মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আজ যে উত্তেজনায় ভরা, তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ফিলিস্তিনি সংকট এবং আব্রাহাম চুক্তি নামের এক পরিবর্তনশীল কূটনৈতিক প্যাকেজ। ২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদান আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগকে মধ্যপ্রাচ্যে “নতুন শান্তির সূচনা” বলে প্রচার করে। তাদের প্রস্তাব ছিল, ইরান ও অন্যান্য নিরাপত্তা উদ্বেগের বিরুদ্ধে মিত্রতা গড়ে তোলা এবং বিপুল অর্থনৈতিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের দ্বার খুলে দেওয়া। কিন্তু এই সৌহার্দ্যসূচক ছবি গাজার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের ক্রমাগত দুর্দশার প্রেক্ষাপটে কতটা টেকে? এই আর্টিকেলে আমরা আব্রাহাম চুক্তির সুফল, সমালোচনামূলক দিক ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করব।
আব্রাহাম চুক্তির জন্ম ও উদ্দেশ্য
আব্রাহাম চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল কিছু আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা, অর্থাৎ কূটনৈতিক স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। চুক্তির পেছনে রয়েছে তিনটি বড় প্রেরণা:
(১) ইরান বিরোধী সামরিক ও গোয়েন্দা মিত্রতা গড়ে তোলা,
(২) মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে ইসরায়েলি–আরব অংশীদারত্ব বৃদ্ধি করা এবং
(৩) দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিনি প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে পূর্ববর্তী শান্তি উদ্যোগের শূন্যস্থান পূরণ করা।
যুক্তরাষ্ট্র তখন এটির মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির সফলতা ঘোষণা করেছিল।
চুক্তির ফলে ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে ভিসা-মুক্ত যাতায়াত, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিনিময় শুরু হয়। আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ হাজার ইসরায়েলি পর্যটক আমিরাতে সফর করেন। দুবাই ও তেল আবিবে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়; ইসরায়েলি প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলো দুবাই থেকে বিনিয়োগ পেতে শুরু করে এবং দুই দেশ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। একই সময়ে মরক্কো ও সুদান এই উদ্যোগে যোগ দেয় এবং প্রাথমিকভাবে পশ্চিমের দেশগুলো এটিকে “ঐতিহাসিক বিরতী” হিসেবে উদযাপন করে।
অর্থনৈতিক সুফল ও কৌশলগত লাভ
চুক্তির সমর্থকদের মতে, আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের জন্য এটি একটি নতুন বাজার; দেশটি আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে যা কৃষি, প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সের প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে যে ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমিরাত ২০২৫ সালে ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্যবসায়ী অংশীদার হয়ে ওঠে। পাশাপাশি রিয়াদ ও তেল আবিবের মধ্যে উন্মুক্ত বাণিজ্য সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছিল, যদিও সেটি গাজা যুদ্ধে স্থগিত হয়ে যায়।
পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ও বৃদ্ধি পায়। উপসাগরীয় দেশগুলোতে ইসরায়েলি পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি স্থানীয় বাজারে তরলতা বাড়ায়, এবং দুবাই–তেল আবিব রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ার ফলে মানুষ-থেকে-মানুষ সংযোগ সহজ হয়। গবেষকেরা বলছেন, এই সংযোগগুলো “উষ্ণ শান্তি” সৃষ্টি করতে পারে, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে শেখার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
কৌশলগত দিক থেকে, আব্রাহাম চুক্তি ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব কমাতে একটি প্রতিরক্ষা জোট হিসেবে কাজ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল আশা করেন যে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতায় ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও মিলিশিয়াদের তৎপরতা মোকাবেলা করা সহজ হবে। এ কারণে চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোতে পুনঃবিন্যাসের সুযোগ পায়; যা অনেকের চোখে একটি “ইন্দো-প্যাসিফিক”-এর মতো মডেল।
যুদ্ধ ও বিরোধ: গাজার রক্তক্ষয়ের পরের চিত্র
তবে আকাশ-চুম্বী আশার মধ্যে অক্টোবরে ২০২৩ সালের হামাসের হামলা এবং পরবর্তী ইসরায়েলি অভিযানে দৃশ্যপট বদলে যায়। গাজায় হামাসের হঠাৎ হামলায় কয়েকদিনেই কয়েকশো ইসরায়েলি নিহত হলে ইসরায়েল বিস্তৃত আক্রমণ শুরু করে; এতে সত্তর হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয় এবং গাজা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। চুক্তির সমর্থকরা বলেছিলেন যে এই আরব-ইসরায়েলি সমঝোতা ফিলিস্তিনি সমস্যা উপেক্ষা করলেও দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির পথে চলবে, কিন্তু বাস্তবে গাজার যুদ্ধ এ ধারণা ভেঙে দেয়।
কার্নেগি এন্ডাওমেন্টের গবেষক আলেকজান্ড্রে ক্যাটেব লিখেছেন, গাজার যুদ্ধের পরে আরব জনমত ক্রমেই ইসরায়েল-বিরোধী হয়ে উঠেছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন সরকার নিজেদের কূটনৈতিক উদ্যোগ সীমিত রেখেছে। চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেনি, কিন্তু তারা অধিকাংশ জনসমর্থন হারিয়েছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের পর্যায়ে যে উষ্ণতা তৈরি হয়েছিল, গাজার বোমা বর্ষণের ফলে তা পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেছে; এখন সম্পর্ক অনেকটাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক ডেভিড শ্যাঙ্কার জানান, গাজার যুদ্ধ দুই বছর অতিক্রম করলেও পাঁচটি আরব-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি টিকে আছে; তবে আরব রাজধানীগুলো ইসরায়েলের প্রতি “রেড লাইন” টানছে। মরক্কো, বাহরাইন ও আমিরাত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে ইসরায়েল যদি পশ্চিম তীরের অংশ একতরফাভাবে দখল বা গাজা থেকে গণউচ্ছেদ চালু করে, তবে তারা সম্পর্ক পুনঃমূল্যায়ন করবে। আমিরাতের একজন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “গাজা থেকে মানুষের স্থানান্তর কিংবা পশ্চিম তীর সংযুক্ত করা আমাদের জন্য কল্পনাতীত রেড লাইন”।
জর্ডান ও মিশরের মতো পুরনো শান্তি সঙ্গীরাও ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান শক্ত করেছে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যায়মান সাফাদি আরব লীগে বলেছেন, “ফিলিস্তিনিদের জন্মভূমি থেকে উৎখাত করা হলে আমরা প্রতিরোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নেব”। মিশরও গাজা থেকে শরণার্থীদের সীনার মরুভূমিতে স্থানান্তর করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে। এসব ঘটনায় বোঝা যায়, যুদ্ধ পরিস্থিতি চুক্তির স্থিতি ভেঙে দিয়েছে এবং শান্তি বর্ধনের পরিবর্তে ‘শীতল শান্তি’র দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সমালোচনার উৎস: ব্যবসা না শান্তি?
প্যালেস্টাইনি কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মতে, চুক্তিতে ফিলিস্তিনিদের কথা একেবারেই অনুপস্থিত; এতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আশা দুর্বল হয়েছে। হাউজ অব কমন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে চুক্তিটি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেনি এবং পশ্চিম তীরের দখল বন্ধের বিষয়ে কোনো শর্ত দেয়নি। উপরন্তু, প্রায়ই দেখা যায়, ইসরায়েলি অতি ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা গাজা ও পশ্চিম তীরকে “ব্রিটিশ রাজ্য” বানানোর কথা বলেন, যা আরব রাষ্ট্রগুলোকে হতাশ করে।
গাজার যুদ্ধের পর এসব সমালোচনা আরও জোরালো হয়েছে। যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও চরম ডানপন্থী সেটেলাররা ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস করেছে; এতে চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোর সামাজিক মাধ্যমগুলোতে #CancelAbrahamAccords ট্রেন্ড করে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, “শান্তি চুক্তি” যদি হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু ঠেকাতে না পারে, তবে এটি কীসের শান্তি? মেহদি হাসানের ভাষায়, এটি “শান্তি” নয়; বরং একটি গোষ্ঠীর উপর আরেক গোষ্ঠীর আধিপত্যের কৌশল।
বাস্তবতা: স্থায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতা
যদিও প্রচুর সমালোচনা আছে, বাস্তবতা হলো চুক্তিটি এখনও বাতিল হয়নি; বরং বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও টিকে আছে। রাজনীতিক ও নীতি বিশ্লেষকেরা মনে করেন যে এটি দুই স্তরে কাজ করছে: প্রথমত, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রগুলো জোটবদ্ধ হয়েছে; দ্বিতীয়ত, গণমানুষের মধ্যে এই সহযোগিতার প্রতি আস্থা কমে গেছে, ফলে সামাজিক স্তরে সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, গত দুই বছর ধরে গাজা যুদ্ধ সত্ত্বেও কোনো রাষ্ট্র চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যায়নি। অর্থনীতির চাপে এবং ইরান-ভীতি ও সন্ত্রাসের বাস্তবতার কারণে তারা সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে, একই প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে ইসরায়েল যদি গাজা থেকে গণউচ্ছেদ, পশ্চিম তীরের বিস্তার বা মসজিদুল আকসায় সহিংসতা অব্যাহত রাখে, তবে এসব রেড লাইনের কারণে চুক্তি বাতিলের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
অন্যদিকে, আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুদ্ধের ফলে আব্রাহাম চুক্তির বাড়তি সম্ভাবনা নষ্ট হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প; এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা ও সরকারের ঐক্যমত্য দরকার। সেখানে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শেষ হলে নেগেভ ফোরামকে পুনরায় সক্রিয় করতে হবে এবং ঐ অঞ্চলের পানিসম্পদ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পর্যটনের মতো খাতে বহুপাক্ষিক প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করতে হবে। এতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জনগণ সরাসরি উন্নতির স্বাদ পেলে চুক্তির বিরুদ্ধে জনমত নরম হতে পারে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও ন্যায়বিচার
গাজার যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনি সংকটের দীর্ঘ ছায়ায় দাঁড়িয়েও নীতি বিশ্লেষকেরা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ভাবছেন। অনেকেই মনে করেন, চুক্তির পরিপূর্ণ সফলতার জন্য ইসরায়েলকে দুটি মৌলিক শর্ত মানতে হবে:
- গাজা যুদ্ধ ও দখলকৃত অঞ্চলে সহিংসতা বন্ধ – আরব রাষ্ট্রগুলোর “রেড লাইন” অনুসারে, ইসরায়েল যদি গাজা থেকে জনগণকে উচ্ছেদ বা পশ্চিম তীর সংযুক্তি বন্ধ না করে, তবে তারা চুক্তি বহাল রাখতে পারবে না।
- দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি স্পষ্ট অঙ্গীকার – ইউরোপ ও আরব বিশ্ব বারবার জোর দিয়ে বলছে যে টেকসই শান্তির জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথই একমাত্র সমাধান। চুক্তিতে এ বিষয়ে প্রস্তাব না থাকায় তার স্থায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এছাড়া, নীতিনির্ধারকেরা আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে আরো বৃহত্তর সংলাপের প্রয়োজন দেখছেন। আটলান্টিক কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের শেষের পর নেগেভ ফোরামকে সম্প্রসারিত করে জর্ডান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য মুসলিম দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। নতুন সদস্য রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলির যুক্ত হওয়া ইসরায়েল-আরব সম্পর্কের কাঠামোতে বহুমাত্রিকতা আনবে এবং এই স্ট্রাকচার আরব জনমতকে কিছুটা সন্তুষ্ট করতে পারে।
বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্ব: অবস্থান
বাংলাদেশসহ বহু মুসলিম দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ; তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশের সংসদ ও সাধারণ মানুষ বরাবরই ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এবং গাজার সহিংসতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। ফলে আব্রাহাম চুক্তি বাংলাদেশের বিদেশ নীতিতে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তবে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: যদি উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, তবে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, প্রতি দেশই নিজের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে চলেছে। কিন্তু “ইসলামী ঐক্য” বা “উম্মাহ” ধারণা এখনও কার্যকর; বিশ্বের নানা প্রান্তে সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার।
মধ্যপ্রাচ্যের কেউ কেউ যুক্তি দেন, চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমের আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদী নীতির উপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রশ্ন চাপা দেয়া হলে কোনধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়নই দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আনতে পারবে না। মেহদি হাসান তার আল জাজিরা অনুষ্ঠানে বারবার বলে থাকেন, শান্তি যখন ন্যায়ের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে না, তখন তা ‘সততা’ নয় ‘ছদ্মবেশ’—একজন অপরাধীকে ক্ষমা না করে বন্ধুকে ভুলে যাওয়ার মতো।
উপসংহার: শান্তি কি সম্ভব?
আব্রাহাম চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে। এটি অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রগুলোতে নতুন অধ্যায় খুলেছে এবং ইরানবিরোধী জোট গঠনে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু গাজা যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনি সংকট দেখিয়েছে যে কোনও ধরনের অর্থনৈতিক সমঝোতা বা কৌশলগত জোটের জন্য ন্যায়বিচারকেন্দ্রিক সমাধান অপরিহার্য। সাংবাদিক মেহদি হাসানের মতে, “নিরাপত্তা চুক্তি হতে পারে, কিন্তু অপরাধ ও হত্যা চলতে থাকলে কোন চুক্তি টিকবে না।” যুদ্ধবিরতির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, দুই-রাষ্ট্র সমাধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সরকারগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।
অতএব, ফিলিস্তিনি সংকট ও আব্রাহাম চুক্তির পথচলা কেবল কূটনৈতিক ফাইল নয়; এটি মানুষের জীবন, মর্যাদা ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন। মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা যদি সত্যিকারের শান্তি চান, তবে তাদের প্রথমে যুদ্ধ ও দখল বন্ধ করতে হবে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম করতে হবে। চুক্তির সুফল তখনই গণমানুষ উপলব্ধি করতে পারবে, যখন ফিলিস্তিনের মাটি আর অস্ত্রের শব্দে কাঁপবে না এবং বাচ্চারা বোমাশেল্টারের বদলে স্কুলে যেতে পারবে।













