ইতিহাসের পাতা উল্টালে ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় দেখি। তা হলো ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, যা বাঙালী জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক ঘটনা। তৎকালীন পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষিপ্ত জনগণ পাকিস্তানীদের অপশাসনের জবাব দেয় এই নির্বাচনে।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ঘটনা ঘটনা ঘটে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট এবং ১৫ আগস্ট ‘ভারত বিভক্তিকরণ’ আইনের মাধ্যমে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আর রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সেসময় ভৌগলিকভাবে ২ অঞ্চলে বিভক্ত ছিল, পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান। যদিও এই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে পূর্ব বাংলার মানুষের অপরিসীম অবদান ছিল তবুও এর পরিবর্তে তারা নিগৃহীতই হয়েছে। তৎকালীন পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক শাসন নীতি আর যাইহোক, জনবান্ধব ছিল না।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার অবদান অনেক বেশি হওয়া সত্বেও সেই অর্থের সিংহভাগ ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে। এছাড়াও তারা সীমাহীন শোষণ ও সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে।  অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, মৌলিক চাহিদা সব দিক দিয়েই পূর্ব বাংলার জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা অত্যাচারিত, নির্যাতিত ও শোষিত হতে থাকে। শাসকদের আচরণে একসময় তিক্ত, ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পূর্ব বাংলার জনগণ।

এক পর্যায়ে দেশ ভাগের সাত বছর পর ১৯৫৪ সালে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক ঘটনা ঘটে। ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে মানুষ আশার আলো দেখতে শুরু করে। শাসকের সকল অন্যায়-অনাচারের বাঙালী জনগণ সোচ্চার হয়ে ওঠে। সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার হতে হতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন প্রতিবাদের দামামা বেজে ওঠে। আর এই  প্রতিবাদের প্রতিরুপ দেখা যায় ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগকে সম্পূর্ণরুপে পরাজিত করে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে যুক্তফ্রন্ট। এই নির্বাচনের ফলাফল যেন আব্রাহাম লিংকনের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিফলিত করে যে, ‘বুলেটের চেয়ে ব্যালটই শক্তিশালী’।

যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি

 ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্টে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি   অন্যায়-অবিচারে মেতে উঠে। মুসলিম লীগ সরকারের স্বৈরাচারমূলক নীতি বাঙালিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করে বিশেষ করে ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা জারি করা এবং পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেকের মৃত্যু অন্যতম কারণ। সর্বপরি বলা যায়, পূর্বের অনেক ঘটনা প্রবাহের ফল ১৯৫৪ সালে সংঘটিত প্রাদেশিক নির্বাচন ।

১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মলাভ করার পর Provincial Legislative Assembly Act, 1947 নামে একটি আইন পাশ করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে নির্বাচিত অবিভক্ত বাংলার জনপ্রতিনিধিগণই পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মনোনিত হন। এই আইনে ঘোষণা করা হয় যে, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হবে ১৯৫৩ সালে। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকার বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করলে বিভিন্ন অজুহাতে The East Bengal Legislative Assembly Act, 1953 নামে একটি আইন পাশ করা হয়। পাকিস্তানি সরকার ঘোষণা করে যে, ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তানে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে।

পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্ম লাভ করার পর থেকেই পূর্ব বাংলার জনগণের উপর বিভিন্ন শোষণ শুরু হয়। The Pakistan Provincial Constitution Order, 1948 ঘোষণা করে প্রদেশের উপর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ আরো বৃদ্ধি করা হয়। আবার ১৯৪৯ সালের Public & Representative Offices Act এর অধীনে আগে থেকেই মন্ত্রীদের সকল কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছিলেন বিচারপতি। আর বিচারপতিকে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছিলেন গভর্ণর জেনারেল।

What is America’s Blackwater? How does it terrorize the World?

বাংলার উপর থেকে এসকল অবিচার-শোষণের অবসান ঘটানো এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সর্বপ্রথম যুবলীগ একটি মোর্চা গঠনের চেষ্টা করে। ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে একটি জোট গঠনের কথা বলা হয়। আওয়ামী লীগের এই প্রস্তাবে,

  • কৃষক প্রজা পার্টি
  • নেজামে ইসলামী
  • খিলাফতে রব্বানী
  • যুবলীগ
  • গণতন্ত্রী দল
  • কমিউনিস্ট পার্টিসহ প্রভৃতি দল জোট গঠনে আগ্রহী হয়।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে এই দলগুলো জোট গঠনের আহবানে সাড়া দিলেও সেসময় জোট গঠন হয়ে ওঠেনি।

যুক্তফ্রন্ট গঠন

১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর জোট গঠনের গুরুত্ব অনুধাবণ করে নতুন করে দলগুলো আলোচনা শুরু করে। বাংলার নিপীড়িত জনগণের অধিকার রক্ষার্থে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য পূর্ব বাংলার যেসব রাজনৈতিক বিরোধী দল আছে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মাওলানা ভাসানী, শের-এ-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। তাঁদের নেতৃত্বে অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৪ দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন একটি জোট গঠন করা হয়। এটিই যুক্তফ্রন্ট নামে পরিচিত। যুক্তফ্রন্টের দলগুলো হলোঃ

  • মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ;
  • শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে কৃষক প্রজা পার্টি;
  • মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলামী;
  • হাজী মোহাম্মদ দানেশ এবং মাহমুদ আলি সিলেটির নেতৃত্বে বামপন্থী গণতন্ত্রী দল ও
  • পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল।

১৯৫৮ সালে ইরাকের সামরিক বিপ্লবের পটভূমি

যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা কর্মসূচী

১৯৫৪ সালের মার্চের প্রাদেশিক নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট ২১টি প্রতিশ্রুতি সম্বলিত একটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। এসব দাবি উপস্থাপন করেন এ. কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, হাজী দানেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২১টি প্রতিশ্রুতির এই নির্বাচনী ইশতেহারকে একুশ দফা কর্মসূচী নামে পরিচিত। এই একুশ দফা কর্মসূচীর পক্ষে বাংলার আপামর জনসাধারণ ও ভোটারগণ অকুন্ঠ সমর্থণ জানান। এই দফাগুলো নিম্নরূপঃ

  • বাংলা ভাষা হবে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা। 
  • ক্ষতিপূরণ ছাড়া যে কোন প্রকারের জমিদারী প্রথার বিলুপ্তিকরণ। উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বন্টন এবং খাজনার পরিমাণ হ্রাস করা। 
  • পাট শিল্পকে জাতীয়করণ এবং পাটের উপযুক্ত ও ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা।
  • কৃষির উন্নয়নকল্পে সমবায়, শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুটির শিল্প ও শ্রমঘন শিল্পের উন্নতি সাধন করা। 
  • লবণ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সমুদ্র উপকূলে লবণ কারখানা প্রতিষ্ঠাকরণ এবং মধ্যস্বত্ব ভোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। বিশেষ করে শিল্প শ্রমিক ও কারিগরিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। 
  • বন্যা ও দুর্ভিক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ করার জন্য খাল খনন করতে হবে । 
  • পূর্ব বাংলাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে শিল্পসমৃদ্ধ করতে হবে এবং  শিল্প শ্রমিকদের আর্থিক ও সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। 
  • দেশের সর্বত্রই প্রাথমিক ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করা এবং শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত বেতন ও ভাতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। 
  • শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবধান দূর করা এবং মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসকরণ ও মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রবর্তন করা। 
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কালাকানুন বাতিল করে এটিকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিতকরণ। ছাত্রদের জন্য সহজ লক্ষ্যে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা। 
  • প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন এবং উচ্চ ও নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারিদের বেতনে সমতা আনয়ন এবং যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীগণ এক হাজার টাকা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তগ্রহণ। 
  • সকল প্রকার ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা। এ উদ্দেশ্যে ১৯৪০ সালের পর থেকে সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব গ্রহণ। বিধিমতে শাস্তির বিধানকরণ। 
  • বিভিন্ন অর্ডিন্যান্স ও জননিরাপত্তা আইনে আটককৃত সকল বন্দীদের মুক্তি। সংবাদপত্র, সভা-সমিতির অধিকার প্রতিষ্ঠাকরণ। 
  • বিচারকার্য সুষ্ঠুরূপে সম্পাদনের জন্য বিচার ব্যবস্থাকে প্রশাসন থেকে পৃথক করা। 
  • যুক্তফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রির বর্ধমান ভবনকে প্রথমে ছাত্রাবাস ও পরে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগারে পরিণত করা। 
  • বাংলা ভাষার সংগ্রামে শহীদের উদ্দেশ্যে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তপরিবারবর্গের ক্ষতিপূরণ দান। 
  • ২১ ফেব্রয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন এবং সরকারি ছুটির দিন বলে ঘোষণা করা। 
  • লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্ব প্রদান। দেশ রক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে নিয়ে আসা। স্থল বাহিনীর হেড কোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে এবং নৌ-বাহিনীর হেড কোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন করা। 
  • যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা কোন কারণে মন্ত্রিসভা বা আইনসভার কার্যকাল বাড়াবে না। আইনসভার মেয়াদ শেষের ৬ মাস আগে মন্ত্রিসভা পদত্যাগের মাধ্যমে নির্বাচনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতাকরণ। 
  • আইনসভার কোন সদস্যপদ শূন্য হলে তিন মাসের মধ্যে উপ-নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী পর পর তিনটি উপ-নির্বাচনে পরাজিত হলে মন্ত্রিসভা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। 

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে এই একুশ দফা কর্মসূচি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। জনগণ যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে।

Is Modi scared of India’s textbook history?

১৯৫৪ সালের নির্বাচন

পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৪ সালের মার্চের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচন, ১৯৫৪ বা পূর্ববঙ্গ আইনসভা নির্বাচন, ১৯৫৪ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে এই প্রাদেশিক এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দী প্রধান দুটি দল যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা আর মুসলিম লীগের প্রতীক ছিল হ্যারিকেন। ১৯৫৪ সালের এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ব্যাপক গুরুত্বের কারণে এ নির্বাচনকে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনও বলা হয়ে থাকে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্টের নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী জনসংযোগে নেমে পড়েন। শের-এ বাংলা এ.কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানীর ন্যায় জনপ্রিয় নেতৃত্ব পূর্ব বাংলায় নির্বাচনী সফরে নামেন। তাঁরা জনগণের সামনে মুসলিম লীগের ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন। যুক্তফ্রন্টের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। যুক্তফ্রন্টের নেতাগণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েও নির্বাচনের প্রচারণা চালান। তারা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য ছাত্রদের আত্মাহুতি এবং লবণ, চাল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ক্রমবর্ধমান মূল্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে আনেন।  

মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রসমূহ এবং ইরানের তেল শিল্প জাতীয়করণে ডঃ মোসাদ্দেকের ভূমিকা

অল্প সময়ের মধ্যেই যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচির পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। এর সাথে সাথে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বহু নেতাকর্মীর ধরপাকড়ে জনসাধারণ মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ব বাংলার শ্রমিক কৃষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীসহ সকলে যুক্তফ্রন্টের প্রতি সমর্থন এবং মুসলিম লীগকে পরাজিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। যার দৃষ্টান্ত নির্বাচনী ফলাফলে দৃশ্যমান হয়।

নির্বাচনের ফলাফল

১৯৫৪ সালের মার্চের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের বা প্রাদেশিক নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১,৯৭,৪৮,৫৬৮ জন। তাদের মধ্যে ৭৩,৪৪,২১৬ জন ভোটার (৩৭.১৯%) ভোট দেন। তবে এই নির্বাচনে মুসলিম আসন গুলোতে যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।

পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক নির্বাচনমুসলিম আসনঅমুসলিম আসনমোট আসন
আসন২৩৭৭২৩০৯
যুক্তফ্রন্ট পায়২২৩১৩২২৩

১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম আসন গুলোর মধ্যে যুক্তফ্রন্ট পায় ২২৮ টি। যুক্তফ্রন্টের ২২৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ পায় ১৪৩টি আসন, কৃষক শ্রমিক পার্টি ৪৮, নেজামে ইসলাম ২২, গণতন্ত্রী দল ১৩, এবং খেলাফতে রববানী পার্টি পায় ২টি আসন। অন্যদিকে এ নির্বাচনে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ৭২টি আসন সংরক্ষিত ছিল। ৭২ টি সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অমুসলিম আসনে কংগ্রেস পায় ২৫ টি, ও তফসীলী ফেডারেশন পায় ২৭ টি আসন। অমুসলিম আসনগুলোতে যুক্তফ্রন্ট পিছিয়ে পড়ে। অমুসলিম আসন গুলোর মধ্যে যুক্ত্রফ্রন্ট পায় মাত্র ১৩টি।

১৯৫৪ সালের নির্বাচন,
যুক্তফ্রন্ট আইন পরিষদের মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২৩টি আসন লাভ করে। [চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়]

১৯৫৪ সালের এই প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে ও শেরে বাংলা একে ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। এই নির্বাচনে গোপালগঞ্জ আসন থেকে বিজয়ী হন শেখ মুজিব। তাঁকে তখন কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রাদেশিক সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ও গভর্নরের শাসন চালু করে।

How Sikkim became a part of India?

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের গুরুত্ব

১৯৫৪ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নিম্নে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হলোঃ

  • ঐক্যবদ্ধ জনমত সৃষ্টিঃ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করার ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্য নীতির বিরোধিতা করার সুযোগ পায়।
  • বাঙালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরপরই ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে সর্বপ্রথম বাঙালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। আর এই পথ ধরেই বাঙালীরা স্বাধীন – সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
  • রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিঃ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ একচেটিয়া অধিকার ভোগ করে অসছিল। কিন্তু ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় লাভের পর থেকেই পূর্ব বাংলার জনগণ রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করে।
  • স্বৈরশাসনের অবসানঃ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে মুসলিম লীগ নিজেদের খুশিমত অনেকটা স্বৈরাচারীভাবে শাসন চালাত। কিন্তু এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের ফলে মুসলিম লীগের শাসনের অবসান ঘটে।
  • মুসলিম লীগের ভরাডুবিঃ মুসলিম লীগের ভারাডুবির মধ্য দিয়ে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের তাৎপর্য উপলদ্ধি করা যায়। গণপরিষদের মুসলিম লীগ দলীয় বাঙালি সদস্যরা আর তাদের প্রদেশের সত্যিকারের প্রতিনিধি নন বলে প্রমাণিত হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে এ দলের ভরাডুবি হয়। 
  • প্রাণবন্ত গণপরিষদঃ এ নির্বাচনে বিজয়ের ফলেই যুক্তফ্রন্ট সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করতে চায়।এছাড়াও পূর্ববর্তী গণপরিষদ ভেঙ্গে নতুনভাবে গণপরিষদ গঠনের দাবি জানায়। এর ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট সমর্থিত সদস্যরা গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়।
  • বিরোধী দলের আবির্ভাবঃ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয় লাভ করার ফলে মুসলিম লীগের একচেটিয়া কর্তৃত্বের অবসান ঘটে এবং তাদের যোগ্য বিরোধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগের আবির্ভাব ঘটে।
113943063 111196104 11
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে নির্বাচনে জেতার পর শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ নিচ্ছেন। তাঁকে শপথ পড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক। বিবিসি

Is the USA a Leading Terrorist State?

পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের এসব দিক ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক আছেঃ

  • ধর্ম নিরপেক্ষতার উত্থান;
  • পূর্ব বাংলার শক্তি বৃদ্ধি;
  • অধিকার সচেতনতা সৃষ্টি;
  • যোগ্য নেতার আবির্ভাব;
  • রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি ইত্যাদি।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার জনগণের দীর্ঘদিনের দাবী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রথমবারের মতো প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষভোটে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তফ্রন্ট ২১ দফার ভিত্তিতে এই নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে তাদের বিজয় ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। কিন্তু পরবর্তীকালে মুসলিম লীগ সরকারের বিদ্বেষপৃর্ণ মনোভাব এবং  যুক্তফ্রন্টের অভ্যন্তরীণ কারণে ১৯৫৬ সালের বেশি এই সরকার টিকে থাকতে পারেনি।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণঃ

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয় লাভ করে এবং মুসলিম লীগ চরম শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। মোটাদাগে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণগুলো নিম্নরূপে চিহ্নিত করা যায়ঃ

  • বাংলা ভাষার দাবির প্রতি অবিচার ও ভাষা আন্দোলনে দমন নীতি ছিল মুসলিম লীগের পরাজয়ের অন্যতম কারণ। মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষার দাবিকে গ্রাহ্য করে নি। তাই ৫৪’র নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ যুক্তফ্রন্টকে ম্যান্ডেট দেয়। 
  • পূর্ব বাংলার জনগণের উপর শোষণ, অত্যাচার ও বৈষম্যমূলক মনোভাব।
  • লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব বাংলাকে স্বায়ত্বশাসন না দেওয়া।
  • সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা।
  • মুসলিম লীগের প্রতি ছাত্র ও তরুণসহ সকল শ্রেণীর লোকের আনীহা।
  • মুসলিম লীগের পর্যাপ্ত যোগ্য নেতা ও কর্মীর অভাব।
  • মুসলিম লীগের নেতাদের বেপরোয়া মনোভাব।
  • মুসলিম লীগের আদর্শগত কোন্দল। মুসলিম লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অন্তর্দ্বদ্বের কারণে পূর্ব বাংলায় এ দলের সাংগঠনিক তৎপরতা দুর্বল হয়ে পড়ে। 
  • পশ্চিম পাকিস্তানের আমলাদের দৌরাত্ব।
  • নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি অন্যতম একটি কারণ। ৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ব্যাপক অর্থনৈতিক অবনতি ঘটে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে মুসলিম লীগ এ ব্যর্থতা রোধে ব্যর্থ হয়। ফলে নির্বাচনী রায় তাদের প্রতিকূলে এবং যুক্তফ্রন্টের অনুকূলে চলে যায়।
  • নির্বাচনে বিলম্ব মুসলিম লীগের পরাজয়ের জন্য দায়ী। এ নির্বাচনে ১৯৫১ সালে হবার কথা ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ এ নির্বাচনে অহেতুক বিলম্ব ঘটায়। যা তাদের ব্যর্থতা ডেকে আনে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও এর সীমারেখা

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ চলতে থাকে। তখন থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন চলতে থাকলেও ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ী করে জনগণ তার রায় জানিয়ে দেয়। এ জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক আচরণের জবাব দেওয়া। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ও মুসলিম লীগের পরাজয়ের মাধ্যমে এই উদ্দেশ্য সফল হয় এবং পরবর্তী স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এবং চুড়ান্তভাবে ১৯৭১ সালে সুদীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিনিময়ে একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বাংলাদেশে হিসেবে বিশ্বের বুকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।

আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Shanjida Shima is a graduate student at the University of Rajshahi's Department of Islamic History and Culture. She writes from her college days, with a focus on history and literature. She contributes to MaroonPaper on a regular basis. Her articles can be found on MaroonPaper.

One Comment

  1. […] লীগের জন্ম, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন, এবং ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের শাসনের […]

Leave A Comment

সম্পর্কিত আর্টিকেল

কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন

এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…

লেখক হিসেবে আমাদের সাথে যোগ দিন

সাম্প্রতিক আর্টিকেল

  • শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?

শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?

পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ও সীমান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।

  • আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?

আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?

আদালত হলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সেই বৈধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি, অপরাধের বিচার ও আইনি অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

  • ইক্যুইটির ম্যাক্সিম

ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) কী? ইক্যুইটির ম্যাক্সিম সমূহ কী কী?

ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) হল সাধারণ আইন (Common Law) এর শর্তের বাইরে গিয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা

  • আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।

আব্রাহাম চুক্তিঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, এবং ফিলিস্তিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা

আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।

  • পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয়

পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডঃ ফিলিস্তিনের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের বুলি!

পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয় ।