মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুই দেশের মধ্যে ভূমি, সীমানা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের, যুগ যুগের। হাজার বছর আগের এই অঞ্চলে তথাকথিত জন্মভূমির উত্তরাধিকারের দাবি নিয়ে কয়েকদশক আগে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত ইহুদি জনগোষ্ঠী ফিলিস্তিনের হাজার বছর ধরে বসবাসকারীদের বাস্তুহীন করে। তারা স্থানীয় অধিবাসীদের বেদখল করে তাদেরই গৃহহীন করে জন্মান্তরের উত্তরাধীকার দাবি করে বে আইনি বসতি স্থাপন করছে। আর এসব বে আইনি বসতি স্থাপনকারীদের মূল প্ররোচনাকারি হচ্ছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকার মত দেশগুলো। আর হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসা ফিলিস্তিনি জনগণ জন্মভূমি থেকে বাস্তুচ্যূত হওয়া ও জন্মভূমির অধিকার ফিরে পেতে কয়েক দশক ধরে প্রতিরোধ ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতিহাস শুরু এই ফিলিস্তিনি জনগণদের বেদখল করে দখলদার ইসরাইলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। যাইহোক এই আলোচনায় আমরা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতিহাসকে জানার চেষ্টা করব ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতিহাস
সমস্যাটি জায়োনিজম দিয়ে শুরু
ফিলিস্তিনের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ইহুদি ধর্মের মতই অনেকটা। তবে নব্য ইসরাইলি দখলদারদা যেমনটা দাবি করে তেমনটা নয়। মুসা (আ) এর প্রচারিত ধর্মীয় আদর্শ আর দখলদার ইসরাইলিদের ইহুদিবাদ একই নয়। যাইহোক, উনিশ শতকের আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিন নামে পরিচিত অঞ্চলটি প্রাচীন মিশরীয়, ক্যানানীয়, ইসরায়েলীয়, ব্যাবিলনীয়, পারস্য, গ্রীক, রোমান এবং বাইজেন্টাইন সহ বিভিন্ন সাম্রাজ্য ও সভ্যতা ধারণ করেছে। ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এই অঞ্চলটি ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বর্তমানে যারা ফিলিস্তিন দখল করতে ইহুদিবাদের দোহাই দিচ্ছে ইতিহাস সাক্ষী তাদের কেউই ফিলিস্তিনের অধিবাসি ছিল না। তারা প্রত্যেকে ইউরোপ বিতাড়িত হওয়া ইহুদি। উনিশ শতকের শেষের দিকে ইহুদিদের আচরণে অতিষ্ঠ ইউরোপে প্রতিক্রিয়া হিসাবে অন্যান্য ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী ইহুদিদের ইউরোপ থেকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে ইহুদিদের ওপর নির্যাতন শুরু হয় ইউরোপ ছাড়া করতে। ইউরোপ থেকে ইহুদিদের তাড়িয়ে অন্যান্য অঞ্চলে পুনর্বাসনের দাবি ওঠে। ইহুদি বিতাড়নের এই ক্রমবর্ধমান দাবি ও প্রক্রিয়ার মুখে ইহুদিদের পূনর্বাসনের জন্য নানা ধরণের প্রচেষ্টা শুরু হয়। ইউরোপের এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে জায়োনিজম অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান নাস্তিক সাংবাদিক এবং লেখক থিওডোর হার্জল (Zionism) নামে একটি ধারণা দিয়েছিলেন। ১৮৯৬ সালে তিনি ‘ডের জুডেনস্টাট’ বা ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ নামক বইয়ে জায়োনিজম ধারণার ব্যাখ্যা দেন। ‘Zion’ শব্দটি মূলত জেরুজালেমকে বোঝায় এবং জায়োনিজম বলতে ইহুদিদের তথাকথিত পৈতৃক ভূমিতে ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনকে বোঝায়। জায়োনিজমের লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি জাতীয় মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করা যেখানে তারা স্বাধীন ভাবে বসবাস করতে পারে। পূর্ব ইউরোপে, বিশেষত রাশিয়ায় চলমান নিপীড়ন এবং ইহুদি-বিরোধী সহিংসতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই ধারণাটি আবির্ভূত হয়েছিল।
শান্তি প্রক্রিয়া ইতিহাসের পুণর্লিখন
শুরুতে ইহুদিদের পৃথক রাষ্ট্রের জন্য ফিলিস্তিনকে ভাবাও হয় নি। বরং তাদের পুনর্বাসনের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গা নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন ১৯০৩ সালে ষষ্ঠ ইহুদিবাদী কংগ্রেসের সময় উগান্ডায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা আলোচনা করা হয়েছিল। ‘উগান্ডা স্কিম’ বা ‘উগান্ডা পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত এই প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব আফ্রিকায় বিশেষত উগান্ডায় ইহুদি অভিবাসীদের বসতি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়।
উগান্ডায় বসতি স্থাপনের প্রস্তাবটি জায়োনিজম আন্দোলনের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়। তাদের মতে, ফিলিস্তিনের বাইরে ইহুদিদের জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তথাকথিত ইহুদি মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার মূল আদর্শের বিরোধী। পরবর্তিতে উগান্ডায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রত্যাখিত হয়। উগান্ডা ছাড়াও বিকল্প হিসেবে আর্জেন্টিনা, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে সম্ভাব্য ইহুদি বসতি সম্পর্কিত অন্যান্য পরামর্শ বা আলোচনাও উত্থাপিত হয়েছিল। যাইহোক, এই বিকল্প অবস্থানগুলি সাধারণত ইহুদি মাতৃভূমির জন্য দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে অস্থায়ী সমাধান বা ব্যাকআপ পরিকল্পনা হিসাবে দেখা হয়েছিল।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতিহাস আলোচনা করার জন্য পুরো সময়টাকে আমরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করব। যেমনঃ উনিশ শতকের শেষভাগ, বিশ শতকের শুরু, বিশ শতকের মধ্যভাগ, বিশ শতকের শেষভাগ এবং একুশ শতকের শুরু।
উনিশ শতকের শুরু
উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, ফিলিস্তিন উল্লেখযোগ্য রূপান্তর এবং সংঘাতের একটি অঞ্চল ছিল। এখানে উনিশ শতকের শেষের দিকের মূল ঘটনাগুলির আলোচন করা হলোঃ
প্রথম আলিয়াহ (১৮৮১-১৯০৩)
ইউরোপে গণহত্যা এবং ইহুদি-বিরোধী সহিংসতা্র ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু ইহুদি অভিবাসনের প্রথম ঢেউ ফিলিস্তিনে আসে এই সময়। অভিবাসি হিসেবে প্রথমবারের মত এই সময়ের মধ্যে প্রায় ২৫০০০ থেকে ৩৫০০০ ইহুদি ফিলিস্তিনে এসেছিলেন।
থিওডোর হার্জল এবং জায়নিস্ট কংগ্রেস (১৮৯৭)
সুইজারল্যান্ডের বাসেলে থিওডোর হার্জল কর্তৃক আয়োজিত প্রথম জায়োনিজম কংগ্রেস ইহুদিবাদী আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল বিশ্বের যেকোন জায়গায় ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র তৈরি করা।
উসমানীয় শাসন এবং তানজিমাত সংস্কার
ফিলিস্তিন ১৫১৭ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। উনিশ শতকে, উসমানীয় সরকার তানজিমাত সংস্কার শুরু করে। তানজিমাত সংস্কারগুলির লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যকে আধুনিকায়ন করা এবং এর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এই সংস্কারগুলি অটোমান সাম্রাজ্যকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে প্রণিত হলেও প্রায়শই বিভিন্ন জাতিগত এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অহেতুক বৈরিতা সৃষ্টি করে।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে
দ্বিতীয় আলিয়াহ (১৯০৪-১৯১৪)
এই সময়ে ইহুদি অভিবাসনের আরেকটি ঢেউ ফিলিস্তিনে আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বসতি স্থাপনকারীদের নিয়ে আসে। এই সময়কালে প্রায় ৪০,০০০ ইহুদি ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন।এই অভিবাসীরা আরও কৃষি ভিত্তিক জনগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করে এবং নগরায়ণের প্রক্রিয়া শুরু করে।
তরুণ তুর্কি বিপ্লব (১৯০৮)
তরুণ তুর্কি বিপ্লব উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। উসমানীয় সাম্রাজ্যে একটি সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণ তুর্কি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লব বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন এবং সাম্যের আশা জাগিয়ে তোলে।
বেলফোর ঘোষণা (১৯১৭)
বেলফোর ঘোষণা হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জায়োনিজম আন্দোলনকে সমর্থন করে ব্রিটিশ সরকারের একটি ঘোষণা। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব আর্থার জেমস বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা ব্যারন রথচাইল্ডের কাছে এই ঘোষনা লিখেছিলেন। এটি বেলফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। এই ঘোষণায় ফিলিস্তিনে বিদ্যমান অ-ইহুদি সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি ফিলিস্তিনে “ইহুদি জনগণের জন্য জাতীয় মাতৃভূমি” প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয় এবং তার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা জানানো হয়। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধ সুত্রপাতের অন্যতম মূল কারণ এই বেলফোর ঘোষণা।

ব্রিটিশ ম্যান্ডেট (১৯২০)
ব্রিটিশ ম্যান্ডেট হল লীগ অব নেশনসের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের উপর ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের অনুমোদন। ১৯২০ সালের ২৪ জুলাই ব্রিটিশ ম্যান্ডেট জারি করা হয়েছিল এবং ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এই ম্যান্ডেট প্রদান করা হয়। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটটি কার্যকর করার জন্য, ব্রিটিশ সরকার লন্ডন থেকে একজন হাইকমিশনারের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে একটি সিভিল প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসনকে উৎসাহিত করেছিল। যার ফলে ইহুদি এবং আরব সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং সহিংসতা আরও মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি
ফিলিস্তিনে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন, সংঘাত এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছিল যা এই অঞ্চলের ইতিহাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের পর ফিলিস্তিনে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত ইহুদিদের ঢল নামায় ব্রিটেন। জায়োনিজমের অধীনে ইহুদি কিব্বুতজিম এবং মোশাভিমের মত কৃষিপ্রধান জনগোষ্ঠি ফিলিস্তিনে জমি কিনে নিয়ে জনবসতি স্থাপন করা শুরু করে। তারা পরবর্তিতে নতুন ইহুদি অভিবাসিদের নিয়ে এসে ফিলিস্তিনে ব্যাপক হারে ইহুদি বসতি স্থাপন করা শুরু করে। পরবর্তিতে এই ইহুদি অভিবাসিদের চাপে ফিলিস্তিনিরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি নিম্নরূপঃ
আরব বিদ্রোহ (১৯৩৬-১৯৩৯)
ব্রিটিশ শাসন ও অব্যাহত ইহুদি অভিবাসনের বিরুদ্ধে আরব ফিলিস্তিনিরা বিদ্রোহ করে ১৯৩৬-১৯৩৯ সালের মধ্য সময়ে। ব্রিটিশদের অপশাসন, অব্যাহতভাবে ইহুদি কর্তৃক ফিলিস্তিনি বাড়ি-ঘর, জমি বেদখল, ইহুদি অভিবাসনের সাথে সাথে অর্থনৈতিক দুরাবস্থাই মূলত ফিলিস্তিনিদের বিদ্রোহ করতে বাধ্য করে। অবরোধ, প্রতিবাদ, ব্রিটিশ স্থাপনায় হামলা, ব্রিটিশ পণ্য বয়কটসহ নানা ধরণের উপায়ে ফিলিস্তিনিরা বিদ্রোহ করে। জবাবে ব্রিটিশরা গণ আটক, কার্ফিউ সহ নানা উপায়ে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। কিন্তু বিদ্রোহ না দমে বরং তীব্রভাবে ব্রিটিশ বিরোধীতা জেগে ওঠে।
পীল কমিশন (১৯৩৭)
১৯৩৬ সালে আরব বিদ্রোহের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৭ সালে পীল কমিশন গঠন করে। কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল বিদ্রোহের কারণ অনুসন্ধান করা এবং সম্ভাব্য সমাধান অনুসন্ধান করা। পীল কমিশন সুপারিশ করে ইহুদি ও আরব জাতিসত্তার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনকে দুটি পৃথক রাষ্ট্রে ভাগ করা যার রাজধানী জেরুজালেম আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত হবে। তবে ফিলিস্তিন ভাগের এই পরামর্শ দু পক্ষের কেউই মেনে নেয়নি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফিলিস্তিনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দুই পর্যায়ে এই প্রভাব দৃষ্টিগোচর হয়। প্রথমত, যুদ্ধে আরব নেতাদের পক্ষপাত, জেরুজালেমের গ্রান্ড মুফতির অক্ষ শক্তিকে সমর্থণ এবং অন্যান্য আরব নেতাদের মিত্র শক্তিকে সমর্থন। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধে অক্ষশক্তির মূল নেতা জার্মানি কর্তৃক ইহুদি নিধন কার্যক্রম। যুদ্ধে ইহুদি নিধনের ভয়ে লক্ষ লক্ষ ইহুদি অভিবাসির চাপ ফিলিস্তিনের ওপর এসে পড়ে। ফিলিস্তিনে ইহুদিদের একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোর দাবি ওঠে।
জাতিসংঘের বিভক্তিকরণ পরিকল্পপনা (১৯৪৭)
১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিক রাজধানী করে ফিলিস্তিনকে পৃথকভাবে ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রে বিভক্ত করার পরিকল্পনা প্রস্তাব করে। ইহুদি নেতারা পরিকল্পনাটি গ্রহণ করলেও আরব নেতারা এটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যার ফলে ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
ইসরায়েলের স্বাধীনতার ঘোষণা ও আরব-ইসরাইল যুদ্ধ (১৯৪৮-১৯৪৯)
১৯৪৮ সালের ১৪ মে ডেভিড বেন-গুরিয়ন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ই মে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে ইসরায়েল, মিশর, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়া জড়িত ছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে, আরবরা প্রচুর অগ্রগতি করেছিল। তারা ইসরায়েলের উত্তর এবং দক্ষিণ সীমান্তে অগ্রসর হয়েছিল। পরবর্তিতে আমেরিকা ইসরাইলকে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধাস্ত্রসহ নানা রকম সহায়তা প্রদান করলে আরব রাষ্ট্রগুলো পিছিয়ে পড়ে। ১৯৪৯ সালের জুলাই মাসে, যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। যুদ্ধের ফলে ফিলিস্তিনের আরব অঞ্চলগুলো ইসরায়েল, জর্ডান এবং মিশরের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। যুদ্ধের ফলে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয় এবং ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাকে ‘নাকবা’ বা ‘বিপর্যয়’ হিসাবে উল্লেখ করে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি (১৯৪৯)
ইসরায়েলের সাথে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি লাইন স্থাপন করা হয়েছিল (প্রায়শই গ্রিন লাইন হিসাবে উল্লেখ করা হয়)। তবে পশ্চিম তীর এবং গাজার ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলি যথাক্রমে জর্ডান এবং মিশরীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সুয়েজ সংকট (১৯৫৬)
১৯৫৬ সালের ২৬শে জুলাই মিশরের জামাল আবদেল নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করেন। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স, যারা সুয়েজ খালের উপর দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল, তারা এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ করে। ২৯শে অক্টোবর, ইসরায়েল মিশরের সিনাই উপদ্বীপ আক্রমণ করে। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এরপর ইসরায়েলের সাথে একটি চুক্তি করে এবং মিশরের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। উদ্দেশ্য সুয়েজ খালের উপর পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ পুনপ্রতিষ্ঠিত করা এবং মিশরের রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসেরকে ক্ষমতাচ্যুত করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়েই আক্রমণকারী দেশগুলিকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইসরায়েল ১৯৫৬ সালের ২২শে ডিসেম্বর সুয়েজ থেকে সরে যাওয়ার সম্মত হয়।
ছয় দিনব্যাপী যুদ্ধ (১৯৬৭)
ছয় দিনব্যাপী যুদ্ধ হল ১৯৬৭ সালের ৫ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ইসরায়েল, মিশর, জর্ডান এবং সিরিয়ার মধ্যে সংঘটিত একটি যুদ্ধ। ১৯৬৭ সালের মে মাসে, মিশর পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকায় অবস্থিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়।এছাড়াও সুয়েজ খাল এবং টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় মিশর সৈন্যদের মোতায়েন করে। এই অবস্থায় যুদ্ধের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালের ৫ই জুন, যখন ইসরায়েল মিশর, সিরিয়া এবং জর্ডানের বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণ চালায়।
যুদ্ধের প্রথম দিনেই, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী মিশরের বিমানবাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এরপর সিনাই উপদ্বীপ, পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীর আক্রমণ করে। ইসরায়েলি বাহিনী এই অঞ্চলগুলিতে দ্রুত অগ্রসর হয় এবং মিশর, জর্ডান এবং সিরিয়ার সৈন্যদের পরাজিত করে। ইসরায়েলি বাহিনী মিশর থেকে সিনাই উপদ্বীপ, সিরিয়া থেকে গোলান মালভূমি এবং জর্ডান থেকে পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীর, এবং গাজা উপত্যকা দখল করে নেয়।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন হলো ফিলিস্তিনিদের জাতীয়তাবাদী জোট। এর লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনি অধিকার পুনরুদ্ধার এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। পিএলওর প্রথম প্রধান ছিলেন আহমেদ শুকিরি। ১৯৬৯ সালে, ইয়াসির আরাফাত পিএলওর প্রধান হন এবং তিনি ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।
বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ
বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ফিলিস্তিন এবং বিস্তৃত মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাগুলি ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে উল্লেখযোগ্যভাবে পালটে দেয়। যুদ্ধ, ভৌগলিক পরিবর্তন, শরণার্থী সংকট এবং ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়ের উত্থান এই অঞ্চলে অব্যাহত উত্তেজনা, আলোচনা এবং শান্তির প্রচেষ্টার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এখানে সেই সময়ের মূল ঘটনাবলির তালিকা নিম্নরূপঃ
ইয়োম কিপুর যুদ্ধ বা রমজান যুদ্ধ (১৯৭৩)
১৯৭৩ সালের ৬ থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইহুদিদের পবিত্র দিন ইয়োম কিপুরের সময় মিশর এবং সিরিয়া ইসরায়েলের উপর আকস্মিক আক্রমণ চালায়। মিশরীয় ও সিরিয়ান সেনারা যুদ্ধবিরতি রেখা ভেদ করে যথাক্রমে সিনাই উপদ্বীপ ও গোলান মালভূমিতে ঢুকে পড়ে। ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ইসরায়েল নিজেদের অবস্থান রাখতে পারলেও মিশরের থার্ড আর্মি ও সুয়েজের শহর ঘিরে ফেলতে সক্ষম হয়। এসময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে ২৫ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি হয় এবং যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। যদিও ইসরায়েল এই হামলা প্রতিহত করেছিল, তবে এটি শান্তি আলোচনা নস্যাৎসহ রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে পরিস্থিতিকে ঠেলে দেয়।
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি (১৯৭৮)
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে মিশর এবং ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় আনোয়ার সাদাত ও মেনাচেম বেগিনের নেতৃত্বে দেশ দুটি ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে মিশর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, মিশরকে সিনাই উপদ্বীপ ফিরিয়ে দেয়া এবং প্রথম আরব দেশ হিসেবে মিশর আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়।
প্রথম ইন্তিফাদা (১৯৮৭-১৯৯৩)
ইন্তিফাদা বলতে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মসজিদ থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে বোঝায়। প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালে এবং চলে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে নাগরিক অবাধ্যতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের একটি গণ অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল।
গেরিলা পদ্ধতি প্রতিরোধ এবং অসহযোগ ধরনের আন্দোলন সংমিশ্রনে এই আন্দোলন পরিচালিত হয় । ইন্তিফাদার প্রথম বছরেই ৩১১ জন ফিলিস্তিনিকে ইজরাইল হত্যা করেছিল যাদের মধ্যে ৫৩ জনই ছিল ১৭ বছরের কম বয়সী। বহু ফিলিস্তিনির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ভেঙ্গে ফেলা হয়। প্রথম দুই বছরেই ২৩ থেকে ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু দখলদার ইসরাইলের হাতে আহত হয়। ছয় বছরে আইডিএফ আনুমানিক ১,১৬২-১,২০৪ জন ফিলিস্তিনি হত্যা করে।
অসলো চুক্তি (১৯৯৩)
গোপন আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালে অসলোতে ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মধ্যে অসলো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) প্রতিষ্ঠা এবং দ্বি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানের জন্য সম্ভাব্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। চুক্তির আওতায় সিদ্ধান্ত হয়, পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী পর্যায়ক্রমে সরে যাবে। পাঁচ বছরের জন্য “অন্তর্বর্তী স্বশাসিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ” গঠিত হবে। এই চুক্তির মাধ্যমে, ইসরায়েল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে একটি বৈধ রাজনৈতিক সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দেয়।
একবিংশ শতাব্দী
এই শতাব্দীতে এসেও ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সংকট, সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি অভ্যুত্থান এবং গাজা যুদ্ধের মতো বিরতিহীন গণবিপ্লব, আন্দোলন সংগ্রাম চলছেই। সীমান্ত, নিরাপত্তা, বসতি স্থাপন, জেরুজালেমের মর্যাদা, ফিলিস্তিনি শরণার্থী এবং পারস্পরিক স্বীকৃতির বিষয়গুলি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এখানে এই সময়ের মধ্যে মূল ঘটনাবলির একটি তালিকা নিম্নরূওঃ
দ্বিতীয় ইন্তিফাদা (২০০০-২০০৫)
জেরুজালেমের পুরাতন শহর এবং মসজিদ আল আকসায় হাজার খানেক সৈন্য নিয়ে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ এরিয়েল শ্যারনের সফরকে ঘিরে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। এই সংকট এক পর্যায়ে মারাত্মক সহিংসতায় পরিণত হয়। এই সহিংসতা ফিলিস্তিনি ইতিহাসে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা মসজিদ আল আকসা ইন্তিফাদা নামে পরিচিত। আত্মঘাতী বোমা হামলা, সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং ইসরায়েলি সামরিক অভিযান জড়িত ছিল এই ইন্তিফাদায়। প্রতিবেশী কোন রাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়াই সরাসরি ইসরায়েলের সাথে যদ্ধে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা একটি পৃথক জাতি হিসেবে তাদের স্বীয় পরিচয় প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিল।
পশ্চিম তীরের দেয়াল নির্মাণ (২০০২)
ইসরায়েল ২০০২ সালের জুন মাসে পশ্চিম তীরে একটি ‘নিরাপত্তা দেয়াল’ নির্মাণ শুরু করে। এটি ৭০৮ কিলোমিটার (৪৪০ মাইল) দীর্ঘ এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধের অন্যতম একটি কেন্দ্রীয় ইস্যু। ফিলিস্তিনিদের কাছে এই দেয়াল “বর্ণবাদী প্রাচীর” নামে পরিচিত। এই দেয়ালটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংকটের একটি বিতর্কিত অংশ। একদিকে ইসরায়েল এটিকে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা এটিকে জাতিগত বিচ্ছিন্নতা এবং ইসরায়েলি বর্ণবাদের স্বরূপ হিসাবে বর্ণনা করে। দেয়ালটি গ্রিন লাইনের দৈর্ঘ্যের দ্বিগুণেরও বেশি, এর দৈর্ঘ্যের ১৫% গ্রিন লাইন বা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এবং অবশিষ্ট ৮৫% পশ্চিম তীরের ১৮ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত। ফলে ,কার্যত প্রায় ৯% জমি এবং প্রায় ২৫০০০ ফিলিস্তিনিকে মূল ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
শান্তির রোডম্যাপ (২০০৩)
শান্তির রোডম্যাপ (২০০৩) হল ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনদের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি দশ-ধাপের পরিকল্পনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং জাতিসংঘ ২০০৩ সালের ৩ আগস্ট প্রস্তাব করে। রোডম্যাপটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল:
- প্রথম পর্যায়: ২০০৩-২০০৪ সালে, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি স্বাক্ষর করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে, ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু এলাকা থেকে দখলদার বাহিনী সরিয়ে নেবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য আরও স্বায়ত্তশাসন প্রদান করবে।
- দ্বিতীয় পর্যায়: ২০০৪-২০০৯ সালে, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির জন্য আলোচনা করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে।
- তৃতীয় পর্যায়: ২০০৯-২০১২ সালে, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন স্থায়ী শান্তি চুক্তির শর্তাবলী বাস্তবায়ন করবে।
রোডম্যাপটি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয় পক্ষ দ্বারা স্বাগত জানালেও চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু (২০০৪)
১৯২৯ সালে মিশরের কায়রোতে জন্ম নেয়া ইয়াসীর আরাফাতের পুরো নাম হলো মুহাম্মদ আবদেল রহমান আব্দেল রউফ আরাফাত আল-কুদওয়া আল-হুসেইনী। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলওর চেয়ারম্যান হিসাবে আরাফাত ইসরায়েলী দখলদারির বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করেন। ২০০২ হতে ২০০৪ সালের শেষভাগ পর্যন্ত আরাফাত ইসরাইলী সেনাবাহিনীর হাতে তার রামাল্লার দপ্তরে কার্যত গৃহবন্দী হয়ে থাকেন। ২০০৪ এর শেষদিকে আরাফাত অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং কোমায় চলে যান ইয়াসির আরাফাত। ২০০৪ সালের নভেম্বর ১১ তারিখে প্যারিসে চিকিৎসারত অবস্থায় ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সুস্পষ্ট কোন কারণ তাতক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও সুইস গবেষকরা বলছেন তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রয়োগে তার মৃত্যু হতে পারে। ইয়াসির আরাফাতের দেহাবশেষ-এর গবেষণার পর তার হাড়ে বিষাক্ত পোলোনিয়ামের সন্ধান পেয়েছেন তারা। তার মৃত্যু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামে মারাত্মকভাবে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি করে এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।
গাজা থেকে ইসরায়েলি প্রত্যাহার (২০০৫)
ইসরায়েল একতরফাভাবে গাজা উপত্যকায় বে-আইনি বসতি ধ্বংস করে এবং তার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে সরিয়ে নেয়। নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সংঘাত নিরসনের উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপটি গ্রহণ করা হয়েছিল, তবে এর ফলে গাজায় শাসন পরিচালনায় শূন্যতা তৈরি হয়েছিল।
ফিলিস্তিনি আইনসভা নির্বাচনে হামাসের বিজয় (২০০৬)
২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারী ফিলিস্তিনি আইন পরিষদ নির্বাচনে হামাস ব্যপকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এবং ইসমাইল হানিয়াকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয় এবং একটি জাতীয় ঐক্য ফিলিস্তিনি সরকার গঠন করা হয়। ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে ফাতাহর আশানুরূপ সাফল্য অর্জনে ব্যার্থতায় হতাশা থেকেই গাজাবাসি হামাসকে বেছে নেয় নতুন শাসক হিসেবে। ফলে গাজা শাসনকারী হামাস এবং পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণকারী ফাতাহর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন দেখা দেয়।
লেবানন যুদ্ধ (২০০৬)
২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধ ছিল লেবানন, উত্তর ইসরায়েল ও গোলান হাইটে ঘটা ৩৪ দিনের একটি সামরিক সংঘাত, যাকে ২০০৬ ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বলা হয় এবং লেবাননে জুলাই যুদ্ধ নামে পরিচিত। প্রধান দলগুলি হল হিজবুল্লাহ আধা সামরিক বাহিনী এবং ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ২০০৬ সালের ১২ জুলাই শুরু হয় এবং ১৪ ই আগস্ট ২০০৬ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
আনাপোলিস সম্মেলন (২০০৭)
২০০৭ সালের নভেম্বরে মিশরের আনাপোলিসে অনুষ্ঠিত তিন-পক্ষের সম্মেলনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএলও), ইসরায়েল সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য আলোচনার রূপরেখা হিসাবে একটি নথিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে শেষপর্যন্ত এটি সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
গাজা গণহত্যা (২০০৮-২০০৯)
গাজা গণহত্যা ইতিহাসে অপারেশন কাস্ট লিড বা আল ফুরকান যুদ্ধ নামেও পরিচিত। ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলী প্রতিরক্ষা বাহিনী ( আইডিএফ)–এর মধ্যে ২০০৮ সালের ২৭ যা ডিসেম্বর শুরু হযইয়ে তিন সপ্তাহ ব্যাপী চলে ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারীতে এক তরফা যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়। এই যুদ্ধে ১,১৬৬ থেকে ১,৪১৭ ফিলিস্তিনি এবং ১৩ ইসরায়েলীর মৃত্যু হয়।
ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দান (২০১২)
২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে ‘বিশেষ পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের’ মর্যাদা দেয়। এই সিদ্ধান্তের অর্থ হল ফিলিস্তিন এখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কথা বলতে এবং ভোট দিতে পারে, এবং এটি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং সংস্থাগুলিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধ (২০১২ ও ২০১৪)
২০১২ সালে এবং ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয় (অপারেশন পিলার অফ ডিফেন্স অ্যান্ড অপারেশন প্রোটেক্টিভ এজ)। এই সংঘাতের ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডের ওপর আন্তর্জাতিক নজরদারি বৃদ্ধি পায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের জেরুজালেম সিদ্ধান্ত (২০১৭)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন এবং তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
আব্রাহাম চুক্তি চুক্তি (২০২০-২০২১)
সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান এবং মরক্কো সহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সংকটের বর্তমান অবস্থা
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ২০১৪ সাল থেকে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে ২০২১ সালের নভেম্বরে। এই তদন্তকে ইসরায়েল পক্ষপাতদুষ্ট ও অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করলেও হামাস একে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ হিসাবে অভিনন্দন জানিয়েছে।
২০২২ সালের মে মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। ইহুদি ও মুসলমান উভয়ের জন্য পবিত্র স্থান পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি পুলিশি অভিযান এবং উচ্ছেদের ফলে এই সহিংসতা শুরু হয়। ১১ দিনের এই যুদ্ধে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় মিশর একটি যুদ্ধবিরতি আনতে সক্ষম হয়েছিল। তবে পরের বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, পশ্চিম তীর এবং গাজায় সহিংসতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ২০২২ সালে সর্বমোট ২,০০০ এরও বেশি লোক মারা যায়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলী নিরাপত্তা ব্যূহ ভেদ করে আকস্মিকভাবে ইসরায়েল আক্রমন করে। ওই সাড়াশি আক্রমনে ইসরাইলি দাবি অনুযায়ি প্রায় ১২০০ জন ইসরাইলি নিহত, কয়েক হাজার আহত হন এবং প্রায় ২৪০ জনকে হামাস বন্দি করে। হামাসের আক্রমণের জবাবে ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা চালায় এবং পরে স্থল আক্রমণ চালায়। মসজিদ, চার্চ, সিনাগগ, জাতিসংঘের স্থাপনা, স্কুল, হাসপাতাল, কিছুই বাদ যায়নি ইসরাইলের নির্বিচার হামলা থেকে। ৭ অক্টোবর থেকে পরবর্তি ৬ দিনের মধ্যে ইসরাইল ৬০০০ বোমা নিক্ষেপ করে ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজায়। ২০১৯ সালে আমেরিকা প্রায় সমপরিমান ৭৪২৩টি বোমা হামলা করেছে ৬৫২৮৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের আফগানিস্তানে। বিভিন্ন স্বাধীন সংবাদমাধ্যম বলছে এপর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ১৭০০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে এবং যুদ্ধ পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। রাশিয়া, চীন, মিশর, তুরস্ক, কাতার এবং অন্যান্যদের মতো বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও এই যুদ্ধে আমেরিকা, ন্যাটো, কানাডা সরাসরি ইসরাইলে পক্ষ নিয়েছে এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র, রসদ ও সহায়তা পাঠাচ্ছে ইসরাইলে।
ছয় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস ও হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পর দখলদার ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি হামাস চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। পরবর্তিতে এই বিরতি আরো দুদিনের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। বিনিময়ে হামাস ৭ অক্টোবর থেকে অপহৃত ২৩৭ জন বন্দীর মধ্যে ৫০ জন বেসামরিক নারী ও শিশুকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে এবং ইসরাইল তাদের কারাগার থেকে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি ইসরাইল যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক এবং সবচেয়ে জটিল সংঘাতগুলির মধ্যে একটি, যার কোনও সুস্পষ্ট সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার পাশাপাশি মানবাধিকার ও মানবিককতার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি যুদ্ধ।
One Comment
Leave A Comment
সম্পর্কিত আর্টিকেল
কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন
এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…
- ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতিহাস
- সমস্যাটি জায়োনিজম দিয়ে শুরু
- উনিশ শতকের শুরু
- বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে
- বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি
- বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ
- একবিংশ শতাব্দী
- দ্বিতীয় ইন্তিফাদা (২০০০-২০০৫)
- পশ্চিম তীরের দেয়াল নির্মাণ (২০০২)
- শান্তির রোডম্যাপ (২০০৩)
- ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু (২০০৪)
- গাজা থেকে ইসরায়েলি প্রত্যাহার (২০০৫)
- ফিলিস্তিনি আইনসভা নির্বাচনে হামাসের বিজয় (২০০৬)
- লেবানন যুদ্ধ (২০০৬)
- আনাপোলিস সম্মেলন (২০০৭)
- গাজা গণহত্যা (২০০৮-২০০৯)
- ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দান (২০১২)
- ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধ (২০১২ ও ২০১৪)
- ট্রাম্প প্রশাসনের জেরুজালেম সিদ্ধান্ত (২০১৭)
- আব্রাহাম চুক্তি চুক্তি (২০২০-২০২১)
- ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সংকটের বর্তমান অবস্থা
সাম্প্রতিক আর্টিকেল
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) কী? ইক্যুইটির ম্যাক্সিম সমূহ কী কী?
ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) হল সাধারণ আইন (Common Law) এর শর্তের বাইরে গিয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা
আব্রাহাম চুক্তিঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, এবং ফিলিস্তিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডঃ ফিলিস্তিনের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের বুলি!
পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয় ।
গাজায় যুদ্ধবিরতিঃ সহিংসতার সাময়িক বিরতি নাকি স্থায়ী শান্তির পথ?
যুগ যুগ ধরে সংঘাত চলমান গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এক গভীর প্রশ্ন উঠে আসে: এটি কি সহিংসতার একটি সাময়িক বিরতি, নাকি একটি স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা?
গাজা যুদ্ধ বিরতি চুক্তিঃ ইসরায়েল ও হামাসের ঐতিহাসিক সমঝোতা
দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর, অবশেষে ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় দোহায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[…] […]