সুশাসন বা গুড গভর্ন্যান্স একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে শাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। সুশাসনের মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসিত নীতি এবং কার্যকরী প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করে। সুশাসনের অভাব জনজীবনে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে, যা দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, এবং অসাম্যতার মতো সমস্যাগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই, সুশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম, এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক ইচ্ছা, সচেতন নাগরিক সমাজ এবং প্রযুক্তির কার্যকরী ব্যবহার অপরিহার্য।

সুশাসন কী?

সুশাসন হলো নিয়মতান্ত্রিক বা প্রক্রিয়া সংবলিত একটি ধারণা যার মাধ্যমে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি মুক্ত এবং আইনের শাসনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল থেকে জনগণের স্বার্থে সরকারি কাজকর্ম পরিচালনা করে, সরকারি সম্পদ পরিচালনা করে এবং মানবাধিকার বাস্তবায়ন ও রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। জনসাধারণের উপকারে আসে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্তগুলি সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করাই হলো সুশাসন। অংশগ্রহণ, আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ, ঐকমত্যের অভিযোজন, সমতা, কার্যকারিতা, দক্ষতা এবং জবাবদিহিতার মতো নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে সুশাসনের ধারণা গড়ে উঠেছে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা, Use Your Voice inscription on gray background

বিশ্বব্যাংকের মতে, সুশাসনকে ঘিরেই শক্তিশালী ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের মাধ্যমে একটি টেকসই পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। শক্তিশালী অর্থনৈতিক নীতিগুলির একটি অপরিহার্য পরিপূরক হিসাবে সুশাসন কাজ করে। বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞানুযায়ী, সুশাসন হলো “উন্নয়নের জন্য একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদ পরিচালনায় ক্ষমতা প্রয়োগের পদ্ধতি”। সুশাসনই নিশ্চিত করে সমাজে ব্যাপক ঐকমত্যের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারগুলি নির্ধারিত হয়। এছাড়া, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সম্পদের বণ্টন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র ও অরক্ষিতদের মতামত শোনাও সুশাসন নিশ্চিত করে।

১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনঃ বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের বীজ মন্ত্র

জাতিসংঘের মতে, সুশাসন হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি অপব্যবহার ও দুর্নীতি মুক্ত এবং আইনের শাসনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে জনসাধারণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ পরিচালনা করে, সম্পদ পরিচালনা করে এবং মানবাধিকার বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেয়। অধিকার নিশ্চিত করে এবং অপব্যবহার প্রতিরোধ করে এমন প্রক্রিয়া এবং ব্যাবস্থায় জতিসংঘ গুরুত্বারোপ করে।

ইউএনডিপি সুশাসনকে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, কার্যকর, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনের শাসনের বিস্তার হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। ইউএনডিপির মতে, সর্বসম্মত মতের উপর রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারগুলি নিশ্চিত করা এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতে সম্পদের সুষম বন্টন করা সুশাসনই নিশ্চিত করে।

আইএমএফ সুশাসনকে একটি ব্যাপক অর্থে সংজ্ঞায়িত করে যে, একটি দেশ কীভাবে পরিচালিত হয় তার সমস্ত বিষয়ই সুশাসনের ধারণার অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক নীতি, নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং আইনের শাসনের আনুগত্য। আইএমএফ বিশেষভাবে দুটি ক্ষেত্রের উপর জোর দেয়: সরকারী খাতের প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কারের মাধ্যমে জনসম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারী খাতের কার্যক্রমের জন্য উপযোগী স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে সুশাসন বলতে আসলে কী বোঝায়ঃ

পক্ষপাতিত্বহীনঃ এটি একটি খেলার মতো, যেখানে খেলার নিয়মনীতিগুলি পরিষ্কার ও পক্ষপাতিত্বহীন, প্রত্যেকে ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে খেলে এবং রেফারিরা (সরকার) নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, যার ফলে খেলাটি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে উপভোগ্য হয়।

উন্মুক্ত বইঃ উন্মুক্ত বইয়ের মতোই সুশাসন মানে সবকিছু প্রকাশ্যে ও মুক্ত থাকা। নীতি, সিদ্ধান্ত এবং কর্মকান্ড সব কিছুই স্বচ্ছ থাকবে যেখানে কোন ধরণের গোপন ধান্দা বা দুর্নীতির কোনও জায়গা নেই।

প্রত্যেকের মতামত গুরুত্বপূর্ণঃ সুশাসন নিশ্চিত করে যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সমাজের সবার মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হবে।

সঠিক উপায়ঃ আইনের শাসন অনুসরণ করা একটি অ-আপোষযোগ্য নীতি। এটা রাস্তার ট্রাফিক নিয়মের মতো, ছোট বড় ধরণের যানবাহন যেন সুশৃঙ্খল ও ন্যায়সঙ্গত নিয়মের অধীন চলাচল করে।

সংঘবদ্ধ কাজঃ একসঙ্গে কাজ করাটাই আসল কথা। সরকার, নাগরিক এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র একত্রিত হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয় যা সবার জন্য সর্বোত্তম।

ন্যায্য পাওনাঃ পাউরুটির টুকরোর মতো সম্পদের সংস্থান এবং সুযোগগুলি এমনভাবে বন্টন করা হয় যেন প্রত্যেকে তার ন্যায্য পাওনা বুঝে পায়।

সক্রিয়তা এবং দক্ষতাঃ সুশাসনের ফসল হলো সক্রিয়তা এবং দক্ষতা অর্জন। সুশাসনের লক্ষ্য হল এমন পরিষেবা প্রদান করা যা সঠিক, সক্রিয় এবং দক্ষতার সাথে কাজ করে যাতে সময় বা অর্থ কোনটাই নষ্ট না হয়।

মান বজায় রাখাঃ জবাবদিহিতা হলো সুশাসনের চাবিকাঠি। এটি একটি শিশুর স্কুলের রিপোর্ট কার্ডের মতো যেখানে নেতারা কতটা ভাল করছেন এবং তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করছেন কিনা সেসব দলিল আকারে থাকে।

সংক্ষেপে, সুশাসন হলো মুক্ত, ন্যায্য এবং কার্যকরিভাবে একটি দেশের জনসাধারণের জন্য সে দেশের জাতীয় সম্পদ এবং বিষয়গুলির টেকসই উন্নয়ন ও পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা। এটি একটি সুস্থ সমাজের মেরুদণ্ড, যেখানে অর্থনীতি স্থিতিশীল, এবং প্রত্যেকেরই উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সুশাসন কেবল নিয়ম-নীতি কিংবা শাসনের বিষয়ে প্রযোজ্য তা নয়, বরং প্রত্যেকের, বিশেষত যাদের প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়, অবজ্ঞা করা হয়, তাদেরও আলোচনার টেবিলে মতামত রাখার সুযোগ আছে তা নিশ্চিত করার মনন সম্পর্কেও প্রযোজ্য।

সুশাসনের মূলনীতিগুলি কী কী?

সুশাসনের নীতিগুলি জনসাধারণের স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয় পরিচালনায় ন্যায্যতা, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা অর্জনের জন্য একটি অবকাঠামো প্রদান করে। এসব নীতির মধ্যে রয়েছে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, জবাবদিহিতা, ঐকমত্যমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি এবং কার্যকারিতা ও দক্ষতা। এই নীতিগুলো নিচে আলোচনা করা যাকঃ

অংশগ্রহণঃ প্রশাসনে সম্পৃক্ত নাগরিকরা হলো কার্যকর নেতৃত্বের ভিত্তি। এই নীতি সমাজ গঠনের মত বিষয়ে মতামত রাখার ক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবে উদ্বুদ্ধ করে। সেটা ভোট দেওয়ার মাধ্যমে হোক, জনসাধারণের আলোচনায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে হোক কিংবা প্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমেই হোক না কেন, প্রত্যেকের মতামত পৌঁছানো এবং সবার জন্য কার্যকরি গণতন্ত্র নিশ্চিত করাই এই নীতির উদ্দেশ্য। শুধু অধিকার নয়; ভবিষ্যতকে একসাথে পরিচালানোর সর্বোত্তম উপায়।

আইনের শাসনঃ আইনের শাসন একটি মৌলিক নীতি যেখানে যেই হোক না কেন, প্রত্যেকেই একই আইনি কাঠামোর আওতায় আসে। আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করে এই নীতি। মানবাধিকার রক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এই নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্বচ্ছতাঃ সরকারে স্বচ্ছতার অর্থ হলো প্রত্যেক নাগরিকের জানার অধিকার রয়েছে যে, কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কে সেই সিদ্ধান্তগুলি নিচ্ছে এবং সেই সিদ্ধান্তগুলি কী কী। এই স্বচ্ছতা জনসাধারণের সমালোচনার সুযোগ উন্মোচন করে, বিশ্বস্ততাকে উদ্বুদ্ধ করে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঢাল হিসাবে কাজ করে। স্বচ্ছতার নীতি সরকারের কার্যপদ্ধতিগুলিকে ন্যায্য এবং ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।  

প্রতিক্রিয়াশীলতাঃ সম্পর্কিত প্রত্যেককে সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে ত্বরান্বিত হতে হবে। প্রতিক্রিয়াশীলতা নীতিটি এমন যেখানে, একটি সরকার জনগণের প্রয়োজন শোনামাত্র তাদের চাহিদা মেটাতে সাথে সাথে কাজ করে এবং প্রয়োজনে তার নীতি ও পরিষেবাগুলি জনগণের চাহিদা উপযোগী করে তোলে। এই পদ্ধতিতে সরকারী কর্মকান্ডগুলি প্রাসঙ্গিক এবং কার্যকর থাকে। এটি জনসাধারণের ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী এবং তৎপর হওয়াটাই প্রতিক্রিয়াশীলতা নীতির মূল কথা।

ঐকমত্য-ভিত্তিকঃ ঐকমত্য-ভিত্তিক শাসন হলো বৃহত্তর মঙ্গলসাধনের জন্য সর্বজনীন ভিত্তির ওপর নির্ভর করা। বৈচিত্রময় সমাজের জন্য সামগ্রিকভাবে সর্বোত্তম স্বার্থ কী তা নির্ধারণ করার জন্য একটি উপায় হলো ঐকমত্য। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের একই আলোচনার টেবিলে আনা এবং সমাধান বের করা হয় যাতে প্রত্যেকের অংশীদারিত্ব থাকে। এর একটি প্রধান উদাহরণ হলো বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার ভবিষ্যত পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুদলীয় আলোচনা যার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণবাদকে ঝেটিয়ে বিদেয় করতে পেরেছে।

ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তিঃ একটি প্রাণবন্ত সমাজ তখনই সমৃদ্ধ হয় যখন, প্রতিটি ব্যক্তি তাদের সমাজে একাত্মতার অনুভূতি এবং পরিবেশকে একটি রূপ দেওয়ার সামর্থ অনুভব করে। সমাজের প্রতিটি সদস্যের কল্যাণ সাধন ও বজায় রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করাই হলো ন্যায্যতা  এবং অন্তর্ভুক্তি। সমাজে সবার সমান সুযোগ, অধিকার এবং কর্তব্যগুলি কেবল আদর্শ নয় বরং সবার জন্য বাস্তবতা।

কার্যকারিতা এবং দক্ষতাঃ শাসনের জগতে, স্মার্টভাবে লক্ষ্য অর্জন করাই হলো কার্যকারিতা এবং দক্ষতা। প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং কার্যধারার কাজ হলো সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রয়োজন মেটানো।। এটি একটি দ্বিমুখী পদ্ধতি; কার্যকারিতা হলো লক্ষ্য অর্জন করা এবং দক্ষতা হলো বাজেট বা সময় নষ্ট করে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা। ধরুন, আপনার সরকার একটি নতুন গণপরিবহন প্রকল্প চালু করছে। যদি এই প্রকল্পের ফলে যাতায়াতের সময় কমিয়ে দেয় তবে এটি কার্যকর। আর যদি এটি বাজেট এবং সময়সূচী অনুযায়ী পরিচালনা করে তবে এটি দক্ষ। কার্যকারিতা এবং দক্ষতা হলো অর্থনৈতিক এবং সুবিধাজনকভাবে সেরা জিনিসটা ঘটানোর শিল্প।

জবাবদিহিতাঃ নেতা ও কর্মকর্তাদের, তারা সরকার, বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের, যেই হোক না কেন, অবশ্যই টলটলে পানির মত স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে হবে। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, তাদের কর্মের জন্য দায়ী এবং তারা প্রমাণ করতে বাধ্য যে তারা কাজটি করতে সক্ষম। তদন্ত, মূল্যায়ন এবং নজরদারীকারী প্রতিষ্ঠানলির মতো জবাবদিহিতার পদ্ধতিগুলি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে, নিশ্চিত করে যে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করছে এবং সর্বোপরি জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখছে।

জাতীয়তাবাদ: আধুনিক বিশ্বের রাজনৈতিক চালিকা শক্তি

সুশাসনের গুরুত্ব

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সুশাসন অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। সুশাসন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি স্থাপন করে। সুশাসনের গুরুত্বকে নিম্নোক্ত উপায়ে তুলে ধরা যেতে পারেঃ  

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিঃ সুশাসন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্যে যোগসূত্র অনস্বীকার্য। যে দেশগুলি শাসনে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে তারাই উচ্চতর অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করে। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসন কাঠামো বিনিয়োগকে উদ্বুদ্ধ করে, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ করে এবং ব্যবসায়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এইসবই অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে চালিত করে।

মানব উন্নয়নঃ সুশাসন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই নয়, মানব উন্নয়নকেও এগিয়ে নিয়ে যায়। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো খাতগুলোতে উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে।

ন্যায়ভিত্তিক সমাজঃ সামাজিক বিভাগগুলিতে সুযোগ এবং পরিষেবাগুলিতে সমান প্রবেশাধিকারের নিশ্চিত করে সুশাসন সামাজিক ন্যায়বিচারের অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। এটি দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং পক্ষপাতের মত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামাজিক বন্ধনকে আরও শক্ত করে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। সুশাসন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে, যেখানে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সম্পদের সুষম ব্যবহার হয়।

স্থিতিশীল রাজনীতিঃ সুশাসনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি রাজনৈতিক দৃশ্যপটে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে। এই স্থিতিশীলতা শুধু বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্যই নয়, সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রায়শই অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন থেকে উদ্ভূত হয়, যেখানে জনগণ অংশগ্রহণ করে এবং তাদের সমস্যাগুলি কার্যকরভাবে সমাধান করা হয়।

১৭৬৩ সালের প্যারিস চুক্তিঃ বিশ্ব ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণ

এসবের পাশাপাশি, সমাজের এক্যের জন্য অপরিহার্য বিষয় দায়িত্বশীলতা এবং নৈতিক আচরণের সংস্কৃতিকেও সুশাসন লালন করে। এরফলে সরকারি সম্পদগুলি দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয় এবং জনসাধারণের স্বার্থেই ব্যবহৃত হয়। অধিকন্তু, সুশাসন নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি উন্নত হয় এবং আইনের শাসন আরো শক্তিশালী হবে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতাগুলি কী কী?

সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে সুশাসনের লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন। অসংখ্য বাধা-বিপত্তিতে মোড়ানো সুশাসন অর্জনে প্রতিবন্ধকতাগুলি নিম্নরূপঃ

দুর্নীতিঃ দুর্নীতি একটি দেশের সুশাসনের অন্যতম প্রধান বাধা। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ঘুষ, নিয়োগ ও প্রমোশনে অনিয়ম, দরপত্রে স্বেচ্ছাচারিতা, এবং অন্যান্য অনৈতিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। এর ফলে আইনের শাসন দুর্বল হয়, জনগণের প্রতি সরকারের জবাবদিহিতা কমে যায় এবং দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়।

রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ অনিয়মিত নির্বাচন, দলগত সহিংসতা, এবং দুর্বল বিরোধী দলের উপস্থিতি যেকোন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে এবং সুশাসনের লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি হয়।

দুর্বল আইনের শাসনঃ আইন প্রয়োগে, পক্ষপাতিত্ব, দুর্বলতা, বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতা, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপব্যবহার সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে আইনের প্রতি জনগণের বিশ্বাস কমে যায় এবং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়, শক্তিশালীরা আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে এবং সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।

পুরনো, জটিল এবং অপ্রাসঙ্গিক আইনঃ পুরনো, ও জটিল আইনগুলি বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। এসব আইন প্রয়োগে জটিলতা দেখা দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একই আইন ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, যার ফলে আইনি অনিশ্চয়তা দেখা দেয় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি হয়।

দুর্বল আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানঃ আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্বল এবং পর্যাপ্ত সংস্থান ও প্রশিক্ষণের অভাবে ভুগছে। এর ফলে আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি হয়।

দারিদ্র্য ও অসমতাঃ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সুশাসন বাস্তবায়নে একটি পরিচিত প্রতিবন্ধকতা হলো আর্থিক ও মানবিক উভয় সম্পদের অভাব। এমনকি সম্পদের অপচয় অথবা অসম বন্টন অনেক সময় কৃত্রিম দারিদ্র্যের সৃষ্টি করে। এই দারিদ্র্য ও অসমতা সুশাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ। দারিদ্র্যগ্রস্ত মানুষরা প্রায়শই সুশাসনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। অসমতা বৃদ্ধি পেলে সমাজে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়ে।

দুর্বল নাগরিক সমাজঃ সচেতন ও সক্রিয় নাগরিক সমাজ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নাগরিকরা যদি সুশাসনের প্রতি সচেতন না থাকে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান বা আগ্রহী না থাকে, তাহলে তারা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে পারবে না।

অদক্ষ প্রশাসনঃ প্রশাসন ব্যবস্থায় দুর্বলতা, দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অভাব, জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার অভাব ইত্যাদি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সরকার গঠন ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অর্জন

এই প্রতিবন্ধকতাগুলি মোকাবেলা করে রাষ্ট্রে সুশাসনের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের দ্বারা সরকার পরিচালিত হয়। কিন্তু কীভাবে এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা উচিত কিংবা কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয় কী কী?

বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এর জন্য সরকার, নাগরিক সমাজ এবং সকল স্তরের মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেঃ  

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাঃ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সুশাসনের ভিত্তি। সকলের জন্য আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া সকলের জন্য স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে।

দুর্নীতি দমনঃ দুর্নীতি সুশাসনের অন্যতম প্রধান শত্রু। দুর্নীতি দমনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে হবে। ঘুষ, এবং অন্যান্য অনৈতিক কার্যকলাপ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিঃ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। সকল তথ্য জনগণের জন্য সহজলভ্য করা উচিত। এছাড়া জনগণের অংশগ্রহণ ও অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাঃ সকলের জন্য মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নঃ একটি শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থা ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা, এবং জবাবদিহিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য শাসন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ ও কার্যকর করে তুলতে হবে। সেবা প্রদানের মান উন্নত করতে হবে। জনগণের চাহিদা ও ইচ্ছার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের পেশাগত উন্নয়নে বিনিয়োগ সরকারি খাতের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের ভূমিকাঃ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুশাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং জনমত গড়ে তুলতে নাগরিক সমাজের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। সরকারের নীতি ও কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে নাগরিক সমাজের ভূমিকা রাখতে হবে।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতিহাস

এছাড়াও, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য শাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিক বিবেচনাগুলিকে সংহত করা অত্যাবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সততার সংস্কৃতি লালন করা এবং নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধকে উৎসাহিত করা।

সুশাসনে প্রযুক্তির ভূমিকা

সুশাসনে প্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সরকারগুলি তাদের প্রশাসনিক কাজগুলো আরও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে পারছে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ই-গভর্নেন্স উদ্যোগগুলি জনগণের জন্য সরকারী সেবাগুলি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজলভ্য করেছে, যা সময় ও খরচ বাঁচায় এবং দুর্নীতি কমায়।

প্রযুক্তি যেমন ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), ব্লকচেইন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) সুশাসনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। IoT এর মাধ্যমে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণ সহজ হয়েছে এবং স্মার্ট সিটি উদ্যোগগুলির বাস্তবায়নে সহায়ক হয়েছে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি তথ্য সংরক্ষণ ও লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যা প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে। AI এর মাধ্যমে বিশাল ডেটা বিশ্লেষণ করে দ্রুত ও কার্যকর নীতি গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সুশাসন শুধু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করে না, বরং জনগণের অংশগ্রহণও বৃদ্ধি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি জনগণের মতামত ও সমস্যাগুলি সরকার পর্যন্ত পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সমাধান প্রদানে প্রযুক্তি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ই-আইনসভা এবং ভার্চুয়াল বিচার বিভাগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  ই-আইনসভা বা ই-লেজিসলেটিভ কার্যক্রমগুলি সংসদীয় প্রক্রিয়া ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। এছাড়া আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং কার্যকর করতে সাহায্য করে। আইন পরিষদের কার্যক্রম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে আইন প্রণেতাদের মধ্যে যোগাযোগ এবং তথ্যের আদান-প্রদান সহজ হয়েছে। এছাড়াও, ই-আইনসভা সংসদীয় নথিপত্র ও আইনগুলি ডিজিটাল আর্কাইভে সংরক্ষণ এবং সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করেছে।

ভার্চুয়াল বিচার বিভাগ বা ই-জুডিশিয়ারি সিস্টেম বিচার প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক ও দক্ষ করে তুলেছে। ভিডিও কনফারেন্সিং, অনলাইন কেস ম্যানেজমেন্ট এবং ডিজিটাল নথি ব্যবহার করে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছে। ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারক, আইনজীবী এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা দূরবর্তী স্থানে বসে আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিশেষ করে মহামারি বা জরুরি পরিস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সহায়ক হয়েছে। ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা সময় ও খরচ সাশ্রয় করে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

গণতন্ত্র কি? গণতন্ত্রের মূলনীতি ও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বরূপ

তবে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। সঠিক নীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে সাইবার হামলা ও তথ্য চুরির ঝুঁকি থাকে যা সুশাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। সাইবার হুমকির উত্থানের সাথে সাথে প্রযুক্তি সংবেদনশীল সরকারী ডেটা এবং অবকাঠামোকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সুরক্ষার ব্যূহ তৈরি করে, শাসন ব্যবস্থার অখণ্ডতা নিশ্চিত করে।  

সর্বোপরি, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রযুক্তির ভূমিকা অগ্রগণ্য এবং এটি সরকারের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক করতে অবদান রাখে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা একটি ধারাবাহিক যাত্রা

সুশাসন প্রতিষ্ঠা একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি। শুধু আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই নয়, বরং এটি সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমেও বাস্তবায়িত হয়। সুশাসনের মূলমন্ত্র হচ্ছে জনগণের সেবা, উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি। তাই, আমাদের উচিত প্রতিটি স্তরে সুশাসনের অনুশীলন করা এবং প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে সুশাসনের লক্ষ্য অর্জন করা। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সফলতা পেতে হলে, সরকার, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। একসাথে কাজ করলে আমরা একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।

আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক রাজনীতি রাকিবুল ইসলামের বিশেষ আগ্রহের বিষয়। তাঁর লেখালেখির মূল বিষয়বস্তু হলো রাজনীতি, সরকার, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।

Leave A Comment

সম্পর্কিত আর্টিকেল

কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন

লেখক হিসেবে আমাদের সাথে যোগ দিন

সাম্প্রতিক আর্টিকেল

  • শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?

শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?

পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ও সীমান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।

  • আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?

আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?

আদালত হলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সেই বৈধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি, অপরাধের বিচার ও আইনি অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

  • ইক্যুইটির ম্যাক্সিম

ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) কী? ইক্যুইটির ম্যাক্সিম সমূহ কী কী?

ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) হল সাধারণ আইন (Common Law) এর শর্তের বাইরে গিয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা

  • আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।

আব্রাহাম চুক্তিঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, এবং ফিলিস্তিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা

আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।

  • পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয়

পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডঃ ফিলিস্তিনের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের বুলি!

পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয় ।