্রাথমিক’ ও ‘মূল’-এর মধ্যে বিস্তর এবং স্বতন্ত্র ফারাক আছে। এই ব্যাপারটার সাথে কোন পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টির সাথে তুলনা করা যায়। যেমন ধরুন, আপনার ফোনের জন্য কোম্পানি আপনাকে ১ বছরের ওয়ারেন্টি দিয়েছে , আপনি এই ১ বছরে যেকোন সমস্যায় তাদের কাছে গিয়ে ফ্রি সুবিধা নিতে পারবেন কোন সমস্যার জন্য। কিন্তু সেসব সুবিধা পাওার জন্য আবার কিছু বিধি-নিষেধ আছে ‘টার্মস এন্ড কন্ডিশনস’ নামে, সেসব আপনাকে জানায়নি। ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি সুবিধা নিতে গিয়ে দেখলেন আপনি সুবিধা পাচ্ছেন না কারণ সেসব শর্তের আওতায় আপনি পড়ছেন না।
আইনের বাইরের চেহারা জনসাধারনের চোখে ধুলাস্বরূপ একটা আচ্ছাদন তৈরী করছে যার আড়ালে বসে আইনের ভেতরের ফাঁক-ফোকরের ভিত্তিতে শাসকশ্রেণী জনসাধারণকে শাসন-শোষন করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বললে বলা যেতে পারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ কিংবা ভূমি আইন ২০২০(খসড়া)- এর কথা বলা যেতে পারে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটা মূলত ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের উত্তরসূরী। তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশেষভাবে বিতর্কিত ৫৭ ধারাটি আবার এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিয়ে আসা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যে আইনের বিরুদ্ধে একটা যৌক্তিক প্রতিবাদ গড়ে উঠেছে সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুনরায় ৫৭ ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আইন
বাংলাদেশেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারাতে ‘অপরাধ ও দন্ড’ নিয়ে বলা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সরকারের গোপনীয়তা ভঙ্গ করা, মুক্তিযুদ্ধ ও তার চেতনা বিরুদ্ধ অপরাধ ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও সুনির্দিষ্ট করা বা সাধারণভাবেও সংজ্ঞায়িত করা নাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি কিংবা কোনটাকে অনুভূতিতে আঘাত বলা হবে অথবা মানহানিকর আর সমালোচনার মধ্যে তফাৎ কি। তারমানে আপনার মতামত, চিন্তা, ব্যাক্তি স্বাধীনতা আইনপ্রনেতাদের বা সরকারের মনোঃপুত না হলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা নিশ্চিত এই আইনের অধীনে। এই প্রণয়নের পর এখন আর কোন সাংবাদিকেরও স্বাধীনতা নেই কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোন অপরাধ, অনিয়ম কিংবা দূর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান চালানো। এখন কেউ অনুমতি না নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করলে সেটা হবে ‘বেআইনি’।সদাচারি আইনের ৩২ ধারায় এই স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। তার মানে এই না যে এই স্বাধীনতা আগে ছিল! ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনেই তা খালাস করে দেয়া হয়েছে। এই ধারাগুলোর ২০ টির মধ্যে ১৪টি অজামিনযোগ্য। তার মানে কারো বিরুদ্ধে একবার মামলা হলে তার আর নিস্তার নাই, সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার, সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে গিয়ে পূর্বের মামলায় গ্রেফতার দেখানো বা আগে গ্রেফতার পরে মামলা করা হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে কোন দাগী আসামি হয়তো ১০ বছর ধরে সংসদে বসে আছে, পুলিশের সাথে জরুরী মিটিং করছে, দলীয় মিছিল মিটিং করছে কিন্তু পুলিশ তাকে খুজেই পাচ্ছে না দশক ধরে কিন্তু সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হোক না হোক আইনশৃঙ্গখলা বাহিনীর কব্জায় সবসময়ই।
২০১৬ সাল পর্যন্ত ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলার ৯৪ শতাংশই হয়েছে ৫৭ ধারায়। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৬৬ শতাংশ মামলারই সব আসামি খালাস পেয়েছেন। তার মানে, মাত্র ৩৪ শতাংশ মামলা প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত পর্যায়েই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে ১৩ শতাংশ মামলা। পুলিশ সেগুলোর বিষয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা না পেয়ে গত তিন বছরে ৪৬টি মামলায় পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। (প্রথম আলো, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬)
২০১৮ সালে সরাসরি মতপ্রকাশের কারণে ৫৭ ধারায় মামলা হয় ৩৭টি এবং নতুন আইনে হয় ৩৪টি; ২০১৯ সালে নতুন আইনে ৬৩টি। (আলী রীয়াজ, দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন,আগস্ট,২০২০) জানুয়ারি – জুন, ২০২০ পর্যন্ত এই আইনে মামলা হয়েছে ১১১টি, অভিযুক্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২০৫ জন, আটক হয়েছেন ১১১ জন। (আর্টিকেল-১৯) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এখন প্রতিদিন গড়ে তিনটি করে মামলা হচ্ছে।(প্রথম আলো, ২৬ জুন, ২০২০)
এই অবস্থা যে শুধু বাংলাদেশের তা না। কিছুদিন আগেই সৌদি প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমানের সমালোচনার জন্যই প্রখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে নির্মমভাবে হত্যার স্বীকার হতে হয়। তুরস্কের সৌদি দুতাবাসের ভেতরে তাকে কয়েক টুকরো করে হত্যা করা হয়। ভারত কাশ্মীরে স্বায়ত্বশাসনের সুনির্দিষ্ট বিধান বিলুপ্ত করে দিয়েছে গত বছর। সেখানে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট ,মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বিহারে এক দলিত মেয়ে ধর্ষনের স্বীকার হলে বিজেপি সরকার সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, বিজেপি সেই ধর্ষনের সকল আলামত নষ্ট করে দেয় শুধু নিজের দলকে বাঁচানোর জন্য। দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনকে খন্ড বিখন্ড করছে জোর-জবরদস্তি করে, ফিলিস্তিনিরা আজ নিজভূমে পরবাসী হয়ে আছে। আমেরিকা আইন করছে তারা কোন দেশকে লুটপাট করবে সন্ত্রাস দমনের দোহাই দিয়ে ন্যাটোর সহযোগিতায়। ফ্রান্সে ইমানুয়েলের ‘সেক্যুলার’ সরকার ইসলাম অবমাননাকে বাকস্বাধীনতা বলে সমর্থন করছে আবার নিজের সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনাকে মানহানিকর বলে প্রতিবাদ করছে, ‘আইনের’ আওতায় নিয়ে আসছে। একটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে কিভাবে একটা সরকার বা একটা গোষ্ঠি ব্যবহার করছে জনসাধারণের বিরুদ্ধে শাসনের নামে শোষনের মাধ্যমে তা খুব সহজেই অনুমেয়।
আন্তর্জাতিক আইন
যদি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চিন্তা করি তাহলে কমপক্ষে আন্তর্জাতিক নদী সংক্রান্ত আইন গুলোর কার্যকরিতার কি বেহাল দশা, দানব রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক সেগুলোর কি অপব্যবহার কিংবা ইয়েমেন, কিউবা, ইরান, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলার এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়ার কি ভূমিকা সেগুলো দেখলেই বোঝা যায় আইনের বর্তমান হাল হকিকত।
আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ি নদী তীরবর্তী প্রত্যেকটি দেশের ন্যায্য অধিকার আছে সেই নদীতে। উজানের দেশ এমন কিছুই করতে পারবেনা যাতে ভাটির দেশগুলো তার প্রাপ্য পানি থেকে বঞ্চিত হয়।বাধটার সুফল ইথিওপিয়ার জন্য খুবই সুখকর হলেও ভাটির দেশগুলোর জন্য তা দুর্বিসহ।
কিন্তু ইথিওপিয়া সেটার তোয়াক্কা না করেই এতো বিশাল একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যেটা নিঃসন্দেহে ভাটির দেশগুলোকে ক্ষুণ্ন করছে। তারা আফ্রিকার সবচেয়ে ব্য্যবহুল ও বৃহৎ বাঁধ নির্মান করছে যেটাকে তারা নাম দিয়েছে গ্রান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ বাঁধ । নীলনদের এই বাঁধ নিয়ে যে টানাপোড়েনের শুরু হয়েছে আফ্রিকায় তাতে করে সংঘাত অনিবার্য্য বলেই মনে হচ্ছে।
খুবই খারাপ অবস্থা এটা, এভাবে মিশর চলার ক্ষমতা নেই। এদিকে মিশরের উজানে নীলনদে ইথিওপিয়ার নির্মিত বাঁধ প্রসঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন নীল নদের বাঁধকে মিশর উড়িয়ে দেবে।
১৪৫ মিটার উঁচু আর প্রায় দুই কিলোমিটার(১৭৮০ মিটার) লম্বায় এই বাঁধ নির্মান হচ্ছে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার খরচে। হাইড্রোপাওয়ারের এই বাঁধ থেকে পুরো ইথিওপিয়ার বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর পরও সুদান, মিশরে রপ্তানি করতে পারবে। ২০১১ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে এখনও চলছে। ২০২০-১০২২ সালের মধ্যে এটা চালু হওয়ার কথা। ঠিক এমনি অবস্থা বাংলাদেশ- ভারতে বহমান নদীগুলোর ক্ষেত্রে। প্রায় প্রত্যেকটা নদীতেই ভারত অন্যায় ভাবে বাঁধ নির্মান করেছে। ফলে বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ ভাবে দূর্বিসহ। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে মরুকরণ শুরু হয়ে গেছে। ভারত মুখি নীতি কিংবা নতজানু পররাষ্ট্র নীতিই বাংলাদেশের এই অবস্থার জন্য দায়ী।
শেষের কথা
আইনের পেছনে অনেক জ্ঞানী, অনেক সমাজ বিজ্ঞানী সময় দিয়েছেন আইনকে প্রতিনিয়ত উন্নত করেছেন তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে। এখনো চলছে এই চর্চা তবে সেটা হয়ত তত্বীয় বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। বাস্তবিক অর্থে এই তত্বীয় আইনের ব্যবহার বরাবরই প্রতিনিয়ত অধঃপতনের দিকেই অবনমিত হচ্ছে। যারা ক্ষমতাসীন, ক্ষমতাবান,ক্ষমতালোভী তারা দিনকে দিন তত্বীয় আইনকে নতুন করে মনের মাধুরী মিশিয়ে কাস্টোমাইজ বা রুপান্তর কর নতুন নতুন আইনের রূপ দিচ্ছেন। যারা ক্ষমতাবান তারা আইন করছে, তারা বাদে আর কেউ পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবেনা। আবার কেউ আইন করছে যুগ যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকার জন্য, কেউ জনসাধারণের সাংবিধানিক ভোটাধিকার অঘোষিত ভাবে হরণ করছে। এইতো আইন, আইন বলতে এর বাইরে আর কিছু বোঝাচ্ছে না এই শতাব্দীতে এসে।