জালিওয়ানওয়ালা বাগান, পাঞ্জাবের অমৃতসরে শিখদের বিখ্যাত স্বর্ণমন্দিরের পাশেই এর অবস্থান। ছয় সাত একর জুড়ে বাগান। চারদিকে দেয়াল, প্রায় দশফুট উচু সে দেয়াল। দেয়ালের ওপাশে ছোট বড় দালান। বাগানে ঢুকতে সরু রাস্তা ধরে মোটে ৫ টা দরজা আছে। বর্ষায় শস্য লাগানো হলেও প্রতি বছর মিছিল মিটিং এখানেই হয়। বাগানের মাঝখানে একটা সমাধি আর তার পাশে একটা কূয়া আছে। কূয়ার প্রস্থ বড় জোর চার বর্গফুট হবে। স্বর্ণমন্দিরে আসা লোকজন এখানে আসে। বাগানের পাশে প্রতি বছর বৈশাখি মেলামেলা বসে। বৈশাখ মাসের পয়লা দিনে সেই মেলা বসে। আজকেও সেই মেলা বসেছে বাগানের পাশে। মেলায় গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ি, খদ্দের, হাজারো লোকের সমাবেশ হয় এখানে। অমৃতসর স্বর্ণমন্দির

কুখ্যাত রাওলাট আইনের প্রতিবাদে এখানেই বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছে মোহাম্মাদ বশির। সমাবেশে প্রধান অতিথি কংগ্রেসের লাল কানহাইয়া ভাটিয়া। কিছুদিন আগে সত্যপাল ও কিচলুকে আটক করাও বিক্ষোভের অন্যতম কারণ। ব্রিটিশদের এসব অন্যায্য কার্যকলাপে যারপরনায় সবাই বেজার। সবাই চটে আছে। সেই জনক্ষোভ থেকে তার জন্যই এই আয়োজন। বিকেল চারটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা। এই বিক্ষোভে সামিল হতে ধীরে ধীরে লোকজন জড়ো হতে থাকে। পাশের মাঠে বৈশাখি মেলা চলাতে আরো লোক জড়ো হয়েছে বাগানে। এর সাথে সাথে কেউ কেউ স্বর্ণমন্দিরে প্রার্থণা শেষে বাড়ি ফেরার পথে এখানে এসেছে, কেউ মেলা থেকে বাড়ি ফিরছে। কেউ কেউ মিটিংয়ের জন্য এসেছে। মেলায় আসা লোকজন, মন্দিরে আসা লোক আর মিটিং এ আসা লোকজন…সবকিছু মিলে হাজার খানেক লোকের জমায়েত। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে হতে হতে হাজার সাতেক লোকের জমায়েত হয়েছে। এরই মধ্যে মাঠের এপাশ থেকে ওপাশ প্রচন্ড শব্দ করে একটা বিমান চলে গেল।

অবশেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মিটিং শুরু হলো। মিটিং শুরু হওয়ার এক ঘন্টা বাদে হঠাৎ বাগানের চারপাশ থেকে গুলি শুরু হলো। মুহুর্মুহু গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে শত শত মানুষ। পালাবার রাস্তা নেই কোথাও, রাস্তা সব বন্ধ করে দিয়েছে! কেউ কেউ দেয়াল টপকে পালাতে যেয়ে সেখানেই গুলি খেয়ে ঝুলে আছে। কেউ কোলে ছয় সাত মাস বাচ্চাসহ মরে পড়ে আছে। অসংখ্য মানুষ কুয়োর লাফিয়ে পড়েছে! পানির নালা রক্তে ভেসে যাচ্ছে! টানা দশ মিনিট ধরে গুলি চলে বিক্ষোভ সমাবেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর। কি বীভৎস! কি নৃশংস বর্বরতা!যদিও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি আছে । তবু সেদিন নারী, শিশু সহ কমপক্ষে ৪০০ জন মানুষ সেদিন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এই গণহত্যার শিকার হলো কারা? কেনইবা তাদের ওপর এই আক্রমন? কারা এভাবে নিরস্ত্র গণজমায়েতে বর্বর গণহত্যা চালালো? আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব ইতিহাসের কুখ্যাত জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যার কথা। ইতিহাসে জালিয়ানবাগ গণহত্যা অমৃতসরের গণহত্যা বলেও পরিচিত।

জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যার প্রেক্ষাপট

পাঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে ব্রিটিশদের শাসন-শোষন নীতির অন্যতম কুখ্যাত উদাহরণ। তবে এই দিনের প্রেক্ষাপট অনেক গুলো ঘটনার ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছে। সেসব জানতে ও বুঝতে আমাদেরকে ব্রিটিশদের ভারতে আগমনের শুরু থেকেই আলোচনা করতে হবে। জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যার প্রেক্ষাপট বুঝতে ব্রিটিশদের ভারতে আগমন থেকেই আমাদের আলোচনা শুরু করছি।

ব্রিটিশদের আগমন

প্রায় দুইশ বছর শাসন করা ধূর্ত ব্রিটিশদের আগমন ঘটেছিল ব্যবসায়ী হিসেবে, সাধারণ ব্যবসায়ী হিসেবে। আজ থেকে প্রায় চারশ বছর আগে ১৬০৮ সালের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশরা ভারতের সুরাটে তাবু ফেলে। তারপর থেকে তাদের পেশা বণিকবৃত্তি থেকে ধীরে ধীরে আসল রূপ নেয়া শুরু করে।

ভারতে তখন সারা বিশ্বে সম্পদ-প্রাচুর্যতার গল্পে বেশ পরিচিত। ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ ভারতের বিশেষ করে মসলার কদর ছিল বিশ্ববাজারে অনেক বেশী। আরব বণিকদের এই ব্যবসায় আধিপত্যের কারণে ইউরোপীয়দের অনেক চড়া দামে ব্যবসা করতে হয়েছিল। সেই সমস্যার সমাধানে ক্রিস্টোফার কলম্বাস ভারতে আসার নতুন পথ খুঁজতে বের হন। যদিও পথ ভুল করে তিনি আজকের বাহামায়  গিয়ে পা রাখেন এবং নিজের ভুলকে জায়েজ করতে বাহামাকেই ভারতীয় কোন অঞ্চল হিসেবে এবং সেখানকার অধীবাসিদের নাম দেন রেড ইন্ডিয়ান। পরবর্তিতে এই অঞ্চল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে পরিচিত হয়।

ভারতটানে বেরিয়ে পড়া ইউরোপের এটিই ছিল প্রথম পদক্ষেপ। এই যাত্রায় কলম্বাস ব্যর্থ হলেও পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা সাগর পথে ভারতে আসার পথ ঠিকই খুঁজে পান। ১৪৯৮ সালে তিনিই প্ৰথম ইউরোপীয় ব্যক্তি যিনি সম্পূৰ্ণ সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপ থেকে ভারতের কালিকটে আসেন। এবং এ দিক থেকেই তিনি ইউরোপের সাথে পাশ্চাত্য দুনিয়ার সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন৷

ভাস্কো দা গামার এই আবিষ্কার বৈশ্বিক সাম্ৰাজ্যবাদের ইতিহাসে অতি তাৎপৰ্য্যপূৰ্ণ ছিল কারণ এই ভ্ৰমণের দ্বারাই পর্তুগীজদের এশিয়া মহাদেশে দীৰ্ঘকালীন উপনিবেশ স্থাপনের পথ সুগম হয়েছিল৷ তার দেখানো পথ ধরেই ব্রিটিশরা ভারতে পা রাখে ১৭ শতকে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাত ধরে। সালে।  ব্রিটিশদের আগে পর্তুগিজরা আসলেও তারা এ অঞ্চলে ব্রিটিশদের মত সুবিধা করতে পারেনি।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী শাসন

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারতে ব্যবসার অনুমতি পায় সম্রাট জাহাঙ্গিরের কাছে ১৬১৩। তারা এদেশে মসলা থেকে শূরু করে সিল্ক, সুতি কাপড়, নীল, চা ও আফিমের ব্যবসা শুরু করে। শুরুতে তারা ব্যবসার ধান্দা করলেও ধীরে ধীরে তারা বিভিন্ন অঞ্চলে জমি ক্রয় করা শুরু করে। তারা প্রথমে সুরাটে কুঠি স্থাপন করলেও ধীরে ধীরে ভারতের কলকাতা, বোম্বে, মাদ্রাজসহ বিভিন্ন জায়গায় কুঠি স্থাপন করা শুরু করে। ব্রিটিশরা ব্যবসা থেকে নিজেদের দৃষ্টি সরিয়ে এখানকার ক্ষমতা তথা ভারতশাসনের দিকে নজর দেয়।

ব্রিটিশরা ভারত শাসনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে ১৬৯৮ সালে, যখন তারা সুতানট, কালিকট ও গোবিন্দপুরের জমিদারি কিনে নিয়ে কলকাতা শহরের গোড়াপত্তন করে। তার পরপরেই ১৭০০ সালে বিখ্যাত উইলিয়াম দুর্গ গড়ে তোলে তারা। ধীরে ধীরে তারা ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ শুরু করে যখন তারা বুঝতে পারে ভারতে কেউ জোটবদ্ধ নয়, অনেকগুলো ছট ছোট রাজ্য এই ভারত বিভক্ত।

সবচেয়ে বড় ঝড় ছিল ১৭৫৭ সালে, ব্রিটিশ রবার্ট ক্লাইভের হাতে বাংলার নবাব সিরাজঊদ্দৌলার পতন। ১৭৬৪ সালের বক্সারের যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা আরো শক্ত আসন গাড়ে ভারত শাসনের পথে। ভারতে ব্রিটিশদের অনানুষ্ঠানিক শাসন শূরু হয় পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে। রবার্ট ক্লাইভ ইংরেজ সরকারের গভর্ণর হিসেবে ভারতে নিযুক্ত হন ১৭৬৫ সালে। দিল্লির বাদশাহ শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানি জোর পুর্বক আদায়ের মাধ্যমে ব্রিটিশদের রাজস্ব আদায় শুরু হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে ১৭৬৬-৯৯ সালের মহীশূর যুদ্ধ ও ১৭৭২-১৮১৮ সালের মারাঠা যুদ্ধের পর শতদ্রু নদীর দক্ষিণে ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে কোম্পানির শাসন কায়েম হয়। ফলে বাংলায় এক নতুন সামন্ত্রতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। প্রশাসনিক দায়িত্ব, আর রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কোম্পানি। আর এই সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে অবাধ লুণ্ঠন ও অত্যাচার শুরু করে দেয়। ১৭৭০ সালে অনাবৃষ্টি হয়। দেশে দেখা দেয় চরম বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ যা কুখ্যাত ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এই দুর্ভিক্ষে কয়েক লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যান।

কোম্পানির লুটপাটের ফলে ভারতবর্ষের সবচেয়ে ধনী প্রদেশ গুলোর অবস্থার একসময় এতো অবনতি হয় যে একসময় কোম্পানির প্রত্যাশিত রাজস্বের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। কোম্পানিটি একসময় নিজের দেনাও নিয়মিত শোধ করতে পারছিল না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, ব্রিটিশ ক্রাউন এর কাছে কোম্পানির দেনা ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড এবং আয়কর ১ মিলিয়ন পাউন্ড বকেয়া পড়ে যায়। পরিশোধ করতে না পেরে কোম্পানির পরিচালকরা ১৭৭২ সালের ১৫ই জুলাই চার লাখ পাউন্ড লোনের জন্য ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের কাছে আবেদন করেন। আগস্টের মধ্যে, পরিচালকগণ সরকারের কাছে জানিয়েছিলেন তাদের আসলে আরও এক মিলিয়ন পাউন্ডের প্রয়োজন হবে। পরের বছর ব্রিটিশ সরকার কোম্পানিকে দেউলিয়াত্ব থেকে বেইল আউট করে।

এরপর ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কোম্পানির শাসন চলেছিল মূলত এবং মুখ্যত লাভজনক ব্যবসায়িক দৃষ্টি ও রীতিপদ্ধতিতেই। কোম্পানির স্বার্থে ও সুবিধার জন্য ১৭৬৫ সালে বাংলার কৃষিপণ্যকে বাণিজ্যিকীকরণ, ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস, ১৮১৩ সালে ভারতে ফ্রি ট্রেড প্রবর্তন এবং ওই বছরই বাংলার মুখ্য শিল্প খাত টেক্সটাইল রপ্তানি বন্ধ, ১৮২০ সালে টেক্সটাইলকে আমদানি পণ্য হিসেবে ঘোষণা, ১৮৩০-এ কলকাতা ডকিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা, ১৮৩৫ সালে ইংরেজিকে অফিস-আদালতের ভাষা হিসেবে ঘোষণা, ১৮৩৮-এ বেঙ্গল বন্ডেড ওয়্যারহাউস অ্যাসোসিয়েশন গঠন এবং ১৮৪০ সালে বেসরকারি খাতে চা-বাগান স্থাপনের মাধ্যমে এ দেশীয় অর্থনীতির স্বনির্ভর সত্তাকে পরনির্ভর করার কার্যক্রম শুরু হয়।  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অব্যাহত অস্তিত্বর বিরুদ্ধ কার্যকলাপে স্বয়ং ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনেকেই বিরোধিতা শুরু করেন। কোম্পানীর অরাজকতা ভারতে ব্রিটিশদের উপস্থিতির জন্যই একসময় বিপদজনক হয়ে দাঁড়ায়।

সিপাহী বিদ্রোহ, ১৮৫৭

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যমূলক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন সংগঠিত হয় ১৮৫৭ সালে । সিপাহি বিদ্রোহই ছিল ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ। নানা সাহেব, তাঁতিয়া টোপি, লক্ষ্মীবাই, ২য় ষ বাহাদুর শাহ জাফর সিপাহি বিদ্রোহে নেতৃত্ব  দেন। রাজধানী দিল্লী থেকে ৪০ মেইল দূরে মিরাট সেনানিবাসে এই বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহ রাতারাতি উত্তর ও মধ্য ভারত জুড়ে দিল্লি, আগ্রা, কাউনপুর, গোয়ালিয়র এবং লখনউয়ের মতো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহ দমনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ব্রিটিশ সরকারের সামরিক সহায়তা নিতে হয়েছিল।  এক বছর নৈরাজ্যের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনীর বদলে ব্রিটিশ সৈন্য নিয়োগ করে ব্রিটিশরা বিদ্রোহীদের দমন করতে সক্ষম হন। সর্বশেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে ব্রহ্মদেশে নির্বাসিত করা হয়; এবং তার সন্তানদের শিরোচ্ছেদ করে মুঘল বংশকে নির্মূল করা হয়। এই বিদ্রোহ দমনকালে ইংরেজ বাহিনী নির্মমভাবে বহু নিরপরাধ নরনারী, শিশু, বৃদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করে।  ৮ জুলাই ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করলে বিদ্রোহের অবসান ঘটে।

এরপর ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত সরকার আইন প্রবর্তন করে। এই আইনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, অবসান হয় পরাধীনতার প্রথম শতকের। ছলনার মুখোশ খুলে ভারত শাসনের ভার সরাসরি গ্রহন করে ব্রিটেন।

ব্রিটিশ শাসন

১৮৫৮ সালে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তির হাতে স্থানান্তরিত হলে  ব্রিটিশদের সরাসরি আনুষ্ঠানিক ভারত শাসন শুরু হয় ১৮৫৮ সালে। এই শাসন ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।  ব্রিটিশদের নীতি ছিল ‘বিভাজন ও শাসন’। ব্রিটিশ শাসনকালে ভ্রান্ত সরকারি নীতির কারণে একাধিক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এসব দুর্ভিক্ষে কোটি কোটি মানুষ মারা যান না খেতে পেয়ে।

১ম বিশ্বযুদ্ধ

ব্রিটিশরা বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য, সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পারস্পরিক কলহের সুযোগ নিয়ে তাদের ক্ষমতা রক্ষায় সক্ষম হয়। ১৮৫০-এর দশকের মধ্যেই বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই ব্রিটিশরা নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল।ব্রিটিশরা তাদের ভারতীয় সহযোগীদের হাত ধরে এদেশে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ক্ষমতালিপ্সু কয়েকজন জমিদার শিবাজি রাও সিন্ধ, জয়চন্দ, রাজা রনবীর সিং, মীর জাফর, রাজা বাহাদুর জীবন লাল অন্যতম, যাদের কারণে ব্রিটিশ পরাধীনতার শৃঙ্গখল শতবছর ধরে পরতে হয়েছিল ভারতবাসীর। ক্ষমতা লিপ্সু এসব জমিদার ক্ষমতার লোভে ব্রিটিশদের সাথে আঁতাত করে নিজেদের রাজ্য পরিচালনা করত। রাজস্ব আদায়ে তারা ব্রিটিশ চাহিদা মেটাতে যেয়ে আরো অমানবিক হারে নির্যাতন-নিপীড়ন করে। ব্রিটিশদের ‘ভাগ কর, শাসন কর’ নীতির আলোকে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে জাতিভেদে বিভক্ত করে রাখত যাতে তাদের শোষনের বিরুদ্ধে কেউ মাথাচাড়া দিতে না পারে।

Is the USA a Leading Terrorist State?

যদিও পলাশীর প্রান্তরে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পর থেকেই বাংলা ও পাঞ্জাব অঞ্চল বিশেষ করে কখনোই ব্রিটিশদের অধীনতা মেনে নেয়নি। উনিশ শতকের শুরুর দিকে স্বাধীনতার আকাঙ্খা সার্বজনীন স্বীকৃতি পায়। এসময় থেকে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্খা প্রবল হয়ে দানা বাঁধতে শুরু করে। ১৮৮৫ সালের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আকাঙ্খার আনুষ্ঠানিক রূপ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

প্রতিষ্ঠার শুরুতে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজদের অধীনে থেকেই স্বায়ত্তশাসন আদায় করা। কিন্তু “ভারত স্বায়ত্বশাসনের জন্য এখনো উপযুক্ত হয়নি” বলে ব্রিটিশরা এ দাবি মেনে নেয়নি। কিন্তু স্বায়ত্তশাসনের এই চিন্তাভাবনা দমে যায়নি। ভারত জুড়ে যোগাযোগ খাতে রেল, টেলিগ্রাফ এবং কলকারখানা ইত্যাদি স্থাপনের সাথে সাথে স্বায়ত্তশাসনের চিন্তা ভারত বর্ষ জুড়ে ছড়িয়ে যেতে থাকে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকটে লোকজন দিশেহারা হয়ে এক সময়ে গোটা বিশ্বজুড়ে স্বৈরাচারী সরকারগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। পশ্চিমা সরকারগুলো এসব সংকট সামাল দিতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল নিজেদের মধ্যে লুটপাটের জন্য ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। আফ্রিকার মহাদেশের বিভিন্ন  অঞ্চলগুলোতে ইউরোপের দেশগুলো  উপনিবেশ স্থাপন করে। যার ফলে ১৯১ সালে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

শুরুতে ভারতীয়রা এই যুদ্ধে অংশ নেয়নি বা নিতে চায়নি। তার অন্যতম কারণ হলো ভারতীয়দের তখন ব্রিটিশদের অধীনে যুদ্ধ করলে অটোমান সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। বিশেষ করে ভারতীয় মুসলমানরা এটা মেনে নিতে চায়নি। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের যুদ্ধে অংশগ্রহনের বিনিময়ে স্বায়ত্বশাসনের প্রতিশ্রুতি দিলে মহাত্মাগান্ধীসহ অনেকে যুদ্ধে অংশ নেন।

যুদ্ধে ভারত ব্রিটেনকে সৈন্য-সামন্ত, অস্ত্র-গোলাবারুদ, অর্থসম্পদ দিয়ে অংশগ্রহণ করে। লাখ লাখ ভারতীয় সৈন্য ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ব্রিটেনের অধীনে যুদ্ধ করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশদের নীতির কোন পরিবর্তন না হওয়ায় তাদের বিরুদ্দে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বরং যুদ্ধ শেষে বহু সৈনিককে চাকরীচ্যুত করা হয়। এতে করে অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। এসময় ইনফুল্যেঞ্জাতে প্রায় এক কোটি মানুষ মারা যায়। জন অসন্তোষ ধীরে ধীরে ক্ষোভে পরিণত হয়।

গাদার বিদ্রোহ ও ডিফেন্স অফ ইন্ডিয়া আইন ১৯১৫

বাংলা ও পাঞ্জাব সব সময় উপনিবেশবিরোধী ছিল। যুদ্ধ পরবর্তী ব্রিটেনের আচরণে এই অঞ্চল দুটিতে ব্রিটিশ বিরোধীতায় আরো ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়। এই দুটি অঞ্চলে ১৯১৪ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যবর্তি সময়ে একটা বড় ধরণের বিদ্রোহের পরিকল্পনা হয় যা গাদার বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহের অংশীদার ছিল আমেরিকা-কানাডার পাঞ্জাবিদের গাদার পার্টি, জার্মানির বার্লিন কমিটি, ভারতের বিদ্রোহী গ্রুপ এবং মূল পরিকল্পনায় ছিল আমেরিকা-কানাডার পাঞ্জাবি গোষ্ঠী । পাঞ্জাব থেকে এই বিদ্রোহের সূচনা হয়ে বাংলা হয়ে আমেরিকা , জার্মানি , সিঙ্গাপুররে পরপর ছড়িয়ে পড়বে। এই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু শেষ মূহুর্তে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হাতে এই বিদ্রোহের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয় এবং এর সাথে জড়িত ব্যক্তিরা গ্রেফতার হন।

এই বিদ্রোহের আশঙ্কায় ভারতে অনেকগুলো আইন পাশ করে ব্রিটিশ সরকার, যেমনঃ দ্য প্যাসেজেস ফর ফরেনার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯১৪, দ্য ইনগ্রেস ইনটু ইন্ডিয়া অর্ডিন্যান্স, ১৯১৪ এবং দ্য ডিফেন্স অব ইন্ডিয়া এক্ট, ১৯১৫। এই আইনগুলো পাস করে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এসব আইনের অধীনে অনেক বিদ্রোহীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়, অনেককেই কারাগারে আটক করা হয়।

How Sikkim became a part of India?

এই আইনগুলোর মধ্যে দ্য ডিফেন্স অব ইন্ডিয়া আইনটি ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বিদ্রোহী কার্যকলাপগুলো দমানোর জন্য এই আইনটি জরূরী ভিত্তিতে পাশ করা হয়। ব্রিটেনের ডিফেন্স অব দ্য রিয়েল্ম আইনের আদলেই ভারতে এই আইনটি পাশ হয়। ব্রিটেনের আইনের অনূরূপভাবে প্রশাসনকে প্রতিরোধমূলক আটক, বিনা বিচারে আটক, লেখালেখি, বক্তৃতা এবং চলাচলের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু আইনের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত হারে শুরু হয় কোনধরণের বাছ বিচার ছাড়াই। এই আইনের এমন মাত্রাতিরিক্ত ও বাছবিচারহীন ব্যবহার ভারতীয়দের ক্ষেপিয়ে তোলে। ক্ষোভের এ আগুনে ঘি ঢালে এই আইনের অধীনেই যখন গাদার বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীদের এই আইনের অধীন বিচার করা হয়।

রাওলাট আইন, ১৯১৯  

ডিফেন্স অফ ইন্ডিয়া আইন ১৯১৫ আইন কার্যকর হওয়ার পর ভারত জুড়ে তীব্র জন অসন্তোষ দেখা দেয় এই আইনের বিরুদ্ধে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ববর্তি চরমপন্থী জাতীয়তাবাদ জেগে ওঠে ভারতীয়দের মধ্যে। ভারতীয় কংগ্রেসের সাথে কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলো একজোট হওয়া শুরু করে। ১৯১৬ সালে জাতীয়ু কংগ্রেস সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সাথে অস্থায়ী জোট গঠন করে। এই জোট সফলভাবে লখনোউ চুক্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হয়। মহাত্মা গান্ধীর মত নেতাদের নেতৃত্বে ভারতে গণ জাগরন শুরু হয়।

ভারতীয় জনগনের এই অসন্তোষ অনুধাবন করে ভারতে ১৯১৮সালে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার প্রতিবেদন তৈরী করে এডউইন মন্টেগু ও লর্ড চেমসফোর্ডের নেতৃত্বে। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে স্বায়ত্তশাসনের দায়িত্ব তুলে দেয়ার জন্য এই সংস্কার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবনায় ভারতে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার মাধ্যমে সরকার পরিচালনার প্রস্তাব দেয়া হয়। এই প্রস্তাব ১৯১৯ সালে ভারত শাসন আইন নামে পাশ হয় যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকবে প্রতিরক্ষা, বিদেশ নীতি, টেলিগ্রাফ, রেল ও ডাক যোগাযোগ ও বৈদেশিক বাণিজ্য। অপরদিকে আঞ্চলিক সরকারের অধীনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সরকারি কর্ম, সেচ, আইন শৃঙ্খলা, বিচারের ভার অর্পিত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। তাদের এই দ্বৈত শাসন নীতি ভারতে স্বায়ত্ত্বশাসনের ভিত গড়ে দেয়। মন্টেগু ও চেমস্ফোর্ড সংস্কার রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত শাসন আইন বহুমুখী সংস্কার নিয়ে আসে ভারতে।

কিন্তু ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের আড়ালে ব্রিটেন ১৯১৮ সালে সিডনি রাওলাটের নেতৃত্বে রাওলাট কমিটি গঠন করে তৎকালীন আন্দোলন  ও বিশেষ করে গাদার বিদ্রোহ, রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের আফগানিস্তান অভিযানের সাথে বলশেভিক রাশিয়ানদের সাথে যোগসূত্রের প্রেক্ষাপটে। বলশেভিক ও জার্মানদের সাথে পাঞ্জাব ও বাংলার জাতীয়তাবাদীদের কোন যোগসূত্র আছে কিনা সেটি খুঁজে বের করাই ছিল উদ্দেশ্য। এই কমিটির পরামর্শেই ১৯১৯ সালের ১৮অই মার্চ ভারতীয়দের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা সীমিতি করার জন্য দ্য এনারকিক্যাল এন্ড রেভ্যুলুশনারি ক্রাইমস এক্ট পাশ করা হয়। মূলত এই আইনটি ছিল ১৯১৫ সালের ডিফেন্স অব ইন্ডিয়া এক্টের নতুন সংস্করণ। এই আইনটি রাওলাট কমিটির চেয়ারম্যনের নামানুসারে রাওলাট এক্ট নামেই পরিচিত হয়। বিপ্লবী জাতীয়তাবাদীদের বিপ্লবী কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এই আইনের আবির্ভাব।

এই আইনের অধীনে নির্বিচারে বিনা কারণে গ্রেপ্তার, গুম ও সাক্ষ্য প্রমাণহীন বিচার ও বন্দীত্বের বেপরোয়া নির্যাতন শুরু হয়। এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন বাল গঙ্গাধর, বিপিনচন্দ্র পাল, মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ, এ্যানি বেসান্ত প্রমুখ। রাওলাট আইনের প্রতিবাদে মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ পদত্যাগ করেন এবং ভাইসরয়কে চিটি লেখেন,

আমি এই বিলটি পাশ এবং যেভাবে বিলটি পাশ হয়েছে তার প্রতিবাদে আমি আমার পদত্যাগপত্র জমা দিলাম, যে সরকার শান্তি-শৃঙ্গখলার সময়ে এমন আইন পাশ বা জারি করতে পারে সে কোন সভ্য সরকার হতে পারে না”

মহাত্মা গান্ধীও এর বিরুদ্ধে অহিংস এবং সত্যাগ্রহ তথা রক্তপাতহীন আন্দোলনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদের আয়োজন করেন। তাকে সমর্থণ দেন মাওলানা আজাদ, মুখতার আহমেদ আনসারি, হাকিম আজমল খান, আব্বাস তয়েবজি, মাওলানা শওকত আলী ও কংগ্রেস। ৩০ শে মার্চ তিনি সারাদেশ জুড়ে রতাল ও দিনব্যপি  অনশনের ডাক দেন। পরবর্তিতে হরতাল ৩০ মার্চের পরিবর্তে ৬ এপ্রিল পালন করার ঘোষনা দেয়া হয়। কিন্তু সারাদেশে ৩০ তারিখের হরতাল বাতিলের সিদ্ধান্ত পৌছায়নি। অমৃতসরে বাতিলের খবর দেরিতে পৌছানোর কারণে হরতাল সেখানে পালিত হয়। ২৯ শে মার্চ ডঃ সত্যপালকে হরতালের সমর্থনে ভাষণ দেয়া থেকে বিরত রাখেন কর্ণেল ডায়ার। পরের দিন সাইফুদ্দিনকেও ভাষন প্রদানে বাঁধা দেয়া হয়।

২৯ শে মার্চ, ১৯১৯

হরতাল ও অনশনের ডাক

মহাত্মা গান্ধী অহিংস এবং সত্যাগ্রহ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ শে মার্চ সারাদেশ জুড়ে হরতাল ও দিনব্যপি অনশনের ডাক দেন।

৩০ মার্চ, ১৯১৯

হরতালের তারিখ পরিবর্তন

৩০ মার্চের পরিবর্তে ৬ এপ্রিল হরতাল পালন করার ঘোষনা দেয়া হয়।

৫ এপ্রিল, ১৯১৯

হরতাল তুলে নেয়ার আহবান

৫ই এপ্রিলে অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনার মাইলস স্থানীয় নেতা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের হরতাল বাতিলের আহবান জানান।

৬ এপ্রিল, ১৯১৯

দিনব্যাপি হরতাল

পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী ৬ এই এপ্রিল সারাদিন হরতাল পালিত হয়।

৯ এপ্রিল, ১৯১৯

আন্দোলনের নেতাদের গ্রেফতার

৯ এপ্রিলে রাম নবমীতে গভর্ণর মাইলস আরভিং ও কর্ণেল ডায়ার মুসলিম নেতা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আইনজীবি ডঃ সাইফুদ্দিন কুচলে ও হিন্দুদের নেতা ডঃ সত্যপালকে আটক করে নির্বাসনে সিদ্ধান্ত নেয় এবং গান্ধীকে পাঞ্জাবে ঢুকতে বাধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

১০ এপ্রিল, ১৯১৯

মহাত্মা গান্ধীকে গ্রেফতার

১০ ই এপ্রিলে পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধীকে পালওয়াল রেল স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়।

১১ এপ্রিল, ১৯১৯

ইংরেজ নারী নিগৃহীত

১১ তারিখে একজন ইংরেজ-খৃষ্টান মিশনারী মার্সেলা শেরউড বিক্ষোভকারীদের হাতে নিগৃহীত হন।

১২ এপ্রিল ১৯১৯

বিক্ষোভ সমাবেশের সিদ্ধান্ত

১২ই এপ্রিল সন্ধ্যায় অমৃতসরের নেতাকর্মীরা পরের দিন জালিয়ানওয়ালা বাগে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন।

১৩ এপ্রিল, ১৯১৯

বিক্ষোভ সমাবেশ

১৩ই এপ্রিল বড় ধরণের কোন বিদ্রোহ সংঘটিত হতে পারে আশঙ্কা করে গোটা পাঞ্জাবে সামরিক আইন জারি করে কর্ণেল ডায়ার। বিকেলে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশের ওপর অতর্কিত হামলা করে শত শত সাধারণ মানুষ হত্যা করে ব্রিটিশ বাহিনী।

গান্ধীর ডাকে অমৃতসরে সর্বসম্মতিক্রমে ৬ তারিখেও হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত হয়। হরতালের আগের দিন অর্থ্যাৎ, ৫ই এপ্রিলে অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনার মাইলস স্থানীয় নেতা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের হরতাল বাতিলের আহবান জানান। মাইলসের ডাকে অনেকেই তাতে সায় দিলেও ডঃ সাইফুদ্দিন ও ডঃ সত্যপাল হরতাল তুলে নিতে রাজি হননি। হরতাল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত থাকে।

৯ এপ্রিলে রাম নবমীতে হিন্দু-মুসলিম উভয়েই একজোট হয়ে বিক্ষোভ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। তারা হিন্দু-মুসলিম জোটের পক্ষে ও মহাত্মা গান্ধীর পক্ষে স্লোগান দেন। রাম নবমীর ধর্মীয় আয়োজন বিক্ষোভের আয়োজনে পরিণত হতে সময়ে নেয়নি। হিন্দু-মুসলিম জোটের এই বিক্ষোভ গভর্ণর মাইলস আরভিং ও কর্ণেল ডায়ারকে চিন্তিত করে। তারা মুসলিম নেতা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আইনজীবি ডঃ সাইফুদ্দিন কুচলে ও হিন্দুদের নেতা ডঃ সত্যপালকে আটক করে নির্বাসনে সিদ্ধান্ত নেয় এবং গান্ধীকে পাঞ্জাবে ঢুকতে বাধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত রাতারাতি পাঞ্জাবে ছড়িয়ে পড়ে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে তিন চারজন বিক্ষোভকারী নিহত হন। এতে বিক্ষোভ আরো ফুঁসে ওঠে।

১০ ই এপ্রিলে পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধীকে পালওয়াল রেল স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে আহমেদাবাদের শিল্প শ্রমিক এবং পাঞ্জাবের সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হলে সরকার গান্ধীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এর পরও বিক্ষোভ কমেনি। ধর্মঘট এবং বিক্ষোভের লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় সরকারী দপ্তর এবং যানবাহন। সাদা চামড়ার ইউরোপীয় কর্মকর্তা এবং অধিবাসীদের উপরও ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাদের উপর আক্রমণও হয়।

ওইদিন রাতে অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনার মাইলস আরভিং-এর বাসভবনে মহাত্মা গান্ধী ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতা সত্যপাল ও সাইফুদ্দিন কুচলের মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ শুরু হয়।  বিক্ষোভে হামলা গুলি চালালে বিশ জনের মত বিক্ষোভকারী নিহত হন। এর প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ আরো সহিংস রূপ ধারণ করে। ব্রিটিশ স্থপনা, ব্যাংকগুলোতে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা, তিনজন ব্রিটিশ তাতে নিহত হন। এই হামলার সময়ে কয়েকজন মহিলা নিগৃহীত হন।

১১ তারিখে একজন ইংরেজ-খৃষ্টান মিশনারী মার্সেলা শেরউড শহরের অবস্থা বেগতিক দেখে স্কুল ছুটি দিয়ে বাচ্চাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। নিরাপদ স্থানে তিনি ফেরার পথে বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পড়লে স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে গোবিন্দগড় দুর্গে পাঠিয়ে দেয়। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে থাকলে ওই দিনই কর্ণেল ডায়ারকে অমৃতসরে পাঠানো হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। এ সময়ে পাঞ্জাবের অন্যান্য অঞ্চলে সহিংস আন্দোলন চলতেই থাকে।

গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে বিশেষ করে পাঞ্জাবে অবস্থা খুব দ্রুত খারাপ হওয়া শুরু করে। আন্দোলনকারীরা রেললাইন, টেলিফোন ও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। অফিস, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয়রা সরকারি স্কুল ,পুলিশ ,সেনা ও সরকারী চাকুরী থেকে পদত্যাগ করা শুরু করে। ব্রিটিশ পণ্য সামগ্রী, গণ পরিবহন, আদালত বর্জন করা শুরু হয়। এপ্রিলের শুরুতে লাহোরের রাস্তাগুলো কার্যত লাগাতার আন্দোলনে টালমাটাল হয়ে পড়ে। সরকারের অনেকেই আন্দাজ করেন যে বড় ধরণের বিদ্রোহ সংঘটিত হতে চলছে। সেভাবে তারা নিজেরা প্রস্তুতিও নেয়া শুরু করে। পাঞ্জাবের গভর্ণর লেফটেন্যান্ট মাইকেল ও ডায়ার আন্দাজ করেছিলেন, বছরের যে সময়টাতে গ্রীষ্মের কারণে ব্রিটিশ সৈন্যদের সাধারণত সরিয়ে নেয়া হ্‌ সেই সময়ে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের আদলে আরেকটি বিদ্রোহ ঘটতে পারে।

১২ই এপ্রিল সন্ধ্যায় অমৃতসরের নেতাকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেয় পরের দিন জালিয়ানওয়ালা বাগে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হবে বিকেল চারটায় এবং সাইফুদ্দিন ও সত্যপালের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত হরতাল চলবে। মোহাম্মাদ বশীরের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন কংগ্রেস পার্টির লাল কানহাইয়া ভাটিয়া।

১৩ই এপ্রিল বড় ধরণের কোন বিদ্রোহ সংঘটিত হতে পারে আশঙ্কা করে সকাল থেকেই সব ধরণের সভা ও চারজনের বেশী ব্যক্তির সমাবেশ নিষিদ্ধ করে গোটা পাঞ্জাবে সামরিক আইন জারি করে কর্ণেল ডায়ার। এই আদেশ সারা শহরে প্রচার করা হয়। শহরে লোকসংখ্যা সীমিত করতে বিশেষ অনুমতির বিধান করে কর্ণেল ডায়ার। সারা শহর জুড়ে এই বিধান কার্যকর করে। কিন্তু লোকালয়গুলোতে সেভাবে এই বিধান বা সামরিক আইন জারির খবর প্রচার পায়নি। যার কারণে অসংখ্য লোকজন বৈশাখি মেলায় অংশগ্রহণ করতে জালিয়ানওয়ালা বাগে সমবেত হয়।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড

সামরিক শাসন জারীর ঘোষণা দেয়ার পরেও জালিয়ানওয়ালা বাগে সেদিন লোকজন বৈশাখি মেলা ও সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য দলে দলে সমবেত হয়। কর্ণেল ডায়ার এরই মধ্যে দুপুর একটার দিকে জালিয়ানওয়ালা বাগের সমাবেশের খবর পায়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ডায়ার প্রস্তুতি নিতে ব্যারাকে ফিরে যায়। দুপুর হতে হতে পাশের বৈশাখী মেলা আর বিক্ষোভ সমাবেশে আগত মানুষে মাঠ জনাকীর্ণ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বৈশাখি মেলা বেলা ২ টার সময়েই মেলা ভেঙ্গে দেয় প্রশাসন।  কিন্তু এর ফলে মেলাফেরত লোকজনের  কারণে জালিয়ানওয়ালা বাগানে লোকসংখ্যা আরোও বেড়ে যায়। 

জালিয়ানওয়ালা বাগানে সমবেত মানুষের সংখ্যা আন্দাজ করতে ডায়ার বাগানের ওপর একটি বিমান ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিমান উড়িয়ে ডায়ার আন্দাজ করেন কমপক্ষে ৬০০০ লোক সেখানে ওই সময় উপস্থিত ছিল কিন্তু পরবর্তিতে হান্টার কমিশনের রিপোর্ট মতে সমবেত মানুষের সংখ্যা ছিল কমপক্ষে দশ থেকে বিশ হাজার। যখন বাগানে লোকজনের সমাগম হচ্ছিল, ডায়ার কিংবা আরভিং, কেউই জনসমাগম বন্ধের চেষ্টাও করেন নি। তারা চাইলে খুব শান্তি পূর্ণ ভাবেই সমবেত লোকদের সরিয়ে দিতে পারতেন।

Dictatorship and Human Rights: The Ongoing Struggle for Freedom

এদিকে সমাবেশ চারটার দিকে আরম্ভ হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় সারে পাঁচটার দিকে। এরইমধ্যে কর্ণেল ডায়ার ব্যারাক থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ১০০ সদস্যের একটি সৈন্যদল নিয়ে জালিয়ানবাগে উপস্থিত হন। এই বাহিনীতে ২৫ জন গুর্খা, ২৫ জন শিখ, পাঠান, ও বেলুচ সেনা ছিল। সৈন্যরা ৫০ টি .৩০৩ লী এনফিল্ড বোল্ট একশন রাইফেলে সজ্জিত ছিল। তার বাহিনীর সাথে মেশিনগানে সজ্জিত দুটো সাজোয়াগাড়ি ছিল। এখানে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার যে কর্ণেল ডায়ার কতটা ধূর্ত ছিলেন। খুব সুচারুতার সাথে ডায়ার সৈন্য বাছাই করে সৈন্যদল সাজায়। ব্রিটিশদের প্রতি যেসব জাতিগোষ্ঠী বিশেষভাবে অনুগত ছিল, সেইসব জাতিগোষ্ঠীর সৈন্যদের নিয়েই ডায়ার তার বাহিনী সাজান। কিন্তু জালিয়ানওয়ালা বাগে প্রবেশের রাস্তাগুলো অত্যন্ত সরু হওয়ায় সাঁজোয়া গাড়ীগুলো বাগানে প্রবেশ করতে পারেনি।

জালিয়ানওয়ালা বাগানে প্রবেশের মূল রাস্তা সেনাদের কড়া পাহারা রাখেন আর তাদের ব্যাকআপ দেয়ার জন্য সৈন্যদের পেছনে মেশিনগান সজ্জিত সাঁজোয়া গাড়ি রাখা হয়। আর বাকি গেটগুলোর প্রায় সবই বন্ধ রাখা ছিল। কোনভাবেই কারো পালাবার সুযোগ ছিল না। সবাবেশ শেষ করার বা জমায়েত ভেঙে দেয়ার কোন ঘোষণা বা আদেশ না দিয়েই কর্ণেল ডায়ার জালিয়ানওয়ালা বাগে সমবেত মানুষদের ওপর গুলি চালানোর আদেশ দেন। টানা দশ মিনিট ধরে গুলি চলে। গুলি শেষ হয়ে যাচ্ছে বিধায় ডায়ার গুলি বন্ধের আদেশ দেন। দশ মিনিটে ১৬৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে সৈন্যরা। শত শত নিরস্ত্র মানুষ চোখের সামনে নিমিষেই লুটিয়ে পড়ে যাদের মধ্যে ছিল ছয়-সাত মাস বয়সের শিশু সহ নারী পুরুষ। অনেকে বাগানের দেয়াল টপকে পালাতে যেয়ে দেয়ালেই গুলি খেয়ে ঝুলে আছেন। কেউবা গুলিতে আহত হয়ে লাশের কয়েক পরত নিচে শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছেন। কেউবা বাঁচতে চেয়ে কূয়োর মধ্যে লাফ দিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। অবিশ্বাস্য, অমানবিক, কি বর্বর!

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড , Jalliwanwalabagh massacre,

ডায়ার গুলি বন্ধ করেই বাহিনী নিয়ে ব্যারাকে ফিরে ব্যারাকে ফিরে যান। রাত আটটায় কারফিউ জারি হয়। ফলে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যহত হয়ে হতাহতদের অবস্থা আরো খারাপ হয়। পরেরদিন সকাল পর্যন্ত হতাহতদের ওখানে পড়ে থাকতে হয়। অনেক আহত ব্যক্তি সারা রাত বাঁচার চেষ্টা করেও শেষমেষ বাঁচতে পারেননি। বাগানের চারপাশের ঘরবাড়ীর ছাদ থেকে অনেকেই এই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন, অনেকে কারফিউ ভেঙে এসে উদ্ধার করেছেন আহতদের। কেউবা তার ছেলে কেউবা তাদের বাবাকে খুঁজতে এসেছিলেন, কেউ কাউকে খুঁজে পাননি। মোহাম্মাদ ইসমাইল তার বাসার ছাদে দাড়িয়ে এই ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন। তার ভাষায়ঃ

“গুর্খারা চলে গেলে আমি আমার মামা শ্বশুরের ছেলেকে খুঁজতে বের হই। সব খানেই লাশগুলো পড়ে আছে। তাদের মধ্যে অনেক আহতও পড়ে আছেন। আমার আন্দাজে আমি প্রায় ১৫০০ লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। বিশেষ করে রিয়াজুল হাসানের বাড়ির কাছের কূয়োর দুই পাশেই আর মেভা সিঙয়ের চক্রের কাছে এবং যেদিক থেকে সৈন্যরা গুলি করেছে, লাশের ঢিবি পড়ে ছিল। কয়েক জায়গায় লাশের ঢিবিগুলো ১০ থেকে ১২ টা লাশের পরতে পড়ে ছিল। কিছু মৃত শিশুকেও আমি পড়ে থাকতে দেখেছি। মন্ডির খাইরুদ্দিন তেলি তার ছয়-সাত মাস বয়সের বাচ্চা কোলে নিয়েই পড়ে ছিল”।

নাইজেল কলেটদ্য বুচার অব অমৃতসরঃ জেনারেল রেগন্যাল্ড ডায়ার।

সরদার প্রতাপ সিঙয়ের ভাষায়ঃ

চারদিকে দেয়ালের ধারে লাশ গুলো পড়ে ছিল। আমি যখন ঢুকলাম, একজন মৃতপ্রায় ব্যক্তি আমার কাছে পানি চাইল। খাল থেকে দরবার সাহিবে (স্বর্ণ মন্দির) পানি নেয়ার জন্য ওখানে একটা নালা ছিল। এটা হাঁসলি নামে পরিচিত ছিল। নালাটা ঢাকা থাকলেও প্রায় চার বর্গফুট মাপের একটা কূয়ো ছিল সেখানে। যখন আমি কূয়ো থেকে পানি তুলতে গেলাম, দেখি অনেকগুলো লাশ ভাসছে । অনেক জীবিত লোক ওখানে লুকিয়ে ছিল আর আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, ‘ ওরা চলে (সৈন্যরা) গেছে?’ যখন আমি বললাম তারা চলে গেছে, ওরা কূয়ো থেকে বেরিয়ে এসে পালাতে লাগলো। এরপর আমি বাগানের মাঝে গেলাম আমার ছেলেকে খুঁজতে। ওখানে বাগানের দেয়ালের ধারে ৮০০ থেকে ১০০০ লাশ পড়ে ছিল, এছাড়া যারা আহত হয়ে পালিয়েছিল তারা কেউ তাদের নিজের বাড়িতে কিংবা আশেপাশের রাস্তায় মারা যান। আমি ওখানে পনেরো থেকে বিশ মিনিট ছিলাম, কিন্তু আমার ছেলেকে খুঁজে পাইনি। গুলিতে আহতদের হাহাকার আর পানির জন্য কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।

নাইজেল কলেটদ্য বুচার অব অমৃতসরঃ জেনারেল রেগন্যাল্ড ডায়ার।

ক্ষয়ক্ষতি

আসলে ঠিক কতজন সেদিন ডায়ারের গণহত্যার শিকার হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা জানার কোন উপায় নেই। আরভিং বা ডায়ার কেউই হতাহতদের সংখ্যা গণনা করে নি। গুলি শেষ করেই তারা সেখান থেকে সরে পড়ে। পরবর্তিতে হান্টার কমিশনের কাছে পরে ডায়ার স্বীকার করেন , জালিয়ানওয়ালা বাগের রাস্তা যদি সরু না হতো, তাহলে তিনি সাঁজোয়া গাড়ি থেকেই সমাবেশের ওপর মেশিন গান দিয়ে গুলি চালাতেন ক্ষয়ক্ষতি কথা জেনেও।

স্থানীয় সরকার প্রথম উদ্যোগ নেয় এই সংখ্যা নিরূপনে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার প্রায় দুইমাস পর। ডায়ারের নিজের ভাষ্যমতে তিনি “২০০ থেকে ৩০০ জন নিহতের কথা শুনেছেন”। ভারত সরকার ১০ই সেপ্টেম্বর ঘোষণা দেয় মোট ৩০১ জন সেদিন নিহত হন। অমৃতসরের ডেপুটি কমিশনার এফ।সি। পাকল সর্বসাকুল্যে ২৯১জনের হিসেব করেন যদিও তার এই হিসেবের পক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। পাঞ্জাবের এসিসট্যান্ট কমিশনার এফ এইচ বারটনের হিসেবে জালিয়ানওয়ালা বাগে মোট ৪৮০ জন নিহত হন। আরভিং আন্দাজ করেন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মত মারা গেছেন। তবে এলাহবাদের ‘সেবা সমিতি’র ভি এন তিভরার হিসেব করেন ৫৩০ জন সেদিন নিহত হন। বিহারের নেতা হাসান ইমাম দাবী করেন তিনি মোট ৯৪১ জন নিহতের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আবার অন্যদিকে জে পি থম্পসনের মতে, তিনি পাঞ্জাবের এক সহকর্মীর কাছে ৮০০-১৮০০ জন নিহত হওয়ার কথা জানতে পারেন।

সবকিছু ছাপিয়ে হান্টার কমিশন ৩৭৯ জন মৃতব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন যাদের মধ্যে ৩৩৭ জন পুরুষ, ৪১ জন কিশোর এবং ছয় মাস বয়সি একটি শিশু। কমিশনের মতে আহতের সংখ্যা নিহতের সংখ্যার কমপক্ষে তিনগুণ। আহতরা ব্রিটিশদের রোষানলে পড়ার ভয়ে তথ্য গোপন করায় মাত্র ২০০ জন আহত ব্যক্তির তথ্য পাওয়া যায়।

তবে ৬০০০ থেকে ২০০০০ জন লোকের সমাগমের বিপরীতে শুধু ৩৭৯ জন মারা যাওয়ার হিসেবটা বড়ই অদ্ভুত। কারণ, অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে সমাধির প্রস্তর ফলকে লেখা যে, শুধু কূয়ো থেকেই ১২০ টা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া গুলির হিসেব বাদ দিলেও অসংখ্য লোক পালিয়ে যাবার সময় পদদলিত হয়ে মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়ে লাশের নিচে পড়ে শ্বাসরোধে মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়ে শুধু সারারাত জুড়ে কারফিউ থাকার কারণে উদ্ধার না হওয়াতে মারা যান।

ফলাফল

অমৃতসরের গণহত্যার খবর ভারতে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়লেও ব্রিটিশরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে এই ঘটনাকে গোপন করতে। ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা এই গণহত্যার খবর চেপে রাখতে পেরেছিল। এরপর এই খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের সামনে নতুন করে আবারো ব্রিটিশ সভ্যতার মুখোস উন্মোচন করে। তাদের সভ্যতার আড়ালের গল্প সামনে নিয়ে আসে। ব্রিটিশদের ভারতীয় দালাল যারা ভারতে ব্রিটিশদের তোষামোদি করে নিজেদের জমিদারি টিকিয়ে রেখেছিলেন তারাও এক পর্যায়ে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে দাড়াতে বাধ্য হন। ক্ষমতালিপ্সু জমিদার, ও মধ্যস্বত্ত্বভোগী ভারতীয়রা ব্রিটিশ আনুগত্য ছেড়ে দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

সাহিত্যে নোবেল জয়ী এবং ব্রিটিশ নাইটহুড উপাধিপ্রাপ্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩ই এপ্রিলে্র অমৃতসরের গণহত্যার খবর পান পরের মাসের ২২ তারিখে। প্রায় মাসেরও বেশী সময় পরে গণহত্যার খবর পেয়ে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন প্রতিবাদস্বরূপ। এছাড়া দিল্লির হাকিম আজমল খান তাঁর ‘মসিহ-উল-মূলক’ উপাধি এবং প্রথম শ্রেণীর ‘কাইসার-ই-হিন্দ’ স্বর্ণ মেডেল ব্রিটিশ সরকারকে ফেরত দেন।

গুজরানওয়ালা হত্যাকাণ্ড

১৩ তারিখে জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ১৫ তারিখে গুজরানওয়ালায় বিক্ষোভ হয়। এই বিক্ষোভ দমন করতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বিমানবাহিনী ব্যবহার করে। বিক্ষোভস্থলে তারা বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করে এবং সাজোয়া বহরে মেশিন গান ব্যবহার করে। গুজরানওয়ালার খালসা স্কুল বোমা নিক্ষেপ করে ধ্বংস করা হয়। এখানে ১২ জন নিহত ২৭ জন আহত হন।

রাস্তায় চলতে গেলে ভারতীয়দের হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হবে। কর্ণেল ডায়ারের এই আদেশ ২৪ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

১৯ শে এপ্রিলে কর্ণেল ডায়ার খ্রিষ্টান মিশনের মার্সেলা শেরউডের শ্লীলতাহানীর কথা জানতে পেরে শ্লীলতাহানির দায়ে অমৃতসরে আদেশ জারি করেন যে, রাস্তায় চলার সময় ভারতীয়দের হামগুড়ি দিয়ে চলতে হবে। ব্রিটিশ নারীরা ভগবানের মত, যেহেতু ভারতীয়রা ভগবানের সামনে মাথা ঝুঁকে থাকে সেহেতু ব্রিটিশ নারীর সামনেও সেভাবে হামাগুড়ি দিয়ে তাদেরকে চলতে হবে। এর সাথে সাথে কর্ণেল ডায়ার আরো আদেশ জারি করেন যে, কোন ভারতীয় যদি কোন পুলিশ অফিসারের এক লাঠি সমান দুরত্বের ভেতরে চলে আসলে তাকে জনসমক্ষে বেত্রাঘাতেরও আদেশ জারি করেন। তবে এই ডায়ারকেই “পাঞ্জাবের রক্ষাকর্তা” হিসেবে অভিহিত করেছেন মার্সেলা শেরউড আরো অনেক নারী! পাঞ্জাবের বিখ্যাত এস ডি কলেজের ৫০০ ছাত্রকে গ্রেফতার করে ২ দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। কসুর শহরে যারা শ্বেতাঙ্গদের সালাম দিত না তাদেরকে চাবুকের আঘাত করা হয় এবং রাস্তায় নাকে খত দিতে বাধ্য করা হয়।

জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যা, ১৯ শে এপ্রিলে কর্ণেল ডায়ার খ্রিষ্টান মিশনের মার্সেলা শেরউডের শ্লীলতাহানীর কথা জানতে পেরে শ্লীলতাহানির দায়ে অমৃতসরে আদেশ জারি করেন যে, রাস্তায় চলার সময় ভারতীয়দের হামগুড়ি দিয়ে চলতে হবে। ব্রিটিশ নারীরা ভগবানের মত, যেহেতু ভারতীয়রা ভগবানের সামনে মাথা ঝুঁকে থাকে সেহেতু ব্রিটিশ নারীর সামনেও সেভাবে হামাগুড়ি দিয়ে তাদেরকে চলতে হবে।

ব্রিটিস পার্লামেন্টের প্রতিক্রিয়া

যাইহোক, ডায়ারের পক্ষে অনেকে দাড়ালেও বিপক্ষে অনেকেই কথা বলেন। জালিয়ানবাগ হত্যাকান্ডের পর কর্ণেল ডায়ার তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গণহত্যার কথা জানালে মেজর জেনারেল উইলিয়াম বেনিওন বলেনঃ “তোমার পদক্ষেপ সঠিক ছিল, লেফটেন্যান্ট গভর্ণর অনুমোদন দিয়েছেন”। মাইকেল ও ডায়ার অমৃতসর সহ অন্যান্য জায়গায় সামরিক আইন জারি করার দাবি করলে ভাইসর‍য় চেমস্ফোর্ড সামরিক আইন জারি করেন।

উইনস্টন চার্চিল ও প্রধানমন্ত্রী এইচ এইচ অ্যাশকুইথ গণহত্যার নিন্দা জানান। চার্চিলের মতে জালিয়ানওয়ালার গণহত্যা ছিল “বর্ণনাতীতভাবে ভয়ংকর”, আর এইচ এইচ অ্যাশকুইথের মতে এটি ছিল, “আমাদের পুরো ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য, ভয়ংকর নারকীয় তান্ডব” ।

হান্টার কমিশন

১৯১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জালিয়ানওয়ালাবের গণহত্যা ও বোম্বে, দিল্লীর বিদ্রোহের কারণ তদন্ত ও করণীয় নির্ধারণের জন্য লর্ড উইলিয়াম হান্টারকে চেয়ারম্যন করে হান্টার কমিশন গঠিত হয়। হান্টার কমিশন সব কিছু আমলে নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেন হাউজ অব লর্ডসে। কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী পাঞ্জাবে ব্রিটিশ সরকার উৎখাতে কোন ষড়যন্ত্র না থাকার পরেও কর্ণেল ডায়ার তার সীমা লঙ্ঘন করেছেন, নিরপরাধ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি করেছেন অথচ তিনি চাইলেই জনসমাগম ভেঙে দিতে পারতেন।

তবে ডায়ারকে সমর্থন দেয়া উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারণে হান্টার কমিশন ডায়ারের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক দণ্ডে বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করেনি। এছড়া রাজনৈতিক ও কৌশলগত কারণে ডায়ারকে কোন শাস্তির আওতায় আনেনি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যদিও পরবর্তিতে উইনস্টন চার্চিল সেনাবাহিনীর কার্যক্রম থেকে ডায়ারকে অব্যাহতি দেন।

রাওলাট এক্ট ও অন্যান্য দমনমূলক আইন বাতিল

১৯২০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভারতে দমনমূলক আইনগুলো সম্পর্কে যাচাই-বছাই করার জন্য একটি রেজুলুশন পাশ হয়। এর ভিত্তিতে দমনমূলক আইন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯২২ সালের মার্চে কুখ্যাত দ্য ডিফেন্স অব ইন্ডিয়া এক্ট এবং দ্য এনারকিক্যাল এন্ড রেভ্যুলুশনারি ক্রাইমস এক্ট বা রাওলাট এক্টসহ আরো বাইশটি দমনমূলক আইন বাতিল করে।

অমৃতসরের কসাই কর্ণেল ডায়ারের পরিণতি

হাউজ অব লর্ডস ডায়ারের পক্ষেই রেজুলুশন পাশ করে। এমনকি মর্নিং পোস্ট পত্রিকা ডায়ায়ের পক্ষে একটা ফান্ড চালু করেন যেখানে ভারতে অবস্থান করা ব্রিটিশরা সহযোগিতা করে। জীবনের শেষের অভাবের দিনগুলোতে এই ফান্ড কাজে লাগে। ১৯২৭ সালের ২৩ শে জুলাই মারা যান। মৃত্যুর আগে ডায়ার তার পুত্রবধুকে বলেনঃ

“আমি সুস্থ হতে চাইনা। অনেকেই বলে অমৃতসরে আমি ঠিক কাজই করেছি, কিন্তু অনেকে এটাও বলে আমি ভুল করেছি। আমি শুধু মরতে চাই আর সৃষ্টিকর্তার কাছে জানতে চাই আমি ঠিক করেছি না ভুল করেছি”

গভর্ণর মাইকেল ও ডায়ারের গুপ্তহত্যা

মাইকেল ও ডায়ার জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের সময় পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন। তিনিই মূলত জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার মূল পরিকল্পপনাকারী বলে মনে করা হয়। তিনি কর্ণেল ডায়ারের গণহত্যা কর্মকান্ডকে অনুমোদন করেছিলেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডে গুলিতে আহতের মধ্যে থাকা সুনামের এক এতিম যুবক সেদিন এই হত্যার প্রতিশোধের শপথ নিয়েছিলেন। সেই অঙ্গিকার পূরণ করতে যুবক উধাম সিং এর ২১ বছর লেগেছিল। লন্ডনের ক্যাক্সটন হোটেলের একটি সভায় তিনি ছয়টি গুলি করেন। দুটি গুলি একজন অতিথিকে গিয়ে আঘাত করে। গুলিতে পড়ে যাওয়া সেই অতিথি ছিলেন মাইকেল ও ডায়ার।

মাইকেল ডায়ারকে হত্যার বিচারে আদালতকে উধাম সিং বলেনঃ

Udham Singh

“তার প্রতি ক্ষোভ থেকেই আমি এটা করেছি। এটাই তার প্রাপ্য ছিল। তিনিই ছিলেন প্রকৃত অপরাধী। তিনি আমার লোকদের সত্তাকে চূর্ন করতে চেয়েছিল, তাই আমিই তাকে চূর্ণ করেছি। পুরো একুশ বছর ধরে আমি প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি খুশী যে আমি আমার কাজ করতে পেরেছি। মৃত্যুর ভয় আমি পাইনা। আমি আমার দেশের জন্য মরছি। ব্রিটিশদের শাসনাধীনে আমি আমার লোকদের অনাহারে ধুঁকতে দেখেছি। আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, এটা আমার কর্তব্য ছিল। মাতৃভূমির জন্য মৃত্যুর চেয়ে বড় সম্মান আর কি হতে পারে?”

– উধাম সিং

১৯৪০ সালের ৩১ শে জুলাই উধাম সিংকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। মহাত্মা গান্ধী উধাম সিং এর কর্মকান্ডের সমালোচনা করলেও জওহরলাল নেহেরু ১৯৫২ সালে উধাম সিংকে শহীদ-ই-আজম উপাধী দেন। এভাবেই অমৃতসরে ১৯১৯ সালে শুরু হওয়া রক্তাক্ত নাটকের পরিসমাপ্তি হয়। 


“আমার কাছে ফ্রান্সের যুদ্ধক্ষেত্র আর অমৃতসর একই। আজ অব্দি মহিলারা শিশুদেরকে জেনারেল ডায়ারের নাম বলে চুপ করায়”

— নাইজেল কলেট, অমৃতসরের কসাইঃ জেনারেল রেগনাল্ড ডায়ার

১৯২০ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যাকান্ডের স্মরনে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য একটি ট্রাস্ট গয়হন করা হয়। আমেরিকার স্থপতি বেঞ্জামিন পোলক একটি স্মৃতিস্থম্ভ নকশা করেন যেটি ১৯৬১ সালে উদ্বোধন হয়। জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রাচীরে, বাড়িগুলোর দেয়ালে এখনো গুলির চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।

আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক রাজনীতি রাকিবুল ইসলামের বিশেষ আগ্রহের বিষয়। তাঁর লেখালেখির মূল বিষয়বস্তু হলো রাজনীতি, সরকার, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।

Leave A Comment

সম্পর্কিত আর্টিকেল

কোন আর্টিকেল খুঁজছেন?
আমাদের অনুসরণ করুন

এক নজরে এই আর্টিকেলে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে…

লেখক হিসেবে আমাদের সাথে যোগ দিন

সাম্প্রতিক আর্টিকেল

  • শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?

শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলাই কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধাবে?

পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, ও সীমান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ।

  • আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?

আদালত কী? আদালত কত প্রকার ও কি কি?

আদালত হলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত সেই বৈধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি, অপরাধের বিচার ও আইনি অধিকার রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

  • ইক্যুইটির ম্যাক্সিম

ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) কী? ইক্যুইটির ম্যাক্সিম সমূহ কী কী?

ইক্যুইটি বা ন্যায়বিচার (Equity) হল সাধারণ আইন (Common Law) এর শর্তের বাইরে গিয়ে ন্যায্যতা ও ন্যায় নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি স্বতন্ত্র বিচারব্যবস্থা

  • আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।

আব্রাহাম চুক্তিঃ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, এবং ফিলিস্তিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা

আব্রাহাম চুক্তি হলো ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সহ আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একাধিক চুক্তির সমষ্টি।

  • পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয়

পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডঃ ফিলিস্তিনের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে মানবাধিকারের বুলি!

পশ্চিমা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মনে হয়, গাজায় কোনো মানুষ নিহত হয় না—শুধু "হামাস মেম্বার" হয়! আর ইউক্রেনের গমের ক্ষেত ধ্বংস হলে "হিউম্যানিটি ক্রাইম" হয় ।