কি চলছে লাদাখে!
চীন-ভারত সংঘর্ষ হয়েছে যেখানে ওই জায়গাটা হলো লাদাখের গালওয়ান সীমান্ত । ১৯৯৬ সালে ভারত-চীনের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার না করতে। চীন চুক্তি মেনেছে। গোলাগুলি করেনি কিন্তু উস্কানি দেওয়া ভারতের সৈন্যগুলোকে বেদম মার মেরেছে লাঠিসোটা,রড দিয়ে।তাও আবার কাস্টোমাইজড রড- লাঠি। প্রথমে ভারত অস্বীকার করল হতাহত কেউ হয়নি। একটু পরে স্বীকার করল ৩ জন মারা গেছেন, একজন ক্যাপ্টেন সহ। কিছুক্ষণ পরে আরো ভয়ংকর খবর, ২০ জন মারা গেছেন এবং ১২০ জন ভীষণভাবে আহত। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। চীন কিছুই নিজের ক্ষতি সম্পর্কে কিছুই বলছিল না, ভারতের সেনা কর্তৃপক্ষ জানালো চীনের ৪৩ জনের হতাহতের কথা। চীন স্বীকারও করেনি, অস্বীকারও করেনি। তারা শুধু নিজের অবস্থান ডিসক্লোজ করেছে, সংঘর্ষকালীন অবস্থা ডিসক্লোজ করেনি। দুদিন বাদে আজ চীন ১০ জন সেনাকে মুক্তি দিয়ে প্রমান করল সেদিন চীনের অংশে ভারতই অনুপ্রবেশ করেছিল।
Is the USA a Leading Terrorist State?
যদিও ঘটনাটা ঘটেছিল যে, চীন ভারতীয় সৈন্যকে আটক করে নিয়ে গেছে এমনকি এখন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছে। হামলার এতোগুলো সময় বাদে গেরুয়া প্রধানমন্ত্রী মোদি নিরবতা ভেঙে দাবী করলেন “ভারতের যথাযথ জবাব দেয়ার ক্ষমতা আছে।” এবং বিবৃতি দিলেন “ ভারতের কোন জায়গা দখল করেনি চীন।” আসলে এখানে লাভটা কার হলো এই বিবৃতিতে? চীন না ভারতের ? চীন ভারতের জায়গায় দখলে থাকার পরেও যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার সমর্থকদের মন জুগিয়ে চলার জন্য চীনের দখলে থাকাটাকেও অস্বীকার করলেন তখন বস্তুত চীনের দখল টাকে জায়েজই করে দিলেন। নেপালের মত চীনও দেখা যাবে কয়েকদিন বাদে ওই জায়গাটাকে তাদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে!যদিও ইতোমধ্যে এমন একটা বিতর্কিত জায়গা ‘কালাপানি’ নিজেদের মানচিত্রে উঠিয়ে নিয়েছে সংসদে বিল পাশ করে। ভারত কিছুই করতে পারেনি।
চীনের আক্রমনাত্মক হওয়ার কারণ কি?
সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে ভারতের সাথে চীন, নেপাল আর পাকিস্তানের বেশ সাংঘর্ষিক অবস্থান বিরাজমান। আর সেসব ঘটনায় বিব্রত ভারত সরকারের প্রিতিক্রিয়া গুলো হাস্যকরভাবে অদ্ভুত! পাকিস্তানে ভারতের পাইলট আটক, ভারতের অস্বীকার, পরে পাকিস্তান মুক্তি দিয়ে দিল। আবার লাদাখে ভারতের সেনা আটক করল চীন, ভারত অস্বীকার করল, চীন ছেড়ে দিল আটককৃতদের… কিংবা ভারতে ভেতরে ঢুকে নেপালের গুলি বর্ষণ, কৃষককে আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা গুলো আমার কাছে কেন জানি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। আমার কাছে এসব ঘটনার পেছনে দুটো কারণ যৌক্তিক মনে হয়।
- আঞ্চলিক রাজনীতি
- অস্ত্র পরীক্ষার মাঠ
আঞ্চলিক রাজনীতি
এক অঞ্চলে দুই রাজা থাকতে পারেনা। যেকোন মূল্যেই হোক, সেখানে একজন মাত্রই সার্ভাইভ করতে পারবেন। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে যে গুরুত্ব সেটা অকল্পনীয়। এই গুরুত্ব দুই দেশই অনুভব করে এবং সমীহ করে। চীন এবং ভারত দু দেশই চায় এই অঞ্চলে প্রভাব রাখতে কিন্তু কে প্রভাব রাখতে পারবে সেটাই হচ্ছে মূল কথা। এ দেশ দুটিই তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোকে সাথে রাখছে বা রাখার চেষ্টা করছে বিভিন্নভাবে। কিন্তু কৌশলী যে বেশি হবে সেই এগিয়ে থাকবে। তবে শুধু কৌশল এক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার না। গেম চেঞ্জার হতে পারে কয়েকটি বিষয়। সফলতার নির্ধারক হলোঃ
- রাজনৈতিক কলাকৌশলের প্রগাঢ়তা,
- দক্ষ জনবল,
- সামরিক সক্ষমতা এবং
- মজবুত অর্থনীতি।
এই নির্ধারকগুলোকে যদি মাপকাঠি ধরে বিচার করি তাহলেই বোঝা যাবে আঞ্চলিক রাজনীতিতে রাজত্ব কে করবে, ভারত নাকি চীন। শুধু জনসংখ্যা বেশি হলে লাভ নাই, ওই জনসংখ্যার কতটুকু জনবল আছে সেটাই মুখ্য।
রাজনৈতিক কৌশল এবং দক্ষ জনবল
আয়তন এবং জনসংখ্যা দুদেশেরই বিশাল, কিন্তু এটাই সফলতার নির্ধারক নয়। রাজনীতিতে ভারত অনেক সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক একটা দেশ। সাংবিধানিক ভাবে অসাম্প্রদায়িক দেশ হলেও প্রাকটিসের ক্ষেত্রে সেটার ধারেকাছেও নাই। বিশ্বে সাম্প্রদায়িকতার জন্য ভারত অনেক এগিয়ে থাকবে। এটার প্রমাণ পাওয়া যাবে সারা বিশ্বে বিভিন্ন প্রবাসীর কর্মকান্ডে এবং সেসব দেশের গৃহীত পদক্ষেপে। আর দেশের অভ্যন্তরে অবস্থা আরো ভয়াবহ। মুসলিম হত্যা, এনআরসি, সিএবি বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সাম্প্রদায়িকতার চেহারাটা বেরিয়ে এসেছে। কিছুদিন আগেও এতোটা ভয়াবহ অবস্থা ছিল না যা বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে হয়েছে। ভারত এই অভ্যন্তরিন গোলযোগ মাথায় নিয়ে খুব কাঁচা অংক কষেছে চীনের সাথে। গালওয়ান সীমান্তে গত সংঘর্ষের কিছুদিন আগে থেকে এই দা-কুমড়া সম্পর্ক ঘনিভূত হচ্ছিল। এর আগে কখন ভারত ওই পয়েন্ট নিয়ে ভাবে নি যে সেখানে এমনটা হতে পারে।
Secular India and the Nature of its so-called Secularism
ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ১৯৯৬ সালে হওয়া চুক্তিতে ভারত ও চীন লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ঘিরে একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার না করতে সম্মত হয়েছিল। চার দশকের বেশি সময় ধরে সমইয়ে সময়ে ধ্বস্তাধ্বস্তি হলেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাবহার কখনো হয়নি। ভারত চুক্তি করে বসেছিল নিশ্চিন্তে কিন্তু চীন সেখানে বসে ছিল না। চীন বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়ে এগিয়ে রেখেছিল। ভারত গা বাঁচিয়ে চলতে চেয়েছিল, কিন্তু চীনের স্বভাবজাত সুকৌশলী আগ্রাসী মনোভাব গালওয়ান সীমান্তে অস্থিরতা সৃষ্টি করছিল। তারা ভারতকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সীমান্তে নিয়ে বেদম মার মেরেছে। আর ওই বরফে ঢাকা উঁচু উপত্যকায় আহত সৈনিকেরা ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে পাহাড় থেকে পড়ে বরফে হারিয়ে গিয়েছিল। যেন সবকিছুই ভারতের বিরুদ্ধে গিয়েছিল!

প্রায় চার ফুট লম্বা লোহার রড। তার মাথার দিকে এক থেকে দেড় ফুট অংশে সারি সারি পেরেকের মতো ধারাল কাঁটা লাগানো এই অস্ত্র দিয়ে অস্ত্র দিয়ে ভারতীয় সেনা সদস্যদের হত্যা করেছে চীনা সেনাবাহিনীর সদস্যরা।(আনন্দবাজার)
সেদিন প্রকৃত অবস্থা এমন দাড়িয়েছিল যে চীনই ভারতের অংশে ঢুকে ভারতীয় সেনাদের পিটিয়ে মেরে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল কৌশল হিসেবে। পরে তাদেরকে মুক্তি দিয়ে কৌশলী চীন বিশ্বের সামনে নিজের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখেছে। এখন পর্যন্ত গালওয়ান সীমান্তে একচুয়াল লাইন অব কন্ট্রোলে চীনের অবস্থান থাকার পরেও ভারত কিছুই করতে পারেনি হম্বিতম্বি ছাড়া। আজকেও গালওয়ান নদীতে চীনের কিছু কার্যক্রম দেখা গেছে। সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০০ মিটার উজানে চীন বুলডোজার দিয়ে পাথর ফেলে বাঁধ দিচ্ছে। সেখানে প্রায় ৫ কিলোমিটার জুড়ে চীনের ভারী যুদ্ধাস্ত্র ঘুড়ে বেরাচ্ছে আর নদীর জলপ্রবাহ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ভারতের লক্ষনীয় কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি কিংবা ভারত রক্ষণশীল হলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত বরাবরই হেরে গেছে। এমনকি নেপাল কিংবা পাকিস্তানের কাছেও বারবার পর্যুদস্ত হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ভারতের বিহার সীমান্তে নেপালি পুলিশের গুলিতে একজন কৃষক মারা যান। অভিযোগ ওঠে যে, পুলিশ ভারতের ভেতরে ঢুকে এই ঘটনা ঘটিয়েছে যদিও নেপালের যৌক্তিক প্রমানে ভারত পিছু হটে গেছে।
দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে ভারত শুধু মাত্র “বাংলাদেশের কোন পক্ষ না নেয়া বা চুপ থাকা” সমর্থণটুকু পাবে যতদিন আওয়ামিলীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। যদি কখনো সরকার পরিবর্তন হয় তখুনি হয়ত ভারত এমন “কোন পক্ষ না নেয়া বা চুপ থাকা” বাংলাদেশকে হারাবে। কিন্তু সুযোগ-সম্ভাবনা থাকার পরেও “আঞ্চলিক রাজনীতির নীতি নির্ধারণে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত দেয়ার বা প্রভাব রাখার কতটা সাহস রাখে” সেটা আরেক আলোচলার বিষয়। আমরা সেদিকে যাবোনা। আমরা এটা বলতে পারি দক্ষিন এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনার প্রভাবের কাছে ভারত এভাবে হেরে যাচ্ছে কলাকৌশলের অভাবে এবং গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছ সীমান্তবর্তী দেশগুলোর কাছে। চীন এই জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে ওদিকে নেপালকে কাছে টেনে, পাকিস্তানকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে, এবং বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সহযোগিতা প্রদান করে। গালওয়ান সীমান্তের এই গোলযোগের মধ্যেই চীন বাংলাদেশের ৯৭% রপ্তানি পন্যের ওপর শুল্ক ছাড় দিয়েছে। খুব স্বভাবতই বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকে যাবে এসব কর্মকান্ডে।
সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?
বর্তমান বৈশ্বিক গড ফাদার দেশ গুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রধান নির্ধারকগুলো একটা হলো সামরিক সক্ষমতা । সক্ষমতা বলতে এখানে অস্ত্র থাকার কথা বলছি, সেটা কেনা হোক আর নিজের উতপাদনেরই হোক না কেন। এইক্ষেত্রে চীন ভারত দু দেশই প্রতিযোগিতা করছে নিঃসন্দেহে। ভারতকে অস্ত্র কিনতে হয়, সামান্য কিছু উৎপাদন ছাড়া কিন্তু চীন! চীন নিজের সবকিছু উৎপাদন করার পরে সারাবিশ্বে অস্ত্র বিক্রেতার কাতারে অন্যতম। এমনকি ভারতেও তারা প্রচুর অস্ত্র বিক্রি করেছে। দুদেশের সেনাবাহিনীর সক্ষমতা চিন্তা করলে চীন জিতে যাবে কোন প্রতিযোগিতা ছাড়াই। অল্প কিছু ধারণা দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। চিন্তা করলে কি টিকবে।
Is the RSS a Threat to India’s Secularism?
পারমানবিক অস্ত্র আছে এমন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এ দুটো দেশ। পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং অনুযায়ী সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ তিন নাম্বারে আছে চীন আর ভারত আছে চার নাম্বারে৷ ১৩৮ টি দেশের মধ্যে পিআরডাব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লক্ষ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, ভারতের রয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য৷ তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
তুলনার বিষয় | ভারত | চীন |
পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং | ৩য় | ৪র্থ |
সক্রিয় সেনাসদস্য | ২১ লক্ষ ২৩ হাজার | ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার |
প্রতিরক্ষা বাজেট | ২৩৭০ কোটি ডলার | ৬১০ কোটি ডলার |
এয়ারক্রাফট | ৩২১০ | ২১২৩ |
যুদ্ধজাহাজ | ৭৭৭ | ২৮৫ |
যুদ্ধবিমান | ১২৩২ | ৫৩৮ |
হেলিকপ্টার | ৯১১ | ৭২২ |
ট্যাঙ্ক | ৩৫০০ | ৪২৯২ |
সাঁজোয়া যান | ৩৩০০০ | ৮৬৮৬ |
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি | ৩৮০০ | ২৩৫ |
ফিল্ড আর্টিলারি | ৩৮০০ | ৪০৬০ |
রকেট প্রজেক্টর | ২৬৫০ | ২৬৬ |
সাবমেরিন | ৭৪ | ১৬ |
বিমানবাহী জাহাজ | ২ | ১ |
ডেস্ট্রয়ার | ৩৬ | ১০ |
ফ্রিগেট | ৫২ | ১৩ |
রণতরি | ৫০ | ১৯ |
উপকূলীয় টহল | ২২০ | ১৩৯ |
বিমানবন্দর | ৫০৭ | ৩৪৭ |
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল | ২২ | ১৩ |
সামরিক সক্ষমতার এই তুলনামূলক সারনী দেখলেই বোঝা যায় সহজেই যুদ্ধক্ষেত্রে কে এগিয়ে থাকবে। এক্ষেত্রেও ভারত পিছিয়ে আছে বহুগুণে।
অর্থনীতি যুদ্ধে কে টিকবে?
অর্থনীতি একটি রাষ্ট্রের মেরুদন্ড। এটার ওপরই নির্ভর করে দেশ চলতে পারবে কি না। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই চীন এবং ভারত দুটো দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল এখাতে। আর সে অবস্থার উন্নতি কিংবা অবনতি সেটা নির্ভর করেছে দেশগুলোর নীতি এবং সেসবের এক্সিকিউশনের ওপর। ভারতের অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায় গত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনীতি চলছে এখন ভারতে।
ভারতের বিদেশ থেকে নেয়া মোট বৈদেশিক ঋনের পরিমান ৩১ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত ৫৬৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা তাদের জিডিপির প্রায় ২০% এর বেশি। এই ঋন গুলি ভারত করেছে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক (Multilateral) ও দ্বি-পাক্ষিক ( Bilateral) উৎস থেকে যার মধ্যে রয়েছে Asian Development Bank (ADB), the International Development Association (IDA), the International Bank for Reconstruction and Development (IBRD), the International Fund for Agricultural Development (IFAD) প্রভৃতি। বহুপাক্ষিক উৎস থেকে ভারতের নেয়া বৈদেশিক ঋনের পরিমান প্রায় ৬০.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া দ্বি-পাক্ষিক উৎসের ভেতর ভারত বৈদেশিক ঋন নিয়েছে জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি চীন হতেও।
গত অক্টোবর- নভেম্বর ২০১৯ থেকে পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকে যেতে যেতে এতোটাই বাজে অবস্থা যে, জিডিপি বৃদ্ধির হার ৪.৫ এ নেমে এসেছে। এছাড়া এস অ্যান্ড পি-র মতে ৩.৫ শতাংশ , ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ ৩.৬ শতাংশ আবার, আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ ২.৫ শতাংশ। এর আগে ২০১৪-১৪ অর্থবছরে ছিল ৪.৩। রিপোর্টে প্রকাশ পায় যে বর্তমান করোনা প্রকোপের জেরে চলতি অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপির হার কমে হতে পারে ২ শতাংশ! আর তেমনটা হলে এক ধাক্কায় ৩০ বছর পিছিয়ে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি। এডিব’র মতে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৪ শতাংশ হবে। অর্থনীতিবীদ রাজকৃষ্ণ এই ধরণের বৃদ্ধির হারকে তাচ্ছিল্য করে নাম দিয়েছিলেন “হিন্দু রেট অব গ্রোথ।”
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই রাজকোষ ঘাটতি হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকা। দেশটির ৩০টি বড় শহরে ১২ লাখ ৮০ হাজার তৈরি ফ্ল্যাট পড়ে আছে। কাপড় কলের মধ্যে তিনভাগের একভাগ এই বছরই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ঝাড়খণ্ডের জয় বালাজি স্টিল কোম্পানি দুইদিন হলো উৎপাদন বন্ধ করেছে। টাটা মারুতি উৎপাদন বন্ধ।জাপানের আর্থিক সেবা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নমুরার এক প্রতিবেদনে অর্থনীতির এই মন্দাবস্থার মূল কারণ হিসেবে ভোগব্যয় কমে যাওয়া, দুর্বল বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও সেবা খাতকে দায়ী করা হয়।
How Sikkim became a part of India?
লাদাখ সীমান্তে এই সংঘাতময় অবস্থার মধ্যেও ভারতে সাবওয়ে নির্মানের কাজ পেয়েছে চীনের Shanghai Tunnel Engineering Co Ltd । আর যে আইপিএল শুরু হওয়ার কথা অন্ততপক্ষে খালি মাঠে হলেও সেই আইপিএল আয়োজনে চীনা কোম্পানি ভিভো’র সাথে বিসিসি আই এর চুক্তি আগামি ২০২২ সাল পর্যন্ত । প্রতি বছর আইপিএল খাতে ভিভো বিসিসিআইকে ৪৪০ কোটি টাকা দেয়। । এখন ভারত যে দাবী তুলেছে চীনকে বয়কটের জন্য ,এটা যদি চলতেই থাকে তাহলে আইপিএল আয়োজন করাই সম্ভব হবেনা বিসিসি আই কর্তৃপক্ষের মতে যেটা শেষপর্যন্তই ভারতের অর্থনীতিরই স্থবিরতা আনবে।তবে, করোনো কালে চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভারতে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে এপলের মতো প্রতিষ্ঠান যেতা নিঃসন্দেহে চীনের জন্য ক্ষতিকর আর ভারতের জন্য আশির্বাদস্বরূপ।
চীন গত জানুয়ারী মাসে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের জন্যে ৪২০ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৩ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চীনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত দুই দশক ধরে দেশটির বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চরম বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও গত বছর প্রথম প্রান্তিকে ৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার সাফল্য দেখায় দেশটি। হিউন্দাই গাড়ি উতপাদন বন্ধ করেছে। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি গুলো চীনে বিনিয়োগ করতে এখন্ন দ্বিতীয়বার ভাবছে।রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি হওয়ায় বর্তমানে অর্থিনীতি স্থবির তবে সামগ্রিক দিক থেকে চীন এখন সেটাকে ট্যাকল দিচ্ছে বেশ ভালভাবেই।
রয়টার্সের মতে সারা দুনিয়াতে চীন প্রতি বছর ১৩৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।এরমধ্যে ফ্রান্সের জুয়েলারি ব্রান্ড ডিজুলার ৫৫.৪ শতাংশ কেনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে চীনের সাংহা টুরিস্ট ইয়াউন মার্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফুসান।ভারতের পেটিএম, বিগবাস্কেট ও জুমাতোতে চীনের আলিবাবার মালিকানা রয়েছে। চীনের টেনসেন্টের বিনিয়োগ রয়েছে ভারতের ওলা, ফ্লিপকার্ট ও বাইদুতে। ভারতের এইচএফডিসি ব্যাংকে চীনের শেয়ার আছে। এখন পর্যন্ত এককভাবে বড় বিনিয়োগ হলো চীনের ফুসন কর্তৃক ১.১ বিলিয়ন ডলারে ভারতের গ্লান্ড ফার্মা কিনে নেয়াটা। প্রতি বছর ভারতে চীনের মোবাইল ফোন বিক্রি হয় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা ৭.২ বিলিয়ন ডলারের।
অস্ত্র পরীক্ষার বিষয় আদৌ কি আছে?
সাম্প্রতিক সময়ে চীন অস্ত্র উৎপাদনে ভয়ংকর ভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তারা কোমর বেধে নেমেছে অস্ত্র উৎপাদন প্রতিযোগিতায়। তাদের হাতে এখন বেশ কিছু যুদ্ধ বিমান , ট্যাংক ,মিসাইল ব্যবস্থা আছে যেগুলো এখনো পরীক্ষা করা হয়নি। আর পশ্চিমা বিশ্ব এতো সহজেই সেসবের পরীক্ষা ক্ষেত্র হওয়া তো দুরের কথা সেসব সামনেই আনতে দেবে না চীনকে। এই অবস্থায় চীনের সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ভারত এবং ভারতই হতে পারে চীনের যুদ্ধাস্ত্র পরীক্ষার উপযুক্ত ক্ষেত্র। চীন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভারতকে কোন ভুল করতে বাধ্য করেই ঘাড় ঠেসে ধরার ফন্দি করছে। আর ওই ফাঁদে যদি ভারত সত্যি সত্যিই পা দেয় তাহলে হয়ত ভারত আর কোনও দিনও কোমর সোজা করে দাড়াতে পারবেনা।
শেষমেষ কি হতে পারে?
পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চীন ভারত দু পক্ষই তাদের সক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করছে । ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনুক কার্গো হেলিকপ্টার এবং অ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টার উড়াচ্ছে। এছাড়া পি-৮ সার্ভেইলেন্স এয়ারক্র্যাফ্ট (নজরদার বিমান) এবং আইএল-৭৬ স্ট্র্যাটেজিক এয়ারলিফ্টারকেও (কার্গো বিমান) লাদাখের আকাশে উড়তে দেখা গেছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই ভারত জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়া হতে ১২ টি SU-৩০ এবং ২১ টি মিগ ২৯S ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেগুলো কিনতে খরচ হবে ৫০০০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে চীনও যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছে। বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল সেগুলোর ভিডিও সম্প্রচার করেছে।
আরো পড়ুনঃ Nagorno-Karabakh conflict: Peace in the South Caucasus region
এই টক্করে কে টিকবে এতক্ষণে আমরা হয়ত বুঝে ফেলেছি। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বাতাস কখন কোনদিকে বইবে সেটা বলা যায়না। চীন কিংবা ভারতের কৌশলগত বন্ধুরা নিশ্চই এই অবস্থায় বসে থাকবেনা। রাশিয়া হচ্ছে চীনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, যাদের থেকে ভারত জরুরী ভিত্তিতে যুদ্ধবিমান কিনছে। আবার আমেরিকা হংকং ইস্যুতে চীনের সাথে ভাল সম্পর্কে নেই । বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞায় পর্যুদস্ত করার চেষ্টায় আছে আমেরিকা। তবে সুখের কথা একটা এই যে, এই দুই মোড়লের হম্বিতম্বির সুযোগ নিয়ে আঞ্চলিক ছোট ছোট দেশগুলো তাদের অধিকার আদায় করে নিতে দরকষাকষি করতে পারবে।
সুবিধা যাইহোক না কেন , লাভ যতটুকুই হোক না কেন, দীর্ঘমেয়াদে এই যুদ্ধ করোনা পরবর্তি বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে ১০০ বছর এগিয়ে দেবে। করোনা নিয়েই কেউ শান্তিতে নেই, এই অবস্থায় এই যুদ্ধাবস্থা আরো নষ্ট করে দিচ্ছে বৈশ্বিক শান্তি। সুতরাং যেকোন মূল্যেই বন্ধ করতে হবে এই হম্বিতম্বি।তাতে তাদের দু পক্ষের যেমন লাভ হবে একই সাথে দক্ষিন এশিয়া অশান্তকর একটা অবস্থা থেকে রেহাই পাবে। আমরা আর যুদ্ধ চাইনা।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন
এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…
সাম্প্রতিক আর্টিকেল
শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?
পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ও সীমান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।
আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?
আদালত হলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সেই বৈধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি, অপরাধের বিচার ও আইনি অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) কী? ইক্যুইটির ম্যাক্সিম সমূহ কী কী?
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) হল সাধারণ আইন (Common Law) এর শর্তের বাইরে গিয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা
আব্রাহাম চুক্তিঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, এবং ফিলিস্তিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডঃ ফিলিস্তিনের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের বুলি!
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয় ।